নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত ৫ই জানুয়ারী রবিবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসের ১০ম জাতীয় সংসদের একাংশের নির্বাচন । একাংশ বলার কারন হল, জাতীয় সংসদের মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ টি আসনে ১ জনের বেশি প্রতিযোগী না থাকার কারনে সেখানে আগ থেকেই সাংসদরা মনোনীত হয়ে আছেন ? বাকী ১৪৭ টি কেন্দ্রে ৫ই জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হলো ভোটের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র ! চরম অনিশ্চয়তা ও উৎকন্ঠার মধ্যে দেশবাসী সকাল থেকেই বিভিন্ন গনমাধ্যমে চোখ বুলিয়েছিল নির্বাচনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে । এক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিলনা বিদেশের নামকরা গনমাধ্যমগুলোও । বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সকল গনমাধ্যমগুলো ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে । বিবিসি এবং আল-জাজিরা নির্বাচনের সংবাদকে তাদের প্রধান শিরোনম করেছে । এছাড়া সিএনএন ও রয়টার্স তাদের অন্যতম প্রধান শিরোনাম করেছে নির্বাচন প্রসংগ । বাংলাদেশের মানুষের চোখে কেমন ছিল দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে দেখে নেওয়া দরকার বিদেশী সংবাদ সংস্থাগুলো কিভাবে আমাদের নির্বাচনকে মূল্যায়ন করেছে ।
আল-জাজিরা :
কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা তাদের প্রধান শিরোনামে নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন করেছে । তাতে উল্লেখ করেছে “সংহিসতায় আচ্ছন্ন বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন” । আল-জাজিরা তার প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেছে “বিরোধী দলের বর্জনের মধ্য দিয়ে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল” । বিতর্কিত এই সাধারণ নির্বাচনে বহু ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে । এ সময় পুলিশ ও বিরোধীদলের কর্মীদের মধ্যে সহিংসতায় সারাদিনে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছে । সেই সাথে হাজার হাজার নির্বাচন বিরোধী সমর্থকরা অনেক ভোটকেন্দ্র থেকে বহু ব্যালট বাক্স কেড়ে নিয়ে যায় । পুলিশ জানিয়েছে , কমপক্ষে ২০০ কেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছে বিরোধী সমর্থকরা । আল-জাজিরার মতে, নির্বাচন হয়ে গেলেও বাংলাদেশে আরও বহু মারাত্মক সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে ।
বিবিসি :
“সংঘর্ষ আর বর্জনে বাংলাদেশের নির্বাচন পন্ড” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে লন্ডন ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা বিবিসিতে । প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এই নির্বাচন চলাকালে পুলিশ ও বিরোধী দলের কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সহিংস সংঘর্ষ চলে । ইতোমধ্যে বিরোধীদল এ নির্বাচনকে বর্জন করেছে । রোববারের এ নির্বাচনে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছে । এছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে গত কয়েকদিনে অনেকের প্রাণহানি হয়েছে । এছাড়া শত শত ভোটকেন্দ্রে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে । বিরোধীদল দল এ নির্বাচন বর্জন করে দু’দিনের হরতাল আহ্বান করেছিল । তারা এ নির্বাচনকে ‘কলঙ্কজনক প্রহসন’ বলে অভিহিত করে ।
রয়টার্স :
‘সহিংসতা আর বর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বিজয়’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স । রয়টার্স বলেছে, সংসদীয় নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে দেশের ক্ষমতাশীল দল আওয়ামীলীগ বিজয়ী হতে চলেছে । রয়টার্সের মতে, নিঃসন্দেহে বিরোধীদলের বর্জনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে এ বিজয় কখনো কোন ফলাফল উৎপাদন করবে না । ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি আসনে আওয়ামীলীগ কোন প্রতিদ্বান্ধিতা ছাড়াই বিজয়ী হয় । ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে । তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকগণ এ নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ আখ্যায়িত করেছেন । যাইহোক আশা করা যাচ্ছে, চলতি মাসেই কিছু সময়ের জন্য শেখ হাসিনা একটি নতুন সরকার গঠন করবে ।
