নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৩১

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৮

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে , নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে জনগনের সামনে যে মূলো ঝুলানো হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল ভিশন ২০২১ । দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুরুর প্রারম্ভে সেই একই মূলো উম্মোচন করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট পার্টি বি এন পি । তারাও প্রচার চালাচ্ছে ভিশন ২০৩১ কে সামনে রেখে । আওয়ামীলীগ জনগকে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর করে জাতিকে বে-সামাল তথ্য প্রযু্ক্তি উপহার দিয়েছে ! বি এন পিও কম কিছুর নিশ্চয়তা দিচ্ছে না । বাঙালী জাতি কে , যে দল বেশী আশা দেয় এরা তার পক্ষে কথা বলতে শুরু করে ।



বাংলাদেশ সংসদীয় গনতন্ত্রের দেশ । সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত কোন দল পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকতে পারবে । তারপর সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পূনরায় নির্বাচন দিতে হবে । বাংলাদেশের বর্তমান অসুস্থ রাজনীতির সাথে যারা জড়িত তারা অনেকেই গভীর জলের মাছ । জাতিকে আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেথাতে তারা কখনও পিছু হটেন না । ২০০৮ সালের নির্বাচিত দল আইনানুযায়ী ২০১৩ সাল পর‌্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবে । পরবর্তী নির্বাচনে যদি জনগন তাদের চায় , তাহলে তারা পুনরায় নির্বাচিত হতে পারবে । জনগন তাদের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করলে তাদের বিদায় নিতে হবে ।



ক্ষমতার লিপ্সা সবার কম বেশি থাকে । গনতান্ত্রিক কোন দেশে ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে চাওয়া গনতন্ত্রকে অপমান করার সমান । একনায়কতন্ত্রের মনোভাবাপন্ন কোন গোষ্ঠী জনগনের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের ক্ষমতাকে স্থায়ী করার চিন্তা করতে পারে । দূরের কোন সীমানা নির্ধারণ করে জাতিকে আশার স্বপন দেখানো দোষের কিছু নয় , যদি কথার সাথে কাজের মিল থাকে । নিজেদের মধ্যে জবাবদিহিতার মনোভাব থাকলে অন্যায় কাজ করা থেকে বিরত থাকা সম্ভব । ধর্মীয় অনুশাসনের উপস্থিতিও মানুষকে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বাধ্য করে । কিন্তু যখন নিজেরা মুখে গনতন্ত্রের বুলি ফুটিয়ে মনে মনে স্বৈরতন্ত্রের ভাবধারা পোষন করেন তখন জনগন তাদের বিপক্ষে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক । জনগন যখন অনেক চেষ্টা করেও তাদের মুখের ভাষা শাসক গোষ্ঠীর কানে পৌঁছাতে ব্যর্থ , তখন তাদের সামনে ব্যালট পেপারই অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয় । আব্রাহাম লিংকন “ বুলেটের চেয়ে ব্যালটকে বেশি শক্তিশালী” হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন । গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এ মহাসৈনিক বুঝেছিলেন , জনগনের ব্যালটের ক্ষমতা কত বেশী তীক্ষ্ণ । বিশ্বের যে সকল দেশে গনতন্ত্র চালু আছে তার প্রত্যেকটা দেশে প্রতাপশালী শাসকরা জনতার রোষে পড়লে কেউ রক্ষা পায়নি । স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি । স্বাধীনতার পরেও কিছুদিন গনতন্ত্র স্বৈর-শাসকদের করায়ত্বে ছিল । ১৯৯১ সালে স্বৈর-শাসকদের থেকে গনতন্ত্র মুক্তি পাওয়ার পর নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীরা উপলব্ধি করতে পেরেছিল জনগনের ক্ষমতার বহর কত লম্বা । কোন সরকার তাদের শাসন আমলে দূর্নীতি বা কোন ধরনের জন-বিদ্বেষী কাজ করে রক্ষা পায়নি । বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রসরের সাথে সাথে রাজনীতিকদের মস্তিষ্কে হাইব্রীড বুদ্ধির আগমন ঘটল । তারা এখন আর কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে নারাজ । এতদিনে তাদের অপকর্মের যে সকল দোষ তাদের মাথায় চাপত , তা জনগনের মাথায় চাপানোর জন্য তারা বেশ যোক্তিক কৌশল অবলম্বন করতে আরম্ভ করেছে । কেউ তাদের উদ্দেশ্যে আঙুল উঁচিয়ে কোনপ্রকার দোষের কথা উচ্চারণ করবে তার কোন সুযোগ তারা অবশিষ্ট রাখে নাই ।



