নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগামী ২৮শে ফেব্রুয়ারী যমানার শ্রেষ্ঠ আলেম, ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, সর্বজন শ্রদ্ধেয় হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আযীযুর রহমান নেছারাবাদী (কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহঃ) এর ষষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকি । তিনি ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসের ২৮ তারিখ লক্ষ কোটি ভক্তকূলকে শোকের সায়রে ভাসিয়ে মহান রব্বুল ইজ্জত অল জালালের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি জান্নাতী মেহমান হন । হুজুরে কেবলার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের সদস্যরা যেমনি শোকাহত তেমনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের অগনিত মুসলমান নর-নারী চোখের পানিতে তার জন্য কায়মনো বাক্যে মহান স্রষ্টার কাছে সর্বক্ষন প্রার্থনা জানান । হুজুরের গোটা জীবনটা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য নিবেদিত ছিল । শুধু মুসলমানদের জন্যই তিনি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত ছিলেন না বরং জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই তাকে পরম শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস করত । কায়েদ ছাহেব হুজুর তার সারা জীবনে কোনদিন দুনিয়ার কোন সম্পত্তি অর্জনের জন্য এক মুহুর্তও ব্যয় করেননি বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই ছিল তার একমাত্র ব্রত । তার সান্নিধ্যে যারাই এসেছেন তারা দুনিয়ায় যেমন সম্মানিত হচ্ছেন তেমনি এ পথের উপর অবিচল থাকতে পারলে পরকালেও মুক্তি নিশ্চিত হবে ।
মহান আল্লাহর সৃষ্টি কৌশল খুব আশ্চার্যের । যেখানে অন্ধকার সেখানে আলো, যেখানে মুর্খতা সেখানে জ্ঞান, যেখানে বর্বরতা সেখানে সভ্যতার বাণী প্রচার করার জন্য যুগে যুগে তিনি তার প্রতিনিধি প্রেরন করেছেন । হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আগমনের মধ্য দিয়ে নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের দিয়ে তার এ মহৎ কর্ম সম্পাদন করাচ্ছেন । আল্লাহ তা’য়ালা যে সকল বান্দাদেরকে তার বিশেষ বন্ধু হিসেবে মনোনীত করেছেন তার মধ্যে প্রাজ্ঞ আলিম, নিবিষ্ট-দিল, আল্লাহ-প্রেমিক, বিরল প্রজাতির সাধক, দূরদর্শী নেতা, দার্শনিক, সুযোগ্য শিক্ষক, সফল প্রশাসক, নিষ্ঠাবান মুবাল্লিগ, দক্ষ সংগঠক, সমাজসেবী, শিক্ষাসেবী, সংস্কৃতি-মনস্ক, স্বাধীনচেতা চিন্তানায়ক, দার্শনিক, বহু গ্রন্থের প্রণেতা, সম্পাদক, পরিশ্রম পাগল কর্মবীর, রাজনীতি সংগ্রামী নির্ভীক এক সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব, সৎ, অনাড়ম্বর, নিরহংকার, সংযমী, নির্লোভ, নিংস্বার্থ, নিরপেক্ষ, অকৃত্রিম, উদারচেতা, মানবদরদী আদর্শ মানুষ, নির্মল চরিত্রের হযরত আযীযুর রহমান নেছারাবাদী ছিলেন অন্যতম । আল্লাহ তায়ালা তা’কে জান্নাতী মানুষদের মত বহুগুনের অধিকারী করেছিলেন । উম্মতে মুহাম্মদীর এক দা’ঈ হিসেবে তাকে দেশ বরেণ্য আলেম সমাজ আদর্শ হিসেবেই মান্য করত । সর্ব গুনে গুনান্বিতা এ ব্যক্তিটি ১৯১৩ খৃষ্টাব্দ মোতাবেক ১৩৩২ হিজরী সনে, ঝালকাঠি জেলার বাসন্ডা (বর্তমান নেছারাবাদ) নামক গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন । তার জন্মের পূর্বে যে জনপদটি চোর-ডাকাতে ভরপূর ছিল সেই ভূমিতে ইসলামের আবাদ করার জন্যই আল্লাহ তাকে প্রেরণ করলেন । গ্রাম্য এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম অথচ গরীব পরিবারে পিতা মফিজউদ্দিনের ঔরসে তার জন্ম হয় । আর্থিক দৈন্য-দশার মধ্যেই হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহঃ) বেড়ে ওঠেন এবং তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন । ভোলা সিনিয়র মাদ্রাস হতে ১৯২৯ সালে চতুর্থ শ্রেণী পাশ করে উপমহাদেশের বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ ও দরবার ছারছীনা শরীফে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং সেখান হতে ১৯৩৭ সালে জামাতে উলা পাশ করেন । আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৯৪২ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে হাদিস শাস্ত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার পরেও তিনি সারা জীবন শিক্ষার সাথে জড়িত ছিলেন । হযরতের কর্ম জীবন শুরু হয় ছারছীনা দারুস্ সুন্নাত আলীয়া মাদ্রাসায় । কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা জীবন সমাপান্তে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং স্বীয় পীর ও মুরশিদ শাহ সূফী নেছার উদ্দিন আহমদ রহ. এর পরামর্শে ১৯৪২ সালে ছারছীনা মাদ্রাসায় সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন । পরবর্তীতে দীর্ঘ ২৫ বছর অত্র মাদ্রাসায় বিভিন্ন স্তরে শিক্ষকতা করে ১৯৬৭ সালে ভাইস প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন কালে স্বেচ্ছায় অবসর নেন । তার শিক্ষকতা জীবনে হাজার হাজার আলেম তৈরি করেন । যাদের মধ্যে, ছারছীনা দারুস্ সুন্নাতের সাবেক দুই প্রিন্সিপাল মরহুম আঃ রব খান এবং মরহুম আমজাদ হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর মরহুম ড. মুস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. আলী হায়দার মুর্শিদী, প্রফেসর এম এ মালেক, প্রখ্যাত বক্তা মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী, সূফী মোঃ আব্দুর রশীদ, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক কবি রুহুল আমীন খান ও দৈনিক সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক মরহুম অধ্যাপক আখতার ফারুক ছাহেব অন্যতম ।
হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর তার জীবদ্দশায় তার নিজ বাড়ি ঝালকাঠীতে ছোট-বড় ৪২ টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে স্বীয় শায়খ আল্লামা নেছারুদ্দীন রহ. এর নামে ঝালকাঠী নেছারবাদ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করেন । যার মধ্যে নেছারবাদ ছালেহিয়া কামিল মাদ্রাসা বাংলাদেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর একটি । ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদ্রাসাটি ১৯৫৬ সালে ছারছীনা শরীফের তৎকালীন গদ্দীনশীন পীর আবু জাফর মোঃ ছালেহ রহ. এর মাধ্যমে ফোরকানিয়া মাদ্রাসা হিসেবে গোড়াপত্তন হয় । যা পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে কামিল মাদ্রাসায় রুপান্তরিত হয় । হুজুরে কেবলা নারী শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে তার মায়ের নামে জিনাতুন্নেছা মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন । যা এখন আলিম পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে । হুজুর প্রতিষ্ঠিত ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদ্রাসা এবং জিনাতুন্নেছা মহিলা মাদ্রাস-মাদ্রাসা শিক্ষার জগতে এক বৈপ্লবিক ধারার সূচনা করেছে । শুধু ফলাফলেই এ মাদ্রাসা দু’টি প্রতিবছর বাংলাদেশে শীর্ষ স্থান অধিকার করে না বরং এ মাদ্রাসা দু’টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পূর্ন সুন্নাতে নববীর পাবন্দী । সমগ্র বাংলাদেশে সুন্নাতের পূর্ণ অনুসারী এ’রকম দীনি মারকাজ দ্বীতিয়টি পাওয়া যাবে না বলে অনেক বিখ্যাত আলেম মত দিয়েছেন ।
হুজুরে কেবলার জীবনের সমগ্রটাই মানব কল্যানে নিয়োজিত ছিল । তিনি ছিলেন অসংখ্য গুনের আধাঁর । তিনি মুসলমানদেরকে ইসলামের সঠিক দিশা পাইয়ে দিতে আমরণ চেষ্টা করেছিলেন । দেশের আলেমরা যখন আলেমদের শত্রুতে পরিণত হয়েছিল তখন হুজুর কেবলা আলেমদের তথা সমগ্র মুসলমান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তার বিখ্যাত দার্শনিক মত ‘‘আল ইত্তেহাদ মা’আল ইখতেলা’ফ’’ তথা মতানৈক্য সহ ঐক্যের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন । হুজুরে কেবলা ১৯৭০ সালে ঝালকাঠী জেলা স্টেডিয়ামে সর্বপ্রথম ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও ওলামা মাশায়েখের সমন্বয়ে ঐক্যের সম্মেলণ আহ্বান করেন । এরপর ১৯৯৭ সালের ২’রা ফেব্রুয়ারী তিনি ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদ্রাসায় ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি বৈঠক করেন । উক্ত বৈঠকে দেশের সর্বস্তরের ইসলাম পন্থীদের ঐক্য প্রচেষ্টা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয় । ঐ কমিটিতে মাওলানা আযীযুর রহমান, চরমোনাইর পীর সাইয়্যেদ ফজলুল করীম, ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন । এ বৈঠকেই ‘মতপার্থক্য সহ ঐক্য’ এই দার্শনিক বাক্যটি প্রথম ব্যবহৃত হয় । পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের মার্চ মাসের ১৭ ও ১৮ তারিখে তারই প্রতিষ্ঠানে সর্বদলীয় দ্বিতীয় ইসলামী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । এ মহাসম্মেলনে হযরত যে ভাষণ দিয়েছিলেন তার কিয়দাংশ ছিল, ‘‘দীন রক্ষার স্বার্থে আজ যেমন মুসলমানদের ঐক্যের প্রয়োজন, তেমনি দেশ ও জাতির স্বার্থে দল-মত নির্বিশেষে সকল দেশপ্রেমিক ভাইয়ের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন । তিনি তার ভাষণে ইত্তেহাদ মা’আল ইখতেলাফ তথা মতানৈক্যসহ ঐক্যের নীতিতে সকল শ্রেণীর মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধভাবে দীনের খিদমতে আঞ্জাম দেওয়ার আহ্বান জানান’’ ।
হযরত আযীযুর রহমান নেছারাবদী হুজুর ছিলেন একজন সু-লেখক । ইসলামের খেদমতে তিনি শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন । ইসলামের ভ্রান্তবাদীদের তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে সমালোচনা করে তাদেরকেও সঠিক ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহন করার জন্য আহ্বান করেছেন । হুজুরের রচনাবলীর প্রতিটি লাইন মানুষের জীবনের এক একটি নির্দেশনা । হুজুরের মৃত্যুর পর তার রচিত গ্রন্থাবলির মর্ম উপলব্ধি করে নেছারবাদ দারুত্তাছনীফ (প্রকাশনা বিভাগ) সেগুলোকে পুস্তাকাকারে বাজারে ছেড়েছে যাতে তার লেখনী জাতির মঙ্গলে আসে । হুজুরের অসংখ্য রচনাবলীর মধ্যে, ‘আহলে ছুন্নত অল জামাতের পরিচয় ও আকায়েদ, ইসলাম ও তাছাওফ, ইসলামী জিন্দেগী, তাজভীদুল কুরআন, ছোটদের ক্বিরআত শিক্ষা, আজকারে খামছা, দো’জাহানের সম্বল, ইসলাম ও রাজনীতি, ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ও উহার পথ এবং কালেমা গো মুসলমান এক হও’ কিতাবগুলি সমধিক খ্যাত ।
হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বের একজন ব্যক্তি ছিলেন । তিনি সরাসরি রাজনীতি না করলেও রাজনীতি সম্পর্কে এমনকতগুলো ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন যা বর্তমান রাজনীতির সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে । হুজুর সকল ব্যাপারে শিথিলপন্থা এবং চরমপন্থা পরিত্যাগ করে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতেন । বিভিন্নি সামাজিক সমস্যা সমাধানে তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য । দূর্নীতি প্রতিরোধ, অশ্লীলতা পরিহার, বেদাআ’ত উৎখাতসহ নানাবিধ সামাজিক সমস্যা দূরীকরনে তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য । তার আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট আঃ সাত্তার সমগ্র বাংলাদেশ থেকে আনন্দমেলা বন্ধ করতে বাধ্য হন । সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি অনেকগুলে সামাজিক সংঘঠন প্রতিষ্ঠা করেন । যার মধ্যে, হিযবুল্লাহ দারুল ক্বাযা (সালিশী আদালত বা বিচার বিভাগ), ছাত্র হিযবুল্লাহ, আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন কমিটি, হিযবুল্লাহ শ্রমিক সমিতি, তোলাবায়ে হিযবুল্লাহ, হিযবুল্লাহ দুর্নীতি উচ্ছেদ কমিটি (১৯৭৩ই) এবং আনজুমানে ইত্তিহাদুল মুসলিমীন (মুসলিম ঐক্য-সংস্থা ১৯৬৭ইং) । এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের সকল মুসলমানদের কল্যানে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন ‘বাংলাদেশ হিযবুল্লাহ জমিয়াতুল মুছলীহিন (৩রা জানুয়ারী ১৯৯৭, ইসলামি ঐক্য সংগঠন) । এ সংগঠনটির কাজ সারা দেশব্যাপী চলছে । এবং দিনে দিনে হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশ মুছলিহীনের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহন করছে । হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুরের ব্যক্তিগত কতগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল । তার মধ্যে বিশেষ কয়েকটি হল, তিনি আত্মপ্রচার বিমূখ, কথায় ও কাজে অভিন্ন, কুরআন ও সুন্নাহর নিখাদ সেবক, হক ও ইনসাফ কায়েমে আপোষহীন এবং ইসলামী আদর্শের মুর্ত প্রতীক ছিলেন ।
যুগে যুগে মহান আল্লাহ জ্ঞানীদেরকে দিব্য দৃষ্টি দান করেছেন । হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুরের সমসমায়িক এরকম দিব্য দৃষ্টি সম্পন্ন প্রতিটি ব্যক্তি হুজুর সম্মন্ধ্যে অনেক কথাই বলেছেন । তার মধ্য থেকে বিশেষ কয়েকটি উল্লেখ করছি । ছারছীনা শরীফের মরহুম পীর ছাহেব হযরত মাওলানা শাহ সূফী নেছারুদ্দীন আহমদ (রহঃ) বলেন, “কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছেন । আমার কায়েদ বিশ্ব জয় করবে” । মুসলিম রেঁনেসার কবি ফররুখ আহমদ বলেছেন, “মাওলানা ছাহেব ! আপনি শুধু আপনার কলমের আঁচড় দিয়ে যান, আজ হোক কাল হোক একদিন আপনার এ লেখা কথা বলবে । জাতি তার প্রয়োজনেই আপনার লেখা খুঁজবে’’ । পবিত্র