নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদের আনন্দে কেন লাশের মিছিল

০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:০১

পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ উদযাপন শেষে চোখেমূখে স্বপ্নের ছাপ নিয়ে ছোট দু’বোনসহ ঢাকায় ফিরছিল নুসরাত জাহান হীরা । রাজধানীর শিকদার মেডিকেলের ২য় বর্ষের এ ছাত্রীর ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হয়ে আর্তমানবতার সেবা করবে । ডাক্তার হওয়ার পর নিজের ভবিষ্যত যেমন নির্ভার হবে তেমনি পরিবারের মূখও উজ্জ্বল হবে । হীরার লালিত সে স্বপ্ন অঁধরাই রয়ে গেল । এমএল পিনাক-৬ যোগে ঢাকা যাওয়ার সময় নিষ্ঠুর পদ্মা তার সে স্বপ্নকে বাস্তবে রুপায়িত করার সুযোগ দেয়নি । পিনাক-৬ দূর্ঘটনার সাথে হীরার এবং তার বোনদের সলিল সমাধি হয়ে গেল । এমএল পিনাক-৬ শুধু হীরার স্পপ্ন কেড়ে নেয় নি বরং প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের ছোট বড় স্বপ্নের ছেদ পড়েছে । মাত্র ৮৫ জন যাত্রীর ধারনক্ষমতা সম্পন্ন এমএল পিনাক-৬ প্রায় তিনশতাধিক যাত্রী বহন করছিল । মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মাদারীপুরের কাওরাকান্দি থেকে মওয়াগামী লঞ্চটি লৌহজং চ্যানেলে ডুবে যায় । পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার ৫০ ঘন্টা পার হলেও লঞ্চটির অবস্থান সনাক্ত করা যায় নি । এ লেখা পর্যন্ত ২২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হলেও নিঁখোজ রয়েছে ১৫৬ জন । নৌ-পরিবহনমন্ত্রীসহ প্রায় সকলেই ধারনা করছেন নিঁখোজ থাকা সকল যাত্রীদের সলিল সমাধি হয়েছে । মানুষের মৃত্যু অমোঘ । কিন্তু এ ভাবে মৃত্যু বরণ করাকে কেমনে মেনে নেওয়া যায় ? মাদারীপুরের ৮০টি পরিবারে শোকের মাতম চলছে । তাদের আহাজারীতে মাদারীপুরসহ পদ্মাপারের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে । স্বজনদেরকে জীবিত ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে তারা এখন তাদের লাশ পাওয়ার অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছে । তবে উদ্ধার অভিযানের লক্ষন এবং তীব্র স্রোতের কারনে তাদের সে আশা হয়ত অপূরণীয় থেকে যাবে । বাংলাদেশে লঞ্চ দূর্ঘটনা নতুন নয় । স্বাধীনতার পর থেকে বারবার এধরনের দূর্ঘটনা ঘটেছে । যখন কোন বড় দূর্ঘটনা ঘটে তখন সরকারের মধ্যে নড়াচড়া শুরু হলেও তা একসময় থেমে যায় । কেউ শাস্তি পায় না । এরপর আবার দূর্ঘটনা ঘটে, মৃত্যুর মিছিলও বাড়ে । বেসরকারী সংস্থার জরিপের তথ্যানুযায়ী ২০১৪সালে তিনটি দূর্ঘটনাসহ গত ২০ বছরে অর্থ্যাৎ ১৯৯৪ সাল থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের সর্বশেষ এমএল পিনাক-৬ দূর্ঘটনা পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে ৬৫৮টি লঞ্চ দূর্ঘটনা ঘটেছে । যাতে মারা গেছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার লোক । আর দূর্ঘটনার পর নিঁখোজ আছেন প্রায় ১৫০০ লোক । তবে যারা নিঁখোজ আছে তাদের প্রায় সকলেই মারা গেছেন বলে ধরে নেয়া যায় । এসব লঞ্চ দূর্ঘটনার কবলে পরে নিশ্চিহ্ন হয়েছে প্রায় চারশতাধিক পরিবার । আর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে প্রায় ৬৬৮টি পরিবার । তবে সরকারী তথ্যানুযায়ী গত ২০ বছরে প্রায় ৩৮৯টি দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছে প্রায় দুই হাজার ৯০০জন এবং নিঁখোজ আছে প্রায় ৬০০ জন । সরকারের দেয়া তথ্যানুযায়ী বিভিন্ন সময় লঞ্চ দূর্ঘটনার পর উচ্চপর্যায়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । তবে আশ্চার্যের বিষয়, এ সকল কমিটির অধিকাংশই তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি । তবে যে সকল তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তাদের সে প্রতিবেদন অনুযায়ী কার্যত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি । তদন্ত প্রতিবেদনে লঞ্চ দূর্ঘটনার জন্য দায়ী যে কয়েকটি কারন চিহ্নিত হয়েছে তা হল- নৌযানের ত্রুটিপূর্ণ নকশা প্রণয়ন, অদক্ষ চালক, অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য বোঝাই এবং আবহাওয়া সতর্কতা না মানা । আবার বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, নৌযানে জীবনরক্ষাকারী পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট কিংবা লাইফগার্ডও থাকে না । তদন্ত প্রতিবেদনে নৌ-দূর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে করা সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই কম । বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রনালয় থেকে পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর হয়নি ।





