নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত ১৮ই ডিসেম্বর রোজ মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশের বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার রায় প্রদান করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল । রায় : ৮ জনের ফাঁসি এবং ১৩ জনের যাবজ্জীবন । ২০১২ সালের ৯ই ডিসেম্বর পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে বিশ্বজিৎ দাসকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় । শুধু প্রকাশ্যে বললে কম বলা হবে । কেননা বাংলাদেশের একাধিক স্যাটেলাইট টেলিভিশন জগন্যতম এ হত্যার দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে । বিশ্ববাসী বিশ্বজিৎ হত্যার নির্মম দৃশ্য দেখে স্তম্বিত হয়েছিল । তারা ফিরে গিয়েছিল ইতিহাসের পাতায় । বর্বরতার যুগে এমন করে নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করা হলেও সভ্যতার একবিংশ শতাব্দীতে এরকম হত্যা কান্ড কোন বিবেকে প্রশ্রয় দিতে নারাজ । দর্জির দোকানের সামান্য একজন কর্মচারী বিশ্বজিৎ দাস , তাকে হত্যার কারন তিনি জীবদ্দশায় জেনে যেতে পারেনি । অপরাধী জানল না তার অপরাধ কি ? তার আগেই দফারফা শেষ ।বিশ্বজিৎ জেনে যেতে না পারলেও জাতি জেনিছিল বিশ্বজিৎ দাসের অপরাধ কি । আজ থেকে প্রায় একবছর বিশ দিনে আগে বিশ্বজিৎকে শিবির সন্দেহে প্রকাশ্য দিবালোকে রামদার আঘাতে রাস্তার উপর হত্যা করা হয় ।
ছোট বেলায় গৃহ শিক্ষকের কাছে গল্পে শুনেছিলাম – কিছু লোকের মধ্যে সুরা ফাতিহার শেষ শব্দের উচ্চারণ নিয়ে দ্বন্ধ লেগেছে । কেউ বলছে উচ্চারন হবে ‘যল্লীন’ অন্য কিছু লোক বলছে উচ্চারন হবে ‘দল্লীন’ । এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল মারামারি । অবশেষে সিদ্ধান্ত হল রাস্তায় যাকে পাওয়া যাবে তার কাছে জিজ্ঞাসা করা হবে । সে যেটা বলবে সেটাই সঠিক । অনেক অপেক্ষার পর এক ব্যক্তিকে পাওয়া গেল । অনেক আশা নিয়ে দু’ই পক্ষই তার কাছে গিয়ে সমস্যা খুলে বলল । পথচারী অনেকক্ষণ নিরব থাকল । সে আসল কথা গোপন করে এক পক্ষে রায় দিয়ে দিল । রায়ের পরেই বিপক্ষ জনতা তাকে বেধম প্রহার করার পর হুঁশে এসে বলল ভাই আমাকে মাফ করবেন , আমি সুরা ফাতেহা মুখস্ত পারি না ।
পথচারী লোকটি প্রাণে বেঁচে গেলেও বিশ্বজিৎ দাসের কপাল ততোটা প্রসন্ন হয় নি । আক্রামন হওয়ার স্থানেই তাকে পরপারে পাড়ি দিতে হয়েছে । বাংলাদেশের সুধীজনেরা মনে করেন , গত পাঁচ বছরে যতগুলো অপরাধের রায় হয়েছে তার মধ্যে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার রায় অনেকটা স্বচ্ছ । আমরা আশা করি ভবিষ্যতে প্রত্যেকটা অপরাধের জন্য এরকম স্বচ্ছতা সম্পন্ন রায় পাব ।
এতক্ষন যে বিষয়ে দৃষ্টপাত করেছি তা মূল বিষয়ের ভূমিকা মাত্র । বাংলাদেশে শতকরা ৮০ ভাগের বেশি মুসলমানের বাস । একমাত্র বিশ্বজিৎ হত্যার রায় আদালত যতোটা স্বচ্ছতার সাথে দিতে পেরেছে অন্য সকল রায়গুলো কেন তেমন হয়না । আদালতের কাছে প্রশ্ন-বিশ্বজিৎ যদি হিন্দু না হয়ে মুসলমান হতে , দর্জীর দোকানের কর্মচারী না হয়ে শিবির কর্মী হত , তাহলেও কি এই রায় দেয়া হত ? অনেকেই উচ্চস্বরে বলে বসবেন হ্যা – হ্যা । অবশ্যই দেয়া হত । তাদের উদ্দেশ্যে বলি – ২০১২ সালের ৯ই ডিসেম্বর বিশ্বজিৎ দাসের সাথে বাংলাদেশে আরও তিন জন লোক নিহত হয়েছে ? তাদের ব্যাপারে কারো কোন খোঁজ নাই । প্রত্যেকটা হত্যাই আমাদের জন্য কষ্টকর । মানবতার ওষ্ঠে-পৃষ্ঠে আঘাত করার জন্য একটি হত্যাই যথেষ্ট । এক একজন মানুষ হত্যার সাথে সাথে মানবতার এক একটা অংশ ধ্বংস হয়ে যায় ।
বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হলেও বাকী হত্যার জন্য মামলাই করা সম্ভব হয়নি । বর্তমান সময়ে শিবির এক নিষিদ্ধ জনতার নাম হলেও ২০১২ সালে তো শিবির বৈধ ছিল । বর্তমান সময়ে জামাআতের নিবন্ধন বাতিল করার কারনে জামাআতের সহযোগী সংগঠন শিবিরের দিকে আর চোখে তাকানো অস্বাভাবিক নয় । কিন্তু ২০১২ সালে জামাআত বাংলাদেশের বৈধ রাজনৈতিক দল ছিল , সে কারনে শিবিরও তাদের কর্মকান্ড বৈধতার সাথে করার কথা ছিল । কেন তেমনটা হয় নি ? অনেকেই হয়ত এ লেখা থেকে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ শুঁকবেন । তাদের উদ্দেশ্যে বলি – সকলের জীবনই নিজ নিজ পরিমন্ডলে অত্যন্ত মূল্যবান । মানুষের কথা না হয় বাদ দিলাম । নগন্য একটা জীবের প্রানও কি প্রান নয় ?
