নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দীর্ঘ বিরতির পর দেশ আবারো তেঁতে উঠতে শুরু করেছে । দেশের সর্বস্তরের মানুষ সরকারের সাম্প্রতিক বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাতে পারে নি বরং এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনরোষ সৃষ্টি হয়েছে । দেশের সর্বস্তরের মানুষ দল-মতের উর্ধ্বে অবস্থান করে সরকারে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে । বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগেই তার প্রজা সাধারণকে চিল্লা-পাল্লা করতে নিষেধ করেছিলেন । জনগণ খুব স্পর্ধার কাজ করেছে । দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথার অবাধ্য হয়েছে । সবগুলোর শাস্তি হওয়া উচিত !! জনগণ আবারো প্রমান করল দেশের এবং দেশের মানুষের স্বার্থ বিরোধী কোন সিদ্ধান্ত হলে সেটার বিরোধীতা তারা করবেই । তাতে কোন বিশেষ ব্যক্তির মর্যাদার হানি হলেও জনগণের কিছু যায় আসে না । হঠাৎ করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর নেপথ্যে সরকারে কি পরিকল্পনা কাজ করেছে তা অনেকেইবোধগম্য নয় । যে সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে সরকার ২০০৯ সালে তেল ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করে এবং বেশি দামের বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত নেয়, সে অনুযায়ী ২০১৪ সাল থেকে বিদ্যুতের দাম কমার কথা অথচ পহেলা মার্চ থেকে আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারন কী ? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই দেশবাসী ব্যস্ত ।
সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সরকার বিরোধীরা একটি সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে দেশে অস্থির অবস্থা সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে বলে সরকারে উচ্চমহল থেকে অনেকেই দাবী করছে । তবে দেশের সাধারণ মানুষ সরকারের এ হঠকারী সিদ্ধান্তকে কোন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করতে নারাজ । সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে দেশবাসীর অসন্তোষ থেকে বাঁচার জন্য কয়েক দফা গণ-শুনানির আয়োজন করেছিল । উদ্দেশ্য ছিল জনতার মতামত পর্যবেক্ষন করে সে অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে । সরকার তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুতে পারে নি । গণ-শুনানিতে সকলেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিপক্ষে মত দিয়েছে । তারপরেও সরকার জনতার মতামতকে উপেক্ষা করে মার্চ মাসের ১ তারিখ থেকে বিদ্যুতের পূর্বের মূল্যের সাথে শতকরা প্রায় ৭% (৬.৯৬%) মূল্য বৃদ্ধি কার্যকর করেছে । ১২ই মার্চ বিকালে এনার্জি রেগুলটরি কমিশন (বিইআরসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেশবাসীকে এ শুভ সংবাদ জানায় ! অথচ পূর্বে ধাপে ধাপে ছয়বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে সরকার চরম বিতর্কের মধ্যে পড়লে সর্বশেষ বার বিদ্যুত গ্রাহকদের আশ্বাস দিয়ে বলেছিল, এই শেষ বার । এরপর আর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে না বরং বিদ্যুতের দাম এ্যাডজাষ্ট করে ধাপে ধাপে দাম কমানো হবে । সরকার তার দেয়া সে প্রতিশ্রুতি তো রাখেই নি বরং হঠাৎ করে আগের তুলনায় কয়েকগুন বেশি দাম বাড়িয়ে দিল ।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা ও জবাব দিতে শুরু করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং দেশের সম্পদ রক্ষায় আন্দোলনকারী সংঘঠনগুলো । এমনকি বর্তমান সরকারের টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতা গ্রহনের মাত্র তিন মাসের মাথায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক সেটা নিয়ে দলের অভ্যন্তরেও ব্যাপক মতানৈক্য দেখা দিয়েছে । তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম¥দ সরকারের সিদ্ধান্তের চরম সমালোচনা করে বলেন, ‘হিসেব-নিকেশ করেই বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে এ সরকার । আসলে এ সরকারের উপদেষ্টারা খুব চালাক’ । তিনি আরও বলেন, সরকার তিন