নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশে নিরবে-নিভৃতে একটা কাজ হয়েছে । আশঙ্কাজনভাবে কমে গেছে সংবাদপত্রের পাঠক । বিশেষ করে সংবাদপত্রের যে অংশজুড়ে রাজনৈতিক খবরা-খবর ছাপানো হয় সে অংশে অনেকেই এখন আর চোখ বুলান না । এটা কোন সংবাদপত্রের বা সংস্থার গবেষণাধর্মী রিপোর্টের ফল নয় । দৃঢ়ভাবে বলা যায়, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে পারিপার্শ্বিক আপনজনের সংবাদপত্র বিমুখতাই এর প্রমাণ দেয় । বাংলাদেশের সংবাদপত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক খবর ছাড়াও আরও শত বিষয়ে শিরোনাম ভিত্তিক মজার মজার শিক্ষামূলক ও ইতিহাস সংস্কৃতি সম্মৃদ্ধ খবর থাকে । সংবাদপত্রের পাঠকপ্রিয়তা কমে গেছে বললে অনেকেই নাক সিঁটকাবেন তবে সংবাদপত্রের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত রাজনৈতিক পরিমন্ডলের খবরের পাঠক এবং চাহিদা কমে গেছে এটা বললে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করবেন না । সংবাদপত্রের পাঠকপ্রিয়তা হঠাৎ করে হ্রাস পাওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারন খুঁজে পাওয়া যায় । সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাশীল আওয়ামীলীগের স্বেচ্ছাচারিতা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ সাহেব কর্তৃক নানা নাটকের অবতারণা করে অবশেষে নির্বাচনে অংশগ্রহন এবং সাবেক প্রধান বিরোধীদল বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহন না করাই সংবাদপত্রের পাঠকপ্রিয়তা হ্রাসের পিছনে কারন হিসেবে ধরা যায় ।
উপরো্ক্ত বিষয়ের সাথে যোগ হয়েছে সম্মানিত সাংবাদিকদের পেশার অপব্যবহার এবং সংবাদপত্রকে সংবিধান প্রদত্ত সুযোগ সুবিধার উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ আরোপিত করে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বেধে দেয়া নির্দিষ্ট পরিমন্ডল । বর্তমান সময়ে সংবাদপত্র পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় এ সকল দিকগুলো খুব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে । দৃশ্যত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া এমনকি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করার সূচনালগ্ন থেকেই আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার প্রয়োজনেই সর্বদলীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে বিশেষ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হতে হবে । সংবিধানের পনেরতম সংশোধনী অনুযায়ী অনুরুপ নির্বাচন করতে না পারলে গনতন্ত্র যেভাবে পর্যুদস্ত হবে তেমনি সংবিধান লংঘন করা হবে । গনতন্ত্রের মানস কন্যা হিসেবে দেশরত্ন শেখ হাসিনা দ্বারা সংবিধানের কোন অংশের সামান্য লংঘনও সম্ভব নয় । অপরদিকে সকল সময়ের আলোচিত রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির স্বণামধণ্য(!) চেয়ারম্যান কর্তৃক সময়ের সেরা ডিগবাজীও সংবাদপত্রের পাঠক প্রিয়তা কমানোর পিছনে বহুলাংশে দায়ী । এরশাদ সাহেব নির্বাচনপুর্ববর্তী সময়ে সকালে যেকথা বলতেন দুপুরে সে কথা মনে রাখতেন না । আবার দুপুরে যেটা বলতেন রাতে সেটা ধারে কাছেও ঘেঁষতেন না । বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত আমোদপ্রিয় । সকল কৌতুকের মধ্যে রাজনৈতিক পরিমন্ডলের কৌতুককে এরা বেশি প্রধাণ্য দেয় । বাঙালীরা রাজনৈতিক কৌতুককে শুধু পাঠ করে ক্ষান্ত হয়না বরং মুখস্ত অথবা ঠোটস্ত করতে যতটুকু শ্রম দেয়া দরকার তার সবটুকুই উজাড় করতে এরা সদা প্রস্তুত । তবে কৌতুকেরও তো একটা সীমা আছে । কত আর হাসা যায় । পেটে ভাত না থাকলে আনন্দকেও বিস্বাদ মনে হয় । তাইতো বাঙালী এত কৌতুকের চাপ সহ্য করতে না পেরে অবশেষে অতীতের সহনীয় অল্প-সল্প কৌতুক লাগামহীনভাবে চলতে শুরু করায় তারা কৌতুককে একেবারেই ত্যাগ করেছে । যার প্রভাব পড়েছে সংবাদপত্র পাঠের উপর ।
