নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিজয় দিবস কেন এমন হল ?

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৭

আজ বাঙালীর গর্ব করার দিন । ১৬ই ডিসেম্বর । ১৬ই ডিসেম্বরের কথা শুনলেই হৃদয়ের গহীণে আনন্দের ঢেউ উত্তেলিত হয় । শত ত্যাগ তীতিক্ষার পরে অর্জিত বিজয় আমাদেরকে বিশ্ব দরবারে দিয়েছে নতুন পরিচিতি । বিশ্ব মানচিত্রে ছোট্ট একটি স্থান দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ নামের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের একটি ভূ-খন্ড । ১৬ই ডিসেম্বরের কথা শুনলে আমাদেরকে যেমনিভাবে আনন্দে উদ্বেলিত করে তেমনি শোকের সাগরে নিমজ্জিত করে । যে ১৬ই ডিসেম্বরকে ঘিরে আনন্দের ফোয়ারা ছোটে সেই দিনটিকে অর্জন করার জন্য তিরিশ লক্ষ বীরের তাজা প্রাণ , দুই লক্ষ মহীয়সী মা , বোনের সতীত্ব-কুমারিত্ব তুলে দিতে হয়েছিল ভিনদেশী হায়েনাদের হাতে । এতসব ত্যাগের বিনিময়ে তবুও আমার অর্জন করতে পেরেছিলাম শত বছরের আরাধ্য স্বাধীনতা , ভেঙ্গে ফেলেছিলাম পরাধীনতার শৃঙ্খল । ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীণতা ঘোষণা হওয়ার পর ১৬ই ডিসেম্বর পর‌্যন্ত দীর্ঘ নয় মাস বাঙালী জাতির উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে , তার বর্ননা কেবল ভূক্তভোগী ছাড়া কারো পক্ষে সার্থক ভাবে প্রকাশ করা সম্ভব নয় । শত কষ্টের পরেও আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি , এজন্য সাময়িক কষ্টকে দীর্ঘস্থায়ী না করে বিজয়োল্লাস সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক সে কামনাই আমাদের থাকা উচিত ।



এদেশের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে আবাল বৃদ্ধ-ভনিতা সকলেই কম বেশি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হায়েনাদের চালানো তান্ডব এবং বীর বাঙালীদের প্রতিরোধের গল্প জানেন । সুতরাং সে গল্পকে নতুন ভাবে আজ আর বলব না । কিছু গল্প আছে যা বারবার শুনতে ভাল লাগে । মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের গল্পগুলোও ঠিক তেমনি । এ দেশের হাজার হাজার মানুষ আজ বিভিন্ন সভা-সেমিনারে সেদিনের সে বীরত্বের গল্প শোনাবেন । আজ আমি বিজয় পরবর্তী সময়ে আমাদের আচরন কেমন হওয়া উচিত ছিল , আর কেমনই বা হল সে বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব । প্রকৃতপক্ষে যে স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য এ দেশের মুক্তিকামী বীরেরা তাদের বুকের তাজা রক্ত , সজীব প্রান উৎসর্গ করেছিল সে স্বাধীনতা আমরা আদৌ পেয়েছি কি ?



বৃদ্ধদাদুর কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে চেয়ে শুনেছিলাম , চার আনার কাগজ বার আনা হওয়ার কারনে এ দেশের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল । সে দিন ভেবেছিলাম ঠিকই তো । যে কাগজ তৈরির সকল কাঁচামাল পূর্ব পাকিস্তান থেকে যেত সে কাগজের দাম পূর্ব পাকিস্তানীদের কাছ থেকে এত বেশী লইবে কেন ? অল্পশিক্ষিত বৃদ্ধ দাদু মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার পিছনে যে কারনের কথা বলেছিলেন তা হয়ত মুক্তিযুদ্ধের মূল কারন ছিল না হবে বাঙালীদের মনে এ সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষোভের থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার ভিত্তি ।



পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদেরকে সাম্যতা শেখায়নি , ভ্রাতৃত্ববোধ শেখায়নি , যার ফলশ্রুতিতে বাঙালীদেরকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে । পাকিস্তানীদের কাছ থেকে বাঙালীরা যে মুক্তি চেয়েছিল সে মুক্তি পেয়েছিল ঠিকই তবে এক কাঁধের শত্রুকে নামাতে গিয়ে অন্য কাঁধে শত্রু চেপে বসেছে তা খেয়াল করে নি ।



অনেকে মনে করেন , স্বাধীনতা মানে যদি অপরের নগ্ন হস্তক্ষেপ থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখার প্রশ্ন হয় , তবে সে স্বাধীনতা বাঙালী পায় নি । পাকিস্তানী শাসনামালে আমাদের পাকিস্তান ব্যতীত কোন রাষ্ট্রীয় শত্রু বা দেশীয় উল্লেখযোগ্য শত্রু ছিল না । একমাত্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল গোটা বাঙালী তথা বাংলাদেশ । কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের শত্রু আজ সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র এবং আভ্যন্তরীণ কিছু কুলাঙ্গার শ্রেণীর অপদার্থ । বিদেশী রাষ্ট্র আমাদের দেশের দূর্বলতাকে গভীর ভাবে না জানার কারনে আমাদের ততোটা মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে না । কিন্তু ঘরের শত্রু আমাদের দেশের খুঁটিনাটি জানার কারনে একটু হুংকার করলেই শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে যায় । কথায় আছে “ ঘরের ইঁদুর যদি বান কাটে , তবে সে ঘর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না ” ।



দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ দেশের সকল মানুষ আশায় বুক বেঁধে ছিল , তারা বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারবে , জীবনের নিরাপত্তা পাবে । তাদের সে আশায় এমন গুড়েবালি হবে তা বুঝতে হয়েছে স্বাধীনতার ঠিক ৪২ বছর পর । এ দেশে সত্য কথা , ন্যায়ের পক্ষে কথা বলা অন্যায় । অত্যাচারিতের পাশে দাঁড়ানো তার পক্ষে কথা বলা , সবই অন্যায় । ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস হলেও বাঙালীর সংস্কৃতি অনুযায়ী গোটা ডিসেম্বর মাসকেই বিজয়ের মাস হিসেবে পালন করা হয় । অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য , ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রায় পুরোটাই হরতাল , অবরোধের মধ্যে কেটেছে । এ মাসে যা দু’এক দিন হরতাল , অবরোধমুক্ত ছিল তাতেও ডজন ডজন মানুষ হত্যা করা হয়েছে । দেশে রাজনৈতিক যে অস্থিরতা চলছে তাতে , কোন দলের দোষ স্বতন্ত্রভাবে নিরুপন করি না , তবে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা কি এই স্বাধীনতা চেয়েছিলাম ?



গতকাল পত্রিকায় দেখলাম , কৃষক-শ্রমিক জনতালীগের প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকি বলেছেন , এদেশে যদি আর ২০ দিন হরতাল , অবরোধ চলে তাবে এদেশের মানুষ-মানুষ খেতে শুরু করবে । দেশে যে চলমান রাজনৈতিক সংকট তাতে ২০-২৫ দিন হরতাল বা অবরোধ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় । স্বাধীনতা অর্জনে ‍যিনি এ জাতীর পক্ষে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন সেই মানুষটার যদি এই মূল্যায়ণ হয়ে তবে স্বাধীনতার কতটুকু মূল্য অবশিষ্ট আছে ?



স্বাধীনতা অর্জন কেবল ভূ-খন্ড থেকে ভূ-খন্ডকে পৃথক করা নয় বরং সকল ক্ষেত্রে আলাদা কিছু । আইন , শাসক এবং সংস্কৃতির সবকিছুই আলাদা । বাঙালী স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়েছে ঠিক কিন্তু ভারতীয়দের থেকে মুক্ত হতে পেরেছে কি ? যারা বাংলাদেশের জনগনের অধিকারের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করে তাদের মনের মত কোন একদলকে তারা এ জাতির ভাগ্য নির্ধারক করার জন্য আর্থিক , সামরিক বাজেট ঘোষণা করে । আমারা তার প্রতিবাদটুকুও করতে পারি না । এটাই কি আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল ?

১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে বিজয়র‌্যালী হবে । এ র‌্যালিতে এ দেশের সকল শ্রেণীর , সকল পেশার , সর্বস্তরের মানুষ নির্বিগ্নে অংশগ্রহন করে আনন্দ উৎসব করবে । এরকম হওয়া উচিত ছিল । কিন্তু আনন্দ উৎসব করার মত স্বাধীনতা আমরা অর্জন করতে পারি নি । যে স্বাধীনতা আমাদেরকে সকল ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেয়ার কথা ছিল সে স্বাধীনতা আমাদেরকে আরও ভীতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে । আজ মানুষ রাস্তায় নেমে জড়ো হতে ভয় পায় । কখন যেন পেট্রল বোমা , গান পাইডার , রাইফেলের গুলি , লাঠির আঘাত তাদের জীবন নিয়ে নেয় ।



আবারও ফিরে আসি দাদুর কথায় । দাদুর কথা অনুযায়ী , যে কাগজকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতা অর্জন হল সে কাগজের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যের মূল্য আজকের স্বাধীন দেশে আকাশচুম্বী । সাধারণ জনগনের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে । গল্প বলা সে দাদু যদি আজ বেঁচে থাকতেন তবে দ্বিতীয়বার মুক্তির ডাক দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না ।



কষ্ট অনেক কথাই বলাতে পারে । এত সব অভিযোগের পরেও আমরা স্বাধীন । মাত্র নয় মাসের ত্যাগ আমাদের নতুন পরিচয়ে পরিচিতি পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে । যে তিরিশ লক্ষ প্রাণ আমাদেরকে স্বাধীনতা দিল । আজ সকলেই তাদের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করব । যে দুই লক্ষ মা এবং বোন তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ তাদের সতীত্ব এবং কুমারীত্ব বিলিয়ে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছে , জাতীর পক্ষ থেকে তাদেরকে স্যালূট জানাই । আজ আনন্দ করার দিন । শত ভয়-ভীতিকে পিছনে ঠেলে উৎসব করার দিন । আজ আনন্দ , শুধু বিজয়ের আনন্দ । যেসকল নরপশু আমাদের অর্জিত গৌরবের স্বাধীনতাকে বিদেশী প্রভুদের কাছে বিকিয়ে দিতে চান তারা সাবধান হোন । কোটি কোটি মানুষের একবারের নিক্ষেপকৃত থুতুও আপনাদেরকে ইতিহাস করে ফেলতে পারে । পারলে স্বাধীনতাকে রক্ষা করুন নয়ত চুপ থাকুন । নিজেদের বিপদ ডেকে আনার মত বোকামী করবেন না ।



লেখক : রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ও বিশ্লেষক ।

সরকারী বি এম কলেজে , বরিশাল ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.