নদীবেষ্টিত বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন নদীপথে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার নৌযান চলাচল করে । অথচ সরকারী হিসেবে মতে মাত্র ১৩ হাজার নৌযান সরকারী পারমিট নিয়ে চলাচল করে । কাজেই বাকী ২২ হাজার নৌযানে সরকারী কোন তত্ত্বাবধান না থাকার কারনে তারা তাদের ইচ্ছেমত যাত্রীবহন করে । যার কারনে নৌপথে অহরহ দূর্ঘটনা ঘটছে । যে ১৩ হাজার নৌযানের চলাচল করার সরকারী অনুমতি আছে সেগুলোর মধ্য থেকে সবগুলোর ফিটনেসও পরীক্ষা করা হয়না । কেননা বিআইডব্লিওটিএ তাদের লোকবলের অভাবে সকল নৌযান পর্যবেক্ষন করতে পারে না । তাছাড়াও বাংলাদেশের জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তার চাপ সামাল দেয়ার জন্য নৌযানের সংখ্যাও বাড়ছে না । সেকারনে যাত্রীরা যেমন অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে পাড়াপাড় করে তেমনি নৌযানগুলোও অতিরিক্ত যাত্রীবহন করানোর সুযোগ পায় । সর্বশেষ এমএল পিনাক-৬ লঞ্চ এর দূর্ঘটনাটিও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারনে হয়েছে । কেননা যে লঞ্চটি মাত্র ৮৫ জন মানুষকে বহন করতে পারে সে লঞ্চটি কোন যুক্তিতে তিনশতাধিক যাত্রী বহন করে ? এঘটনার পরেও কেন লঞ্চসহ অন্যান্য নৌযানের চলাচলের উপর দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে না । হীরা আক্তারের মত আর কত মানুষের স্বপ্ন মুকুলেই ঝড়ে যাবে এবং আমরা তা চেয়ে চেয়ে দেখব ? মানুষ ঈদের আনন্দ শেয়ার করার জন্য রাজধানী কিংবা অন্যান্য শহর ছেড়ে আপন নীড়ে যায় । আনন্দের সে উপলক্ষে যদি শোকের মিছিল হয় তবে সে আনন্দ উপভোগ করার মানসিকতা কতদিন টিকবে ? সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, পিনাক-৬ এর দূর্ঘটনাই যেন শেষ দূর্ঘটনা হয় এবং এটা থেকে শিক্ষা নিয়ে যেন নৌ-দূর্ঘটনার সকল কারন চিহ্নিত করে নৌ-দূর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হয় । ‘জন্মিলে মরিতে হবে’ নীতির উপর যেন আমরা আমাদের সকল প্রচেষ্টা উৎসর্গ করে না রাখি ।



শুধু লঞ্চ দূর্ঘটনায় নয় বরং ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা কিংবা ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে গন্তব্যে ফিরে আসার মাঝখানে সড়ক দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে আরও শতাধিক লাশ । বিভিন্নস্থানে সড়ক এবং রেল দূর্ঘনায় বহু লোক হতাহত হয়েছে । বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যমতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া কয়েকটি দূর্ঘটনায় প্রায় ১৩০জন মানুষ নিহত এবং পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে । ঈদের আনন্দ যদি দুঃখের সাগরে ভাসায় তখন হতবাক হয়ে নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা বহি আর কি উপায় থাকে ? বিশ্বের অন্যকোন দেশে সম্ভবত বাংলাদেশের মত এত সংখ্যক মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়না । জরিপের তথ্যমতে, শুধু ঈদের দিন অর্থ্যাৎ ৩০শে জুলাই একদিনেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দূর্ঘনায় ২৩টি তরতাজা প্রান ঝড়ে গেছে । এসকল দূর্ঘটনাগুলোর বেশিরভাগ ঝিনাইদাহ, নারায়নগঞ্জ, পাবনা, সিলেট, রাঙামাটি, ফরিদপুর এবং সিরাজগঞ্জে ঘটেছে । এছাড়াও ২রা আগষ্ট এক দূর্ঘটনায় ৭জন মারা গেছে । বেসরকারী সংস্থা প্রদত্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন মানুষ মারা যায় অর্থ্যাৎ প্রতিবছর কেবল সড়ক দূর্ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার ৮০০ মানুষ মারা যায় । তবে সরকারী হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা কিছু কম । বিআরটিএ প্রদত্ত তথ্য মতে, দেশে প্রতিদিন ১৬ জন মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় অর্থ্যাৎ প্রতি বছর প্রায় ৫,৭৬০ জন মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় । এ সকল দূর্ঘটনার মূলে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল, গাড়ীর চালক কর্তৃক মোবাইল ফোন ব্যবহার, ধারন ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করা, ট্রাফিক আইন না মানা এবং ট্রাফিকদের দায়িত্বের প্রতি অবহেলার কারনেই দূর্ঘটনা বেশি ঘটে ।



