নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাকিবের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, বিসিবি এবং আমাদের ভালোবাসা

০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:২৪

সাকিব আল হাসান । বাংলাদেশ ক্রিকেটাঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র । যতদিন বাংলাদেশের ক্রিকেট বেঁচে থাকবে ততোদিন সাকিবের নামটিও স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে । সাকিব দেশের ক্রিকেটের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন । দেশের হয়ে খেলা ছাড়াও দেশ এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন বিখ্যাত ক্লাবের হয়েও তিনি অনেক ম্যাচে অংশগ্রহন করেছেন । বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে পরিচিতি দিয়েছেন । গত ৮/৯ বছর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে বিশ্বের সবগুলো ক্রিকেট প্লেয়িং দেশের বিরুদ্ধে খেলেছেন । বোলিং, ব্যাটিং, এবং ফিল্ডিংয়ে সাকিবের জুড়ি মেলা ভার । বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডারের স্বীকৃতিও পেয়েছেন । বিশ্বের বাঘা বাঘা খেলোয়ারদের পিছনে ফেলে তিনি কয়েকবার এক নম্বর অলরাউন্ডারের খেতাব পেয়েছেন । সাকিব বাংলাদেশের জন্য যতগুলো গৌরবময় জয়ে ভূমিকা রেখেছে তা বোধহয় অন্যকোন ক্রিকেটার রাখতে পারে নি । হয় ব্যাটে নয়ত বলে কিংবা ফিল্ডিংয়ে সাকিবের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বিরোধী দলের শিবিরকে বার বার ভাবিয়ে তুলেছে । ক্রিকেট মাঠে সাকিব, এক কথায় অনবদ্য । মাগুড়ায় জন্ম নেয়া ছেলেটি যেন প্রতি ম্যাচেই বিশ্ব জয় করার ক্ষমতা রাখে । বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাঠে সাকিবের মত সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা এবং নিজেকে উজাড় করে দেয়ার মানসিকতা কিংবা ক্ষমতা যদি আর কয়েকজন ক্রিকেটারের থাকত তবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে বিশ্বের অন্যান্য দলগুলোকে বার বার পরিকল্পনা গ্রহন করতে হত । তারপরেও এক সাকিবে বিশ্বের অনেক নামজাদা খেলোয়ারের ঘাম ছুটে গিয়েছে । সাকিব যখন ব্যাটে থাকে তখন বিরুদ্ধ পক্ষের বোলারেরর বুক দুরুদুরু করে কাঁপে, যখন বলে থাকে তখন ব্যাটসম্যান অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করে কিংবা যখন ফিল্ডিং করেন তখন ব্যাটম্যানকে বলে আঘাত করার পূর্বে সাকিবকে দেখে নিতে হয় । এই আমাদের সাকিব । সদা হাস্যোজ্জ্বল একটি মূখ । যে মুখটি বাংলাদেশীদের হৃদয়ে স্থান পেয়েছে । তরুনদের প্রিয় তারকা সাকিব আল হাসান । নম্র, ভদ্র ব্যবহারের সাকিব বাংলাদেশের গর্বিত সন্তান ।



