নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

চেগা মিয়া

০৬ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



সময় সকাল ৭ টা। ১৯২২ সাল।
হাজী শারাফত আলীর ছেলে মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। রাতে তার ভালো ঘুম হয়নি। মৃত ভাইবোনদের কথা মনে পড়লেই তিনি আকাশের দিকে তাকান। ছোটবেলা থেকেই তিনি জানেন, তার বাবা-মা, ভাইবোন ওই আকাশেই থাকেন। তার পরিবারের সবাই তাকে আদর করে 'চেগা মিয়া' বলে ডাকতেন। বাবা-মা মারা যাবার পর চেগা মিয়া চাচা ইবরাহিম এর কাছে চলে যান।

চেগা মিয়া অসহযোগ আন্দোলন করে প্রায় এক বছর জেল খাটলেন।
১৯২৫ সালে তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন মহম্মদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুনকে বিবাহ করেন। স্ত্রীর সাথে চেগা মিয়ার দিনের পর দিন দেখা হয় না, কথা হয় না। আসলে যারা মানুষকে ভালোবাসেন তারা নিজের ঘর সংসারের কথা খুব একটা মনে পড়ে না। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য তারা নিজেদের উৎসর্গ করে দেন। কিন্তু চেগা মিয়া তার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন। তার কথা হলো- আপন মানুষ দূরে থাকলেও আপন, কাছে থাকলেও আপন।

চেগা মিয়া যেখানেই যেতেন- একদল মানুষ তাকে সব সময় ঘিরে থাকত।
ঘিরে থাকা মানুষ গুলো চেগা মিয়াকে অসম্ভব ভালোবাসেন। সবাই ভালোবেসে চেগা মিয়াকে ডাকত- 'লাল মাওলানা' নামে। অনেকে লাল মাওলানার কাছ থেকে পানি পড়া নিতে আসতো। চেগা মিয়া অর্থাৎ লাল মাওলানা এক আকাশ আগ্রহ নিয়ে কিছুক্ষন বিড়বিড় করে পানিতে ফু দিতেন। সেই পানি পড়া খেয়ে নাকি অনেকেই উপকার পেতেন। দূরদুরান্ত থেকে গ্রামের সহজ সরল মানুষ তার কাছে পানি পড়া নিতে আসেন। তার সাদা দাড়ি, মাথায় টুপি আর সূফি চেহারার কারনে- খুব সহজেই তিনি মানুষের মনে স্থান পেতেন।

একদিন এক স্কুল শিক্ষক তলাল মাওলার কাছে এসে বললেন-
আপনি একজন অদ্ভুত মানুষ! এই সমাজে আপনার মতো মানুষ আমাদের খুব বেশি দরকার। মাওলানা স্কুল শিক্ষককে বললেন, পৃথিবীর মজলুম মানুষ সবাই এক, তারা যেখানেই বাস করুক। শিক্ষক তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আমি মনে করি একজন শেখ মুজিব আর একজন ভাসানীর মাঝে বড় পার্থক্য রয়েছে, আপনার রাজনৈতিক গ্রুমিংটা হয়েছে অনেকটাই একক ভাবে, আসামের জঙ্গলে। একারণে একদিকে আপনি চীনের লাল মাওলানা, অন্যদিকে আপনি মুরিদদের পানি পড়াও দিচ্ছেন, এমন জটিলভাবে চলেছে আপনার রাজনৈতিক দর্শন। পানিপরা আর রাজনীতি এই দুইয়ের যোগফলটা কিছুতেই মিলাতে পারছি না।

১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে লাল মাওলানা কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন।
তারপর থেকে তার নাম রাখা হয় 'মাওলানা ভাসানী'। কিন্তু বাঙ্গালীদের কাছে তিনি 'মজলুম জননেতা' নামে বেশি পরিচিত। মজলুম নেতার পুরো নাম আবদুল হামিদ খান ভাসানী। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এর ভাষণ শুনে ভাসানী রাজনীতিতে অণুপ্রাণিত হন। 'বাঙ্গাল খেদাও' আন্দোলনে বাঙ্গালীদের সাহায্য করার জন্য তিনি বারপেটা, গৌহাটিসহ আসামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান এবং গ্রেফতার হোন। গ্রেফতার হওয়ার পর অনেক শিক্ষিত বাঙ্গালীকে বলতে শোনা গেছে- ভাসানী রাজনীতি বহুলাংশেই উদ্ভ্রান্ত ও বিভ্রান্তিমুলক। কিছু দুষ্টলোক সব জাগায়ই থাকে। ভাসানীর কাজই হচ্ছে সংঘাত তৈরি করা।

বাঙ্গালীদের অপমান করে এক প্রকার গলা ধাক্কা দিয়ে আসাম থেকে বের করে দিচ্ছে-
এই ব্যাপারটা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না, তাই তিনি মাও সে তুং থেকে শুরু করে আমেরিকার প্রসিডেন্ট সহ অনেক কাছে চিঠি লিখে সহযোগিতা চাইলেন। দুঃখজনক ব্যাপার হলো কেউই তখন সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেন না। মাওলানা স্পষ্ট বলে দিলেন- 'আসাম আমার, পশ্চিমবঙ্গ আমার, ত্রিপুরাও আমার। এগুলো ভারতের কবল থেকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতা ও মানচিত্র পূর্ণতা পাবে না'।