গ্রামে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে “যত গর্জে তত বর্ষে না” । বিএনপির সাথে এ প্রবাদ বাক্যটি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত । নির্বাচন যে কোন মূল্যে রুখে দেব । জনগন ভোটকেন্দ্রে যাবে না । নির্বাচনকে জনগন বয়কট করেছে । সরকারের মেয়াদ হবে কয়েকঘন্টার অথবা কয়েকদিনের । বিএনপির এত সব আস্ফালনের সাথে কর্মের কোন মিল না দেখে জনগন বিএনপি থেকেও ধীরে ধীরে মূখ ফিরাতে শুরু করেছে । সর্বদলীয় সরকার গঠন করার পর বিএনপি এর তীব্র বিরোধীতা করে লাঘাতার নানাধরনের কর্মসূচী পালন করেছে । অত্যন্ত আশ্চার্যজনক হলেও সত্য যে, এসকল আন্দোলন কর্মসূচীতে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় দু’একজন নেতা সরাসরি অংশগ্রহন করলেও বেশিরভাগ নেতাই ছিল লোক-চক্ষুর অন্তরালে । সুতরাং বিএনপির এসকল দিকের বিবেচনায় জনগন বিএনপির প্রতি আস্থা হারিয়ে সংবাদপত্র পাঠ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ।
সাংবাদিকতার পেশাকে যেমন চ্যালেঞ্জের পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয় তেমনিভাবে মহৎ আদর্শের পেশা হিসেবেও বিবেচনা করা হয় । বিখ্যাত মনীষী ও শিক্ষাবিদ কালাইল সাংবাদিকের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিলেন “সাংবাদিকতা একটি বিরাট কাজ । প্রত্যেক দক্ষ সম্পাদকই এক একজন শাসক নন কি ?” । অস্কার ওয়াইল্ড সাংবাদিকদের ক্ষমতার ধারণা দিতে গিয়ে বলেন “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্টি সময় পর্যন্ত রাজ্য শাসন করেন কিন্তু একজন সাংবাদিক তার সমস্ত জীবন ধরে রাজ্য শাসন করে থাকেন” । সাংবাদিকদের সম্বন্ধ্যে মনীষীদের ধারনা আজও ঠিক আছে তবে তাদের প্রদত্ত সংজ্ঞায় কিছুটা পরিবর্তন আশু আবশ্যক হয়ে পড়েছে । অতীতে সাংবাদিকদের পরিচয় ছিল শুধুই সাংবাদিকতা । সাংবাদিকরা ছিল সত্য-ন্যায়ের মূর্ত প্রতীক । সত্য উদঘাটন করাই ছিল সাংবাদিকদের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব । জীবিকার তাগিদে সকল মানুষেরই অর্থ-বৃত্তের প্রয়োজন আছে । সাংবাদিকদেরও অর্থ-বৃত্ত প্রয়োজন । অন্যান্য মানুষের মত শুধু স্বাভাবিক প্রয়োজন বললে বলাটা সঠিক বলা হবে না । বরং অন্যান্য পেশাজীবি মানুষের তুলনায় সাংবাদিকতার পেশা অত্যন্ত হুমকীর । সাংবাদিকরা যে কোন সময় যে কোন বিপদের মূখোমূখি হতে পারে । একথায় অনিশ্চিত জীবন । সুতরাং সাংবাদিকদের পরিবারের নিশ্চয়তার জন্য নিশ্চিত করতে হবে তাদের আগামীকে । তাই বলে সাংবাদিক বস্তনিষ্ঠ সত্য সংবাদ প্রচার বাদ দিয়ে ব্যক্তিনিষ্ঠ মিথ্যা সংবাদ প্রচার করতে পারেন না । সাংবাদিকতার অঙ্গনে জন্ম হয়েছে হলুদ সাংবাদিকতা । সাংবাদিকরা সত্য সংবাদ প্রকাশ করা চেয়ে সন্দেহমূলক সংবাদের প্রতি বেশী ঝুঁকে পড়েছেন । যার কারনে পাঠকসমাজ বস্তু নিষ্ঠ বাস্তব সংবাদ জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । সেকারনেই পাঠকরা সংবাদপত্রের অনেক খবরকে সন্দেহমিশ্রিত অমূলক দাবী করে সংবাদপত্র পাঠ থেকে বিরত থাকছে ।