২০০৮ সাল থেকে রাজনীতেতে এই নব্য প্রথার সংযুক্তি । জনগন তাদেরকে পাঁচবছরের জন্য শাসন কার‌্য পরিচালনার ক্ষমতা দিলেও তারা ৫ বছরের জন্য কোন ইশতেহার দেয় না । তাদের ভাষ্য মতে তাদেরকে ২০২১ সাল পর‌্যন্ত সময় দেয়া হলে , তারা দেশের উন্নতির বান ডেকে দিবে । তৃতীয় বিশ্বের এ উন্নয়ণশীল দেশটা অর্থনৈতিক ভাবে অর্খনৈতিক পরাশক্তিতে রুপান্তরিত হবে । দেশ সম্পূর্ন ভাবে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাবে । এ দেশটা মাত্র ১৩ বছরের মধ্যে এ্যানালগ থেকে ডিজিটালে পৌঁছে যাবে । প্রতিঘর থেকে অন্তত একজন লোক চাকরি পাবে । দরিদ্রতা বলতে কোন কিছু থাকবে না । এককথায় দেশটা স্ব-নির্ভর হয়ে উঠবে । প্রস্তাবগুলো অবশ্যই আশাপ্রদ । মাত্র তেরটা বছর যদি তাদেরকে দেয়া যেত তাহলে দেশটা চেনাই যেত না ।



স্বাধীনতার পার ৪২ বছর অতিবাহিত হলেও যে সকল কাজের কোন অগ্রগতি হলো না সেই সকল কাজ মাত্র এক যুগের কিছু বেশি সময়ে করা আদৌ সম্ভব ? বাংলাদেশের চলচিত্র জগতের বর্তমান সমযের আলোচিত তারকা অনন্ত জলিলের কাছে অসম্ভব বলে কিছু না থাকলেও আমরা যারা আম-জনতা তাদের কাছে অনেক কিছুই সাধ্যের বাইরে । আমাদের একটা সীমাবদ্ধতা আছে । জনগন অসম্ভব কিছু দাবি করেনা কিন্তু জনগনের যে সকল দাবী সরকার অনায়াসে পূরণ করতে পারে তারা সেগুলো পাওয়ার আশা বা দাবী অবশ্যই করতে পারে । সরকার যদি উদ্যোগী হয়ে জনগনের চাহিদার পরেও উপরন্তু অতিরিক্ত কিছু করতে চায় সেজন্য তাদেরকে সহযোগিতা এবং সাধুবাদ জানানো দরকার । কিন্তু যাদের সামান্য পাঁচ বছরের কাজগুলি জনগনকে খুশি না করে হতাশায় নিমজ্জিত করে , তাদেরকে এক যুগ সময় দেয়ার মত বোকামী এ দেশের জনগন পূনরায় করবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে ।



গত পাঁচবছরে সরকার যে সকল কাজ করেছে তাতে উন্নয়ণ মূলক কাজের চেয়ে বিতর্কিত কাজের পরিমানই বেশি ছিল । জনগনের আশা-আকাঙ্খাকে ভূলন্ঠিত করে তারা বিদেশী প্রভূদের মনোরঞ্জের চেষ্টায় অধিক পরিমানে মনোযোগী ছিল । এ কারনে আগামী নির্বাচনে যদি জনগন তাদেরকে পূনরায় নির্বাচিত করে সরকার গঠন করার সুযোগ না দেয় তবে সকল দোষ জনগনের মাথায় উঠবে । তারা তো এক যুগ সময় চেয়েছিল । যেহেতু জনগন তাদেরকে সে সময়টুকু দেয় নাই সুতরাং তাদের কোন দোষ নাই , সব দোষ জনগনের । জনগনই তাদের স্বপ্নকে পূরন করার সুযোগ দেয়নি । এ দেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেয় নি ।



