নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সমস্ত বিশ্ববাসী যখন অমাবস্যার নিকশ কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত , মানুষের মাঝে কোন নীতি নৈতিকতার ছিটেফোঁটুকুও অবশিষ্ট ছিল না , মানুষের মধ্যে হানাহানি যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই থাকত , ভাইয়ের কাছে বোন নিরাপদ ছিল না এমনকি বাবার কাছেও তার কন্যা নিরাপদ ছিল না , তেমন এক অবস্থার মধ্যে আমাদের স্রষ্টা-মানবতার মুক্তির দুত করে প্রেরণ করলেন মানব কূলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ , নবী ও রাসুলদের সর্দার এবং দুনিয়া ও আখেরাতের বাদশাহ হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স । হযরত ঈসা (আ এর প্রস্থানের প্রায় ৫০০ বছর পর যখন মানুষেরা তাদের স্রষ্টাকে ভূলে যেতে আরম্ভ করে এবং স্রষ্টার স্থানে প্রকৃত স্রষ্টার অন্য কোন সৃষ্টিকে বসিয়ে তার উপাসনা করতে আরম্ভ করে তখনই আরবের মরুভূমির বুকে এক জীর্ন কুটিরে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে এ মহামানবের আগমন ঘটে । তিনি জন্মের আগেই পিতাকে এবং জন্মের ৬ বছরের মাথায় মাতাকে হারিয়ে কষ্টের মধ্যেই বেড়ে ওঠতে থাকেন । তৎকালীন সময়ের আরবের সামাজিক , অর্থনৈতিক এবং সংস্কৃতিক অবস্থা দেখে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন । তিনি খুঁজতে থাকেন এ দুরাবস্থা থেকে উত্তরনের পথ । দিনের পর দিন ধ্যান করতে থাকেন হেরা পর্বতের গুহায় । অবশেষে আসে সে মহেদ্রক্ষন । তার বয়স চল্লিশ বছর পূর্ন হয় । আল্লাহ তায়ালা ঐশী বানী বাহক হযরত জিব্রাঈল (আ এর মাধ্যমে ঐশ্বরিক বানী পাঠান তার প্রিয় বন্ধুর উপর । ধীরে ধীরে তার উপর আসতে থাকে বিভিন্ন সমস্যার ফয়সালার সূত্র । মানবজাতির মুক্তির পথ , করনীয় ও বর্জনীয় । আল্লাহ তায়াল পরিপূর্ন একটি জীবন বিধান অবতীর্ন করেন আমাদের প্রিয় রাসূলের উপর ।
রেসালাত প্রাপ্ত হয়ে আল্লাহর রাসূল (স ঘোষণা করলেন দুনিয়ার জীবন শেষ জীবন নয় । এ জীবন অত্যন্ত ক্ষনস্থায়ী একটি জীবন মাত্র । মৃত্যুর পরের জীবন আমাদের জন্য অনন্তকালের জীবন । তবে সে জীবনের সূখ-শান্তি অথবা কষ্ট-শাস্তি নির্ধারিত হবে দুনিয়ার কর্মকান্ডের বিচার বিশ্লেষন করে । শেষ নবী একথা ঘোষণা করার পর তার অনুসারীরা তাকে জিজ্ঞাসা করল – পরকালীন জীবনে সুখ-শান্তি পেতে হলে আমাদের করনীয় কি ? হযরত মুহাম্মদ (স ঐশী বানী থেকে পাঠ করে শুনিয়ে দিলেন “ হে আল্লাহর রাসূল ! আপনি বলূন – হে লোক সকল তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসতে চাও তবে আমি মুহাম্মদের অনূসরণ কর , তাহলেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন , তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন । নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত ক্ষমাশীল” । আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এ আয়াত দ্বারা প্রমানিত হয় , আল্লাহকে পেতে হলে এবং তার সৃষ্ট জান্নাতে যেতে হলে অবশ্যই তার প্রেরিত রাসূলের অনুসরণ করতে হবে ।
প্রশ্ন দেখা দিতে পারে আমরা কিরুপে আল্লাহর রাসূলের অনূসরন করব । আল্লাহর রাসূলের কোন কথা কি তার নিজ প্রবৃত্তি থেকে বলেন নাই নাই ? এ প্রশ্নের উত্তরও আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কোরআন মাজীদে দিয়ে রেখেছেন । আল্লাহ তায়ালা বলেন “ তিনি অর্থ্যাৎ আল্লাহর রাসূল (স নিজ প্রবৃত্তি থেকে কোন কথা বলেন না । তিনি যা বলেন তার সবই আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আসে”। আল্লাহর রাসূল আজ আর পৃথিবীতে নেই , তার সাহাবীরা যারা সার্বক্ষনিক তার সাথে ছিল তারাও দুনিয়াতে বেঁচে নাই । তাহলে আমরা আল্লাহর রাসুলেকে কিভাবে অনূসরন করব । তার যথাযথ ব্যবস্থাও নবীজীর সাহাবীরা করে গেছেন । নবুওয়াত পাওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হযরত মুহাম্মদ (স যত কথা , কাজ এবং যে সব কাজে মৌণ সম্মতি দিয়েছেন তার সবকিছুই সাহাবায়ে কেরাম , তাবেয়ীন এবং তাবে-তাবেয়ীনরা পুস্তক আকারে লিপিবদ্ধ করে রেখে গিয়েছেন । তার সে রেখে যাওয়া জীবন পদ্ধতির অনূসরণ করার মাধ্যমেই আমরা আল্লাহর ভালবাসা অর্জন করার মাধ্যমে জান্নাতে যেতে পারব বলে নিশ্চয়তা পেয়েছি ।
ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ার পরেই একজন মানুষকে আল্লাহর একাত্ববাদের উপর পূর্ন আস্থা আনতে হয় । এ আস্থাকে আরবী ভাষায় ঈমান বলা হয় । কোন মানুষ মুসলমান হওয়ার পরে সাতটি বিষয়ের উপর পূর্ণ ঈমান আনা আবশ্যক । সে সাতটি বিষয় হল-
• আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ,
• আল্লাহর ফেরেশতামন্ডলীদের প্রতি বিশ্বাস ,
• আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নাযিলকৃত কিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাস ,
• আল্লাহ তায়ালা প্রেরিত রাসূলগনের প্রতি বিশ্বাস,
• পরকালের প্রতি বিশ্বাস,
• ভাগ্যের ভাল মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয় তার প্রতি বিশ্বাস এবং
• শেষ বিচারের দিন পুনরাত্থিত করা হবে তার প্রতি বিশ্বাস ।
এই সাতটি বিষয়ের উপর যার বিশ্বাস থাকবে আল্লাহ তায়ালা তাকেই জান্নাত দিবেন । এই সাতটি বিষয় মানব জীবনের কর্মকান্ডকে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রন করে যাতে ঈমানের এই সাতটি বিষয় যে ব্যক্তি পালন করবেন তিনি কোনরুপ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হতে পারবেন না ।
আল্লাহর রাসূল (স ঈমানের শাখা-প্রশাখা এবং ঈমানের স্তর সম্মন্ধ্যে আলোচনা করেছেন । আল্লাহর রাসূল (স ঈমানের সত্তুরটির বেশি শাখা প্রশাখার কথা উল্লেখ করেছেন । এক হাদীসে আল্লাহর রাসূল (স বলেছেন “ঈমানের সত্তুরটির বেশি শাখা-প্রশাখা রয়েছে । এর মধ্যে সবচেয়ে বড় শাখা হল , একথার স্বাক্ষ্য দেয়া যে , আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোন মাবুদ বা স্রষ্টা নাই এবং হযরত মুহাম্মদ (স আল্লাহ তায়ালা প্রেরিত বান্দাহ এবং রাসূল । ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা হল রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা । লজ্জাও ঈমানের অন্যতম একটি শাখা ।
ঈমানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল আলোচনাই গুরুত্বপূর্ণ । তবে একজন ঈমান গ্রহীতার অর্থ্যাৎ মু’মিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় তিনি কোন স্তরের ঈমানের অধিকারী । ঈমান পরীক্ষা করার জন্য অবশ্যই সমাজে অপরাধ থাকতে হবে । সমাজে অন্যায় না থাকলে ঈমান পরীক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে । আমাদের সমাজের এমন কোন স্তর নাই যেখানে অপারাধের ছোঁয়া নাই । কাজেই মু’মিনদেরকে প্রতিনিয়ত তাদের ঈমানের পরীক্ষা দিতে হয় । ঈমানের স্তর পরিমাপমূলক সূত্র বর্ননা করতে গিয়ে আল্লাহর রাসূল (স বলেন “ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় দেখবে সে যেন এটাকে হাত দ্বারা প্রতিহত করে । সে ব্যক্তি যদি এ অন্যায়কে হাতদ্বার প্রতিহত করতে অসমর্থ হয় তবে সে যেন অন্যায়কে মূখ দ্বারা প্রতিহত করে । সে ব্যক্তি যদি অন্যায়কে মূখ দ্বারা প্রতিহত করার শক্তিও না রাখে তবে সে যেন অন্যায়কে মনে মনে ঘৃণা করে । আর মনে মনে ঘৃণা করাই ঈমানের অর্ধেক ” ।
