নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদ উপলক্ষে যাত্রাপথ নিরাপদ চাই

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৪৬

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর সন্নিকটে । চাকুরীজীবি, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য পেশাজীবিসহ সকলেই পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়িত্বশাসিতসহ কর্মরত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে লম্বা ছুটি পায় । বিভিন্ন কর্ম ব্যস্ততায় যারা বছরের অন্যান্য সময়ে বাড়ীতে যেতে পারে না তারা ঈদের ছুটিকেই আপন নীড়ে ফেরার জন্য বেছে নেয় । নাড়ীর টানে সকলেই প্রিয় জন্মস্থানের মাটিতে পা রাখার, পরিচিত পরিবেশে শ্বাস গ্রহনের, বেড়ে ওঠার স্থানে ফেরার অদম্য স্পৃহা পোষণ করে । পথে নানা বিপত্তি সত্ত্বেও স্ত্রী, পরিবার-পরিজন নিয়ে যে কোনভাবে ঘরে তাকে ফিরতেই হবে । বাবা-মা, ভাই-বোন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং নিকট আত্মীয় স্বজনের সাথে বছরে একবারের জন্য হলেও মিলিত ইচ্ছা জাগে । মূলত ঈদ উপলক্ষে নগরায়ণের নিয়ত প্রতিযোগিতার যুগেও সৃষ্টি হয় পারিবারিক, সামাজিক মেলবন্ধনের । গ্রামের দিগন্ত বিস্তীর্ণ মাঠে সকলে একত্রিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায়, কোলাকুলি এবং বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় এবং নাস্তা খাওয়ার আনন্দ জীবনের সকল দুঃখ বেদনাকে ভূলিয়ে দেয় । সকল মান-অভিমানের দেয়াল ভেঙ্গে ঈদের দিন সকলেই বন্ধুতে, আপনজনে পরিণত হয় । কারো প্রতি কোন হিংসা-দ্বেষ কিংবা অভিযোগ-অনুযোগের বালাই থাকে না । আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে বেড়ানো, বন্ধুদের সাথে অফুরন্ত আড্ডা, মুরুব্বীদের সাথে শহরের কিংবা কর্মস্থলের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগিতে কেটে যায় ঈদের আনন্দঘন মূহুর্তগুলো । কথায় বলে, ‘সূখের সময় দ্রুত ফুরিয়ে যায়’ । ঈদের সপ্তাহব্যাপী ছুটি যে কখন কেটে যায় তার হিসেব যেন মিলিতে চায় না । অথচ শহরের কিংবা আপন কর্মস্থলের একেকটা দিন যে কতটা দীর্ঘ মনে হয় তা ভাবাই যায় না । তবে আনন্দ উপভোগ করার পূর্বে এবং পরে দূর-দূরান্ত থেকে আপন নীড়ে ছুটে আসা কিংবা ফিরে যাওয়া মানুষগুলোকে রীতিমত সংগ্রাম করতে হয় । যোগাযোগ ব্যবস্থার করুনদশা, টিকেট না পাওয়া, যানবাহন সংকট, সড়ক দূর্ঘটনা, দীর্ঘ জ্যাম ছাড়াও পথে পথে নানা সমস্যার মোকাবেলা করতে ফিরতে হয় মাতৃআলয়ে । এ সকল সমস্যার কারনে যাদের শিশু সন্তান আছে তারা তাদের বাড়ী ফেরার আবেগকে কোরবানী দিতে হয় । যাত্রা পথের লম্বা ফিরিস্তির সমস্যায় জীবন ওষ্ঠাগত হবে ভেবে অনেকেই ঈদের বাড়ী ফেরার কথা ভূলে থাকতে চেষ্টা করেন । মনের শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আপনজনকে নানা অজুহাত দেখিয়ে মনের কষ্ট মনে রেখেই শহরের গতানুগতিক বাসস্থানে নিরবে কাটিয়ে দেন বিরক্তিকর সময় । ক্ষনে ক্ষনে উপলব্ধি করেন আপনজন থেকে দূরে থাকার যন্ত্রনা । তবুও নিরুপায় । ইচ্ছা এবং সাধ্য থাকলেও বাংলাদেশে সব কাজ সময়মত, সুযোগমত কিংবা ইচ্ছামত করা যায় না । নানা প্রতিবন্ধকতা আটকে দেয় মনের ইচ্ছাকে । জীবনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার নামে খাচায় বদ্ধ করে দেয় । জীবনে নেমে আসে দুঃসহ বেদনা ।





