নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জিন্নাহ\'র গল্প

০৮ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:০৮



১৮৭৬ সালে করাচিতে এক দুষ্ট বালকের জন্ম হয়।
এবং ৭৬ বছর বয়সে দীর্ঘদিন যক্ষা রোগে ভূগে- দেশ ভাগের পরের বছর মারা যান। এই দুষ্ট বালক’ই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা। নাম তার মুহাম্মদ আলি জিন্না। পাকিস্তানের লোকজন তাকে কায়েদে আযম বা মহান নেতা হিসেবে সম্মান করে। তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করে মাথায় সব সময় টুপি পড়ে থাকতেন, পরে এই টুপি জিন্না টুপি নামে পরিচিতি পায়। পাকিস্তানের জাতির পিতা ‘কায়েদে আযম’ এর প্রতি দেশটির জনগণের রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা। দেশের বিভিন্ন অফিস-আদালত, হাসপাতাল, স্কুল কলেজ সহ টাকা'তে সবখানেই পাওয়া যাবে তার ছবি। মুসলিম দেশ হলেও এতে কোন কার্পণ্য রাখেনি পাকিস্তানিরা।

লন্ডন থেকে লেখাপড়া শেষ করে জিন্না সাহেব বোম্বেতে এসে আইন পেশা শুরু করেন।
সে সময় সারা বোম্বেতে তিনি একাই ছিলেন- মুসলিম ব্যারিস্টার। তার ভাগ্য ভালো ছিল। ১৯০৭ সালের মধ্যে তিনি একজন দক্ষ আইনজীবি হিসেবে খ্যাতি পেয়ে যান। অনেকেই মনে করেন- খ্যাতি পাওয়ার প্রধান কারণ হলো- নিজের উপর তার ছিল অগাধ বিশ্বাস। একবার ইংলন্ডে আইন পড়াকালীন সময়ে তিনি মনস্থিরও করে ফেলেছিলেন রসকষহীন আইন পাঠ ছেড়ে একটি নাট্যদলের সাথে যুক্ত হয়ে নাট্যমঞ্চে অভিনয় শুরু করবেন। তার ধারনা ছিলো, তিনি একজন ভালো অভিনেতা হতে পারবেন।

১৮৯৬ সালে ভারতের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেসে-
যোগ দেওয়ার মাধ্যমে মুহাম্মদ আলী জিন্নার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। তিনি জন্ম দিয়েছিলেন দ্বিজাতি তত্ত্বের, যে তত্ত্ব কেবল ধর্মকে সম্বল করে হাজার মাইলের ব্যবধানে জন্ম দিয়েছিল একটি রাষ্ট্রের। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিজের রাজনৈতিক জীবনে কখনোই এক চিন্তাচেতনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাননি। ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে পরিপূর্ণ সফল মানুষ কোনোভাবেই বলা যায় না। তিনি সাংসারিক জীবনে সাফল্যের মুখ দেখেননি। ভালোবেসে বিয়ে করে তিনি তাঁর স্ত্রীকে অবহেলা করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী একপর্যায়ে তাঁর থেকে আলাদা হয়ে যান। রোগে ভুগে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন অপরিণত বয়সে। সেই স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানও যে বাবার দৃঢ় অনুসারী ছিল। এ কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না।

প্রথমবার মাত্র ১৫ বছর বয়সে জিন্নাহ বিয়ে করেছিলেন মায়ের চাপে পড়ে।
কনের নাম ছিল এমি বাঈ। পরে ১৯১৮ সালে তিনি নিজের পছন্দে বিয়ে করেছিলেন পার্সি সম্প্রদায়ের মেয়ে রতন বাঈকে। ১৫ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়ার 'ক্ষোভে' তিনি তাঁর মায়ের সঙ্গেও কোনো সম্পর্ক রাখেননি। মৃত্যুর সময়ও তাঁর গর্ভধারিণী মা জিন্নাহকে পাশে পাননি। জিন্নাহ সাহেব অবশ্যই শিয়া মুসলমান ঘরে জন্ম নেন। এবং কোনোদিন কোনো ধর্ম পালন করেননি। তার স্ত্রীও মুসলমান ছিলেন না। তিনি নামাজ পড়তেন না। মদ ও শুয়োরের মাংস নিয়মিত খেতেন। কিন্তু মাথায় থাকত তার প্রিয় টুপি। জিন্নাহর একটা কথা আমার খুব ভালো লেগেছে- 'পুরুষের সাথে নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া কোন সংগ্রামই সফল হতে পারে না'।

