নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাজায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হবে কবে ?

২৪ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:৫৭

৮ই জুলাই থেকে শুরু করে ইসরাইলী ইহুদীদের আগ্রাসনে মাত্র ১৪ দিনে ৫১০টি তরতাজা প্রাণ বিশ্বের বুক থেকে বিদায় নিয়েছে । যাদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু এবং নারী । প্রথম দিকে শুধু ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালানো হলেও এখন শুরু হয়েছে স্থল হামলা । গাজার ধ্বংসযজ্ঞ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে । গোটা গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করা হয়েছে । তবুও বিশ্ব মোড়লরা নিরব । জাতিসংঘ মজা দেখছে এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেবল শিশু ও নারীদের হত্যা করতে নিষেধ করেছে । বিশ্ব বিবেক চুপ হয়ে রয়েছে । গাজার মুসলামনদের রক্ষা করতে কেউ এগিয়ে আসছে না । ইহুদীদের আক্রমনের পরিধি ও শক্তি দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে । তাদের ভয়াল থাবা থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না । সর্বশেষ ২১শে জুলাই একটি হাসপাতালে আক্রমন চালিয়ে একজন চিকিৎসকসহ পাঁচ জনকে হত্যা করা হয়েছে । ইহুদীদের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত শিশু ও নারীরা যে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিত সেটাকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করা হয়েছে । এখন ইহুদীদের হামলায় যে মানুষগুলো ক্ষত-বিক্ষত হবে তারা বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরবে । ইসরাইলের একজন জঘন্য মন্ত্রী হায়েনার ভাষায় ঘোষণা করেছে, ‘ফিলিস্তিনের সকল মাকে মেরে ফেলা হবে এবং ছোট কালসাপ গুলোকেও বাঁচতে দেয়া হবে না’ । মন্ত্রীর এ ঘোষণা থেকেই প্রমাণ মেলে ইহুদীরা গাজার সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে আক্রমন করছে না বরং ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের ঝান্ডাবাহী কোন উত্তরসূরী যেন অবশিষ্ট না থাকে তারা তার ব্যবস্থা করবে । তাদের এ জঘন্য ও ঘৃণিত মন্তব্য প্রকাশ হওয়ার পরেও বিশ্ব বিবেক গাজায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধের জন্য কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছে না বরং তারা নানাভাবে ইহুদী শক্তিকে গাজায় আগ্রাসন চালানোর জন্য ইন্দন দিয়ে যাচ্ছে । আক্রমনের পরে আক্রমন মোকাবেলা করতে করতে ফিলিস্তিনের নিরস্ত্র মুসলমানদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে । বাঁচার জন্য তারাও পাল্টা আঘাত করতে শুরু করেছে । তবে ফিলিস্তিনের সে অর্থে কোন সামরিক শক্তি নেই । যে কারনে দেশীয় উৎপাদিত অস্ত্র দিয়ে ২১শে জুলাই ২২জন ইহুদী সেনাকে হত্যা করেছে বলে ইসরাইল নিশ্চিত করেছে । ফিলিস্তিনিরা যখন দেশীয় অস্ত্র এবং পাথর দিয়ে ইসরাইলের সৈন্যবাহিনীকে মোকাবেলা করছে তখন ইহুদী সৈন্যরা বিশ্বের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিরীহ ফিলিস্তিনীদের হত্যায় মেতেছে ।



এভাবে ইসরাইল কর্তৃক পরিচালিত বর্বরোচিত হামলা চলতে থাকলে অচিরেই গাজা বদ্ধভূমিতে পরিনত হবে এবং সেটাই ইহুদীরা চায় । বিশ্ব মোড়লদের অধিকাংশ প্রকাশ্যে ইসরাইলদের সমর্থন দিয়েছে । এখনও বিশ্বের সকল বিবেকবান মানুষ মরে যায় নি তবে তাদের প্রতিবাদ করা ছাড়া অন্যকোন ক্ষমতা নাই । ২১শে জুন পাঁচ নোবেলজয়ীসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সাংবাদিক অচিরেই ইসরাইলের উপর সামরিক স্থগিতাদেশ দেয়ার দাবী জানিয়েছেন । গত ১৪ দিনে জাতিসংঘ ইসরাইলের পক্ষে কথা বললেও যখন ইসরাইলের সৈন্য মারা গেছে তখন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ইসরাইলের এ হামলাকে বর্বোরোচিত আখ্যা দিয়ে অচিরেই এ হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন । হয়ত জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যথাশীঘ্র ইসরাইলের হামলা বন্ধ করানোর ব্যবস্থা করা হবে কিন্তু ফিলিস্তিনে ধ্বংসযজ্ঞের বাকী রইল কী ? ফিলিস্তিনে এখন লাশের মিছিল চলছে । লাশের মিছিলে নিত্য যোগ হচ্ছে নতুন লাশ । এমনও পরিবার আছে যাদের সবাই ইসরাইলী বোমা হামলায় নিহত হয়েছে । তাদের কবর দেয়ার জন্যও কোন আত্মীয়স্বজন অবিশিষ্ট নাই । আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না। সর্বত্র খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে । গাজায় কোন ইমারাত অবশিষ্ট নেই । জাতিসংঘ এখন ইসরাইলের হামলা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে অথছ হামলা শুরুর দিকে কেন তা বন্ধের আহ্বান জানানো হলোনা ? গ্রাম্য একটি কথা আছে ,‘পিঁয়াজ রসুনের গাঁয়ের রং আলাদা হলে কি হবে ওর মূল এক যায়গায়’ । ধ্বংসের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে গাজাবাসী যখন পাল্টা আক্রমনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন যুদ্ধ বন্ধের ডাক এসেছে কিন্তু যখন ইসরাইলী ইহুদী হায়েনারা একচেঁটিয়াভাবে গাজার ঘুমন্ত নারী শিশুদেরকে হত্যা করল তখন ইসরাইলকে বাহবা দিতে কার্পণ্য করে নাই । ইহুদীর চেয়েও বিশ্ব মোড়লেরা যে আরও জঘন্য তা তারা আবারও প্রমান করল । তবুও যা হয়েছে তা ভূলে গিয়ে যদি অচিরেই গাজায় হামলা বন্ধ করা হয় তবে সেটাকে সাধুবাদ । বিশ্ববাসী চায়, অচিরেই গাজায় ইহুদীদের নগ্ন হামলা বন্ধ করা হোক । আসন্ন ঈদের আগে যদি গাজায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা হয় তবে সেটা গাজাবাসীর জন্য ঈদের সবচেয়ে বড় উপহার হবে ।