ঈদে ঘরে ফেরার আশা করা মানুষগুলোকে সবচেয়ে বেশি দুর্ভাবনায় ফেলে সড়ক ব্যবস্থার বেহাল দশা । বাংলাদেশের অধিকাংশ পাকা সড়কগুলি গরুর দয়ার উপর নির্ভরশীল । গরু যদি বেরসিক হয়ে একটু গোবর ত্যাগ করে তাহলেই সড়কের উপরের অংশ ক্ষয়ে যায় । সড়ক নির্মানে নি¤œমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করা হয় যার কারনে অধিকাংশ সড়ক এক বর্ষা থেকে পরবর্তী বর্ষা মওসুম পর্যন্ত স্থায়ী হয় না । যদিও সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় যথেষ্ট আন্তরিক । তারা দেশের মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে তার জন্য সড়ক নির্মান, সংস্কার, পূনঃসংস্কারের জন্য বরাদ্দ দিতেই থাকে । তবে সে বরাদ্দে স্থায়ী কোন উপকার হয় না । কোন অদৃশ্য দৈত্য তার আপন শক্তিবলে সড়ক নির্মান কিংবা সংস্কারের কয়েক মাসের মাথায় আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয় । সড়ক ব্যবস্থার এ চক্রাকার নির্মান এবং সংস্কারের কারনে কিছু লোক ফায়দা অর্জন করলেও যাত্রী সাধারনকে পোহাতে হয় দূর্ভোগের সর্বোচ্চ সীমা । বাসে চলার সময় বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের রাস্তায় চলার সময় পাজরের হাড় কিংবা মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয় । সুস্থ মানুষ যদি এ রাস্তায় বাসে চলাচল করে তবে সে অসূস্থ হয়ে যায়। অসুস্থ কেউ গাড়ীতে চড়লে তার তো মরনদশা । সড়ক দূর্ঘটনা বাংলাদেশের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । বছরের এমন কোন দিন নাই যে দিন সড়ক দূর্ঘটনায় মানুষ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া না যায় । যতজন মারা যায় তার চেয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে কয়েকগুন বেশি । বিশেষ করে ঈদের মওসুমে সড়ক দূর্ঘটনার হার আচমকা বেড়ে যায় । বাস চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা, বেপারোয়া গতি, চালকদের প্রয়োজনীয় বিশ্রামের অভাবের কারনে শত শত মানুষ অকাল মৃত্যু মুখে পতিত হয় । পরিবারের আনন্দ উৎসব তখন শোকের বন্যা বইয়ে দেয় । ঈদ আসতে এখনো দুই সপ্তাহ বাকী । কিছু কিছু মানুষ কষ্ট থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য আগেভাগেই বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে । বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় তাই যাত্রীর সংখ্যাও সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে । সামান্য এ চাপেই গত দুই দিনের ব্যবধানে দু’টো মারাত্মক দূর্ঘনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে । আহত হয়েছে শতাধিক । যারা আহত হয়েছে তাদের অনেকের অবস্থা আশংকাজনক । বরিশালের উজিড়পুরে হানিফ পরিবহনের একটি দ্রুতগামী বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাস্তার পাশের দোকান চাপা দিয়ে খাদে উল্টে যায় । এ দূর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত হয়েছে এবং অনেকে সংকটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে । অপরদিকে ঢাকা বরিশাল মহাসড়কে মাদারীপুরে একটি বাস গাছের সাথে ধাক্কা লেগে ৬ জন নিহত হয়েছে । দেশের অন্যান্য স্থানে ছোট বড় দূর্ঘটনা তো ঘটছেই । যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চৌধুরী ১২ই জুলাই ঘোষণা দিয়েছেন ঈদের আগেই দেশের সব রাস্তা মেরামত করে ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীদের নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরা নিশ্চিত করা হবে । তার এ উদ্যোগকে দেশবাসী সাধুবাদ জানিয়েছে । অন্যান্যদের তুলনায় তিনি একজন সফল মানুষ । তবে তার এ ঘোষণা কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে । ২০শে জুলাইয়ের মধ্যেই মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করবে । অর্থ্যাৎ তার বেধে দেয়া সময়সীমা ঈদ পর্যন্ত হলেও ঈদের ঘরে ফেরা মানুষ তার ঘোষণা থেকে বিশেষ উপকার পাচ্ছে না । দেশের হাজার কিলোমিটার বিপর্যস্ত রাস্তা মাত্রা ১০-১২ দিনে প্রস্তুত করে দেয়া কতটা সম্ভব ? বছরের বাকী ৩৫০ দিনে যা সম্ভব হয়নি তা মাত্র পনের দিনে সম্ভব করতে পারলে সেটা অলৌকিক হবে । তবে যোগাযোগমন্ত্রীর এ আদেশ যদি এক মাস পূর্বে দিতেন তাতেও বোধহয় উপকার হত । তবুও দেশের অন্যান্য মানুষের মত চাতক পাখির মত অপেক্ষায় রইলাম যোগাযোগমন্ত্রীকৃত ওয়াদার বাস্তবায়ণ দেখার আশায় থাকলাম।



