নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওমর আলীর গল্প

১৫ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



এই পৃথিবীর একটা দায়-দায়িত্ব আছে- মানুষের উপর।
আবার মানুষের একটা দায়-দায়িত্ব আছে পৃথিবীর উপর। যে যার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে- প্রকৃতি রেগে যায়। প্রকৃতি কাউকে ক্ষমা করে না। প্রকৃতি খুব নির্মম প্রতিশোধ নেয়। অনেকে প্রকৃতিকে নিয়তি বলেন আবার কেউ কেউ ঈশ্বর বলেন। আসলে, যে যেটা ভেবে শান্তি পায়। ১৯৪৩ সালে এই বাংলায় 'প্রকৃতি' একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ লোক মারা গেল। সরকারি হিসেবে ১৫ লক্ষ। তখন, কলকাতা, বিহার, উড়িষ্যা তখন বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্গত। দুর্ভিক্ষের সে দিনগুলোতে মানুষ কচুঘেঁচু, পাতা-লতা এমনকি দূর্বাঘাস খেয়েও বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছে। গ্রাম-বাংলার মানুষের খবর-বার্তা পৌঁছানোর প্রধান মাধ্যম বলতে ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে জানানো, মানুষের বলাবলি, আলোচনা, ভালো-মন্দ মন্তব্য ইত্যাদি ছাড়া তেমন আর কোনো বাহন ছিল না। ধারনা, করা হয়- এই ৪৩ এর দূর্ভিক্ষের সময় জন্ম হয় টারজানের।

কী বিচিত্র মানুষের জীবন! সূর্য অস্তমিত।
ব্যাঙের নিরবচ্ছিন্ন ডাক, পাখির নিরন্তর কুলায় ফিরে যাওয়া। টারজানের যখন সাত বছর বয়স তখন ওমর আলীর সাথে তার দেখা হয় বিক্রমপুরে। ওমর আলী মুন্সিগঞ্জ বাজারে শাড়ি, লুঙ্গি আর গামছা বিক্রির টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। তিনি দেখতে পেলেন-কুচকুচে কালো রঙের একটি কুকুরের সাথে এক বালক খেলছে। দূর থেকে দৃশ্যটা দেখে ওমর আলীর খুব'ই ভালো লাগল। তার ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেল। তারও একটি কুকুর ছিল। কালো রঙের কুকুর। কুকুরটির নাম তিনি রেখেছিলেন- পালোয়ান। ওমর আলী টারজানের কাছে গিয়ে বলল- এই খোকা তোমার এই কুকুরের নাম কি? খোকা উত্তরে বলল- আমার নাম টারজান আর আমার কুকুরের নাম- কাল্লু। আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে- আমাকে আর কাল্লুকে কিছু খাওয়াবেন? ওমর আলী বললেন অবশ্যই খাওয়াবো। চলো।

তারা তিনজন একটি রাস্তার পাশে খাবারের দোকানে বসলো।
ওমর আলী নিজে কাল্লুকে রুটি ছিড়ে ছিড়ে খাওয়ালেন। আর টারজান খুব দ্রুত সাতটা আটার রুটি শেষ করে দিল পাতলা ডাল দিয়ে। টারজানের খাওয়া দেখে ওমর আলীর খুব মায়া লাগল। আহা বেচারা খুব ক্ষুধার্থ। খাওয়া শেষে ওমর আলী টারজানের জীবন বৃত্তান্ত সব শুনলেন। টারজানের বাবা মা নেই এবং সে রাস্তায় রাস্তায় থাকে শুনে ওমর আলীর চোখে পানি চলে এলো। তিনি এক আকাশ আগ্রহ নিয়ে টারজানকে তার বাসায় নিয়ে এলেন। সাথে কালো কুকুর কাল্লু। টারজানকে বাসায় এনে ওমর আলী ভয়াবহ এক বিপদে পড়লেন। ওমর আলীর স্ত্রী কুকুর পছন্দ করেন না। বিড়াল ভালো। কুকুর ভালো না।

ওমর আলীর স্ত্রী সরলা বিবি কিছুতেই কাল্লুকে বাড়িতে রাখতে রাজী হলেন না।
তার বক্তব্য টারজান থাকতে পারে কিন্তু কুকুরটি না। তিনি কুকুর খুব ভয় পান। বিশেষ করে কালো কুকুর। ওমর আলী সরলা বিবিকে খুব আকুতি মিনতি করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন। দূরে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে টারজান। তার পায়ের কাছে কালো রঙের কুকুরটি লুটোপুটি খাচ্ছে অজানা এক আনন্দে। ঠিক এই সময় ওমর আলীর ছোট মেয়ে পুষ্প এসে তার মা সরলা বিবিকে অনুরোধ করে এবং তিনি মেয়ের কথায় সায় দেন তারপর থেকে টারজান ও কাল্লু এই বাড়িতেই থেকে যায়। এই ওমর আলী ও সরলা বিবির বাড়িতে টারজানের নতুন জীবন শুরু হলো। সাথে আছে কুকুর কাল্লু।

