নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের পক্ষে আন্দোলন করে যিনি বিশ্বের বুকে মহামানবে রুপান্তরিত হয়েছিলেন তিনি দক্ষিন আফ্রিকার নোবেল জয়ী সাবেক রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা । সারা জীবনটা যার বৈচিত্রে ভরপুর সেই মানুষটা আজ অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন । তার এই বিদায় মহূর্তে তাকে সকল মানুষের পক্ষ থেকে স্যালূট জানাই । তিনি শুধুমাত্র শেতাঙ্গ আর কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের মধ্যকার ভেদাভেদ দূর করেন নি , তিনি দূর করে ছিলেন মানুষের মধ্যকার সকল দন্ধ-বিগ্রহ । তার আন্দোলনকে সফল করার জন্য তাকে ‘বন্ধুর পথ’ অতিক্রম করতে হয়েছে । শারীরীক , মানসিক নির্যাতনসহ জীবনের সোনালী দিনগুলো তাকে জেলে কাটাতে হয়েছে । অনেক বঞ্চনা-গঞ্জনার পরে তার আন্দোলন আলোর মূখ দেখে । তিনি বিশ্বের দরবারে অবিসংবাদিত নেতার স্বীকৃতি পান । এ আন্দোলনের ফলস্বরুপ তিনি এ গ্রহের সবচেয়ে দামী এবং সম্মানের পুরস্কার শান্তিতে নোবেল পুরুষ্কার লাভ করেন । প্রায় শতবর্ষ জীবন পাওয়া এ বিপ্লবী জননেতা জীবনে যতটুকু সম্মান পেয়েছেন , তার চেয়ে জীবনাবসানের সাথে সাথে মানুষের শোক প্রকাশের সময়ে চোখের অশ্রু থেকে প্রমান হয়েছে তাকে এ দ্যূলোকের মানুষ কোনদিনও ভুলতে পারবে না । বাংলাদেশী বাঙালীদের পক্ষ থেকে আবারও স-শ্রদ্ধ চিত্তে তাকে মৃত পরবর্তী সম্মান এবং তার জন্য অন্তরের অন্তস্থল থেকে প্রার্থনা জানাই । মানবতার উপরে পৃথক কোন ধর্ম নাই । কেননা সকল ধর্মই মানবতার মুক্তির কথা বলে সুতরাং নেলসন ম্যান্ডেলা কোন ধর্মের লোক ছিলেন সেটা বড় কথা নয় । একজন মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় জীবন প্রদীপ থাকা অবস্থায় তার কর্মটুকু কেমন ছিল । যেখানে সকল ধর্মের স্রষ্টা , ধর্মে কোন অবস্থাতেই বর্নের স্থান দেয়নি সেখানে কিছু জ্ঞানপাপী মানুষ , মানুষের মধ্যে বর্নের সৃষ্টি করে । যার কারনে শেতাঙ্গ কর্তৃক কৃষ্ণাঙ্গরা চিরকাল নির্যাতিত , নীপিড়ীত হয়েছে । সেই নির্যাতিত , নীপিড়ীত , অবহেলিত মানুষগুলোর মুক্তির জন্য আমৃত্যু কাজ করেছেন সময়ের এ সাহসী যোদ্ধা । সেই মানুষটি সারা প্রথিবীর সকল মানুষকে শোকের সায়রে ভাসিয়ে ৬ ই ডিসেম্বর চলে গেলেন না ফেরার দেশে । আজ এ বেদনার দিনে একনজরে দেখে নেব নেলসন ম্যান্ডেলার বৈচিত্রময় জীবনকাল –
নাম : পুরো নাম – রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা । (রোলিহ্লাহ্লা শব্দের শাব্দিক অর্থ হল ‘গাছের ডাল ভাঙ্গে যে’ অর্থ্যাৎ দুষ্টু বা ডানপিঠে ছেলে । তবে বিশ্ববাসীর দরবারে নেলসন ম্যান্ডেলা বা তার গোত্র কর্তৃক দেয়া মাদিবা নামেই তিনি সমধিক পরিচিত ।
পিতার নাম : মাদিবার বাবা গাদলা হেনরি মাপকানইসা । যিনি স্তেজো গ্রামের মোড়ল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । ম্যান্ডেলার মা ছিলেন নোসেকিনি ফ্যানি । যিনি গাদলা হেনরি ম্যাপকানইসার তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন ।