হঠাৎ সাকিব বদলাতে শুরু করেছে। এ বদলানো কি নিজের জনপ্রিয়তায় অহংকারী হয়ে নাকি অন্যকোন কারনে সেটা সাকিবই ভালো জানেন । সবার প্রিয় সাকিব ধীরে ধীরে অনেকের অপ্রিয় হতে শুরু করলেন । তার খেলায় সেই আগের মত ধার নেই । তনি অনেকের সাথে এখন ভিালো ব্যবহার করেন না । মেজাজ চড়া রাখেন । সাকিবের এ বদলে যাওয়া ব্যবহারে সাকিব আশ্চার্য না হলেও দেশবাসী তার উপর বিরক্ত হতে শুরু করেছে । সাকিবের হঠাৎ বদলে যাওয়ায় তার ভক্ত-অনুরক্তদের বুক ভাঙতে শুরু করেছে । এটা যেন সাকিব বুঝেও বোঝেন না । মাঠের পারফরমান্সের সাথে প্যাভিলনের পারফরম্যান্সেও ধ্বস নেমেছে । বল, ব্যাট কিংবা ফিল্ডিংয়ে সাকিবের সেই অতীতের তেজ নেই । এ যেন এক ক্লান্ত সাকিব । গ্লারিতে থাকা অবস্থায় তার দিকে ক্যামেরাম্যান ক্যামেরা তাক করার পর তিনি পুরুষত্ব প্রদর্শন করার বদলে এখন দেশবাসীকে পুরুষাঙ্গ দেখান । নিজের স্ত্রীকে কেউ টিজ করলে আইন হাতে তুলে তিনি নিজেই বিচার করেন । এক্ষেত্রে সাকিবের একক দোষ নয় । কারো মা, বোন, কিংবা স্ত্রীকে কেউ অশ্লীল বাক্যে কেউ কিছু বললে তার প্রতিবাদ করা স্বাভাবিক । কিন্তু প্রশ্ন হল, একজন খেলোয়ারের স্ত্রীকে টিজ করার পূর্বে বিসিবি কর্তৃপক্ষ কেন তাকে নিরাপত্তা দিল না ? একজন খেলোয়ারের নিরাপত্তা, গোপনীয়তা, দূর্বলতা সকল কিছুর দায়িত্ব বিসিবির । যেহেতু একজন খেলোয়ার বিসিবির সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকা অবস্থায় তার সকল দায়দায়িত্ব বিসিবির ।



সাকিব আইপিএল, সিপিএল, বিগ ব্যাশ ছাড়াও ইংল্যান্ডের কয়েকটি জনপ্রিয় ক্লাবের হয়ে নিয়মিত খেলে যাচ্ছেন । কখনো তাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে বাধা দেয়া হয় নি । সম্প্রতি আইপিএল ৭ এ তিনি অকল্পনীয় সফলতা পেয়েছেন । কলকাতা নাইট রাইডার্সকে চ্যাম্পিয়ণ করার পিছনে সাকিবের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য । আইপিএল শেষ হওয়ার পরেই ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দল (যদিও দ্বিতীয় সারির) বাংলাদেশে তিনটি একদিনের ম্যাচ খেলতে আসে । প্রথম ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ভারতের কাছে লজ্জাজনকভাবে হেরে যায় । দ্বিতীয় ম্যাচে বৃষ্টি এবং পেসারদের সহায়তায় মাত্র ১০৫ রানে ভারত অলআউট হয় । বৃষ্টি বিঘ্নিত ৪১ ওভারের ম্যাচটিতে জয়ের জন্য মাত্র ১০৬ রান করতে হত । কিন্তু লজ্জার হলেও সত্য যে, ভারতের দূর্বল বোলিং এ্যাটাকের সামনে বাংলাদেশ ৬০ রানও করতে পারে নি । ম্যাচে অন্যান্য খেলোয়ারদের চেয়ে সাকিবকেই বেশি ক্লান্ত লাগছিল । এর কারন হিসেবে ক্রিকেট ভাষ্যকারগণ সাকিবের বিরতিহীন ক্রিকেট খেলাকে দায়ী করেছে । বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় দল ওয়েষ্ট ইন্ডিজ সফর করবে । এ উপলক্ষে বাংলাদেশের নবাগত কোচ শ্রীলঙ্কান হাথারুসিংহের অধীনে বিসিবি ঘোষিত জাতীয় ক্রিকেট দল অনুশীলন করছে । ব্যতিক্রম কেবল সাকিব । বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের নিষেধ উপেক্ষা করে তিনি ওয়েষ্ট ইন্ডিজে ক্লাবের হয়ে খেলতে পারি জমিয়েছেন । পরবর্তীতে ক্রিকেট বোর্ড থেকে তাকে ফিরে আসার কড়া নির্দেশ দেওয়ার পর তিনি ফিরতি ইমেইলে জাতীয় দল থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়ে কোচের কাছে বার্তা পাঠান । যদিও পরবর্তীতে তিনি ফিরে এসেছেন । সাকিবের কাছে বাংলাদেশ ক্রিকেট ঋণী । তার অর্থ এই নয় সাকিব ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেট মাঠে গড়াবে না । সাকিব যদি মনে করে থাকে তিনি ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেট অচল তাহলে তিনি ভূলের জগতে আছেন । অতীতেও সাকিব ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেট মাঠে গড়িয়েছে ভবিষ্যতেও গড়াবে । এছাড়া সাকিব যদি দেশের স্বার্থের চেয়ে টাকা আয়কে বশি গুরুত্ব দেন তবে সাকিবকে বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে স্বেচ্ছায় ছুটি দেয়া উচিত । কেননা যার কাছে দেশের সম্মানের চেয়ে টাকার মূল্য বেশি তার দ্বারা দেশের ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করা অর্থহীন ।