বাংলাদেশকে বিশ্বের যে সকল দেশ চিনতো না তারাও বাংলাদেশকে চিনে ফেলেছে । বাংলাদেশ বলতে তারা চিনে , যে দেশের শান্তি শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে । যে দেশে ন্যায় বিচার আশা করা অন্যায় । যে দেশে বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই নাই । সত্য কথা বললেই শাস্তির মূখোমূখি হতে হয় । বিচারক কর্তৃক কোন বিচারের রায় ঘোষণার আগেই তা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায় । ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার প্রশ্ন পরীক্ষার আগের দিন পত্রিকায় আসে । যে দেশের আইন প্রনেতারা নিজেদের পিস্তল দিয়ে সঙ্গীদের গুলি করে সে দেশকে বিশ্বের মানুষ না চিনে পারে ! মন্ত্রীর গাড়ীতে বস্তাভর্তি টাকা পাওয়ার পরেও তাকে দপ্তর-বিহীন মন্ত্রী বানিয়ে রাখা হয় । দেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি দূর্নীতিবাজ মন্ত্রী হিসেবে যিনি পরিচিত তাকে চরিত্রবান বলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পরিচয় করানো হলে সে দেশের কথা বিশ্ব না জেনে পারে ?



সুতরাং আওয়ামীলীগ এবং বি এন পির কাছে এ দেশের প্রত্যেকটা মানুষের দাবী আপনারা পাঁচবছরে যতটুকু করতে পারবেন , ঠিক সেটুকুর নিশ্চয়তা জনগন আপনাদের কাছে থেকে আশা করে । বাড়তি কিছুর লোভ দেখানোর কারনে জনগন আপনাদেরকে এখন আর সত্যবাদী হিসেবে আপনাদের কথাকে মূল্যায়ন করতে চায়না । একদল একটি পদ্মা সেতু করতে ব্যর্থ হলে আরেক দল দুইটি পদ্মা সেতু নির্মানের ঘোষণা দেয় । আমরাও আশায় বুক বাঁধি । হয়ত আমাদের জন্য নতুন কিছু হচ্ছে । সে আশায় ‘গুড়ে বালি’ দিয়ে সময় তার আপন গতিতে আমাদেরকে নতুন ধোঁকার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় । সুতরাং আপনাদেরকে কপটাচারী হিসেবে চিনতে চাই না । আপনারা এ দেশের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক । ঠিক যতটুকু পারবেন ততটুকুর নিশ্চয়তা দিন । তাতেই জনগন সন্তুষ্ট । বেশি ভোগ করাতে গিয়ে আপনাদের কথাগুলোকেই শুধু মাত্র ভোগ্য করে ফেলেছেন । আপনাদেরকে মানুষ অতীতেও যথেষ্ট মূল্যায়ণ করেছ , ভবিষ্যতেও যথাযথ মূল্যায়ন করবে । তবে আপনাদেরকে আপনাদের কথা-বর্তার ব্যাপারে যথেষ্ঠ সংযত হতে হবে । বিশ্বে দরবারে এ দেশ এ জাতিকে হাসির পাত্র বানাবেন না । তাতে আপনারাও হাসির খোরাক হয়ে যেতে পারেন । সুতরাং ভিশন ২০২১ অথবা ভিশন ২০৩১ নয় । আগামী পাঁচ বছরের জন্য কে কি করতে পারবেন সেটা ভেবে জনগনকে বলূন । জনগন তাতেই আপনাদেরকে নির্বাচিত করবে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.