নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

উৎপাদন বাড়লেও কেন শ্রমিকের ভাগ্য বদলাচ্ছে না

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:১১

মানব সভ্যতার শুরুতে পৃথিবীর মানুষকে জীবিকা অর্জনের জন্য সংকটময় সংগ্রাম করতে হত । বিভিন্ন পশু পাখি শিকার ছিল তখনকার দিনের মানুষের জীবিকা অর্জনের একমাত্র উপায় । তাই শিকারকে মানুষের আদিমতম পেশা হিসেবে স্বীকার করা হয় । প্রাচীন কাল থেকে পশু-পাখি শিকারের প্রয়োজনে এবং হিংস্র জানোয়াদের আক্রমন থেকে জীবনে রক্ষা করার জন্য মানুষ একতাবদ্ধ হতে শিখে । তখন একতাবদ্ধ বলতে কয়েকটি পরিবারের সমষ্টিকে বুঝাতো । সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে এর অনেক পর । একতাবদ্ধ মানুষগুলো জীবিকার প্রয়োজনেই একস্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমন করত । তখন শিকার ধরা এবং তা থেকে জীবিকা অর্জন ছিল খুব কষ্টের । শিকার করতে যে সকল উপকরণ দরকার তার ছিল অপ্রতুলতা । এমনকি শিকার ধরতে অনেক মানুষ পশুর শিকারে পরিণত হত । তখন মানুষ ভাবতে থাকে বিকল্প উপায়ে জীবিকা নির্বাহের পদ্ধতি কিভাবে আবিষ্কার করা যায় । সময়ের পরিবর্তনে একসময় মানুষ কৃষি বিজ্ঞান আবিষ্কার করে । তখন পরিবার ব্যবস্থা গড়ে ওঠে জমি কেন্দ্রিক । একেকটি পরিবার কিছু চাষযোগ্য জমিকে কেন্দ্র করে তাদের বাসস্থান নির্ধারণ করে । কৃষি কাজ যেমন শিকারের চেয়ে সহজতর তেমনি খুব স্বাচ্ছন্দের সাথে জীবিকা নির্ধারণ করাও যায় । তখন মানুষ ধীরে ধীরে তাদের আদিম পেশা ছেড়ে কৃষি কাজের উপর মনোযোগী হয় এবং কয়েক হাজার বছরব্যাপী মানুষ কৃষিকেই তাদের প্রধান পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখে ।



কৃষি কাজের প্রথম দিকে মানুষ প্রকৃতির কাছে বার বার বিপর্যস্ত হত । কোন দেবদেবীর পুজা অর্চনাও যখন তাদেরকে প্রকৃতির প্রলয় থেকে রক্ষা করতে পারত না । তখন থেকে মানুষ চেষ্টা করতে লাগল প্রকৃতির সাথে সখ্যতা গড়ে তোলা যায় । ধীরে ধীরে মানুষ প্রকৃতিকে বুঝতে শিখল । মওসুম অনুযায়ী ফসলের চাষ করলে যখন প্রকৃতি থেকে আর কোন আঘাত আসত না তখন থেকে মানুষ কৃষি কাজের প্রতি আরও মনোযোগী হল । কৃষকরা ফসলের রোগ বালাই দমন করতে শিখল । এমনিক পূর্বের চেয়ে ফসল উৎপাদনের পরিমান বৃদ্ধি পেতে লাগল । এত ফসল কৃষকদের জীবিকা অর্জন করতে লাগত না । পূর্ণভাবে জীবিকা অর্জন করার পরেও অনেক খাদ্য শস্য উদ্বৃত্ত থাকত । উদ্বৃত্ত ফসলকে কৃষকরা আগামীর জন্য সঞ্চয় করার ইচ্ছা করল । তখন থেকে জমি থেকে উৎপাদিত ফসলকে সংরক্ষণ করা পর্যন্ত তিন শ্রেণীর মানুষের উদ্ভব হল । কৃষকরা শুধু ফসল উৎপাদ করত এবং তাদের জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় ফসল রেখে অবশিষ্ট ফসল বিক্রি করে দিত । মধ্যসত্ত্ব ভোগীরা কৃষকদের নিকট থেকে নামমাত্র মূল্যে সেগুলো ক্রয় করে সামান্য কিছু লাভ রেখে পরিচালক শ্রেণী বা উচ্চশ্রেণীর কাছে বিক্রি করে দিত । এই উচ্চশ্রেণীরাই পরবর্তীতে সমাজের শাসক হয়েছে, অভিজাততন্ত্র্য চালু করেছে । তারা বদ্ধমূল বিশ্বাস করত তাদের জন্মই হয়েছে অপরকে হুকুম করার জন্য নিজেরা কাজ করার জন্য নয় । তারা কাজ না করতে করতে অলসে পরিনত হত এবং কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের উদ্বৃত্ত অংশ মওজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চড়া মূল্যে কৃষকদের কাছেই বিক্রি করত । কৃষকরা ঘাম জড়িয়ে ফসল উৎপাদন করলেও তাতে প্রয়োজনীয় জীবিকার চেয়ে কোন অংশেই তারা বেশি লাভবান হত না । কৃষকের ছেলে চিরকাল কৃষক রয়ে যেত এবং অভিজাত শ্রেণীর ছেলেরা কৃষি কাজকে তাদের জন অপমানজনক মনে করে সমাজে বাহাদুরি করে বেড়াত এবং কৃষকদের শোষন করত । এ সম্মন্ধ্যে বলতে গিয়ে ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার বলেন, “যে চাষী খাদ্য উৎপাদন করে অপরের প্রাণ রক্ষা করে, সেই কৃষকদের প্রাণ বধ করাই হচ্ছে (অভিজাত শ্রেণীর) দস্তুর” । অতীত সময় থেকে শুরু করে বর্তমান পৃথিবীর সর্বত্রই এমন চলছে ।