আনন্দবাজার পত্রিকা :
“অশান্তির আবহেই মিটল বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন” শিরোনামে তারা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে । পত্রিকাটি তাদের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করে, ১৪৭ টি আসনে নির্বাচনের জন্য দেশের মোট ৫৯টি জেলায় ভোট গ্রহন হয়েছে । তবে চাঁদপুর, রাজবাড়ি, জয়পুরহাট, শরিয়তপুর ও মাদারিপুর এই ৫টি জেলায় ভোট হচ্ছে না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন । দশম জাতীয় নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় সেজন্য নির্বাচন কমিশন দেশব্যাপী সেনাবাহীনি মোতায়েন করেছে । এছাড়া ৮০ হাজার পুলিশ, ৮ হাজার র্যাবব এবং ১৬ হাজার বিজিবি জওয়ান মোতায়েন করে । তাছাড়া ইঞ্জিন চালিত সকল ধরনের যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয় ।
জি নিউজ :
জি নিউজ শিরোনাম করেছে “হিংসার নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল আওয়ামীলীগ” ৮৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয় হাসিনার । ভোট বাতিলের দাবিতে হরতালের ডাক দিয়েছে বিরোধীদল ।
বিবিসি বাংলা :
ভারতীয় উপমহাদেশের জনপ্রিয় বাংলা সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বাংলা তাদের শিরোনাম করেছে “ভোটার নেই, পর্যবেক্ষকেরও দেখা নেই” । বিবিসি আরও বলেছে, বাংলাদেশের বিতর্কিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিদেশী পর্যবেক্ষরা পর্যবেক্ষণ করছেন না । ঢাকায় নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে দেশীয় পর্যবেক্ষরা ছিল খুবই কম । অনেকগুলো কেন্দ্রে পর্যবেক্ষকের কোন উপস্থিতি লক্ষ করা যায় নি । আবার কিছু কেন্দ্রে পর্যবেক্ষরা ছিলেন খোশগল্পে । তবে কমবেশি তারা সবাই জানিয়েছে, ভোটকেন্দ্রগুলোতে তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও আতংকের কারনে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম ।
বিদেশী গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে খবর প্রকাশ করেছে তাতে তারা বাংলাদেশকে একেবারে ধুয়ে দিয়েছে । দলীয় স্বার্থের কারনে সংগঠিত সংঘাতকে কেন্দ্র করে দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বের দরবারে আরও একবার ন্যাক্কারজনকভাবে মঞ্চস্থ হল । যেটা আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ বাংলাদেশের নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কোন অবস্থায় কাম্য নয় ।
কেমন হয়েছে বাংলাদেশের দশম জাতীয় নির্বাচন সেটা বাংলাদেশের গনমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের ব্যাখ্যা বিশ্লেষন থেকে দেখে নেওয়া যাক ।
রোববার সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহন শুরু হয় । কোটি কোটি বাঙালির মত আমিও রিমোট হাতে টিভির সামনে বসেছিলাম । যতগুলো বাংলা চ্যানেল আছে তার সবগুলোই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেছি । নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতিটা ভোট কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে । বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম দশ থেকে পনেরো মিনিট পরপর নির্বাচনী বুলেটিন সম্প্রচার করেছে । প্রায় সকল টেলিভিশন ভোটকেন্দ্র থেকে লাইভ সম্প্রচার করেছে । নির্বাচনী বুলেটিন সম্প্রচার করার ফাকে ফাকে গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন ক্যাটাগোরির বিশেষজ্ঞ দ্বারা নির্বাচনের বিভিন্নদিক বিশ্লেষণ করিয়েছে । ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪৭টি সংসদীয় আসনে সর্বমোট ১৮ হাজারের কিছু বেশি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহন হয়েছে । বাংলাদেশের ডজনদুয়েক স্যাটেলাইট টেলিভিশন সহস্রাধিক ভোট কেন্দ্রের অবস্থা দর্শকদের দেখাতে পারলেও বাকী ভোট কেন্দ্রগুলো থেকে গিয়েছিল পর্যবেক্ষনের বাইরে । টেলিভিশনগুলোর কল্যানে যতগুলো ভোটকেন্দ্র দৃষ্টিগোচর হয়েছে তাতে যে বিষয়টি সবচেয়ে লক্ষনীয় ছিল সেটা হল, ভোটারদের অনুপস্থিতি । ভোট শুরু হওয়ার ৩-৪ ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোন কোন কেন্দ্রে একজন ভোটারও উপস্থিত হয় নি । অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র ছিল যাতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল শতকের নিচে । এর মধ্যে ধ্বংসজ্ঞও কম হয় নি । ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই , দাওয়া-পাল্টা দাওয়াও কম ছিল না । নবম জাতীয় সংসদের বিরোধী দল বিএনপি থেকে দাবি করা হয়েছে জনগন নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে । সেই ধারাবাহিকতায় বিএনপির অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় নেতা ড. মঈন খান বলেন, এ নির্বাচনে অনধিক ৪% ভোট পড়েছে । আওয়ামীলীগের তরফ থেকে জানানো হয়েছে অধিক ঠান্ডা ও শৈত্য প্রবাহের কারনে বেশির ভাগ লোক ভোট দিতে উপস্থিত হতে পারে নি । তারপরেও ৫০% অধিক ভোট পড়েছে । তাদের দুই দলের বিবৃতিতে ব্যাপক পার্থক্যের কারনে তথ্যের জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের শরনাপন্ন হতে হল । নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশী বিদেশী মিলিয়ে প্রায় পৌঁণে দুইলাখ নির্বাচন পর্যবেক্ষক থাকলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারত ও ভুটানের মোট চারজনসহ দেশী পর্যবেক্ষক মিলিয়ে সংখ্যাটা ১৫ হাজারে উপনীত করা যায় নি । বিভিন্ন দেশ থেকে ত্রুটিপূর্ন নির্বাচন আখ্যা দিয়ে পর্যবেক্ষক না পাঠালেও সার্কের সদস্য হিসেবে ভারত ও ভূটান থেকে কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ জন বিদেশী পর্যবেক্ষক আনতে সক্ষম হয়েছে নির্বাচন কমিশন ! বিদেশী পর্যবেক্ষক দলের প্রধান ঢাকার কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেই বেলা বারটা নাগাদ সাংবাদিকদের জানান নির্বাচন খুবই সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ন হচ্ছে ! দেশীয় পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ইলেকশান মনিটরিং এলিয়ান্স (ফেমা) এর সভাপতি মুনিরা খান চ্যানেল ২৪ এর একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষন করে আমার মনে হল শতকরা ১০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি ।
ভোট শেষ হওয়ার পরে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি দায়সারা নির্বাচনী ব্রিফিং দিয়ে জানানো হয়েছে, শতকরা ৯৭ শতাংশের বেশি ভোট কেন্দ্রে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে । তবে তারা তখনও জানাতে পারেনি আসলে কত শতাংশ ভোট পড়েছে । ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফ্রেবুয়ারী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রধান বিরোধীদলবিহীন যে নির্বাচন হয়েছিল তাতে ২৬ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পড়েছিল । তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫১ শতাংশ এবং ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ৬৬ শতাংশ ভোট পাওয়ার পরও সরকার নির্বাচিত দল ক্ষমতার পাঁচ বছর পূর্ন করতে পারে নি শুধু মাত্র সে সকল নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদল অংশগ্রহন না করার কারনে । এ সকল নির্বাচনের মধ্যে সর্বনিম্ন ১২ দিন ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল খালেদা জিয়া এবং আড়াই বছরের কিছু বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল সাবেক স্বৈর-শাসক এইচ এম এরশাদ । বিরোধীদল বিহীন ১০ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে সেটাই এখন দেখার বিষয় । ইতোমধ্যে জার্মান ভিত্তিক বাংলা সংবাদ মাধ্যম ভয়েচ ভেলে আওয়ামীলীগের ভবিষ্যত নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে । সেখানে তারা বলেছে “ সব দলের অংশগ্রহনে আরেকটি নির্বাচন প্রয়োজন” ।
সরকার এবং তাদের গৃহপালিত নির্বাচন কমিশন এবং টাকা দিয়ে ভাড়ায় আনা নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদল নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছতায় ভরপূর বললেও বাংলাদেশের গনমাধ্যম কিন্তু সে কথা বলে না । যার কারনে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ১৪৭ টি নির্বাচনী সিটের মধ্যে ২১ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেন । নির্বাচনের পরের দিন বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা (বর্তমানে অনলাইন) আমার দেশের একটি শিরোনামে পাঠকের অবশ্যই চোখ আটকাবে । সেখানে তারা শিরোনাম করেছে, স্বররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বীরত্বের গল্প । তিনি একাই ৪৭৫টি ভোট দিলেন । বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সংবাদ অনুযায়ী আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র