সাকিবের এ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরনের জন্য সাকিব একা দায়ী নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোডর্ও দায়ী ? অতীতেও সাকিব ছোট ছোট অপরাধ করেছে । তখন তাকে শাস্তি দেয়া হয় নি কেন ? তখন তাকে সুযোগ দিয়ে তাকে কি বড় ধরনের অপরাধ করার সাহস দেয়া হয়নি ? কাজেই সাকিবের বর্তমান আচরণের জন্য শুধু ব্যক্তি সাকিবকে দায়ী করার যাবে না বরং বোর্ডও অনেকাংশে দায়ী । অতীতেই যদি এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা হত তবে সাকিব বর্তমান কর্মকান্ড করতে সাহস পেত না । একজন খেলোয়ারের সকল গোপনীয়তা রক্ষা করার দায়িত্ব বোর্ডের । সাকিব যখন ওয়েষ্ট ইন্ডিজের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় তখন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক আকরাম খান কর্তৃক অনুমতি পেয়েছিল বলে শোনা যাচ্ছে । সাকিবের যে ইমেইলটির মাধ্যমে সাকিবকে বিতর্কিত করে তোলা হল সে ইমেইলটি প্রেরণের ব্যাখ্যা বোর্ড একান্তভাবে সাকিবকে ডেকে গ্রহন করলে সেটাই কি উত্তম হত না ? সেটা মিডিয়ায় প্রকাশ করে সাকিবকে সবার কাছে ঘৃণিত করা হলো নাতো ? প্রকাশিত ইমেইলটির মাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকরা সাকিবের ব্যাপারে অনেক অমূলক ঘটনা ছড়িয়েছে । এর দায়ভার কার ? বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সাকিবকে কঠোর শাস্তি দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন, আবার কেউ কেউ সাকিবকে আজীবন নিষিদ্ধ করার দাবী তুলছেন । সাকিবের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কি হবে সেটা বোর্ডের নিজস্ব ব্যাপার । তবে সাকিবকে যেন আশরাফুলের মত বলির পাঠা না করা হয় । খেলোয়ারদেরকে আইন-কানুনের মধ্যে রাখতে বোর্ডের কঠোরতা জরুরী কিন্তু সে কঠোরতার প্রদর্শন যেন অযৌক্তিক হয়ে না যায় । সাকিবের প্রতি দেশবাসীর ভালোবাসা যাতে তিনি নষ্ট না করেন সেজন্য আমাদের সাকিব ভাইয়ের প্রতি উদাত্ত আহ্বান । দেশবাসীর ভালোবাসা নিয়ে হোক সাকিবের আগামীর পথচলা । সকল স্বার্থের আগে যেন দেশের স্বার্থ বিবেচনা করা হয় সে জন্য সাকিব ভাইয়ের প্রতি অনুরোধ রইল । এতকিছুর পরেও সাকিবকে ধন্যবাদ কেননা তিনি নিজের ভূল বুঝতে পেরে আবারও দেশের স্বার্থে আপন স্বার্থ ত্যাগ করে ফিরে এসেছেন । সাকিবসহ অন্যান্য ক্রিকেটাররা যে বুঝেন, তাদের দায়িত্ব এ্যাডভ্যাটাইজিং নয় কিংবা মডেল হওয়া নয় বরং ক্রিকেট খেলা, ক্রিকেট শেখার প্রতি অনুরাগী হওয়া । এই কাজটা যেন তারা যত্নসহকারে করেন সেটাই তাদের কাছে দাবী । কেননা তারা যখন মাঠে থাকে তখন পুরো দেশবাসী তাদের পানে তাকিয়ে থাকে । তাদের সফলতা কিংবা বিফলতায় দেশবাসীর হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ নির্ভর করে । শুভ কামনা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ।



রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।

facebook.com/raju69mathabria/









মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.