নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখক নই আমি। কোন চলচ্চিত্র দেখা মাত্র মনের কথা গুলি লিখে ফেলি আর কি।

রাজিন

আমি অসাধারণ মায়ায় আবৃত সাধারণ একজন মানুষ

রাজিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজিন রিভিউ: Dil Dhadakne Do

০৮ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১০:২২

আমার নানীর বাসার সামনের মাঠটিতে অনেক ঘাস। একটি ছাগল ঘাস খাচ্ছিলো। একটু পরেই আবার দেখি ছাগলটির পাশে ছোট্ট একটি বাচ্চা ছাগল লাফাচ্ছে। ছাগলের বাচ্চা হওয়া বেশ সহজ। ভেজাল এই মানুষের বাচ্চা নিয়া। সন্তানদের নিজের হাতে করে ঘাস চাবানো শিখাতে গিয়ে বাবা-মায়ের জীবন তামা তামা হয়ে যায়। যখন তাদের মাথায় বিদ্রোহের বুদ্ধি আসে তখন শুরু হয়:”আমাদের বাবা-মা আমাদের ঠিকমত ঘাসটাও চাবাইতে দিলো না!”। সম্পর্কের এই ধরনের টানাপোড়েন নিয়ে আরেকটি দুর্দান্ত চলচ্চিত্র উপহার দিলেন Zoya Akhtar, যে মুভির নাম “দিল ধাড়াকনে দো”।

কাহিনী জানা যাক। দিল্লীর বিরাট ব্যবসায়ী কমল মেহরা ( অনিল কাপুর)। তার ব্যবসার অবস্থা আজকাল খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। স্ত্রী নীলম ( শেফালী শাহ) এর সাথে প্রেমের বিয়ে হলেও আজকাল সম্পর্ক খুবই খারাপ। বড় মেয়ে আয়েশা ( প্রিয়াংকা চোপড়া) এর বিয়ে হয়ে গেছে এক বড়লোক বাড়িতে। মেয়ে বাপের মত নিজেই বিরাট ব্যবসা খুলে বসে আছে। কিন্তু মেয়ের উন্নতি দিয়ে কী হবে? একমাত্র ছেলে কবির ( রণবীর সিং) হচ্ছে উত্তরাধিকারী। কিন্তু সেও কোন কামের না। এই পরিবারের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক বাইরের লোকদের কাছে Liverpool এবং ভিতরে ফকিরাপুল। এই লোক দেখানো এবং সম্পর্কের টানা-পোড়েন কী আদৌ ঠিক হবে?

মুভি দেখতে বসে যখন কোন চরিত্রকে দেখে মনে হয়: “ আরে! এটাতো আমি!” কিংবা “আরে! এইরকম লোক তো বহুত দেখসি!” তখন খুব সহজেই মুভিটির চরিত্রগুলির সাথে একধরনের যোগাযোগ তৈরি হয়। এই যোগাযোগ তৈরির করার ওস্তাদ Zoya Akhtar । এবারো সেটা করতে পুরোপুরি সফল।

মুভিতে আমরা কেবল স্বামী-স্ত্রীকেই চরিত্র হিসেবে দেখে থাকি। কিন্তু এই মুভিতে ভাই-বোনের সম্পর্কটি দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সবগুলি ভাই-বোনের দৃশ্যেই আমি আমার বড় বোনের কথা মনে করছিলাম। এরকমই তো আমাদের বন্ধুত্ব। জীবনে বন্ধু হিসেবে বড় বোন পেয়ে নিজেকে আসলে অনেকে ভাগ্যবান মনে করি। শুধু আমার জীবন নয় আমি নিশ্চিত সবার জীবনের সাথেই এই মুভির কোন না কোন যোগাযোগ পেয়েই যাবেন।

Zoya Akhtar কে আমি নিঃসন্দেহে বর্তমানে হিন্দী মুভির সেরা পরিচালক বলবো। Luck by Chance , Zindegi Na Milegi Dobara এর মতো এই মুভিতেও একই রকম সহজ, সরলতার মাধ্যমে আনন্দদান বজায় রাখা হয়েছে। মুভির চিত্রনাট্য চমৎকার। সংলাপগুলিও দারুন লিখেছেন ফারহান আখতার।

অভিনয়ে সবাই একেবারে দারুণ করেছে। মূল চরিত্রে অনিল কাপুর, শেফালী শাহ, প্রিয়াংকা, রণবীর সিং দের কোন জুড়িই নেই। সহ-অভিনেতাদের নৈপুণ্যে মুভিটিতে আরেকটি মাত্রা যোগ হয়েছে।

অনিল কাপুর পুরা দেখায় দিসে একজন বয়স্ক চরিত্রেও তিনি নায়ক। অভিনেত্রী হিসেবে শেফালী শাহের কদর অনেক কম। তিনি যে কত বড়মাপের অভিনেত্রী সেটা এই মুভি দেখলেই বোঝা যায়। আয়েশা চরিত্রে প্রিয়াংকা চোপড়া ছাড়া কাউকে চিন্তাই করা যায়না। নিঃসন্দেহে হিন্দী মুভির এক নম্বর নায়িকা হিসেবে প্রিয়াংকাকেই ধরা উচিত। রণবীর সিংকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুবই অপছন্দ করি। কিন্তু কবির চরিত্রে আসলেই দারুণ লেগেছে।

মুভির দৃশ্যায়ন পুরোপুরি চমৎকার। গ্রিস, তুরস্ক এবং ক্রুজ জাহাজের দৃশ্যগুলি চমৎকার দেখানো হয়েছে। বড়লোকি জাঁকজমক যাদের দেখতে ভালো লাগে তাদের এই মুভি অনেক পছন্দ হওয়া উচিত।

মুভির সংগীত মোটামুটি মানের। তবে “গাল্লা গুড়িয়া” গানটির চিত্রায়ন অদ্ভুত রকমের দারুণ। মাত্র এক শটে পুরো গানটি চিত্রায়িত করা হয়েছে।

মুভিটির খারাপদিক হিসেবে বলতে হবে রণবীর সিং এর একটা নায়িকা লাগবে দেখে মুভিতে আনুশকা শর্মার অন্তর্ভুক্তি। মুভির সমাপ্তিটি বেশ নাটকীয় হলেও মানতেই হবে বেশ গাঁজাখুড়ি।

মুভিটির সাথে Zindegi Na Milegi Dobaraর তুলনা চলেই আসে। আমি ব্যক্তিগতভাবে Zindegi Na Milegi Dobara মুভিটিতে সহজ সরল সাধারণ দৃশ্যগুলি দেখে Zoya Akhtar এর ভক্ত হয়ে যাই। এই মুভিতেও জোয়া হতাশ করেনি। তবে হৃতিক-ক্যাটরিনার মত জুটি না দেখে অনেকে হতাশ হতে পারেন।

মুভিটি আমার নিকট এই বছরের সবচাইতে আকাঙ্ক্ষিত মুভি ছিল। কিন্তু মুভিটি মুক্তির পর দুই ধরনের মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে: “ দারুন লেগেছে” এবং “এত বড় মুভি কেন? খালি বড়লোকদের ঠাট-বাট । কোন কাহিনী নেই”। আমি নিঃসন্দেহে দারুণ লাগার দলে। অন্য দলের লোক মোটামুটি ভারী হবার কারণটি এখনো বুঝতে পারছিনা।

এক কথায় পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে একটি দারুণ পারিবারিক মুভি।

রেটিং – ৪.৫ / ৫.০

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.