কারনে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে । প্রথমত তারা আইএমএফ’র নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে । দ্বিতীয়ত বিদ্যুত খাতকে সরকার বাণিজ্যিকীকরণ করতে চাচ্ছে । তৃতীয়ত সরকার কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে বিদ্যুতের উৎপাদন চালিয়ে যেতে চায় আর লুটপাট করতে চায় । জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক আরও বলেন, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি প্রত্যাহার না করলে বিদ্যুত বিল দিব না এবং অযৌক্তিক আইন অমান্য করার কর্মসূচির দিকে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা ছাড়া আমাদের কোন উপায় থাকবে না । এ সংগঠন টি আগামী ২৪শে মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিেেক্ষাভ সমাবেশ করবে এবং সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করবে । বিএনপির মূখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বিষয়ক সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে । কুইক রেন্টালের চুরি হালাল করতেই সরকার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে । সরকারের এ সিদ্ধান্ত জনকল্যাণ বিরোধী’। তিনি সরকারকে অবিলম্বে বিদ্যুতের দাম কমানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল এবং সংসদের সাবেক বিরোধীদল বিএনপি গত ১৩ই মার্চ দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল করেছে । ১৬ই মার্চ বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক পরাশক্তি জামায়াতে ইসলামী বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে । বাংলাদেশের সম্পদ রক্ষায় আন্দোলনকারী সংগঠন হিসেবে পরিচিত বামপন্থী সংগঠন বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টি (সিপিবি) দীর্ঘ দিন থেকে কর্মসূচী দিয়ে আসছে । দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে তাদের সাথে আন্দোলনে শরীক হচ্ছে । সর্বোপরি কথা হল, সরকারের বিদ্যুত বিল বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্তকে দেশের কোন মানুষই ইতিবাচকভাবে নেয় নি এমনকি সরকারের ভবিষ্যত নির্ধারণে সরকারের এ সিদ্ধান্ত মারাত্মক হুমকী হতে পারে বলে অনেকে মত দিয়েছেন ।
সরকারের এ জনকল্যান বিরোধী সিদ্ধান্তের মধ্যেও সরকারকে সাধুবাদ, কেনান বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে কৃষকদের এবং দরিদ্র গ্রাহককে সিদ্ধান্তের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে । তারপরেও সংশয়মুক্তভাবে সন্তুষ্ট হওয়া এদেশে এতটা সহজ নয় । এদেশের প্রকৃত কৃষক এবং দরিদ্র কারা ? প্রকৃত কৃষক এবং দরিদ্ররা কি এ সুযোগ পুরোপুরি ভোগ করতে পারবে ? নাকি দলীয় বিচারে কৃষক এবং দরিদ্র নির্ধারন করা হবে । বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে যে কতভাবে বিপর্যস্ত করবে তার কোন সীমা পরিসীমা নাই । নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যের মূল্য আরেকদফা বাড়বে । কৃষক এবং দরিদ্ররা সরকারের প্রথম থাবা থেকে মুক্তি পেলেও ব্যবসায়ীদের থাবা থেকে এদেরকে সরকার মুক্ত রাখতে পারবে কি ? অসহায়, দরিদ্র, দিনমজুর, বেকার এবং কর্মচারীদের পরিবার কি দু’বেলা ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে ? নাকি সে অধিকারও সরকার এবং ব্যবসায়ীরা যোগ-সাজোশ করে কেড়ে নেবে ? সরকারকে জনবান্ধব হতে হবে । শুধু নেতা আমলাদের পেট পূর্তিকরার উপর মনোযোগ না দিয়ে দেশের জনগনের সামর্থ্যরে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে । ভৌগলিক কারনে আমাদের দেশে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত ব্যবস্থার বিকল্প নাই । সুতরাং তেল ভিত্তিক রেন্টাল কেন্দ্রের উপর নির্ভরতা যতই কমিয়ে আনা যায় ততই মঙ্গল । এতে ঘন ঘন বিদ্যুতের বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে এবং বিদ্যুত খাতের দূর্ণীতির মাত্রাও সহনীয় হবে । সুতরাং দেশের মানুষের কল্যাণ এবং মঙ্গল বিবেচনায় সরকারের এ নীতিবিরুদ্ধ সিদ্ধান্ত থেকে দ্রুত ফিরে আসা দেশের গণ-মানুষের দাবী ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
[email protected]
©somewhere in net ltd.