সমাজ বিবর্তনের ইতিহাস অতিপ্রাচীন । হাজার হাজার বছরের ঘোরপাকে এক-একটি সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে । বিখ্যাত দার্শনিক কার্ল মার্কস তার অনবদ্য সৃষ্টি The Dascapital গ্রন্থে শ্রেণী সংগাম তত্ত্ব এবং উদ্বৃত্ত্ব মূল্যতত্ত্বে চমৎকার ভাবে গরীবদের অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ার পিছনে অভিজাততন্ত্রীদের ষড়যন্ত্র এবং অভিজাততন্ত্রীরা দিন দিন সম্পদশালী হওয়ার নেপথ্যের কারনগুলো আলোকপাত করেছেন । পৃথিবী তার ক্রমবিবর্তনে আদিম সাম্যবাদ, দাসপ্রথা, সামন্তপ্রথা পেরিয়ে পূঁজিবাদে অবস্থান করছে । অবশ্য কিছু দেশ সমাজতন্ত্রী হওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে আবারও পুঁজিবাদের প্রত্যাবর্তন করতে শুরু করেছে । রাষ্ট্রের মজুর শ্রেণীর মৌন বিরোধীতা সত্ত্বেও পুঁজিবাদের পিছনে ছুটছে মানুষ । পুঁজিবাদ অনুযায়ী যার সম্পদ আছে তার সম্পদ আরও বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং যার সম্পদ নাই সে মজুরের কাজ করে জীবিকা অন্বেষণ করবে । ষোড়শ শতাব্দীতে শিল্প বিল্পবের পূর্বে যখন উৎপাদনের মাত্রা কম ছিল তখনও যেমনি কৃষক-শ্রমিকদের নূন্যতম জীবিকা অর্জন করতে হত শিল্প বিপ্লবের অনেক পরে এই একবিংশ শতাব্দীতেও সারা বিশ্ববাপী শ্রমিকরা সেই পূর্বের অবস্থানেই আছে । সময়ের তালে তাল মিলিয়ে তাদের মজুরী বাড়লেও জীবনযাত্রার মানের কোন পরিবর্তন হয়নি । বিশ্বের প্রত্যেকটি কোম্পানি তার শ্রমিকদের দিয়ে কোটি কোটি বিলিয়ন আয় করলেও শ্রমিকেদের ভাগ্যে তার সিঁকি আনাও জোটে না । শ্রমিকরা তাদের জন্য নির্ধারিত বেতন পান, যা সকল স্থানেই অমানবিক । যে সকল সেক্টর দিয়ে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে তার মধ্যে শীর্ষ খাত গার্মেন্টস শিল্প । এই গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন অমানবিক । মালিক শ্রমিক দফায় দফায় বৈঠক করেও শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবী আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে । উল্টো পুলিশের টর্চারে এবং শিল্প মালিকদের ভাড়া করা গুন্ডাদের অত্যাচারে অনেককে জীবন দিতে হয়েছে । আহতের সংখ্যার কোন হিসাব নাই । এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টস কারখানার ধ্বস কিংবা আগুনে পুড়ে হাজার হাজার শ্রমিককে মৃত্যুর মূখে পড়তে হয়েছে । সর্বশেষ সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে ১১শতাধিক শ্রমিক মারা গেছে । শ্রমিক-মালিক যখন বিভিন্ন ইস্যুতে সম্পর্কের চরম সীমায় পৌঁছে যায় তখন সরকার হস্তক্ষেপ করে মাসিক মাত্র ৫৩শ টাকা বেতন নির্ধারণ করতে পেরেছে । যে টাকা দিযে শহরে বাসা বাড়া দিয়ে খেয়ে-পরে গ্রামের বাড়ীতে টাকা পাঠানো একেবারেই অসম্ভব । তবুও সরকারের হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা কৃতজ্ঞ । পূর্বে যে অমানবিক অবস্থা ছিল তার থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে । ভবিষ্যতে দার্শনিক হেগেলের দ্বান্ধিকবাদ নয়, প্রতিনয় ও সমন্বয় ধারা অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন হয়ত আবারও বাড়বে । যে শ্রমিকদের শ্রম ব্যবহার করে শিল্প মালিকরা বিদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করছে অথচ সেই শ্রমিকদের স্বার্থের দিকে মালিক পক্ষের মোটেও ভ্রুক্ষেপ নাই । এমন করে বিশ্বের সকল প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের অবহেলা করা হয় । শিল্প উৎপাদন বাড়লেও শ্রমিকদের পূর্বের অবস্থা থেকে কোন অগ্রগতি হচ্ছে না বরং কোন কোন ক্ষেত্রে অবস্থা আরও শোচনীয় হচ্ছে । গরীবরা গরীব থেকে যাচ্ছে ধনবাররা আরও ধন পুঁঞ্জীবুত করছে । ম্যাক্সিম গোর্কির বিখ্যাত উপন্যাস ‘মা’ অবলম্বনে কোথাও পরিবর্তন আসছে না কিংবা মহামতি প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রও প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না ।



ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু বৃটিশ প্রিয়ডে জেলে থাকা অবস্থায় তার তের বৎসর বয়সীয়া কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে প্রায়ই চিঠি লিখতেন । যে চিঠিগুলো পরবর্তীতে বই ‘বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ’ আকারে প্রকাশিত হয় । একটি চিঠিতে নেহেরু তার মেয়েকে লিখেছিলেন, ‘তুমি নিশ্চয়ই ভাবছ উৎপাদন প্রণালী যত উন্নত হবে উৎপন্ন দ্রব্যের পরিমাণও তত বাড়বে, পৃথিবীর সম্পদও ক্রমে বাড়তে থাকবে এবং বণ্টনের বেলায় প্রত্যেকের ভাগেই কিছু বেশি পড়বে । আমি কিন্তু বলব তোমার কথাটা খানিকটা সত্য হলেও পুরোপুরি সত্য নয়” । জওহরলাল নেহেরুর মতে সম্পদের উৎপাদ ঠিকই বৃদ্ধি পেয়েছে তবে তার সমবণ্টন হয়নি । যদি সম্পদের সমবণ্টন হত তাহলে ভারত বর্ষে এত দূঃখ থাকত না । শুধু ভারত বর্ষেই দুঃখ তা কিন্তু নয় ইংল্যান্ডের মত ধনী দেশেও শ্রমিকদের একই অবস্থা । তাই আরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় পৃথিবীর সর্বত্রই শ্রমিকদের অবস্থা প্রায় সমান ।



যুগে যুগে পৃথিবীতে যে সকল সংস্কারকের আগমন ঘটেছিল তাদের উপস্থিতিতে মানুষ কিছুটা শুধরে ছিল বটে । তখনকার মানুষেরা সাম্যবাদ, ভ্রাতৃত্ববোধ অনুসরণ করত । সংস্কারকদের তিরোধানোরে সাথে সাথেই মানুষ পুনরায় স্বার্থপর হতে শুরু করে । মানুষের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান সৃষ্টি হয় । মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় জাত, শ্রেণী ও বর্ণ প্রথার। এদের মধ্যে এক শ্রেণী মাটি থেকে অনেক উঁচুতে আকাশের কাছাকাছি অবস্থান করলেও রাষ্ট্রের সিংহভাগ মানুষ মাথা গোঁজার, দুই-বেলা আহারের রসদ জোগাড় করতে পারে না । যাদের হাত ধরে সমাজে উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে, মানুষের জীবন যাত্রার মান বেড়েছে সেই তাদের জীবন আজও রয়ে গেছে হাজার বছর পূর্বের প্রাচীন সভ্যতার গন্ডীতে । একটি ক্ষুধা ও দারিদ্রমূক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন সবাই আঁকি কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ করি না । মানুষের মধ্যে সমতার বিধান না করে ঠিক উল্টো পথে হাঁটছে পৃথিবী । এজন্যই দিনের পর দিন মানুষের মধ্যে পার্থক্য বেড়েই চলছে । এ পার্থক্য যেমন অর্থনৈতিক তেমনি মানসিকতার । যতদিন পর্যন্ত এ পার্থক্য কমিয়ে এনে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এক সুতায় বাঁধা যাবে না ততদিন পৃথিবীতে শান্তি আগমনের কোন সম্ভাবনা নাই । যে পৃথিবীতে গরীবের দীর্ঘ নিশ্বাসযুক্ত অক্সিজেন অভিজাত শ্রেণীরা গ্রহন করবে ততদিন উঁচু শ্রেণীরা শান্তিতে থাকতে পারবে না । আগামী শতকের এমন একটা পৃথিবী গড়তে হবে যে পৃথিবীতে ধনী-দরিদ্র, আমির-ওমরার কোন পার্থক্য থাকবে না । এটা করতে পারলে একটি দেশ সূখ-সম্মৃদ্ধিতে ভরপূর হবে ।



রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।

[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.