নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক.
শিরোনাম দেখেই আঁতকে উঠছেন, তাই তো ? স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ২০১৪ সালের মত এত ভালো ফলাফল কোন বছরই এসএসসি/সমমানের পরীক্ষার্থীরা করতে পারে নি । কাজেই বাংলাদেশ তার কাঙ্খিত লক্ষ্যানুযায়ী শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করার দিকে ধাবিত হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই তবুও কেন বিতর্কিত শিরোনামের অবতারণা করলাম তার যোক্তিক ব্যাখ্যা অবশ্যই লেখার পরবর্তী অংশে দেয়ার চেষ্টা থাকবে । তবে শুরুতেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি সেই সকল শিক্ষার্থী বন্ধুদেরকে, যারা সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে কেবল নিজেদের ভবিষ্যত উজ্ঝল করো নি বরং তার সাথে তোমাদের পরিবার, শিক্ষক এবং যে প্রতিষ্ঠানে তোমরা লেখাপড়া করেছ সেই প্রতিষ্ঠানকেও ধন্য করেছ । আশা নয় বিশ্বাস তোমরা তোমাদের সফলতাকে ধারবাবিহক করতে পারবে এবং জীবনের প্রারম্ভের সফলতা আগামী দিনগুলোর সকল স্তরে আলোকবর্তিকার মত কাজ করবে । শান্তনা দিচ্ছি তাদেরকে যারা অনেক কষ্ট করেও সফলতা অর্জন কিংবা আশানুরূপ ফল লাভ করতে পারনি । তোমরা ভেঙ্গে পরোনা । মনে রাখবে তোমাদের পূর্ব পুরুষদের মধ্যে যারা জীবনে সবচেয়ে বেশি সফলতা অর্জন করেছে তাদের প্রাথমিক জীবনটা ছিল ঘাত-প্রতিঘাতে পূর্ণ । সে সকল বাধাকে উপেক্ষা করে অসংখ্য বারের প্রচেষ্টায় তারা সফলতার স্বর্ণ শিখরে আরোহন করতে পেরেছিল । সাময়িকভাবে তোমাদের একটু মন খারাপ হলেও এ থেকে যতদ্রুত বের হয়ে অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে আগামী বারে সফলতার আশায় প্রস্তুতি নিতে পারবে তোমাদের সফলতাও ততদ্রুত ধরা দেবে । তোমরা যদি আব্রাহাম লিংকনের জীবনী অধ্যয়ণ কর তাহলে দেখতে পাবে, জীবনের প্রায় প্রতিটি ধাপে তিনি একজন ব্যর্থ মানুষ ছিলেন । এটা যেমন ছিল তার ব্যক্তি জীবনে তেমনি ছিল রাজনৈতিক জীবনে । অথচ কোন দিন তিনি হতাশ হননি । তার সে অদম্য ইচ্ছাশক্তি জীবনের শেষ নির্বাচনে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বানিয়ে দিল । আশা করব তোমরা যারা কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করতে পারনি তারা হতাশ না হয়ে আব্রাহাম লিংকনের মত কিংবা অন্যকোন মহামনীষীর মত জীবনে সাজানোর চেষ্টা করবে । ১৭ই প্রকাশিত এসসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফল দেখলে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও অবাক হয়ে যাবে । স্বভাবতঃই তাদের মনে প্রশ্ন জাগতে বাধ্য, বাংলাদেশের মত একটি গরীব দেশের শিক্ষার্থীরা কিভাবে এমন ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারল ? একনজরে সারা বাংলাদেশের সকল শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীদের সফলতার হার দেখে নিই । ১৭ই মে দুপুর সাড়ে বারোটায় দেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের যে রিপোর্ট তুলে দেন তাতে দেখা গেছে, ঢাকা বোর্ডে পাশের হার ৯৩.৯৪%,কুমিল্লা বোর্ডে ৮৯.৯২%,যশোর বোর্ডে ৯২.১৯%, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৯১.৪০%,বরিশাল বোর্ডে ৯০.৬৬%,রাজশাহী বোর্ডে ৯৬.৩৪%, সিলেট বোর্ডে ৮৯.২৩%, দিনাজপুর বোর্ডে ৯৩.২৬%, এছাড়া বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার ৮৯.২৫% এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৮১.৯৭% । দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের সমষ্টিগত পাশের হারের গড় ৯১.৩৪% । গত বছরের পাশের হারের গড় ছিল ৮৯.০৩% । এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন শিক্ষার্থী । গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯১ হাজার ২২৬জন শিক্ষাথী । সুতরাং ২০১৩ সালের তুলনায় পাশের হার যেমন বেড়েছে তেমনি জিপিএর সংখ্যা বেড়েছে ৫১ হাজার ৫০টি । উল্লেখ্য যে ২০১৪ সালে দেশের দশটি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭২৭ জন শিক্ষার্থী এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছিল । চমৎকার এ ফলাফলের জন্য ধন্যবাদ প্রতিটি শিক্ষার্থীর অভিভাবক, শিক্ষক সর্বোপরি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীকে । বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনয় মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে শিক্ষায় সফলতার হার বেড়েছে । কোন কাজে সফলতা আসলে পরবর্তী পত্যাশা বেড়ে যায় । কাজেই আশা করব অচিরেই শিক্ষার্থীরা শতভাগ সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারবে । এএসসি/সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পরেই শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছে, শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল পদ্ধতি বুঝতে পারার কারনে ফলাফল ভালো হয়েছে । তার এ বক্তব্যের সাথে অবশ্যই একমত তবে দেশের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতি আয়ত্ব করতে পারে নি । আশা করব অচিরেই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর দৃঢ় পদক্ষেপে তারাও যাতে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান এবং প্রশ্নপত্র প্রনয়নের বিষয়টি আয়ত্বে আনতে পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন ।
দুই.
লেখার শিরোনাম দেখে অনেকেই আমার সাথে দ্বিমত পোষন করে আছেন । সত্য কথা বলতে কি শিরোনামে আমিও সন্তুষ্ট নই । তবুও অনেকটা বাধ্য হয়ে এবং কিছুটা দায় ঠেকে শিরোনামটা দিতে হয়েছে । ২০১৪ সালে এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় যে ফলাফল হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট না হলে কোন বাক্যব্যয় ছাড়াই তাকে অবিবেচক বলা যায় । তবে আমি আপনাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব ১৭ই মে থেকে ৯০ দিন পূর্বে । অর্থ্যাৎ এসএসসি/সমমান পরীক্ষা শুরু হওয়ার সময়টাতে । আপনারা নিশ্চয়ই ভূলে যাননি প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়টি । এসএসসি/সমমানের এমন কোন বিষয়ের পরীক্ষা ছিল না যাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় নি । এমনকি ফেসবুকসহ কয়েকটি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে, শহরের কিছু ফটোকপির দোকানে, কোচিং সেন্টারের স্যারদের কাছে পরীক্ষার হুবহু প্রশ্ন পাওয়া গেছে । বিভিন্ন পত্রিকায় এ নিয়ে যথেষ্ট লেখালেখি হওয়ার পরেও কর্তৃপক্ষ ছিল নীরব দর্শক । যেন তাদের অনেক আত্মীয় স্বজন এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহন করছে ! ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র দেশের সকল শিক্ষার্থীরা পেয়েছে সে কথা বলছি না তবে শহরের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এবং এ সকল শিক্ষার্থীর সাথে গ্রামের যাদের আত্মীয়তা আছে তারা প্রশ্নপত্র অবশ্যই পেয়েছে । ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সবগুলো যে সঠিক ছিল তাও কিন্ত নয় । অসাধুর মধ্যে যারা বেশি অসাধু তারা এক্ষেত্রেও অসাধুতা করেছে । নিজেরা প্রশ্নপত্র সাজিয়ে প্রচার চালিয়েছে এটাই ফাঁস হওয়া প্রশ্ন । সুতরাং কিছু শিক্ষার্থী বিভ্রান্তিরও শিকার হয়েছে । তবে কয়েকটি পরীক্ষায় হুবহু ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে পরীক্ষার প্রশ্ন মিলে যাওয়ায় সবগুলো প্রশ্নই ফাঁস হয়েছে বলে মানুষের বদ্ধমূল বিশ্বাস জন্মেছে । এখন প্রশ্ন হলো, একজন শিক্ষার্থী দু’টো বছর পড়াশুনার করার পর পরীক্ষার এক কিংবা দু’দিন আগে যদি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পেয়ে যায় তবে সে কেন পাশ করবে না ? যদি হিসেবটা এমনি হয় তবে দেশের শতভাগ শিক্ষার্থীর পাশ করা উচিত ছিল । কেন শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করল না ? এর কৈফিয়ত কে দেবে ? যে সকল ছেলেরা পরীক্ষায় ভালো করতে পারে নি তারা যদি ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পেয়ে না থাকে তবে তার দায়ভারই বা কে নেবে ? রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই মন খারাপ হয় । পরিবারের চাপ, সামাজিক কারন, কিংবা নিজের উপর ধিক্কারের কারনে তখন শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক হুশ হারিয়ে ফেলে । তখন তাদের সিদ্ধান্ত হয়ে যায় অনেকটা আত্মগাতী । লিখতে বসার পূর্ব মূহুর্তে পত্রিকায় চোখ বুলানোর সময় দেখলাম চট্টগ্রামের সৌরভ নামের সতের বছর বয়সী একটি ছেলে ফলাফল আশানুরুপ না হওয়ার কারনে আত্মহত্যা করেছে । অতীতের বছরগুলোর অভিজ্ঞতা বলে, আরো অনেকে আত্মহত্যা করবে বা করার চেষ্টা করবে, কেউ কেউ নেশাগ্রস্থ হয়ে বিপথগামী হবে । এ সকল দুর্ঘটনা গুলোর দায়ভার কার উপর বর্তাবে ? নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী কিংবা সমাজের অন্য কেউ এসকল অনাকাঙ্খিত ঘটনার দায়ভার নিতে রাজী হবেন না । তবে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে কেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করা হয় না ? আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা যে পরিমান মেধাবী তাতে ২০১৪ সালের সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের কারনে যে মাত্রায় ভালো ফলাফল করেছে তার চেয়েও ভালো ফলাফল করত যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস না হত । শিক্ষার্থীরা যখন ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র হাতে পায় তখন অধিকাংশই সে প্রশ্নপত্রের বাইরে অন্যকোন প্রশ্নের উপর প্রস্তুতি নেয় না । সুতরাং যখন ফাঁস হওয়া সে প্রশ্নপত্রটি ভুয়া হয় তখন শিক্ষার্থীটি স্বভাবতঃই আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে ব্যর্থ হয় । এছাড়াও খাতা মূল্যায়ণে শিক্ষকদের যে ধরণের উদারতার কথা শোনা যায় তাতে অবশ্যই ফলাফল সন্তোষজনক হয় নি বরং আরও ভালো হওয়া উচিত ছিল । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাশ না করে সে প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল হওয়ার আশঙ্কাও ফলাফলে পরিবর্তন এনেছে ।
তিন.
আমার শিক্ষাজীবনের অভিজ্ঞতার কথাই বলব । জীবনের প্রাথমিক পর্বের শিক্ষা গ্রাম্য পাঠশালায় পেয়েছিলাম । এরপর শুরু হল মাদ্রাসা শিক্ষা জীবন । ২০০৪ সালে আমার জন্মস্থানের স্থানীয় মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হই এবং সিডর পরবর্তী বছর অর্থ্যাৎ ২০০৮ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহন করি। সে সূত্রে দীর্ঘ দিন মাদ্রাসায় অধ্যয়ণের সুযোগ হয়েছে । অজো-পাড়াগাঁয়ের মাদ্রাসা হওয়ার কারনে পাঠ্য বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করেছি । দাখিল পরীক্ষার তিন মাস পূর্বে সিডর হওয়ার কারনে আমাদের মাদ্রাসার টিনসেট ভবনগুলি মাটির সাথে মিশে যায় । যার কারনে টেষ্ট পরবর্তী কোচিং ক্লাসে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় । তবুও গৃহ শিক্ষকের সহায়তায় আল-ফাতাহ টেষ্ট পেপার থেকে দেশের নামকরা কয়েকটি মাদ্রাসার টেষ্ট পরীক্ষার প্রশ্নের উপর প্রস্তুতি গ্রহন করি । দৃঢ় মনোবল ছিল ক্লাসের অন্যান্যদের তুলনায় ভালো করব । পরীক্ষা দিলাম । ক্লাসের অন্যান্যদের তুলনায় রেজাল্টও ভালো হল । ৪.