ওমর আলী বিশ্বাস করেন, ভালোবাসা জমিয়ে রাখতে হয় না।
ভালোবাসা শুধু নিজের পরিবারের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখতে হয় না। ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে হয়। জ্ঞান ছোড়িয়ে দিতে হয়। স্বচ্ছ পবিত্র ভালোবাসা ছাড়া মানুষ মানবিক ও হৃদয়বান হতে পারে না। ওমর আলী নিয়ম করে টারজানকে সকাল-সন্ধ্যা পড়াতে বসান। লেখাপড়ায় টারজানের খুব আগ্রহ। সে দ্রুত স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ শিখে ফেলল। টারজানের প্রতিভায় ওমর আলী মুগ্ধ। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ওমর আলী টারজানকে গল্প শোনায়। এতে লেখা-পড়ায় আগ্রহ বাড়ে। ওমর আলী গল্প শুরু করলেই পুষ্প এসে বাবার পাশে বসে খুব মন দিয়ে গল্প শোনে। পুষ্প আর টারজানের পাশে কাল্লুও এসে বসে। তারা তিনজনই মুগ্ধ হয়ে ওমর আলীর গল্প শুনে।

ওমর আলীর গল্প গুলো এই রকম-
একবার এক বাদশা একজন অপরাধী কয়েদীকে হত্যা করার হুকুম দিলেন। বেচারা নিরুপায় হয়ে রাগে দুঃখে, বাদশাহকে গালি দিতে শুরু করল এবং অশ্লীল ভাষায় যাচ্ছেতাই বকতে লাগল। গালি দেওয়াটাই স্বাভাবিক। কারন, মানুষের মনে যখন বেঁচে থাকার আশা থাকে না তখন তার মনে যা কিছু থাকে তা বলতে দ্বিধাবোধ করে না।

বাদশাহ তাঁর এক মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেনঃ লোকটা এমন চিৎকার কি বলছে?
মন্ত্রী খুব দয়ালু ও মহানুভব ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বললেন, হুজুর লোকটা বলছে, যারা রাগ দমন করে এবং লোকদেরকে ক্ষমা করে, সেইসব লোকদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন।

একথা শুনে বাদশার হৃদয়ে দয়ার উদ্রেগ হলো এবং তার প্রাণদন্ড মওকুফ করে দিলেন।
আর একজন মন্ত্রী যিনি প্রথমোক্ত মন্ত্রীর বিরোধী ছিলেন, প্রতিবাদ করে বললেন, আমাদের মত উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের পক্ষে পবিত্র রাজদরবারে সত্য বৈ মিথ্যা বলা সমীচীন নয়। অপরাধী বাদশা নামদারকে গালি দিচ্ছে এবং এমন সব অকথ্য কথা বলছে, যা কাউকে বলা যায় না।

মহান বাদশা সে কথায় কান দিলেন না।
বরং বিরক্ত হয়ে বললেন, যে সত্য কথা তুমি বলেছ, তার চেয়ে ওর মিথ্যা কথা আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে। কেননা, ওর উদ্দেশ্য মহৎ। অর্থাৎ একটা মূল্যবান জীবন রক্ষা করে তাকে সংশোধনের সুযোগ দেয়া। অশান্তি উতপাদনকারী সত্য কথার চেয়ে শান্তিকামী মিথ্যা কথা ঢের ভালো।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২

সোনাগাজী বলেছেন:



ঢাকা ভরে গেছে টারজানে; পুরো ঢাকায় মাত্র ১ জন সজীব ওয়াজেদ।

২| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৮

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: শেষের বলা গল্পটা বেশ লাগল। কিছু মিথ্যে আসলেই সত্যের চেয়েও মহৎ।

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:২৮

শেরজা তপন বলেছেন: এর কি পর্ব আছে-মাঝপথে শেষ হয়ে গেল যে?

৪| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৫৯

কামাল১৮ বলেছেন: আমাদের প্রিয় নবীও কালো কুকুর পছন্দ করতেন না।তিনি কালো কুকুর মেরে ফেলতে বলতেন।

৫| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



যেই ঘরে কুকুর প্রবেশ করে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করবে না ।
কেননা কুকুর খুবই অপবিত্র একটি জিনিস ।
একে ঘৃণা করা প্রত্যেকেরই উচিত।

৬| ১৬ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৬

ধুলো মেঘ বলেছেন: ওরে বুড়াছাগল, নবীজী আমাদের প্রিয়, তোর প্রিয় না। তাই নবীজীর প্রসংগ আনা হলে 'প্রিয়' শব্দটি ব্যবহার না করতে অনুরোধ জানাই।

রাসুল (স) ব্যক্তিগতভাবে হয়তোবা কুকুর অপছন্দ করতেন এবং এ সংক্রান্ত কিছু আদেশ উপদেশ হয়তোবা সাহাবায়ে কেরামকে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা হাদীসের যৌক্তিকতা যাচাই করব কুরআনের মাপকাঠিতে। আসহাবে কাহাফ নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌র খুব পছন্দের একদল মানুষ, যারা নির্বিঘ্নে ইবাদাত করার জন্য একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল এবং তাদের সঙ্গী হয়েছিল একটি কুকুর। ঐ কুকুর তাদের সাথে থাকার জন্য কি তাদের ইবাদাত নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বা রহমতের ফেরেশতা সেখানে ঢোকা বন্ধ করেছিল? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে কুকুর বিষয়ক এইসব হাদীস আমরা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করিনা।

তবে হ্যাঁ। কুকুর সাধারণভাবেই একটা নোংরা প্রাণী। তাই পাক পবিত্র থাকতে হলে এর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলাই ভালো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.