আসামের কারাগারে ভাসানী সাহেবকে দেখতে যান ওমর আলী।
কিন্তু ওমর আলীকে ভাসানীর সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। ওমর আলী করুন গলায় ডিউটি অফিসারকে বললেন, আমার স্ত্রী সরলা বিবির দুই ভরি গহনা আপনি নিয়ে যান- তবু ভাসানীর সাথে একবার দেখা করতে দেন। ডিউটি অফিসার নারায়ন চন্দ্র দুই ভরি গহনা রেখে দিয়ে ওমর আলীকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন। আর বললেন, ভাগো হিয়াসে। তোম বাঙ্গালী হো। এই ওমর আলী হচ্ছেন আমার সহজ সরল নানা।

মওলানা ভাসানীকে বাদ দিয়ে ইতিহাস রচনা সম্ভব নয়।
চিরদিনের জন্য আসাম ছেড়ে চলে যাবেন এই শর্তে ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে মাওলানা ভাসানীকে মুক্তি দেয়া হবে। আমার নানা ওমর আলীর মনে করেন ভাসানী সাহেব একজন শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। বিতর্কের উর্ধে একজন মানুষ। যিনি দেশের স্বার্থে কাজ করেন। তাই তাকে প্রতিটা বাঙ্গালী এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে মনে রাখবে চিরজীবন। ক্ষমতাবিমুখ রাজনীতির এক মহান পুরুষ ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তার সমতুল্য আর কে আছে?

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৮

সোনাগাজী বলেছেন:


তিনি প্রাকৃতিকভাবেই সোস্যালিষ্ট ছিলেন।

০৭ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: শেখ মুজিব এবং মাওলা ভাসানী গ্রেট লিডার। তার সমতুল্য বাংলাদেশে আর কেউ নেই।

২| ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


তাঁকে ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করা উচিত ছিল।
কিন্তু সেটা হয়নি।
আফসোস।

০৭ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: সঠিক কথা বলেছেন।

৩| ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫০

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:





চেগা মৌরিতানিয়ার খুব উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত দুর্গ। এর অবস্থান আলজেরিয়া এবং মালির সীমান্তের কাছাকাছি। এটি কয়েক শতাব্দী ধরে বাণিজ্যিক কাফেলা গুলির বিশ্রাম ও বিরতির স্থান। দুর্গ থেকে ৫০০ মিটার দূরে একটি জলের উৎসের কাছে নিওলিথিক শিলা খোদাই করা আছে।

চেগা একটি মসজিদ এবং একটি সামরিক দুর্গ নিয়ে গঠিত। এটি ফরাসি বিদেশী সৈন্য কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল এবং স্বাধীনতার পরে মৌরিতানিয়ার সেনাবাহিনী দখল করে।

যদিও সীমান্তে অনুপ্রবেশকারী ও অবৈধ বিদেশীদের এখনও দেখা মাত্র গুলি করার আইন রয়ে গেছে' তবুও ২০১৯ সালে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ ওউলদ গাজোয়ানি সীমিত পরিসরে চেগা দূর্গের আশেপাশের সামরিক অঞ্চল উন্মুক্ত করেছিলেন। তখন থেকে চেগায় হস্তনির্মিত যন্ত্র ব্যবহার করে মৌরিতানিয় এবং মালিয়ান কারিগররা এখানে ধাতব সোনার খোঁজ করায় এস্থান একটি উম্মুক্ত খনিকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।পাশাপাশি রাশিয়ান শক্তি সংস্থা এমিরাল রিসোর্সেস এখানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বৃহৎ সোনার মজুত খুঁজছে।

০৭ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: ওরে বাবা---
এ তো অন্য এক ইতিহাস।

৪| ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:২৯

কামাল১৮ বলেছেন: গরিবের ভালো চাইতেন ভাসানী।আপনারা কি আসামের লোক নাকি বিক্রমপুর থেকে আসামে গিয়েছিল আপনার দাদা দাদী এবং নানা নানী।

০৭ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমরা বিক্রমপুরের লোক।
নানা নানী ব্যবসার জন্য আসাম যেতেন। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা না হলে নানা নানী আসামেই থেকে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো।

৫| ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৪৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



১৯৭৫ সালের পর মাওলানা ভাসানীর ভূমিকা মোটেই ভালো লাগে নাই ।
তিনি মুজিবের শাসন বিরোধী হলে ঠিক ছিল।
কিন্তু তিনি সরাসরি মুজিবের শাসন এবং ব্যক্তি মুজিবের বিনাশ চাইতেন।

০৭ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: শিষ্য যদি গুরুর সাথে বেয়াদবি করে? তখন?

৬| ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২৫

এম ডি মুসা বলেছেন: ভাসানী আর মুজিব কি নিয়া দ্বন্দ্ব হয়েছে আমি জানি না

০৭ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: জানুন। জানা জরুরী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.