রাজনৈতিক হ্ত্যাগুলোবাদ দেয়ার পরেও প্রতি নিয়ত অনেক হত্যাকান্ড এদেশে ঘটে । তার কয়টার ন্যায় বিচার ক্ষতিগ্রস্থরা পায় । হত্যা সে হত্যাই । স্বার্থ বিবেচনায় যদি বিচার করা হয , তবে ন্যায় শব্দটার অস্তিত্ব থাকবে কোথায় ? বিশ্বজিৎ হত্যার বিচারের মত করে কেন আমরা সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার আজও পেলাম না । প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হয়ে যত লোক প্রান দিচ্ছে তার সমপরিমান লোক আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহে রাজনৈতিক কারনে আহত হয় না । মানবতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে দ্রুত মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে । জাহেলী বর্ববর যুগের মত ‘খুনকা বদাল খুন’ নীতি পরিহার করতে হবে । সবসময়ে মনে রাখতে হবে , কুকুরের কাজ কুকুর করতেই পারে , তাই বলে কি সকলকে কুকুর হয়ে পাল্টা আঘাত করতে হবে ।
বাংলাদেশের মানুষের মত সাম্প্রদায়িক সৌহার্দপূর্ণ হৃদ্যতা অন্য কোন দেশে পরিলক্ষিত হয় না । তাই বুক ফুলিয়ে বলা যায় , দেখেছেন মাত্র ১১ শতাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বীর বাস বাংলার ভূ-খন্ডে হলেও তারা ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয়নি । তবে তাদের ন্যায় বিচার করতে গিয়ে মুসলমানরা বিচারের দ্বারস্থ হতে পারবে না সেটা তো হবেনা । প্রতিবেশী প্রভূদের খুশি করতে গিয়ে আপন স্বার্থ , অধিকার ত্যাগ করার মত মহৎ হওয়ার দরকার নাই । নিজে বেঁচে তারপর আরেকজনকে বাঁচানোর চিন্তা করা যায় । নিজেই যেখানে অস্তিত্বহীন সেখানে অন্যের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার দৃষ্টতা দেখাই কোন বিবেকে ?
লেখক : রাজু আহমেদ । শিক্ষার্থী , কলামিষ্ট ও বিশ্লেষক ।
সরকারী বি এম কলেজ , বরিশাল ।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৬
সত্যকা বলেছেন: কবিতাটা ছড়ার মত লাগে । খুব ভালো বলেছেন ।
২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৫
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
কিন্তু যাদের অবহেলায় বিশ্বজিৎ মারা গেল, তারা কি বিচারের আওতায় আসবে না?
আমার একটি লেখা -
যেভাবে বিশ্বজিত আক্রান্ত হয়ে মারা পড়লো
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৫
সত্যকা বলেছেন: আপনার লেখাটা চমৎকার হেয়েছ । যাদের জন্য বিশ্বিজিতের এই দশা তারা ধরা ছোয়ার বাইরে থাকেব
৩| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৮
পাঠক১৯৭১ বলেছেন: @লেখক,
আপনি লিখেছেন,
"বাংলাদেশের মানুষের মত সাম্প্রদায়িক সৌহার্দপূর্ণ হৃদ্যতা অন্য কোন দেশে পরিলক্ষিত হয় না ।"
আপনি কুনো ব্যাং: বাংলাদেশের মানুষ পেরস্পরের ক্ষতি করার জন্য অনেক কাজ করে।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৩
সত্যকা বলেছেন: ধন্যবাদ । আপনি আমাকে কুনোব্যাং মনে করেছেন । অনেকে তো তা মনে করে না । ব্যাংয়ের অনেক মূল্য যা দেশবাসী বলে ।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫০
বাক স্বাধীনতা বলেছেন: মতামত হল এইঃ
আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে
ঢাক ঢোল ঝাঁঝর বাজে।