হতে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং অন্যান্য দলের প্রার্থীদের এজেন্টদেরকে বের করে দিয়েছে । অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে মারধর এবং লাঞ্ছিত করেছে । মঠবাড়ীয়ার কে এম লতিফ ইনিস্টিটিউশন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাঃ রুস্তুম আলী ফরাজীর এজেন্টদেরকে বের করে দিয়েছে আওয়ামীলীগের সাবেক সাংসদ ডাঃ আনোয়ার হোসেন । এছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে অনেক অনৈতিক গল্প । খূলনার আওয়ামী সমর্থক এক তরুন জাল ভোট দিয়ে সেঞ্চুরি করে উৎসব করেন । তিনি বলেন, ভোট দিলেও আমার দল জিতবে না দিলেও আমার দল জিতবে । তাই কয়েকটা ভোট দিয়ে আমার প্রার্থীর ভোট বাড়ালাম । আর টিভির মুক্তবাক অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এক দর্শক ফোন করে জানান তিনি ভোট দিতে গিয়ে জানতে পারেন তার ভোট আগেই দেয়া হয়েছে । ফেসবুকে একবন্ধু মেসেজ পাঠায়, ‘ভাই দোয়া কইরেন আমার ভোট দিতে না পারলেও পাঁচখান জাল ভোট দিয়েছি’ । এক প্রতিবেশী ভোটের দিন সন্ধ্যার পরে জানায়, তিনি এক বার ভোট দিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একশ ভোট দিয়েছেন । রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার এক স্থানীয় জানায় “তাদের বাড়ীর সামনের ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪০০০ বেশি । সকাল থেকে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থেকে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করেতে দেখেছে মোট ১৫২ জনকে । কিন্তু বিকাল বেলা সেখানের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ঘোষনা করেন ২৮০০ কিছু বেশি ভোট কাউন্ট হয়েছে । সংবাদমাধ্যমের কল্যানে জানা গেছে, যে সকল ভোট কেন্দ্রের ব্যালট পেপার ও ভোট বাক্স দূর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দিয়েছে সে সকল কেন্দ্রেও কাউন্ট ভোটের জাল রিপোর্ট তৈরি করার জন্য উপর থেকে আদেশ আছে ।
দেশের চলমান সংহিসতার কারনে অনেকেই ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হতে ভরসা পান নি । অনুপস্থিতির আওতায় যেমন বিএনপির ভোটাররা ছিল তেমনি আওয়ামীলীগের সমর্থকও কম ছিল না । আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির দ্বন্ধই ভোটারদেরকে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে অনুৎসাহিত করেছে । বিএনপির কঠোর হুশিয়ারীর মধ্যেও সর্বদলীয় সরকারের পোশাকে আওয়ামীলীগ সরকার সংবিধানের সম্মান বাঁচানোর জন্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে পেরেছে , সেজন্য তারা সাধুবাদ দাবি করতেই পারে । ৩০০ আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় ১৫৩ আসন লাভ করে দেশবাসীর কাছে তাদের গ্রহনযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে ! কিন্তু ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনে তাদের দাবী অনুযায়ী কোন রকম দূর্নীতি হয় নি সেটাও দেশবাসী মেনে নিত, যদি দেশবাসীর দেখার সাথে শোনার মিল থাকত । সে মিল আওয়ামীলীগের কাছ থেকে দেশবাসী পায় নি । দেশবাসী যেটা প্রত্যক্ষ করেছে তার সাথে বর্তমানে যা শুনছে তার কোন মিল নাই । ১৫৩ আসন নির্বাচনের আগেই অর্জন করে যারা সরকার গঠনে পুরোপুরি সামর্থবান তাদের থেকে এরকম আচরন জনগন কোন অবস্থাতেই কামনা করতে পারে না । তাহলে কি দেশবাসীকে তাদের পূর্ব বিশ্বাস থেকে সরে এসে ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনের আলোকেই নীতি-নৈতিকতা গঠন করতে হবে ? ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন থেকেই মানুষকে বুঝতে হবে ‘এই তাহলে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার ধরন’ । তোমরা যেমনি নাচাও তেমনি নাচে পুতুলের কি দোষ । আওয়ামীলীগ থেকে জনগন যে স্বচ্ছতা এবং সুষ্ঠুতার সংজ্ঞা পেয়েছে এই স্বচ্ছতা এবং সুষ্ঠুতা দিয়েই ভবিষ্যতে মানুষ আওয়ামীলীগের সাথে আচরণ করবে । নির্বাচন শেষে আওয়ামীলীগের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা তোফায়েল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন “এ নির্বাচন দ্বারা গনতন্ত্রের বিজয় হয়ছে” । দেশবাসীও মনে করে আসলেই গনতন্ত্রের বিজয় হয়েছে । তবে সেটা ‘নেতি-বাচক গনতন্ত্রের’ !!
লেখক : রাজু আহমেদ । শিক্ষার্থী ও কলামিষ্ট ,
সরকারী বি এম কলেজ, বরিশাল ।
[email protected]
©somewhere in net ltd.