অতীতের তুলনায় দেশের ট্রেন দূর্ঘটনাও আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে । গত ২৬ মাসে ট্রেন দূর্ঘটনায় ১৭৮ জন মানুষ মারা গেছে । অথচ অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় ট্রেনকে নিরাপদ মনে করা হয় । ট্রেনে এসকল দূর্ঘটনার মধ্যে রেলের সাথে অন্যান্য পরিবহনের ৪৬ বার সংঘর্ষ হয়েছে এবং এতে প্রায় ৩১ জন নিহত হয়েছে । সর্বশেষ চলতি বছরের ঈদে রেলক্রসিয়ের দূর্ঘটনায় ১৩ জন মানুষ মারা গেছে । অন্যান্য সকল দূর্ঘটনার মত রেলের সকল দূর্ঘটনাগুলোও মানবসৃষ্ট । রেল লাইনের উপর গাছ বা অন্য কোন বস্তু ফেলে রাখা, রেল লাইনের উপর দিয়ে অসর্তভাবে মোবাইলে কথা বলা, আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে রেল লাইনে বসে থাকা কিংবা সহিংসতার অংশ হিসেবে রেল লাইনের পাত খুলে রাখার কারনে প্রধানত রেল দূর্ঘটনা ঘটে । এছাড়া রেলক্রসিংগুলো অরক্ষিত রাখা এবং রেল লাইনের পাশর জমি দখল করে গৃহ নির্মানের ফলেও রেল দূর্ঘটনা ঘটে । সামান্য কিছু সচেতন পদক্ষেপের মাধ্যমেই রেলসহ সকল প্রকার যানবাহনের দূর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব ।



দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা কিংবা অন্যকোন সহিংসতায় যদি শতকরা ৩০ জন মানুষ মারা যায় তবে বাকী ৭০ জন মানুষ নিহত হয় সড়ক দূর্ঘটনায় । অথচ মাত্র ৩০ জন মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্য পুলিশসহ ডজন ডজনবাহিনী গঠন করা হলেও ৭০ জন মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্য কোন নজড়দারী বাহিনী গঠন করা হচ্ছে না । বরং মাঝে মধ্যে এ খাতে লোকবল যা আছে তা থেকেও কমানোর চিন্তাভাবনা করা হয় । কর্তৃপক্ষের এহেন উদাসীনতা মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে । যখন কেউ বাসে কোথাও যাতায়াত করে তখন ভাবতে হয় এটা গন্তব্যে পৌঁছবে তো ? এভাবে অনিশ্চয়তায় আর কতদিন কাটবে ? আর কত স্বপ্ন মুকুলেই ঝড়ে পড়বে ? এ থেকে উত্তরণকল্পে বিকল্প কিছু ভাবা দরকার । যে সকল কারনে সড়কসহ অন্যান্য দূর্ঘটনা হয় তা তড়িৎ চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করে মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মিছিলের লাগাম টানা আবশ্যক । সকল যায়গায় গাফিলতি করলেও যেন মানুষের জীবন নিয়ে হেলাফেলা না করা হয় সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী । যাত্রী সাধারনকে মনে রাখতে হবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি । কাজেই অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে যেমন লঞ্চে কিংবা অন্য কোন বাহনে যাতায়াত করা উচিত নয় তেমনি এ সকল যানবাহনের মালিকপক্ষও যেন অতিরিক্ত যাত্রীবহনের সুযোগ না পান তার যথাযথ ব্যবস্থা করা আবশ্যক । প্রয়োজনে কঠোর আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকল দূর্ঘটনা রোধ করার উদ্যোগ নিতে হবে । ঈদসহ অন্যান্য সময়ের আনন্দের সফরে যেন নিরানন্দ হানা দিতে না পারে তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে ।



রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।

http://www.facebook.com/raju69mathbaria/

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.