পৃথিবীর কোন সভ্যতায় শাসকগোষ্ঠী তাদের সমালোচনাকে স্বাভাবিক পথে গ্রহন করে নি । সমালোচকদের সমালোচনা বন্ধ করার উপায় হিসেবে গ্রহন করেছে বিভিন্ন পথ । এ সকল পথের কিছু অংশ মানবতার জন্য কল্যানকামী হলেও প্রায় সিংহভাগ পদক্ষেপই মানবতার জন্য হুমকি হয়ে চিহ্নিত হয়ে । বাংলাদেশও এ গন্ডির আওতামুক্ত হতে পারেনি । স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক শাসকগোষ্ঠী সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের উপর চালিয়েছে নগ্ন হামলা । বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ নং ধারার ১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল”। ৩৯ নং ধারার ২ নং অনুচ্ছেদের (ক) এবং (খ) তে বলা হয়েছে “প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের ও সংবাদপক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল”। সংবিধানের এ নিতীমালার সাথে বাংলাদেশের বাস্তবতার কোন মিল নেই । শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন সময় সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে চাপিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন যুক্তিহীন আইন । এর কয়েকটা কাগজ-কালিতে লিপিবদ্ধ থাকলেও অধিকাংশ মৌখিকভাবে চাপানো । যার কারনে সাংবাদিকরা সত্য খবরকে সেন্সর করে শাসগোষ্ঠীর ইচ্ছানুযায়ী প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছে । শাসকগোষ্ঠীর ইচ্ছার বিরুপ কিছু হলে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের উপর অঘোষিতভাবে নেমে আসে জুলুম অত্যাচার । আজ সময় এসেছে । সাধারণ মানুষ সত্য মিথ্যার পার্থক্য করতে পারে । আলো আঁধারের পার্থক্য বুঝে । সেকারনে দিন দিন সংবাদপত্র পাঠ থেকে সাধারণ জনগন মূখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ।
২০ বছরের সোহেল । ছাত্রজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো পার করছে । লেখাপড়া ছাড়া কোন কাজে মন নাই । জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে কৃতিত্বের সাথে লেখা-পড়া শেষ করে সম্মানজনক একটা চাকরি পেতে হবে । তাইতো বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বাসায় পড়াশুনা নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় পার করে । শত ব্যস্ততার মাঝেও পত্রিকা পড়া ছিল তার নিত্য নৈমিত্তিক রুটিন । দেশের রাজনৈতিক খবরা-খবর থেকে শুরু করে দেশ বিদেশের সকল খবরা-খবরের সাথে শিক্ষা সংস্কৃতি এবং খেলাধুলার খবর তাকে পড়তেই হবে । যে দিনগুলোতে পড়াশুনার চাপ একটু কম থাকে সে দিনগুলোতে একাধিক পত্রিকা পড়া সোহেলের কাজ । তবে যত ব্যস্ততাই হোক অন্তত একটা জাতীয় পত্রিকা সে পড়তই । ইদানীং অনেক ব্যতিক্রমী হিসেবে লক্ষ্য করছে নিজেকে । রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক খবরগুলো ছিল তার নখ-দর্পনে । তবে দশম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সোহেল রাজনৈতিক কোন খবরে চোখ বুলান না । বহি-বিশ্বের কিছু গুরুত্বপূর্ন খবরের সাথে খেলা, শিক্ষা এবং বিনোদনের পাতায় চোখ বুলান । তবে আগের মত এখন আর সংবাদপত্র পাঠের প্রতি আকৃষ্ট হন না ।
লেখক : রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
[email protected]
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৩২
সত্যকা বলেছেন: আপনার ক্ষেত্রে ঠিক না হলেও অসংখ্য অগনিত মানুষের ক্ষেত্রে পুরোপুরি ঠিক । ধন্যবাদ আপনার বিশ্লেষণাত্বক মতামতের জন্য । কষ্ট করে হলেও আরেকবার পরে ত্রুটিগুলো অবহিত করবেন ।
আগামীর প্রেরণা হিসেবে একটু অবদান রাখুন ।
২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:১৫
ইমরান হক সজীব বলেছেন: একেবারেই আবল তাবোল বক্তব্য । গত ৬ মাসে অনলাইনে প্রথম আলোর পাঠক সংখ্যা প্রায় দিগুন হয়েছে । ১১০০ থেকে এখন ৮১০ র্যংকিং । ১১০০ আর ৮১০ অনেক পার্থক্য । ভিজিটর দিগুনের ও বেশি হওয়া লাগবে ।
কোন হকার কেও শুনলাম না বলতে যে পাঠক কমেছে । আপনার কথামত এইভাবে পাঠক কমে গেলে কারো না কারো কাছে অবশ্যই শুনতাম ।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৭
আমান৮২ বলেছেন: কি বুঝাতে কি বুঝালেন কোথাথেকে শুরু কোথায় কি কিছুই বুজলাম না , আর সবচাইতে বড় ব্যাপার আপনি যে শিরোনাম দিয়েছেন তা মোটেও ঠিক না।