জন্ম : এ মহামানব আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম সম্পদশালী দেশ দক্ষিন আফ্রিকার থেম্বু রাজবংশের ক্যাডেট শাখায় ১৮ জুলাই ১৯১৮ সালে জন্ম গ্রহন করেন । থেম্বু রাজবংশ দক্ষিন আফ্রিকার কেপ প্রদেশের ট্রান্সকেই অঞ্চলের শাসক ছিল । মূলত তার জন্ম হয় ট্রান্সকেই এর রাজধানী উমতাতার নিকটবর্তী ম্ভেজো গ্রামে ।
শিক্ষা জীবন : নেলসন ম্যান্ডেলা বা মাদিবা তার পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি স্কুলে পড়াশুনা করা সুযোগ লাভ করেছেন । স্কুলে পড়ার সময় তার স্কুল শিক্ষিকা মদিঙ্গানে তার ইংরেজী নাম রাখেন ‘নেলসন’ । তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় একটি মিশনারী স্কুলে । পরবর্তীতে তিনি ক্লার্কবারি বোডিং ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা করেন । যেখান থেকে তিনি জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট সনদ অর্জন করেন । এরপরে তিনি ফোর্ট-বোফের্ট শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হেল্ডটাউন স্কুলে ভর্তি হন । কৃতিত্বের সাথে এখান থেকে উত্তীর্ন হওয়ার পরে তিনি ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অফ আর্টস কোর্সে ভর্তি হন । পরবর্তীতে এখান থেকেই তিনি ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন । এছাড়াও তিনি ইউনিভার্সিটি অব ফোর্ট হ্যায়ার , ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এক্সাটার্নাল সিস্টেম , ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা এবং ইউনিভার্সিটি অব দ্যা উইটওয়াটারস্র্যান্ড এ বিভিন্ন বিষয়ে লেখাপড়া করেন ।
ধর্ম : নেলসন ম্যান্ডেলা আমৃত্যুকাল জন্মসূত্রে পাওয়া খ্রিষ্টান ধর্মের উপর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন ।
বৈবাহিক জীবন : ম্যান্ডেলার বয়স যখন মাত্র ২৬ বছর বয়স তখন ‘ইভিলিন ন্তকে মাসের’ সাথে প্রথম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । তবে তাদের বিবাহকাল বেশিদিন স্থায়ী হয়নি । তাদের দাম্পত্যকাল ছিল (১৯৪৪-১৯৫৭) । দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ‘উইনি মাদিকিজেলা ম্যান্ডেলার’ সাথে । যেখানে তাদের দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়েছিল (১৯৫৭-১৯৯৬) সাল পর্যন্ত । তবে উইনি মাদিকিজেলা ম্যান্ডেলার মৃত্যুর সাথে সাথে তাদের দ্বিতীয় বিবাহোত্তর জীবনের সমাপ্তি ঘটে । অবশেষে নেলসন ম্যান্ডেলার ভাটির বয়সে তৃতীয়বার পূনরায় আবারও বরের সাঝে সজ্জিত হন । ১৯৯৮ সালে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । এবং তাদের এ বৈবাহিক জীবন নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুদিন পর্যন্ত অটুট ছিল । পূর্বের দুই স্ত্রী ম্যান্ডেলাকে ছেড়ে গেলেও ‘গ্রাসা ম্যাচেল’ মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তাকে সঙ্গ দিয়েছেন ।
সন্তান সন্ততি : দীর্ঘ সাংসারিক জীবনে নেলসন ম্যান্ডেলা ৬ টি সন্তানের জনক হন । তাদের নাম ছিল , যথাক্রমে-
Madiba Thembekile.
Makgatho lewanika.
