নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ববাসীর কাছে গত দুই দশক পূর্ব থেকে এক মহাআতঙ্কের নাম জঙ্গি । একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে বাংলাদেশে এ সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে । ২০০১ সালে বিএনপি-জামাআত জোট সরকারের আমলে সর্ব প্রথম মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল জঙ্গি সংগঠন ‘জেএমবি’ । প্রথমদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এটাকে মিডিয়ার সৃষ্টি আখ্যা দেয়া হলেও যখন সারা বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে ৫০০এর অধিক স্থানে বোম ফুটানো হল তখন সরকারের নাকে-কানে পানি যায় । সরকারের বিভিন্ন সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনী আধার জল খেয়ে সারা দেশব্যাপী চিরুনী অভিযান চালায় । উদ্দেশ্য কেবল একটাই । যেকোন মূল্যে জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমানসহ অন্যান্যদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের মূখোমূখি দাঁড় করাতে হবে । ঘোষণা করা হয় আকর্ষণীয় পুরস্কার । যে বা যারা শায়খ আব্দুর রহমান এবং তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের হদিস দিতে পারবে তারাই আকর্ষণীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত হবে । সরকারের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে জেএমবিও তাদের কর্মকান্ডকে তড়িৎ গতিতে চালাতে থাকে । সারা দেশব্যাপী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ফেলে । পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে একের পর এক নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে । সবচেয়ে বড় অপারেশন চালায় বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠী জেলার বিচারকদের উপর । সেখানে বোমা ছুড়ে দু’জন বিচারককে হত্যা করে । অবশেষে আসে সে কাঙ্খিত মূহুর্ত । জেএমবির শীর্ষস্থানীয় প্রায় সকল নেতাকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয় তৎকালীন সময়ের আলোচিত র্যাব । জেএমবির সকলকে বিচারের মূখোমূখি এনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় এবং সল্প সময়ের ব্যবধানে সে রায় কার্যকরও করা হয় ।
এ ঘটনার পরও জেএমবিসহ অন্যান্য জঙ্গি সংঘঠনগুলোকে একেবারে ধ্বংস করা যায় নি তবে তাদের কার্যক্রমে অনেকটা স্থবিরতা এসেছিল । তবে সাম্প্রতিক সময়ে আল-কায়েদা প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরির কথিত একটি ভিডিও বার্তা জঙ্গীদের ভয়াবহ নৃশংসতার কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে । জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তাটি আসল নাকি নকল সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ থাকলেও এরকম একটি ভিডিও বার্তা আসার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না । বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে আল-কায়েদা এবং তালেবান সম্প্রদায় প্রকাশ্যে তাদের কর্মকান্ড চালাচ্ছে । এদেশের সরকার তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে এমনকি শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েও তাদেরকে ধ্বংসাত্মক পথ পরিহার করানো যাচ্ছে না । বর্তমনা বিশ্বের সুপার পাওয়ার আমেরিকা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেও কোন কুল-কিনারায়ে পৌঁছতে পারছে না । আল-কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করতে পারলেও তার প্রতিষ্ঠিত সংঘঠনটির ভিত্তিকে কোনমতে দূর্বল করতে পারছে না । বরং দিনের পর দিন এসকল সংঘঠনে লোকবল এবং আর্থশক্তি বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়ে চলছে ।
জাওয়াহিরি কথিত ভিডিওতে বলা হয়েছে বাংলাদেশের জা’মাআতে ইসলামী এবং হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সাথে আল-কায়েদার কার্যক্রমের মিল আছে এবং এসকল দলের আন্দোলনে আল-কায়েদা পূর্ন সমর্থন পাবে । তথ্য-প্রযুক্তির যুগে অনেক ভিডিও ক্লিপস তৈরি করা সম্ভব এবং নিমিষেই ওয়েবসাইটে আপলোড করে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দেয়াও সম্ভব । কথিত ভিডিওটি আল-কায়েদার নিজস্ব ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়নি বরং ইউটিউব থেকে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র এটির প্রচার করেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় সে ছাত্রটিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে । ইউটিউবের ভিডিও আপলোড করতে নির্দিষ্ট কোন নীতিমালা না থাকার কারনে গ্রামের যুবক-যুবতীদের অবৈধ রামলীলা থেকে শুরু করে বিশ্বের তাবৎ-তাবৎ ঘটনাও এখানে ঠাই পায় । জাওয়াহিরির বর্তমান ভিডিওটির ব্যাপারে সন্দেহ থাকলেও জাওয়াহিরি বা আল-কায়েদার অন্যকোন শীর্ষ নেতাদের এরকম ভিডিও আসতে বেশি বাকি থাকার কথা নয় । ভারত ও আফগানিস্তান দখলের পর আল-কায়েদা বা তালেবান জঙ্গি গোষ্ঠীরা ভারতকে পরবর্তী টার্গেট করতে পারে । সরাসরি ভারতে প্রবেশ করা দুরুহ হতে পারে সেকারনে বাফার স্টেট হিসেবে জঙ্গিরা বাংলাদেশকে ব্যবহারের দিকে মনোনিবেশ করতে পারে । আর এ রকমটা যদি হয় তবে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ ও ব্যর্থ পাকিস্তানের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না ।
কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের তরুনদের মূখে মূখে একটি স্লোগান ছিল,‘বাংলা হবে আফগান, আমরা হব তালেবান’। ছোটবেলায় আমিও বন্ধুদের সাথে এ স্লোগান দিতাম । আফগান বা তালেবান বলতে কী বুঝায় কিছুই তখন জানতাম না । শুধু শিশুরা নয়, তরুন-তরুনী, আবাল বৃদ্ধ-ভনিতা সকলেই আফগান বা তালেবানদের সমর্থক ছিলেন । ২০০১ সালের ১ নভেম্বর আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলার পর আমেরিকা জঙ্গি দমনে উঠেপড়ে লাগে । তখন থেকেই আমরা জানতে পারি আল-কায়েদা ও তালেবান মূলত কি ? মনে প্রানে শপথ নিয়ে ফেলি, দেশকে আফগানও হতে দেব না আর আমরা তালেবানও হব না ।
কিছুদিন আগে ভারতে চলন্তবাসে বয়ফ্রেন্ডের সামনে মেডিকেলের ছাত্রীকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয় । সারা ভারতবর্ষ তেতে ওঠে । বিশ্ববাসী ভারতীয়দের উপর ধিক্কার জানায় । ধর্ষণের খবর ফলাও করে মিডিয়ায় প্রচার করা হয় । ভারত বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি অনিরাপদ রাষ্ট্র । সাম্প্রতিক সময়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের মধ্যে নারী পর্যটনের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক রাষ্ট্র ভারত । মেডিকেলের ছাত্রীকে ধর্ষনের পর ভারতবর্ষ থেকে একের পর এক ধর্ষনের খবর প্রকাশ হতে থাকে । দেশের নারীরা শতভাগ অনিশ্চয়তার সাথে যোগ হয় বিদেশী পর্যটনদেরও অনিশ্চয়তা । সুইডিশ এক পঞ্চাশোর্ধ মহিলাকে ট্রেন-ষ্টেশনে গণধর্ষণ করা হয় । অথচ আলোচিত ধর্ষণের ঘটনার পূর্বে ভারতে ধর্ষন যে হতনা তা কিন্তু নয় তবে সে সংখ্যা অনেক কম ছিল । শুধু ব্যাপক প্রচারের কারনে ধর্ষণকারীরাও সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে । ভারতে বিচার ব্যবস্থা অনেক ত্রুটিপূর্ণ । সেকারনে অপরাধীরা অপরাধ করে বারবার ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে । বাংলাদেশে কিছু দিন আগে ইভটিজিং নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে । পত্রিকা-টিভি সবটা জুড়ে কেবল ইভটিজিংয়ের ঘটনা । ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছে বেশ কয়েকজনকে । তবুও কমেনি ইভটিজিংয়ের মাত্রা । সংবাদকর্মীরা ধীরে ধীরে ইভটিজিংয়ের খবর সংগ্রহের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেন । পত্রিকা বা টিভির পুরোটা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ইভটিজিংয়ের কোন সংবাদ পাওয়া যায় না । তাই বলে কিন্তু দেশে ইভটিজিং হয় না সেটা বলা যাবে না । এখনো ইভটিজিং হয় তবে সে ইভটিংজিয়ের সংবাদ প্রকাশ না হওয়ায় ইভটিজিংকারীরাও ধীরে ধীরে ইভটিজিং করার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে ।
উপরের দুইটি অপ্রসাঙ্গিক ঘটনা জঙ্গিবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বিষয় নয় । সাম্প্রতিক সময়ে তিনজন(জঙ্গী) ফাঁসির আসামীকে প্রকাশ্য দিবালকে পুলিশ হেফাজত থেকে ফিল্মি স্টাইলে ছিনতাই করা হয়েছে । এঘটনায় একজন পুলিশ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে । সংবাদের মাধ্যমে জানা গেছে ছিনতাইয়ের আগে জঙ্গীরা পুলিশের মোবাইল ব্যবহার করে বাহিরের জঙ্গিদের সাথে যোগাযোগ করে । এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের উচ্চমহল চিল্লিয়ে পড়শীদেরকেও জড়ো করার চেষ্টা করছে । অথচ একবারও ভাবছেনা এটা সরকারের চরম ব্যর্থতা । বিএনপির পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে আমেরিকাকে পাশে রাখতেই সরকার জঙ্গি ছিনতাই এবং ভিডিও বার্তার নাটক সাজিয়েছে । তা না হলে ছিনতাই করা জঙ্গিদের মধ্য থেকে একজনকে গ্রেফতার করে কেন তার কাছ থেকে তথ্য আদায় না করে কথিত বন্দুক যুদ্ধের মাধ্যমে তাকে মেরে ফেলা হল ? ছিনতাই হওয়ার ২৪ ঘন্টার মাথায় এক জঙ্গি গ্রেফতার হলেও কেন সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও বাকী দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলো না ?
