নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখক নই আমি। কোন চলচ্চিত্র দেখা মাত্র মনের কথা গুলি লিখে ফেলি আর কি।

রাজিন

আমি অসাধারণ মায়ায় আবৃত সাধারণ একজন মানুষ

রাজিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্র্যান স্টার্ক: স্বপ্ন উড্ডয়ন (অনুবাদ: A Game of Thrones)

১৪ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৮:২৯


মূল: George R. R. Martin, A Game of Thrones, Chapter 17, Bran III
মনে হচ্ছে যেন কয়েক বছর ধরেই সে নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে।
“উড়াল দে ব্র্যান!” কে যেন কথা বলে উঠলো! মেস্টার লুয়িন এক কাদামাটির পুতুলে ব্র্যানের কাপড় পড়িয়ে উপর থেকে ফেলে দিয়েছিলেন। পুতুলটা পুরাই খানখান হয়ে গিয়েছিল। যতই ভয় দেখাক না কেন, ব্র্যানকে উচু দালানে বেয়ে উঠতে কেউ থামাতে পারেনি। কারণ ব্র্যানের পা কখনোই পিছলায় না। উঁচু থেকে সে কখনোই পড়ে যায়নি।
এত উঁচু! মেঘের ভেতর দিয়ে তো মাটিই দেখা যাচ্ছে না। অসুবিধা নেই। মাটিতে আঘাতের সাথে সাথেই তার ঘুম ভেঙে যাবে।
“আর যদি না ভাঙে?” আবার সেই কন্ঠস্বর!
মাটি এখন বেশ কাছে চলে এসেছে। তবুও হাজার মাইল দূরে। এখানে অন্ধকার। নেই সূর্য, নেই চন্দ্র। শুধুই অন্ধকার। তার মধ্যে আবার রহস্যময় কন্ঠস্বর! ব্র্যানের কান্না পাচ্ছে। মাত্র ৮ বছরের বাচ্চা ছেলে সে।
“কাঁদিস না। উড়াল দে!”
“আমি তো উড়তে পারি না, ” ব্র্যান বললো। “পারি না আমি ...”
“কীভাবে বলিস সেটা? চেষ্টা তো করিস নি”
কন্ঠস্বরটি মনে হচ্ছে বেশ কাছে চলে এসেছে। ব্র্যান হঠাৎ তাকিয়ে দেখে এক কাক তার চারিদিকে ঘুরছে।
“বাঁচাও আমায় ...”
“সেই চেষ্টাই তো করছি ... খাবারের দানা আছে?”
ব্র্যান পকেট থেকে কিছু ভুট্টার দানা বের করলো। কাকটি ব্র্যানের হাতের থেকে ঠুকরিয়ে ঠুকরিয়ে তা খেতে শুরু করলো।
“তুমি কি আসলেই কাক?” ব্র্যান জিজ্ঞেস করলো
“তুই কি আসলেই পড়ে যাচ্ছিস?” কাকের উত্তর।
“এটা তো আমার স্বপ্ন!”
“তাই কি?”
“মাটিতে পৌছাতেই আমি জেগে উঠবো”
“মাটিতে পৌছাতেই তুই মারা যাবি” কাক তার খাওয়া চালিয়ে গেল।
এখন নিচে পাহাড়ের চূড়া স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ব্র্যান চোখ বন্ধ করে কাঁদতে শুরু করলো।
“এসবে কোন লাভ নাই,” কাক আবার বললো। “ আগেই তো বললাম, কাঁদিস না, উড়াল দে। চেষ্টা করে দেখ। আমি তো উড়ছি।“
“তোমার তো ডানা আছে,” ব্র্যান বললো।
“হয়তো তোরও আছে। ডানা কি শুধু এক ধরণেরই হয়?“
ব্র্যান কিছুই বুঝতে পারছে না। হঠাৎ তার সামনে এক আবছা চেহারা ভেসে আসলো। সোনালী চুলের সেই ব্যক্তি বলছে :” ভালবাসার জন্য কত কিছু যে করতে হয়!”
কাকটি আবার উড়তে উড়তে ব্র্যানকে প্রদক্ষিণ করতে লাগলো । “ঐসব ভুলে যা। উড়াল দে”
এবার কাকটি ব্র্যানের কাঁধে বসে ঠোকর দিতে লাগলো। সোনালী চুলের চেহারাটি চোখের সামনে থেকে চলে গেল। ব্র্যানের পতনের বেগ বাড়ছে। “করছো কি তুমি?”
“তোকে উড়ানো শিখাই”
“আমি উড়তে পারি না।“
“তুই কিন্তু এখন উড়ছিস”
“আমি পড়ে যাচ্ছি”
“সব উড়ালের প্রথম ধাপ হলো পতন”
“আমার ভয় লাগছে ...”
“নিচে তাকা!”
ব্র্যান নিচে তাকালো। মাটি যেন তার দিকে ধেয়ে আসছে। হঠাৎ সমগ্র পৃথিবী তার সামনে স্পষ্ট হয়ে আসছে। তার আর ভয় লাগছে না।
নিচে উইন্টারফেল। মেস্টার লুয়িন তার দূরবীনে কিছু দেখছেন এবং লিখে রাখছেন। ব্র্যান দেখলো তার ভাই রব আগের থেকে অনেক শক্তিশালী হয়েছে। সে এখন আসল ধারালো তরবারী দিয়ে অনুশীলন করছে। অন্যদিকে বিশালাকার হোডর বিরাট লোহার সরঞ্জামাদি টেনে নিয়ে যাচ্ছে। শান্ত দৈত্যটির গায়ে কতই না শক্তি! উইন্টারফেলের পবিত্র বৃক্ষটিও দেখতে পেল ব্র্যান। বৃক্ষের গায়ে আঁকা চেহারাটি কি তার দিয়ে তাকিয়ে আছে?
সে পশ্চিমে তাকালো। এক জাহাজের ডেকে তার মা হাতে এক রক্তাক্ত চাকু নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। সাথে আছেন স্যার রডরিক। তার মনে শংকা। ধেয়ে আসছে তাদের জীবনে এক নতুন ঝড়।
তার চোখ এবার গেল দক্ষিণে। ট্রাইডেন্ট নদীর তীরে রাজা রবার্ট বিশ্রামের জন্য থেমেছেন। তার পাশে ব্র্যানের বাবা নেড স্টার্কের মনে বিষন্নতা। অন্য একঘরে তার বোন সানসা ফুপিয়ে কাঁদছে। আরেক বোন আরিয়াও চুপ করে বসে আছে। তার চোখে প্রতিশোধের আগুন। তাদের দুজনকে ঘিরে আছে কিছু ছায়া।