Makaziwe
Maki
Zenani
Zindiziswa
রাজনীতিতে অংশগ্রহন : বর্ণ আন্দোলনের রুপকার নেলসন ম্যান্ডেলা মূলত ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন । বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি প্রথম বর্ষে বহিষ্কার হন । বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে শর্ত দেন তিনি যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন করে ছাত্র সংসদের সদস্য মনোনীত হন তাহলে পূনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পাবেন । এখান থেকেই নেলসন ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি দেন । এরপর থেকে তাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি । তিনি পরিনত বয়স থেকেই আফ্রিকার জাতীয় কংগ্রেস দলের হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন । অনেক চড়াই – উৎড়াই পেড়িয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিন আফ্রিকার প্রথম গনতান্ত্রিক ভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুটা মোটেও আলোকিত ছিল না । বর্নপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে তাকে আফ্রিকার বর্নবাদী সরকার গ্রেপ্তার করে এবং তার পরে অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয় ।
বন্দি জীবন : ১৯৯০ সালের ১১ ই ফেব্রুয়ারী কারামুক্ত হওয়ার আগে তিনি দীর্ঘ ২৭ বছর কারাবা করেন । এ সময়ের অধিকাংশ সময়েই তিনি ছিলেন রবেন দ্বীপে ।
শান্তি আলোচনার শুরু এবং বর্নবাদের অবসান : দীর্ঘ কারাবাসের পর মুক্ত হয়েই নেলসন ম্যান্ডেলা আফ্রিকার শেতাঙ্গ্ সরকারের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন এবং এরই ধারাবহিকতায় দক্ষিন আফ্রিকায় বর্নবাদের অবসান ঘটে । এবং সকল বর্নের মানুষের অংশগ্রহনে ১৯৯৪ সালে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় ।
নোবেলসহ বিভিন্ন পুরুষ্কার লাভ : গত চার বছরে নেলসন ম্যান্ডেলা ২৫০ টিরও বেশী পুরষ্কার লাভ করেছেন । তবে সকল পুরষ্কারকে ছাপিয়ে ১৯৯৩ সালে ম্যান্ডেলঅ নোবেল শান্তি পুরুষ্কারে ভুষিত হন । তাছাড়াও তিনি ১৯৯৮ সালে শাখারভ পুরুষ্কারের অভিষেক পুরুস্কারটি যৌথভাবে অর্জন করেন ।
জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন : অনেক পরিশ্রম ও সাধনা করে তিনি তার মূল আন্দোলনে বিজয় লাভ করেন । অর্থ্যাৎ তিনি বিশ্বের বুক থেকে চিরতরে বর্নপ্রথা চিরতরে উপড়ে ফেলতে সক্ষম হন । এটাকেই ধরা নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনের সবচেয়ে অর্জন । তবে মানুষের কাছে যখন সৌভাগ্য ধরা দিতে শুরু করে তখন সকল দিক থেকে সু-সময় আসতেই থাকে । অবশেষে আসে জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময় । সময়টা ছিল ১৯৯৪ সালের ১০ ই মে । দক্ষিন আফ্রিকার ইতহাসে প্রথমবার গনতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে আফ্রিকার প্রথম গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন । এ সময়ের পর থেকে দীর্ঘ পাঁচ বছরকাল তিনি আফ্রিকার সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অবস্থান করেন ।
বার্ধক্যে উপনীত : যৌবনের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে বার্ধক্যের চাদর । বয়সের করুন দৃষ্টি থেকে কেউ রেহাই পান না । নেলসন ম্যান্ডেলাও এ ধ্রুব বাস্তবতা থেকে মুক্তি পাননি । ২০০০ সালের পর থেকেই মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়াতেন এ বিপ্লবী । এ জন্য তাকে কয়েকবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে । সর্বশেষ ২০১৩ সালর শুরুতে তাকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয় । কয়েকবার মৃত্যুর সংবাদ প্রচার হলেও তিনি মানুষের ভালবাসার জোড়ে আবারও বিশ্ববাসীর কাছে ফিরে আসেন । তবে তখন থেকেই থেকে গোটা দুনিয়ার মানুষ তার মৃত্যুর প্রহর গুনতেছিলেন এবং তার জন্য চোখের পানি বিসর্জন দিয়ে প্রার্থনা করতে ছিলেন ।
শেষ সত্যকে আলিঙ্গন : দিনের পর দিন নেলসন ম্যান্ডেলার শরীর ভেঙ্গে যাচ্ছিল । অবশেষে ২০১৩ সালের ৫ ই ডিসেম্বর পৃথিবী বাসীকে শেষবারের মত বিদায় জানিয়ে তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে ।
আর কোন দিন পৃথিবীবাসী জীবন্ত কিংবদন্তী নেলসন ম্যান্ডেলাকে দর্শন করতে পারবে না । কর্ম মানুষকে অমর করে । নেলসন ম্যান্ডেলার উপস্থিতি না থাকলে কি হবে মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দীর মানুষ তাকে অকুন্ট চিত্তে তাকে স্মরন করবে । বিদায় মাদিবা বিদায় ! যেখানেই থাক মানবতার মুক্তির জন্য প্রার্থনা করো । ভালো থেকে তুমি তোমার কর্মের গুনে ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৫
সাদা মনের মানুষ বলেছেন: স্যালুট তোমায় হে মানবতাবাদী বীর