দু’টো বিচ্ছিন্ন ঘটনা কোন কারন ছাড়াই উদ্ধৃত করিনি । জঙ্গিসমস্যা সমাধানে সবচেয়ে কার্যকারী ভূমিকা পালন করতে হবে বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দাসংস্থাকে । ২০০৪ সালে আয়মান আল জাওয়াহিরি এনএসআইর সহায়তায় বাংলাদেশে এসেছিল একথা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে সে ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে । সংবাদ মাধ্যমে জঙ্গিবিষয়ক সংবাদ প্রচারে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে । চ্যালেঞ্জ দিয়ে নয় কৌশলে জঙ্গিদের মোকাবেলা করতে হবে । জঙ্গি প্রশ্নে ঢালাওভাবে মাদ্রাসা শিক্ষিতদেরকে জড়িত করা হচ্ছে । এটা অত্যন্ত দুঃখজনক । ওসামা বিন লাদেন কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষিত ছিল না । এটিএন বাংলায় অর্থনীতি বিষয়ক মুক্ত সেমিনারে একজন আলোচক বলেন, ঢালাওভাবে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে জঙ্গি বলার প্রবনতা ত্যাগ করতে হবে । বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে যারা জঙ্গি কার্যক্রমের সাথে জড়িত তাদের মধ্যে কেবল ১৫% মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে জড়িত । বাকী ৮৫% আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত । কারো মুখে দাড়ী, গায়ে জুব্বা এবং মাথায় টুপি দেখলেই তাকে মাদ্রাসা শিক্ষত বা মুসলিম বলা যাবে না । তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা মহাত্মাগান্ধীকেও মুসলিম বলতে হবে ।
জঙ্গিসমস্যা কোন ব্যক্তি, দল, জাতি বা ধর্মের কোন নিজস্ব সমস্যা নয় । জঙ্গি সমস্যা বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যা । আফগানিস্তান, পাকিস্তান বা ভারতের মত বাংলাদেশও বিশ্বের দরবারে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হউক সেটা কোন অবস্থাতেই চাইব না । কারো চোখ রাঙ্গানীর ভয়ে নয় বরং নিজেদের প্রয়োজনেই আমরা অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হব । জাতী ও জাতীয়তার প্রশ্নে আমরা আমরণ অভিন্ন থাকব এটাই আমাদের শপথ । সুতরাং কোন দলের ব্যানারে নয় জঙ্গি সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এ অশুভ শক্তিকে রুখতেই হবে । জঙ্গি সমস্যাকে কোন দলের বা ব্যক্তির স্বার্থের ইস্যু না বানিয়ে যথাসময়েই এর বিরুদ্ধে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে । জঙ্গি প্রশ্নে কোন ছাড় নয় । দল, মতের উর্ব্ধে অবস্থান করে জঙ্গিসমস্যাকে প্রতিরোধ করতে হবে ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
[email protected]
২| ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ ভোর ৪:০৩
নিয়েল হিমু বলেছেন: দারুন
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:০৭
হাসিব০৭ বলেছেন: আগে ধোয়া তুলত যুদ্ধাপরাধী বইলা এখন চেচায় জঙ্গী বইলা। তবে বর্তমানে জঙ্গীদের চাইত্ওে বড় সন্ত্রাসী হইল ছাত্রলীগ কেননা এরা সবসময়ই মারমূখী। জঙ্গীরা মাথাচারা দিয়ে ওঠে বছরে একবার আর লীগ প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত