নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি জিজ্ঞাসা করা হয় বর্তমানে দেশের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষনীয় এবং সুস্বাদু খাবার কি ? তবে অবশ্যই বলা হবে আম । কিন্তু মানুষ নিশ্চিতভাবে শঙ্কামুক্ত থেকে আম খেতে পারছে না । যদি জিজ্ঞাসা করা হয় দেশের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু কি ? বলা হবে ফরমালিন আগ্রাসন । যে আগ্রাসন মানুষকে আমসহ সকল মওসুমী ফল, মাছ, মাংস এবং অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য গ্রহনে অন্তরায় সৃষ্টি করছে । মধুমাসের ফল-ফলাদিকে যখন ফরমালিন দিয়ে তাজা রাখা হয় তখন সেটা সবাই যেমন তা খেতে অপছন্দ করে তেমনি ফরমালিন মিশ্রিত ফল যখন মানুষ নিজেদের অজান্তে ভক্ষন করে তখন তা মানুষের মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়ায় । মানুষের জীবন-মরনের সন্ধিক্ষনে ফরমালিন যখন আলোচ্য ভূমিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিদের ঘোষিত ফরমালিনতত্ত্ব আমজনতাকে যথেষ্ট বিনোদন দিয়েছে । রাজনীতিতে ফরমালিন যতই হাস্যরসাত্মক হোক খাদ্য দ্রব্যে ফরমালিন মারাত্মক ঘৃনার । মানুষের জীবনকে পঙ্গু করার জন্য ফরমালিনের ভূমিকা অবশ্যই অনস্বীকার্য ।
চলতি বছরে ফরমালিন যেভাবে আলোচনায় এসেছে অতীতের কোন বছরে ফরমালিন নিয়ে মানুষকে এতটা ভাবাতে পারে নি কিংবা আলোচনায় আসেনি। মওসুমী ফলের এমন কোন প্রজাতি নাই যেটাতে ফরমালিন বা ক্ষতিকর রাসয়নিক পদার্থ দ্রব্য মিশ্রিত করা হয় না । মানুষের সচেতনতায় ফরমালিন বিরোধী ব্যাপক আন্দোলনের কারনে সরকার ফরমালিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে । বিভিন্ন বাজারে প্রশাসনের ফরমালিন বিরুদ্ধে চালানো অভিযানে ফরমালিন মিশ্রিত অনেক ফল ধ্বংস করা হয়েছে বা হচ্ছে এবং এ অবৈধ কাজের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে আর্থিক এবং শারীরীকভাবে দন্ড প্রদান করেছে । এতেও যখন ফরমালিন আগ্রাসন রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে তখন প্রশাসন ভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহন করতে বাধ্য হয়েছে ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এ বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকায় ফরমালিনযুক্ত কোন ফল প্রবেশ করতে দেয়া হবে না । সে ধারাবাহিকতায় ঢাকার সাতটি প্রবেশদ্বারে সাতটি টিমকে নিযুক্ত করে বিভিন্ন ফলে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে । এ ক্ষেত্রে পুলিশের পরিকল্পনা সাফল্যের মুখ দেখেছে । অন্তত ঢাকায় ফরমালিনযুক্ত ফলের অনুপ্রবেশ রোধ করা সম্ভব হয়েছে । শত শত টন ফরমালিনয্ক্তু আম, হাজার হাজার ঝুড়ি লিচুসহ মওসুমী অনেক ধরনের ফল ধ্বংস করার কারনে ব্যবসায়ীরাও ফরমালিনযুক্ত ফল আনতে সাহস পাচ্ছে না । প্রশাসন এ মহৎ কর্মের জন্য ধন্যবাদ পেতেই পারে এবং ঢাকাবাসীও কার্পন্য না করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ছুঁই ছুঁই । ষোল কোটি জনসংখ্যার মাত্র ২ কোটি মানুষের বসবাস ঢাকাতে । সরকার শুধু ২ কোটি মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে আর বাকী ১৪ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে এটা সরকারের কাছে দেশবাসীরও কাম্য নয় । ঢাকার ২ কোটি মানুষকে সুস্থ রেখে বাকী ১৪ কোটি মানুষকে মুত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করালে কি বাংলাদেশ সুস্থ থাকবে ? সুতরাং সরকারের দেশবাসীর প্রার্থনা যাতে, ফরমালিনযুক্ত ফল ধ্বংসের ক্ষেত্রে দ্বৈতনীতি ত্যাগ করে ফরমালিনের ভয়ালথাবা থেকে গোটা দেশবাসীকে দ্রুত রক্ষা করুন । ঢাকাকে যেমন ফরমালিন মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তেমনি সারা বাংলাদেশকে ফরমালিন মুক্ত করুন ।
কারো যদি মাথা ব্যাথা হয় তাতে মাথা কেটে ফেলা যেমন মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়ার সমাধান নয় তেমনি ফরমালিন আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য ফরমালিনযুক্ত আম কিংবা অন্যান্য ফলা-ফলাদি ধ্বংস করে ফরমালিন সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় । এভাবে শত শত টন আম ধ্বংস করলে কেবল দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতিই হবে না বরং দেশের মানুষও মওসুমী ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে । কাজেই বিকল্প পদ্ধতিতে ফরমালিনমুক্ত রাষ্ট্র গড়া সম্ভব । দেশের অভ্যন্তরে নিশ্চয়ই খুব বেশি সংখ্যক কোম্পানি ফরমালিন কিংবা ক্ষতিকর রাসয়নিক দ্রব্য উৎপাদন করার সাথে জড়িত নয় কিংবা বিদেশ থেকে খুব বেশি সংখ্যক মানুষ ফরমালিন আমদানী করেনা । সুতরাং সরকার যদি আম, লিচু কিংবা অন্যান্য ফল কিংবা খাদ্যদ্রব্য ধ্বংসের পথে না হেটে ফরমালিন কিংবা রাসয়নিক দ্রব্যের উৎপাদ এবং এর সাথে যারা জড়িতদে তাদেরকে খুঁজে বের করে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে শাস্তির মুখোমুখি করা হয় তবে দেশ অর্থনৈতিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবে না তেমনি দেশের মানুষও নির্ভয়ে ফলসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য গ্রহন করতে পারবে । সরকার ফরমালিনের আগ্রাসন রোধে যে পন্থা গ্রহন করুক না কেন সেটা তাদের কৌশলগত ব্যাপার তবে বর্তমান সময়ে ঢাকায় ফরমালিনযুক্ত ফল প্রবেশের ক্ষেত্রে যে নীতি গ্রহন করা হয়েছে সে নীতি দেশের সব স্থানের জন্য একই নীতি অবলম্বন করা হোক । ফরমালিনের ধ্বংস থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য দ্বৈতনীতি ত্যাগ করে একনীতি গ্রহন করা হোক এবং দেশের মানুষকে সুস্থভাবে ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা হোক ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
©somewhere in net ltd.