৯৪ পেয়েই মহাখুশি । খুশি শুধু আমি না সাথে আমার পরিবার এমনকি আমার শিক্ষকরাও । আলিমে ভর্তি হলাম দেশের একটি নামকরা মাদ্রাসায় । উপলব্ধি করলাম জিপিএ-৫ না পাওয়ার যন্ত্রনা । এ মাদ্রাসার ছাত্রাদের সাথে আমার তুলনা করে দেখলাম । এ মাদ্রাসাটি থেকে যারা গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে তারাও শিক্ষার মানদন্ডে আমার থেকে খুব একটা এগিয়ে নেই । যাক সেসব কথা । গ্রামের এক বন্ধু ২০১২ সালে একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে । তাতেও আমার মধ্যে ঈর্শার জন্ম হয়নি । তবে প্রশ্ন হল, আমার যে বন্ধুটি মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়ে এ প্লাস পেল ও কোন দিন মাদ্রাসায় যায় নি । সব সময় স্কুলে পড়েছে । এমনকি আরবীতে নিজের নামটিও লিখতে পারে কিনা সন্দেহ ? সে আমার থেকে ভালো রেজাল্ট করে কি করে ? মাদ্রাসায় যারা পড়েছেন তারা এবং মাদ্রাসা শিক্ষার সম্মন্ধ্যে যারা যৎকিঞ্চিত জ্ঞান রাখেন তারাও জানেন মাদ্রাসায় অন্তত তিনটি বিষয় আরবীতে লিখতে হয় । যে ছেলেটি তার শিক্ষাজীবন স্কুলে কাটিয়ে এসেছে সে অন্য একটি মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্রের তুলনায় গনিত, ইংরেজী কিংবা বাংলায় বেশি দক্ষতা রাখতে পারে এবং সেটা স্বাভাবিকও । কিন্তু আরবী বিষয়গুলো কি ঐশ্বরীকভাবে পরীক্ষার খাতায় উঠে যায় ? এছাড়াও গ্রামে কিংবা শহরে প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায়, যে সকল শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে টেষ্টে উত্তীর্ণ হতে পারে না তারা মাদ্রাসায় এসে পরীক্ষা দিয়ে খুব ভালো রেজাল্ট করে । রাষ্ট্রে এর হাজারও দৃষ্টান্ত আছে ? আমি আমার একজন শিক্ষককে স্কুলের ফেল ছাত্ররা মাদ্রাসায় এসে পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করার অন্তরালের কারন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি হাসতে হাসতে বললেন-এটা আল্লাহর রহমত ! এটা যে কোন প্রকারের রহমত তা আমি আজও খুঁজে পাই নি । তাইতো সচেতন অভিভাবকদের বলতে শোনা যায়, মাদ্রাসার রেজাল্ট ! ও নিয়ে বাহাদুরী করো না । ওটা অর্জনের রহস্য আমরা জানি ! লেখার এ অংশকে যদি কেউ নিজেদের দিকে টেনে নিয়ে আমাকে দোষারোপ করেন তাতে আমার বিশেষ আপত্তি নেই । কিন্তু বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে মাদ্রাসা শিক্ষিতরা বিশেষ করে আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষিতরা যে কারনগুলোতে অপমানিত হচ্ছেন তার মধ্যে এটিও অন্যতম । তবে মাদ্রাসা শিক্ষা যে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে তা বলার সাধ্যি কারো নেই । বাংলাদেশে এমন কতগুলো মাদ্রাসা আছে যে গুলোতে সঠিক এবং পরিপূর্ণ শিক্ষা দেয়া হয় এবং সে মাদ্রাসাগুলোও দেশের শীর্ষস্থানীয় মাদ্রাসা হিসেবে আজও মানুষের কাছে পরিচিত । মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যদি মাদ্রাসা শিক্ষাকে ধ্বংসের কিনারা থেকে না তোলেন তবে আগামী কয়েকবছর পরে স্কুলের ফেল ছাত্রদের ছাড়া মাদ্রাসা থেকে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করানোর জন্য অন্যকোন ছাত্র পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ ?
চার.