দেশের উত্তারাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম যেমন রেলপথ তেমনি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নৌপথ । রেল, লঞ্চ এবং স্টিমারের অগ্রিম টিকিট বিক্রি কার্যক্রম শুরু হওয়ার দ্বারপ্রান্তে । মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করবে । ঈদের ঘরে ফেরা মানুষের আকাঙ্খিত টিকেট যখন কালোবাজারিতে যায় তখন সেটা সত্যিই দুঃখজনক । দীর্ঘ লাইন শেষে টিকেট কাউন্টারে পৌঁছে যখন শুনতে হয় টিকেট শেষ হয়ে গেছে তখন হতাশার সীমা থাকে না । তবে বৈধ টিকেট শেষ হয়ে গেলেও অবৈধ টিকেট যেন শেষ হবার নয় । টিকেটের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুন বেশি পরিশোধ করলেই দালালদের মাধ্যমে টিকিট ঠিকই জোগাড় করে নেয়া যায় । শুধু যে রেল, লঞ্চ এবং স্টিমারের টিকেট কালোবাজারীতে যায় তা কিন্তু নয় বরং সরকার পরিচালিত বিআরটিসিসহ প্রাইভেট বাস সার্ভিসগুলোর টিকেটও কালোবাজারিতে যায় । তবে প্রাইভেট সার্ভিসগুলোর চেয়ে সরকারি সার্ভিস গুলোর টিকেট কালোবাজারীর কবলে পড়ে বেশি । তাছাড়াও ঈদ উপলক্ষে টিকেটের দাম কয়েকদফা বৃদ্ধি করা হয় । ঈদে অধিক মুনাফা লাভের আশায় আনফিট লঞ্চ, বাস চালু করা হয় । ট্রেনেও ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বগি সংযোগ করা হয় । এ সকল বাহনে ধারন ক্ষমতার চেয়ে অধিক যাত্রী যাতায়াতের কারনে দূর্ঘটনা সম্ভাবনা অধিকহারে বেড়ে যায় এবং জীবন হুমকির মূখে পতিত হয় । ঈদ উপলক্ষে মলম পার্টি, হাইজাক পার্টি, পকেটমার, ডাকাতসহ সন্ত্রাসীদের বেপারোয়া চাঁদাবাজি বেড়ে যায় । একারনে মালের সাথে জীবনও হুমকির সম্মূখীন হয় ।



আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে সরকারী কর্তৃপক্ষকে নজড়দারি বাড়াতে হবে । বিশেষ করে গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সদস্যদের, পুলিশ এবং অন্যান্য সরকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দিলে ঘরে ফেরা মানুষেরা নির্বিঘ্নে এবং শান্তিতে ঈদ কাটাতে এবং পূনরায় স্থায়ী-অস্থায়ী আবাসস্থলে ফিরে আসতে পারবে । যে সকল বাস, লঞ্চ মালিকরা যোগাযোগের অযোগ্য বাহন ব্যবহার করবে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে । যারা অবৈধভাবে কালোবাজারিতে কিছু মুনাফার আশায় টিকেট বিক্রি করে তাদের চিহ্নিত করে জনসমক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে । দেশের মানুষ বিশ্বাস করে মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চৌধুরী তার কর্মস্থলে একজন যোগ্য এবং সচেতন মানুষ । তার গৃহীত উদ্যোগে তিনি সফল হবেন । মানুষের সে বিশ্বাস অবশ্যই মন্ত্রীমহোদয় রাখবেন বলে আশা করি । ঈদের ঘরে ফেরা সকল মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব তার । যাত্রা পথের সকল সমস্যা উত্তরণ করে তিনি মানুষকে বাড়ী ফিরতে এবং পূণরায় কর্মস্থলে ফিরে আসতে অবশ্যই সহায়তা করবেন । ঈদ উপলক্ষে যে সকল মানুষ অনৈতিক কার্যকলাপে জড়ায় তাদের চিহ্নিত করে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে । সর্বোপরি মানুষ যেন শান্তিতে ঈদ উৎসব পালন করতে পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা এবং খুশি যেন শোকে ভেসে না যায় তার নিশ্চয়তা বিধান করা জরুরী । ঈদ উপলক্ষে যে সকল যাত্রীরা বাড়ী ফিরবার আশা করেন তাদেরকে মনে রাখতে হবে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি । কাজেই যাত্রা পথে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক ।





রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।

[email protected]



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.