মুসলমানরা হযরত ওমর ইবনে খত্তাব , হযরত খালেদ সাইফুল্লাহ , হযরত যায়েদ বিন তারেক ও মুহাম্মদ বিন কাসিমের উত্তরসূরী । এই মূসলমানরা ঈমানের সর্বনিম্নের স্তরে থাকবে সেটা মেনে নিতে কষ্ট হওয়ার কথা । যে বীরেরা কোন অন্যায় দেখলে তাদের হাতের তরবারী দিয়েই সেটা প্রতিহত করত তাদের উত্তরসূরীরা কেন মূখ দিয়ে এমনকি অন্তর দিয়েও অন্যায়কে ঘৃণা করার শক্তি হারিয়ে ফেলল । কেন আজ মুসলমানদের এমন দুরাবস্থা ? বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মুসলমানের এক বিশাল শক্তি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে রেখেছে ? ভাবতেই কষ্ট হয় মুসলমানরা তাদের প্রকাশ্য শত্রুদের দালালী করে ? পরিবার , সমাজ এমনকি রাষ্ট্রের প্রত্যেক স্তরে-স্তরে অন্যায় হলেও মুসলমানরা হাত , কথা এমনকি অন্তর দিয়ে ঘৃনা করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে । ঈমান পরিমাপ করার প্রকাশ্য কোন নিক্তি না থাকলেও বিবেকের কাছে কখনও জিজ্ঞাসা করে দেখেছি , আমাদের ঈমান কোন স্তরে আছে ? ইসলামের প্রথম যুগে সল্প সংখ্যক সৈন্যরা বিপুল সংখ্যক কাফেরেদেরকে পরাজিত করত । সে যুগেও মুসলমানদের মধ্যে গাদ্দার ছিল এ যুগেও গাদ্দার আছে । তবুও আজ কেন বিপূল সংখ্যক মুসলমানরা সল্প সংখ্যক শত্রুদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে ? তাহলে আমরা কি রাসূল ঘোষিত ঈমানের কোন স্তরেই নাই ?
লেখক : রাজু আহমেদ । শিক্ষার্থী , কলামিষ্ট ও প্রাবন্ধিক ।
সরকারী বি এম কলেজ ,বরিশাল ।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৪৭
সত্যকা বলেছেন: আলকোরআন সেতো ঐশী বানী মানব রচিত নয় ,
আধাঁর হেরা হলো উজ্জল নব আলোকময়
২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৭
বেলা শেষে বলেছেন:
আল্লাহর রাসূল ঘোষিত ঈমানের স্তর : আমাদের অবস্থান
Salam & Thenk you very much brother.
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৪
বেলা শেষে বলেছেন: [2:133]
তোমরা কি উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের মৃত্যু নিকটবর্তী হয়? যখন সে সন্তানদের বললঃ আমার পর তোমরা কার এবাদত করবে? তারা বললো, আমরা তোমার পিতৃ-পুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্যের এবাদত করব। তিনি একক উপাস্য।
আমরা সবাই তাঁর আজ্ঞাবহ। তারা ছিল এক সম্প্রদায়-যারা গত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে, তা তাদেরই জন্যে। তারা কি করত, সে সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না।
তারা বলে, তোমরা ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান হয়ে যাও, তবেই সুপথ পাবে। আপনি বলুন, কখনই নয়; বরং আমরা ইব্রাহীমের ধর্মে আছি যাতে বক্রতা নেই। সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা, অন্যান্য নবীকে পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা দান করা হয়েছে, তৎসমুদয়ের উপর। আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না। আমরা তাঁরই আনুগত্যকারী।
অতএব তারা যদি ঈমান আনে, তোমাদের ঈমান আনার মত, তবে তারা সুপথ পাবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সুতরাং এখন তাদের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।