ব্র্যান এবার চোখ মেললো আরও দূরদেশে। তার দৃষ্টি সংকীর্ণ-সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দেখতে লাগলো স্বাধীন নগরগুলি, সবুজ ডথরাকি প্রান্তর। আরও দুরে, ভায়েস ডথরাক ছাড়িয়ে। সে দেখতে পেল জেড সমুদ্রের পাড়ের রহস্যময় আশাই এবং ধুম্রছায়ার দেশ। সেখানে সুর্য অস্ত যাচ্ছে এবং কিছু ড্রাগন উড়াল দিচ্ছে।
এবার সে তাকাল উত্তরে। উত্তরের দেয়াল কাঁচের মত চকচক করছে। সেখানে তার ভাই জন স্নো একাকী এক শক্ত-শীতল বিছানায় শুয়ে আছে। ব্র্যান আরও উত্তরে তাকালো। দেয়ালেরও উত্তরে। বরফে ঢাকা জঙ্গল পার হয়ে, বরফের নদী ছাড়িয়ে এমন জায়গা যেখানে কখনো কোন জ্যান্ত কিছুর হদিস পাওয়া যাবে না। উত্তর থেকে আরও উত্তরে তার দৃষ্টি গেল। এক সময় আলোর সীমানা পাড়ি দিয়ে ব্র্যান দেখলো মৃত্যু-শীতের কেন্দ্রস্থল। সে পুনরায় ভয় পেতে শুরু করলো। ভয়ে চোখের পানি তার গাল গড়িয়ে পড়ছে।
“এখন বুঝলি? কেন তোকে বাঁচতে হবে? কেন তোকে উড়তে হবে?” কাকটি বলে উঠলো।
“কেন?, ” ব্র্যানের প্রশ্ন।
“কারণ মৃত্যু-শীত আসছে !” (Winter is Coming)
ব্র্যান লক্ষ করলো কাকটির চোখ তিনটি। তৃতীয় চোখে যেন অন্য ধরণের জ্ঞান ও রহস্য।

ব্র্যান আবার নিচে তাকালো। কোথায় সেই উইন্টারফেল? শুধুই বরফ এবং বরফ। নিচে এক বরফের মৃত্যু ফাঁদ। বরফের ধারালো বর্শা তার মৃত্যুর অপেক্ষায় উপরে তাক করে আছে। সেই বর্শাগুলিতে শত শত মানুষের মৃতদেহ আটকে আছে। শুধুই লাশের স্তুপ! এবার সে অনেক ভয় পেয়েছে।
হঠাৎ তার নিজের গলা শুনতে পেল “ কেউ কি ভয় পেয়েও সাহসী হতে পারে?”
তার বাবা উত্তর দিলো:” শুধুমাত্র সেই সময়টিতেই কেউ সাহসী হতে পারে”
“ব্র্যান! এখন বল, মরবি নাকি উড়বি?”
নিচে মৃত্যু, তার দিকে ধেয়ে আসছে। ব্র্যান হাত মেললো এবং উড়তে শুরু করলো।
বরফের বর্শাগুলি তাকে আর ধরতে পারলো না। ধীরে ধীরে সে উপরে উঠতে লাগলো। উচু দালানে বেয়ে উঠার চেয়ে অনেক মজার সে উড্ডয়ন। এই জিনিস পৃথিবীর যে কোন জিনিস থেকেই অনেক মজার! পৃথিবী তার কাছে পুনরায় ছোট হতে শুরু করলো।
“আমি উড়ছি!” খুশিতে চিৎকার দিলো ব্র্যান।
“তাইতো দেখছি!”, হঠাৎ কাকটি ব্র্যানের চোখের সামনে এসে কপালে ঠোকরাতে শুরু করলো। ব্র্যান তার দু-চোখের মাঝে এক অন্যধরণের ব্যাথা অনুভব করলো। কাকটি তো আর কাক নেই! কাকটি এক পরিচারিকা নারীর অবয়ব নিয়ে নিয়েছে। পরিচারিকাটি বলে উঠলো :” চোখ খুলেছে ... চোখ খুলেছে ...”
ব্র্যানের কপালে এখনও খুব ব্যাথা। বিছানায় তার নেকড়েটি হলুদ চোখ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক বড় হয়ে গেছে। তার গায়ে হাত দিয়ে এক অন্যরকম উষ্ণতা অনুভব করলো ব্র্যান।
দরজা দিয়ে দৌড়ে চলে এসেছে ব্র্যানের ভাই রব স্টার্ক। রবের দিকে তাকিয়ে ব্র্যান ভাবলো নেকড়েটির নাম এখনও ঠিক করা হয়নি। “সামার ( Summer) আমার নেকড়ের নাম সামার।”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.