দেশের শিক্ষার মানের অবনতি হলেও শিক্ষিতরে সংখ্যা বাড়ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই ! ২০০১ সালে এসএসসি/সমামানের পরীক্ষার ফলাফলে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর সে বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল মাত্র ৭৬জন । তারপরের বছরের অবস্থা আরও করুন ছিল । জিপিএ-৫ প্রাপ্তের সংখ্যা মাত্র ৩জন । কি বিস্ময়কর পরিবর্তন মাত্র ১৩ বছরের মাথায় ! ৭৬ জন দিয়ে শুরু করলেও ২০১৪ সালে এসে সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬জনে । বাংলাদেশের প্রায় প্রতি বর্গকিলোমিটারের ১জন করে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হয়েছে। শিক্ষা যে জ্যামিতিক গতিতে এগুচ্ছে তাতে আগামী ১৩ বছর পর প্রতি বাংলাদেশের প্রতি মিটারে একজন করে জিপিএ-৫ পেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে কি ? দেশের মানুষ শতভাগ শিক্ষিত হোক সেটা সকল দেশপ্রেমিকেরই স্বপ্ন । কিন্তু মানহীন শিক্ষিত করে তা দিয়ে জাতির বোঝা না বাড়িয়ে অল্পসংখ্যক হলেও যদি তাদেরকে দক্ষ করে শিক্ষিত করা যায় সেটা উত্তম নয় কি ? যারা লেখার এ অংশে আপত্তি জানাবেন তাদের কাছে জিজ্ঞাসা, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়ে আর যাই হোক জাতিকে প্রকৃত শিক্ষিত করা যায় কি ? হয়ত কোন যুক্তি দিয়ে এ প্রশ্নে উত্তর দিয়ে যাবেন কিন্তু বিবেকের কাছে কান পেতে জানতে চেষ্টা করুন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কোন দিকে ধাবমান ? যারা এ বছর ভালো রেজাল্ট করেছ কিংবা আশানুরূপ ফলাফল লাভ করতে সক্ষম হওনি তারা আমার এ লেখা পড়ে হতাশ হয়োনা । এ লেখাটা তোমাদের থেকে তোমাদের অভিভাবকদের এবং শিক্ষা বিভাগের সাথে সম্পর্কিত সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরর উদ্দেশ্যেই বেশি লেখা । কয়েকবছর হল প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট/সমানেরর পরীক্ষাকেও পাবলিক পরীক্ষার আওতাভূক্ত করা হয়েছে তবুও এখনো এসএসসি/সমমানের পরীক্ষার রেজাল্টকেই মূখ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় । তোমার জীবনে উন্নতির জন্য এ পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল আলোকবর্তিকার মত কাজ করবে । এটা তোমার জীবনে অর্জিত প্রথম সম্পদ । কাজেই জীবনের প্রতি যত্নবান হওয়ার এখনই সময় । ২০১৪ সালের এসএসসি/সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেশের নারী শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির রূপরেখা স্পষ্ট করে দিয়েছে । পাশের হার, জিপিএ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পুরুষ শিক্ষার্থীর চেয়ে নারী শিক্ষার্থীরা কয়েক শতাংশ এগিয়ে আছে । যা দেশের ভবিষ্যত্যের জন্য চরম আশাব্যাঞ্জক । কাজেই একটি সোনার দেশ গড়ার জন্য জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য যতগুলো পদক্ষেপ নেয়া দরকার তার সবগুলো সরকার যেমন অতীতে গ্রহন করেছে তেমনি দেশের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে বিশেষ করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে অবশ্যই কঠোরতা অবলম্বন করবে বলেই দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে আকাঙ্খা করি । শিক্ষার্থী তার যোগ্যতানুযায়ী সনদপ্রাপ্ত হোক । অনৈতিকভাবে অর্জিত শিক্ষাসনদ যেন কোন শিক্ষার্থীর জন্য বোঝা এবং ভবিষ্যতে লজ্জার কারন না হয়ে দাঁড়ায় সে ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানাই । একটি দক্ষ শিক্ষিত জাতি গঠন করতে পারলে তাদের থেকে ভবিষ্যত প্রজন্ম ভালো কিছু আশা করতে পারে নচেৎ না ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
[email protected]
©somewhere in net ltd.