নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত ২৬শে জুন মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রমযান মাসে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সে আদেশের পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছিল । প্রধানমন্ত্রী একজন নারী এবং অতীতে দু’ইজন শিক্ষার্থীর (সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সালমা ওয়াজেদ পুতুল) গর্বিত মা হওয়ায় অনুধাবন করতে পেরেছিলেন রমযান মাসে একজন মায়ের কত কষ্ট হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মায়েদের কষ্ট লাঘবের জন্য স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন । রমযানের শুরু থেকে প্রধানমন্ত্রীর সে আদেশর আংশিক বাস্তবায়ণ হলেও সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রীয় আদেশ মান্য করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করেনি । বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্যাডেট স্কুল, কিন্ডার গার্ডেন স্কুল, কোচিং সেন্টারসহ বিভিন্ন ধরনের বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ করা হয়নি । অথচ প্রধানমন্ত্রী যে উদ্দেশ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন তার অন্যতম ছিল মায়েদেরকে রমযানে বাড়তি কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়া । উপরের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের চেয়ে একজন বাচ্চা শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে মায়েদেরকে অনেক বেশি কষ্ট করতে হয় । প্রত্যুষে অনেক কষ্ট করে বাচ্চাকে ঘুম থেকে জাগানো, তাকে স্কুলের জন্য রেডি করানো, নাস্তা খাওয়ানো এবং স্কুলে পৌঁছে দেয়ার পুরো দায়িত্বটিই থাকে মায়ের কাঁধে। ভোর রাতে সেহরি গ্রহন করে ফজরের নামাজ আদায় করে প্রায় প্রতিটি মানুষ চায় একটু ঘুমিয়ে নিতে অথচ কর্তৃপক্ষ স্কুল খোলা রাখার কারনে মায়েদের ভাগ্যে সে সূখটুকু জোটে না । কাজেই রমযানে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের স্কুলসমূহ যদি খোলা রাখা হয় তবে প্রধানমন্ত্রীর এ সংক্রান্ত আদেশ ফলপ্রশু হল কি ? এছাড়াও দেশের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় প্রতিটি স্কুল তাদের কোচিং ক্লাস কিংবা ফিডব্যাক ক্লাসের নামে বিশেষ করে পঞ্চম, অষ্টম, নবম-দশম, এবং একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার্থী শিক্ষার্থীদেরকে মাত্র ১২-১৫দিন কোচিং ক্লাস করানোর নামে রমযানে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা নিচ্ছে । এ কোচিং ক্লাস করতে শিক্ষার্থীদের যেমন অনীহা তেমনি মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য বাড়তি দেড় হাজার টাকা পরিশোধ করাও সল্প আয়ের অভিভাবকদের জন্য বাড়তি বোঝা । সাথে মায়েদের কষ্ট তো আছেই । এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হলেও পূর্ব নির্ধারিত বিভিন্ন পরীক্ষাও স্থগিত করা হয় নি । বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে । পুরো রমযান জুড়ে চলবে ৮/৯ টি পরীক্ষা । রোযা পালন করে একজন শিক্ষার্থীর জন্য এই গরমের মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করাও মারাত্মক কষ্টের হবে । কাজেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি এ ব্যাপারে পূর্বগৃহীত সিদ্ধান্ত পূনঃবিবেচনা করার অনুরোধ রইল ।
প্রধানমন্ত্রীর আদেশের সবচেয়ে বেশি অবমাননা করছে দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো । পাবলিক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারী আদেশ পাওয়ার পরে বন্ধ ঘোষণা করলেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যাগুলোর বেশিরভাগ আগামী ২৫শে জুলাই পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বরাবর খামখেয়ালী করে চলছে । গত ৩০শে জুন ট্রান্সপ্যারেন্সি ইন্টারনাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কয়েক স্তরের দুর্র্নীতির খসড়া প্রকাশ পেয়েছে । অতীতে কিংবা বর্তমানেও দেশের সরকারী আধাসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেমন সেবামূলক কার্যক্রম চালু ছিল কিংবা আছে তেমনি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা সেবামূলক খাত হিসেবে নেই । এটা বাণিজ্যের অন্যতম খাতে পরিনত হয়েছে । মূলত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যায় তার যাত্রা শুরু করলেও দেশের অন্যতম মুনাফা অর্জনের খাত হিসেবে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্থান নিতে শুরু করেছে । যা শিক্ষার সাথে সম্পূর্ণ বেমানান । অচিরেই সরকারী নির্দেশনা পালনে বাধ্যকরনসহ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে সকল অনিয়ম চালু আছে তাও যেন বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় । সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন মানবীয় নৈতিকথা বিদ্ধমান থাকে এবং শিক্ষার্থীদেরকেও যেন নৈতিকতা শিক্ষা দেয়া হয় । শুধু টাকা উপার্জনই যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূখ্য উদ্দেশ্য হয় তবে দেশের ৭৯টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী তাদের আগামীর জন্য কি শিক্ষতে পারবে ? জাতিকে তারা দিতেই বা পারবে কি ? একজন শিক্ষার্থী যে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহন করে সেখানের যাবতীয় আচরণ শিক্ষার্থীদের জীবনে প্রভাব ফেলবে এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত কর্মক্ষেত্রে তার এ শিক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যের প্রয়োগ ধারা অব্যাহত থাকবে । যার ফলাফল চক্রাকার হারেই সূখকর হবে না ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এখনও মানুষ পূর্ণ আস্থাশীল । তার একটা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে না তা হবার নয় । প্রধানমন্ত্রী রমযান মাসে যে উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য যেন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয় । যদি কোচিং ক্লাস কিংবা অন্যকোন ক্লাস গ্রহনের নামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয় বা সরকারী পদক্ষেপেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু সংখ্যক বন্ধ করতে না পারা যায় তবে যেন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকেই খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয় । প্রধানমন্ত্রীর আদেশ উপেক্ষা করে যদি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়াস থাকে তবে যেন দেশের সকল শিক্ষার্থীদেরকে সমান সুযোগ প্রদান করা হয় । শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে ‘কেউ পাবে তো কেউ পাবে না’ তা যেন না হয় । অন্যদিকে যদি কোচিং ক্লাস কিংবা ফিডবাক ক্লাসের মাধ্যমে শুধু অর্থ হাতানো উদ্দেশ্য থাকে তবে যেন এ কার্যক্রম অচিরেই বন্ধের নির্দেশ এবং তা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর মহোদয়ের অনিচ্ছা সত্ত্বে যেমন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধরাখার নির্দেশ দিয়ে দেশবাসীর উপকার করেছিলেন তেমনি যেন প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগেই রমযানে যারা তার নির্দেশ উপেক্ষা করে মায়েদের কষ্ট দিবে তাদেরকে জবাবদিহীতার মুখোমুখি করেন । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের স্বার্থে বিশেষ করে মায়েদেরকে রমযান মাসে পুরোপুরি কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থার না করেন তবে তাকে প্রদত্ত দেশবাসীর দেয়া ধন্যবাদের একাংশ তুলে নিবে । আশা নয় বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার উদার দৃষ্টির মাধ্যমে এ ব্যাপারে যথাযথ নির্দেশনা দিবেন এবং জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাম্যতা বিধান বজায় রাখবেন ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
facebook.com/raju69mathbaria/
©somewhere in net ltd.