নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পিকনিকের বাস খাঁদে পড়ে ৩০জন আহত, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার পিকনিকের বাস খাঁদে-আহত কমপক্ষে ৩৫জন, এরকম হাজারও পিকনিকের বাস দূর্ঘটনার কবলে পড়ার কথা আমাদের জন্য নিত্য-নৈমিত্তিক খবর হয়ে দাড়িয়েছে । পত্রিকার পৃষ্ঠা উল্টালে অথবা টিভির চ্যানেল পাল্টালে পিকনিকের বাস দূর্ঘটনা সংক্রান্ত একের পর এক খবর দেখতে পাওয়া যায় । গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পিকনিক শেষে বেনাপোল ফেরার পথে যশোরের চৌগাছা উপজেলার ঝাউতলা নামক স্থানে শতাধিক স্কুল শিক্ষার্থী বহনকারী একটি বাস রাস্তার পাশে গভীর খাঁদে পড়ে যায় । এতে দূর্ঘটনাস্থলেই ৭জন শিশু নিহত হয় পরবর্তীতে সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে থেকে একরামূল হক (১০) মারা যায় । এ মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় প্রায় ৭০জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয় । যশোরের এ দূর্ঘটনাটি সারা দেশকে শোকে মূর্ছমান করে ফেলে । দূর্ঘটনার খবরকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয । ১৭ই ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের সকল প্রাইমারী স্কুলে দূর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠান করা হয় । কেউ কেউ ১৫ই ফেব্রুয়ারীকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণার দাবী উত্থাপন করেন । সর্বশেষ ০৩-০৩-’১৪ গাইবন্ধার ফুলছুড়ি উপজেলার ‘খাবিরিয়া মাদ্রাসার’ একটি পিকনিক বাস ভাত খাঁদে পড়ে যায়, এতে ঘটনাস্থলেই ২জন নিহত এবং ২৫জন গুরুতর আহত হয় । অত্যন্ত দূর্ভাগ্যের হলেও সত্য যে, পিকনিকের বাসগুলির দূর্ঘটনার কারন এবং এর প্রতিকার নিয়ে কেউ উল্লেখ যোগ্য কোন কথা বা পদক্ষেপ নিচ্ছেন না ।
বাংলাদেশে সাধারণত সারা বছরব্যাপী শিক্ষাসফর বা পিকনিক চলে । তবে আবহাওয়া ও শিক্ষা কাঠামো বিবেচনায় ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা শিক্ষা সফর করেন । বাস দূর্ঘটনা এদেশে কোন নতুন ঘটনা নয় তবে পরিবহন, কোচ বা লোকাল বাসের তুলনায় শিক্ষাসফর বা পিকনিকের বাস দূর্ঘটনার হার তূলনামূলক অনেক বেশি হওয়ার কারন কী ? গত কয়েকদিন আগে একটি অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম, দেশের স্বনামধন্য একজন লেখক দূরে কোথাও শিক্ষাসফর বা পিকনিকে না গিয়ে নিজস্ব গন্ডির মধ্যে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করার পরামর্শ দিয়েছেন । অন্যথায় এ জাতীয় প্রথ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন । এ যেন ‘মাথায় উঁকুন হলে মাথা কেটে ফেলার’ মত অবস্থা । তবে এ লেখকের মতের সাথে স্বজন হারানো পরিবার শুধু একমত হবেন না বরং জোড়ালোভাবে সমর্থনও করবেন । আমার অভিভাবকের মত যারা কোন অবস্থায় সন্তানকে হারাতে চান না তারা হয়ত কোন অবস্থাতেই বাধ্যগত সন্তানদেরকে শিক্ষাসফর বা পিকনিকে যাওয়ার অনুমতি দেবেন না । আর এটাই স্বাভাবিক । পিকনিক বা শিক্ষাসফরের বাস যে সকল কারনে দূর্ঘটনায় পতিত হয় সে সকল কারন খুঁজে বের করে তার সমাধান করে অবশ্যই পিকনিক বা শিক্ষা সফরে যেতে হবে । কেননা শিক্ষা সফর শিক্ষা অর্জনের অন্যতম একটি প্রধান মাধ্যম । এমনকি ইসলাম ধর্মেও সফরের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে । শিক্ষাসফরের মাধ্যমে একদিকে যেমন ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তেমনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে দূরত্ব কমে আসে । যার ফলে শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহন প্রক্রিয়া সাবলীল হয়ে আসে । এছাড়াও শিক্ষা সফরের মাধ্যমে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের দর্শনীয়স্থান সম্পর্কে সম্যক ধারনা লাভ করে যা বই পড়ে হাজার বছরেও অর্জন করা সম্ভব নয় ।
শিক্ষাসফরের বা পিকনিকের বাসগুলো অধিকহারে দূর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারন আছে । ছাত্রজীবনে স্ব-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্য্ন্ত একবার সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা আরেকবার কুমিল্লাবার্ড, ময়নামতিসহ স্থানীয় অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছি । এ দু’টো সফরে অনাকাঙ্খিত কিছু না ঘটলেও প্রতিমূহুর্তে উপলব্ধি করেছি দূর্ঘটনা কেন ঘটে । শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ার পর প্রতি মূহুর্তে মনে হয়েছে এই বুঝি কিছু একটা হল । স্বভাবত যে সকল কারনে পিকনিকের বাস দূর্ঘটনায় পড়ে-
* শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস । ভ্রমনের প্রারম্ভ খেকেই শিক্ষার্থীরা বাসের মধ্যে হই-হুল্লুরে মেতে থাকে । এ চিৎকার চেঁচামেচিতে বাস চালকের মনঃসংযোগ ব্যাহত হয় । ফলশ্রুতিতে দূর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায় । এটাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফর অথবা পিকনিকের বাস দূর্ঘটনার প্রথম এবং প্রধান কারণ ।
* বাস চালকের দীর্ঘ অনিদ্রা । অনেকসময় দেখা যায় দীর্ঘদিনব্যাপী শিক্ষা বা পিকনিকে যাওয়া হয় । এটা অনেক সময় চার-পাঁচদিন বা তারও বেশি সময় হতে পারে । শিক্ষাসফর বা পিকনিকের ধরনেই হল একস্থান থেকে অন্যস্থানে ছুটা । যে কারনে বাসের চালক পরিমিত পরিমান এমনকি মোটেও ঘুমোতে পরে না । এ কারনে বাস চালানো অবস্থায়ই বাস চালকের তন্দ্রা আসে । এটাও দূর্ঘটনার অন্যতম কারন ।
* শিক্ষাসফর, পিকনিক বা অন্যান্য পরিবহন চালানোর সময় চালককে অনেক সময়ে মোবাইলে কথা বলতে দেখা যায় এবং তাতে তিনি উত্তেজিত হয়েও পড়ে । বাস বা অন্য কোন গাড়ী চালালোর সময় মোবাইলে কথা বলা নিষিদ্ধ বলে আইন থাকলেও বাস্তবতায় সেটার বাস্তবায়ন দেখা যায় না । এ কারনে দূর্ঘটনা ঘটে ।
* অদক্ষ চালকের অনভিজ্ঞতার কারনে দূর্ঘটনা হয় । শিক্ষাসফর বা পিকনিকের বাস যেখান থেকে ভাড়া করা হয় সেখানের বাস মালিকেরা নিয়মিত দক্ষ ড্রাইভারদের নিয়মিত পরিবহনের জন্য রেখে অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও বেকার ড্রাইভারদের দিয়ে পিকনিকের বাস পাঠান । এ সকল ড্রাইভারদের অনভিজ্ঞতা, অদক্ষতার কারনেও দূর্ঘটনা ঘটে ।
* শিক্ষাসফর বা পিকনিকের বাস অন্যান্য বাসের তূলনায় অধিক দ্রুত গতিতে চালানো হয় যার কারনে চালক বাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রন রাখতে পারে না । আর তখনই দূর্ঘটনা হয় ।
* বাসের কিছু চালকরা নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহন করে বাস চালায় । দীর্ঘ ভ্রমনের ক্ষেত্রে নেশাগ্রহনের মাত্রা বেশি হয় । সেজন্য দূর্ঘটনা ঘটে ।
* শিক্ষাসফর বা পিকনিকের বাসে যাত্রাপথেই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হয় । যেজন্য বাসের চালক এবং তার সহযোগী গানের প্রতি মনোযোগী হয় । আর তখনই বাস চালানোর প্রতি ড্রাইভারের মনঃসংযোগ পূর্ণমাত্রায় থাকে না । একারনেও দূর্ঘটনা হয় ।
* শিক্ষাসফর বা পিকনিকের উদ্দেশ্যে যাত্রা প্রায়ই রাত্রিকালীন সময়ে হয় । রাত্রে যে সকল গাড়ী চলে তার গতি স্বভাতই দিনে চলানো গাড়ীর তুলনায় বেশি হয় । সেকারনে চালকের একটু অমনযোগীতাই শত শত জীবনকে ধ্বংস অথবা পঙ্গু করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ।
সুতরাং উপরোক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করে যদি শিক্ষাসফর বা পিকনিক আয়োজন করা যায় তবে সে শিক্ষাসফরে প্রাণ নাশের আহাজারি থাকবেনা বরং সফর হবে চিন্তামুক্ত এবং আনন্দের । মুকুলেই আর কোন সম্ভাবনা হারাবে না । কোন পিতা-মাতাকেও বুকেরধন হারানোর আহাজারি নিয়ে বুকে কষ্টের পাথর চাপা দিয়ে বেঁচে থাকতে হবে না । শিক্ষা সফর শুধু আনন্দ আর বিনোদনের জন্য নয় বরং শিক্ষা অর্জনের জন্য । শিক্ষা মানুষকে মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য নিয়ে মানুষ হতে সাহায্য করে । অতএব শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর যে প্রান্তে, যে পরিবেশে থাকুক না কেন মানুষের গুনাবলি নিয়ে থাকা উচিত । স্রষ্টা প্রদত্ত জীবনকে মূল্যবান মনে করে জীবনের দাম দেয়াই হোক আমাদের পণ । সরকারও যেন সড়ক পরিবহনের আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন করে সকলের জীবন রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহন করে সেজন্য সরকারের প্রতি বিনীত আবেদন রাখি । সবচেয়ে বড় কথা একটু সচেতনতাই মহামূল্যবান জীবন রক্ষা করতে পারে ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
[email protected]
২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৩৬
ঢাকাবাসী বলেছেন: বাংলাদেশ দুনিয়াতে একমাত্র দেশ যেখানে ট্রাফিক আইন বলে কিছুই নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার মালিক মন্ত্রী বা নেতারা! গরু ছাগল চিনলেই লাইসেন্স! লেখাপড়ার দরকার নাই!! একসিডেন্ট তো হবেই। মরতে থাকেন।
৩| ০৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৩৯
সুমন কর বলেছেন: ভালো বলেছেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৫২
এম আর ইকবাল বলেছেন: আমাদের আইন এবং তার প্রযোগ এর মধ্যে র্দূবলতার কারণে
এ সব অঘটন ঘটছে ।
কি শাস্তি আছে র্দূঘটনা ঘটালে ?
কি হবে মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ী চালালে ?
কে দেখবে ।
ইত্যাদি ইত্যাদি ..................