সময় তার নিজস্ব গতিতেই বহিয়া চলিবে । কিছুদিন পরে বিশ্ববাসী হয়ত গাজার ঘটনা ভূলে যাবে কিন্তু বিশ্ব মোড়ল সম্প্রদায়ের হঠকারীতা ভোলার নহে । যাদেরকে সালিশের জন্য নিষুক্ত করা হল তারাই যদি বাদী কিংবা বিবাদীর ভূমিকা পালন করে তবে সেখানে ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রশ্ন উঁবে যায় । বিশ্বব্যাপী কিছু সংঘঠন আছে যারা নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষা করিবার জন্য চিল্লাইয়া মরে । গাজায় যেভাবে নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করা হচ্ছে তা কি তাদের চোখে বাঁধে না । এক চোখা দৈত্য হয়ে অধিকার রক্ষা করা যায় না বরং সেখানে অধিকার হারানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে । মানবাধিকার, মানবতা কি গাজার মানুষের জন্য নয় ? তোমাদের নিরাবতা আবারও প্রমাণ করিলে ইসরাইলের ইহুদীদের চেয়ে কোন অংশে তোমরাও পিছিয়ে নেই । ধিক্কার তোমাদের সে আন্দোলনকে যে আন্দোলন সত্যের কথা বলতে পারে না কিংবা সবাইকে সমান চোখে দেখে না । গাজার ছোট ছোট শিশুদের বুক ফাঁটা আর্তনাদ কি তোমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না ? পুতুল নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা শিশুগুলো লাশ হয়ে কবরে যাচ্ছে অথচ তোমরা নিরব হয়ে আছ । তোমাদের নিরাবতা প্রমান করে, মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলনে তোমরা যোগ্য নও । ইহুদীরা গাজায় যেভাবে আক্রমন করছে ঠিক সেই ভাবে যদি গাজাবাসী ইহুদীদের উপর আক্রমন করত তবে তোমাদের মানবাধিকার রক্ষার নামে চিল্লানোর গলা ঠিকই শুনতে পেতাম । আফসোস ! সভ্যতার এ যুগেও মানুষকে সমান চোখে বিচার করা হয় না ।



বিশ্বের মোড়ল সম্প্রদায় যেখানে চুপ করে আছে সেখানে বাংলাদেশের মত একটি রাষ্ট্র গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলেও ইসরাইলের বর্বরোচিত আগ্রসন বন্ধ হবে না । তবুও মুসলিম অধ্যুষিত গাজার জন্য মুসলিম ভাই হিসেবে ৮০% মুসলমানের বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রীয় ঘোষণার মাধ্যমে নিন্দা প্রস্তাব না জানানো সত্যিই দুঃখজনক । রাষ্ট্রীয় নিন্দা না জানালেও ১৪ দল থেকে একটি প্রতিনিধি দল ফিলিস্তিনে গিয়ে তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে । উত্তম সিদ্ধান্ত হিসেবে এটাকে সাধুবাদ । তবে কাউকে ভালবাসতে হলে, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ এ কথাটি কানে-মুখে বলার আগে কিছু কার্যকলাপের দ্বারাও ভালবাসার প্রকাশ করতে হয় । ১৮ই জুলাই জুমুআর নামাজ শেষে মুসুল্লীরা অবিলম্বে গাজায় ইসরাইলের হামলা বন্ধ করার দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে । ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে পুুলিশ মুসুল্লীদেরকে ঘেরাও করে রেখেছিল অথচ মিশরে জুমুআর নামাজের পরে মুসল্লিদের সাথে প্রশাসনকেও বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা গেছে । বাংলাদেশ তার শক্তি এবং সামর্থ্য অনুযায়ী গাজায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে এতেই একজন মুসলিম হিসেবে খুশি । তবে একজন স্বণামধন্য মন্ত্রী একটি উক্তিতে, ইহুদীদের সাথে বিএনপির তুলনা করেছেন । শতাব্দীর সেরা কৌতুক হিসেবে এটি স্থান না পেলেও তার এ কথা অনেক দিন মনে রাখার মত । এ যেন, কারো ঘরে আগুন লাগলে কয়েকটি আলু নিয়ে সে আগুনে আলু পোড়ানোর মতই অবস্থা ।





রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।

[email protected]





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.