জিন্না সাহেবের ছোট বোন ফাতেমা জিন্না-
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দন্ত চিকিৎসায় ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি তার বড় ভাই মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর সহকর্মী ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। ফাতেমা জিন্নাহ ১৯২৩ সালে বোম্বেতে একটি ডেন্টাল ক্লিনিক চালু করেন। আজও পাকিস্তানে তাকে ভাইয়ের সহকর্মী হিসেবে তাকে সম্মান করা হয়। ভাইয়ের মৃত্যুর পর তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন।
(ফাতেমা জিন্নাহ তার ভাই মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর উপর একটি অসমাপ্ত জীবনী লিখেছেন। এটি ১৯৮৭ সালে কায়েদে আজম একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়।)

১৯৪৭ সালে মুসলমানরা পেয়েছে পাকিস্তান আর হিন্দুরা পেয়েছে ইন্ডিয়া।
স্বাধীনতা সহজে পাওয়া যায়, কিন্তু শাসন পরিচালনা করা, গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রবর্তন করার জন্য প্রয়োজন হয় জ্ঞানের এবং এই জ্ঞান সহজ লভ্য নয়। এক একজন মানুষ এক একরকম ভাবে। তবে প্রত্যেকেই, মনে হয়, একটা জায়গায় একই রকম ভাবে। তা হল, দেশভাগ না হলেই ভাল হত। জিন্নাহ ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষিত অসাম্প্রদায়িকমনা মানুষ। কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রদর্শন এবং সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির অনুসারী ছিলেন। জিন্না দক্ষিন এশিয়ার সম্ভবত সব থেকে জটিল রাজনৈতিক চরিত্র।

মানুষকে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি, দেশ, জাতীয়তা, লিঙ্গ, ভাষা ইত্যাদি অনেক কিছু দিয়ে বিভাজিত করা যায়।
ধুর্ত কিছু মানুষ এই বিভাজন থেকে সবসময়ই ফায়দা লুটার চেষ্টা করে। সময়-সুযোগে পুরুষ-নারী, জমিদার-প্রজা,আসামি-বাঙালি, ইরাকি-কুর্দি সব ধর্মের-দেশের-লিঙ্গের-জাতির-গোত্রের-ভাষার একদল মানুষ অপর একদল মানুষের কাছে নির্যাতিত হচ্ছে। এভাবে মানুষকে যতদিন না স্বার্থের কারণে বিভাজন বন্ধ হচ্ছে, যতদিন না আইনে-শাসনে-রাজনীতিতে-অর্থনীতিতে-সামাজিকতায় মানবিক পরিচয়টি প্রাথমিক বিবেচ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এ ধরনের হানাহানি বন্ধ করা যাবে না।

১৯৪৮এ মহম্মদ আলি জিন্না ঢাকার মাটিতে দাঁড়িয়েই,
বাঙ্গালির ভাষা পরিচয় ও সাংস্কৃতিক অভিমানকে কিছুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে ঘোষণা করে দিলেন 'উর্দু এবং শুধু মাত্র উর্দুই' হবে পাকিস্তানের একমাত্র সরকারী ভাষা। বলা বাহুল্য ঐদিনই মহম্মদ আলি জিন্না তার সাধের পাকিস্তানের অঙ্গচ্ছেদ ও একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখার বীজ পুঁতে দিলেন। তাই ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিলো বাঙালিকে। বাংলা ভাষার জন্য ঝরেছিল বুকের তাজা রক্ত। অথচ সেই বাংলা ভাষার বিরুদ্ধাচরণকারী জিন্নাহ’র কবরেই টগবগ করছে বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলা।