কা’বা শরীফের মহামান্য সাবেক ইমাম ও খতীব, বিশ্ববরেণ্য আলেম, আওলাদে রাসূল সাঃ. সাইয়্যেদ মুহাম্মদ ইবনে সাইয়্যেদ আলুভী আল মালেকী আল হুসাইনী রহ. (মক্কা শরীফ) বলেন, “আমার নিজ পাগড়ী আপনাকে পরিয়ে দিলাম । উলূভী তরীকার খলীফা হিসেবে আপনি আল্লাহ ও তার রাসূলের দীনকে জেন্দা রাখার চেষ্টা চালিয়ে যান । বিশ্বমানব আপনার খেদমতে ধন্য হবে” । মহান আল্লাহ তা’য়ালা নবী-রাসূলদের যেমন মু’জিযা দান করেছিলেন তেমনি তার বিশেষ ব্যক্তিদের দান করেছিলেন কারামত । হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুরকেও আল্লাহ অনেক কারামত দান করেছিলেন । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, তৃষা শিপিং লাইন্স এর সত্ত্বাধীকারী মোঃ নান্নু মিয়া বলেন, “ষোল কোটি ত্রিশ লক্ষ টাকার সিমেন্ট ক্লিংকার নিয়ে ২০০৬ সালে আমার তৃষা-১ জাহাজটি ঝালকাঠীর গাবখান নদীতে ডুবে যায় । প্রায় দেড় বছর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও জাহাজটি তুলতে না পেরে এবং জাহাজটি তুলতে গিয়ে হতাহতের ঘটনাসহ লাখ লাখ টকা খেসারত দিয়ে আমি হতাশ ও বিমর্ষ অবস্থায় হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুরের (রহঃ) কাছে যাই হুজুর আমাকে দশফান্ডে মান্নত ও ধের্য্য ধারন করতে বললেন । এক পর্যায়ে জাহাজটি আর ফিরে পাবো না ভেবে সর্বস্ব হারিযে দেশ ত্যাগ ও নিরুদ্দেশ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম । এবং বিদায়ী সাক্ষাতের জন্য এক রাতে হুজুরের কাছে গেলাম । হুজুর রহ. আমাকে বিদায় না দিয়ে নদীর তীরে জাহাজের কাছে যেতে বললেন । তখন গভীর রাত । আমি নদীর তীরে পৌঁছে আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদতে লাগলাম । হঠাৎ দেখি নদীর পানি শুকিয়ে গিয়ে পরক্ষণেই নদীটি পানিতে পূর্ণ হয়ে গেছে এবং আমার ডুবে যাওয়া জাহাজটি পানির উপর ভাসছে । জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিনিয়ত হুজুরের কাছে মানুষেরা কেন ভীড় করতেন, তার বাস্তবতা অবাক চিত্তে আমি নিজেই সেদিন অবলোকন করেছি” ।
সবার উপরে একটি সত্য আছে । চিরন্তন নিয়মানুসারে কায়েদ ছাহেব রহ.ও একদিন দুনিয়ার জিন্দেগীতে ইস্তফা দিয়ে চলে গেলেন । লক্ষ কোটি ভক্ত-অনুরক্তকে শোক সাগরে ভাসিয়ে বিগত ২০০৮ইং সালের ২৮শে এপ্রিল সকাল ৭ট ১০ মিনিটে ঢাকাস্থ কমফোর্ট হাসপাতালে হুজুর বার্ধক্য জনিত কারনে ইনতিকাল করেন । মৃত্যু কারে হুজুর কেবলা স্ত্রী, পুত্র ও তিন কন্যা এবং কোটি কোটি ভক্ত রেখে যান । হুজুরের একমাত্র ছাহেবজাদা ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা খলীলুর রহমান দাঃবাঃ কায়েদ ছাহেব হুজুরের রেখে যাওয়া মিশনের সফলতা অর্জনের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আল্লাহ তা’য়ালা তার ওয়াদা অনুযায়ী হুজুর কেবলাকে অবশ্যই জান্নাতবাসী করবেন । তবে তার এ ষষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকিতে সকল মুসলমানের প্রার্থনা করা উচিত যেন তার মত সঠিকভাবে ইসলামের মেহমান হয়ে আমারাও তার সাথে জান্নাতের মেহমান হতে পারি । হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর তার কর্মের মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন ।
হুজুরের গুণমুগ্ধ
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
[email protected]
©somewhere in net ltd.