কিছু তথ্যুঃ
১। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তার বাবা মা ছিলেন গুজরাটি। তাঁরা মাছের ব্যবসা করতেন।
২। জাতপাত নিয়ে জিন্নাহর মাথা ব্যথা ছিলো না। তবে সে কোনো এক কারনে হিন্দুদের পছন্দ করতেন না।
৩। জিন্নাহর মত ছিল যে ব্রিটিশদের বিদায়ের আগেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৪। জিন্নাহর কবর করাচী শহরে ৬০ একর জায়গা জুড়ে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ তার মাজার দেখতে যায়।
৫। জিন্নাহ ঢাকায় এসে বঙ্গভবনে উঠতেন। বুড়িগঙ্গা নদী দেখতে যেতেন। লঞ্চে করে বুড়িগঙ্গা নদীতে ঘুরতেন।
৬। জিন্নাহর একমাত্র নারী বন্ধু ছিলেন সরোজিনী নাইডু।
৭। ফাতিমা জিন্নাহ তার ভাইকে নিয়ে লিখেছেন, 'মাই ব্রাদার' নামে একটি বই।
৮। জিন্নাহ প্রচুর সিগারেট খেতেন। নামাজ রোজা করতেন না। মদ খেতেন। শুয়রের মাংস খেতেন। কুকুর পুষতেন।
৯। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের আগের নাম ছিলো জিন্নাহ হল।
১০। নোয়াখালী দাঙ্গা এবং কলকাতায়ও ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মূল হোতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৪

শাহ আজিজ বলেছেন: জেনা ভাই হিন্দু পরিবারের সন্তান । এই মাছুয়া সম্প্রদায় সমাজে নিগৃহীত ছিল । প্রতিশোধ নিতে তারা মুসলিম ধর্ম গ্রহন করে এবং আহমেদাবাদে বড় কাপড়ের দোকান খোলে । জিন্নাহর জন্ম আহমেদাবাদে ।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪

সোনাগাজী বলেছেন:



কলোনী থেকে বের হওয়া জাতীকে কিভাবে সংগঠিত করতে হবে, এই ব্যাাপারে উহার কোন ধারনা ছিলো না মাথায়; ভারত কিছু সময়ের জন্য মাউন্ট ব্যাটেনকে প্রশাসনে রেখে দিয়ে ভালো করেছিলো

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: জিন্নাহ জন্ম নেন খোজা পরিবারে, খোজা না-কি যেসব মানুষ বহু আগে হিন্দু থেকে শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ে পরিবর্তিত হয়েছে তাদের বলা হতো। আবার জিন্নাহ পরবর্তীতে সুন্নি ভাব ধারার মানুষের সাথে ওঠা বসা করতে করতে নিজেকে তাদের একজন ভাবতেন, আবার তিনি না-কি ধর্ম কর্মের ব্যাপারে মুক্তমনা ছিলেন। বহু আগে কোথায় যেন পড়েছিলাম, ঠিক মনে নেই। একই সাথে তিনি আবার ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ করে ফেলেন। আসলেই ভীষণ কনফিউজিং ক্যারেক্টার।

৪| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:




সে একটা গাধা ছিল। বিরাট গাধা।

৫| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৯

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: দেশ ভাগ না হলে আমরা ভারতের একটা প্রদেশ থাকতাম। বাংলাদেশ নামক দেশ হওয়ার পিছনে জিন্নাহ এর অবদান ছিলো বলে মনে হয়।

৬| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০১

ফিনিক্স পাখির জীবন বলেছেন: জিন্নাহ একজন সুবিধাবাদী মানুষ ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না। মুসলিম পালনকারী না হয়েও ধর্মের নামে দেশ ভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ নিজে একজন পার্সি মহিলাকে বিয়ে করলেও নিজের মেয়ে একজন পার্সিকে বিয়ে করেছিলেন বলে মেয়ের সাথে ঝামেলা করেছিলেন।

৭| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৩০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


পাকিস্তানের মূল প্রবক্তা ছিলেন আসলে বাংলাদেশেরই এক জন।
তার নাম একে ফজলুল হক।
তিনি ১৯৪০ সালে সম্ভবত লাহোর প্রস্তাব পেশ এর মাধ্যমে মূলতঃ পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করেছিলেন।
সেই হচ্ছে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির গোড়াপত্তন।

৮| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:১৩

কামাল১৮ বলেছেন: কলকাতা ও নোয়াখালি দাঙ্গার মূল নায়ক ছিলেন সোহরোওয়ার্দিী ও শেরে বাংলা।জিন্নার এখানে কোন প্রভাব ছিলো না স্বার্থও ছিলো না।

৯| ১২ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬

নাহল তরকারি বলেছেন: দেশ ভাগ হয়েছে বলেই কিছুটা শান্তিতে আছে। তা নাহলে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা লেগেই থাকতো। আর হিন্দু মুসলিম দাঙ্গায় কি শুধু মুসলিমরাই দায়ী? কলিকাতার জমিদারদের কোন দায় নেই? কারন এক হাতে তালি বাজে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.