নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুরুতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তার জীবনের ৬৭তম শরৎ কাটিয়ে ৬৮তম শরতে পদার্পণ করার জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছি । যদিও ২৮শে সেপ্টেম্বর আপনার জন্মদিন ছিল কিন্তু শুভেচ্ছা জানাতে একটু দেরী হল বটে । অনাকাঙ্খিত ভূলের জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং পাঠকদের কাছে করজোরে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । আপনাকে জন্মদিনের উপহার হিসেবে আমি অধমের কিছু দেয়ার সামর্থ্য না থাকায় মন থেকে বলছি, আরও যে কয়টি শরৎ আপনার জীবনে আসবে সে শরৎগুলোতেও আপনি সুস্থ থাকুন সেই কামনা করছি । ৬৮ বছরের প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় বার সরকার গঠন করে বর্তমান মেয়াদে প্রথমবারের মত জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য তার বিশাল বাহীনির সফর সঙ্গী নিয়ে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছে । লেখাটি যখন প্রকাশ পাবে তখন হয়ত প্রধানমন্ত্রী তার সফরের প্রধান উদ্দেশ্য অর্থ্যাৎ জাতিসংঘে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিবর্গের সামনে ভাষণ সমাপান্তে বিভিন্ন সরকার, রাষ্ট্র ও সংস্থা প্রধানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে ব্যস্ত সময় পার করবেন । জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রাপ্তির তেমন কোন ফর্দ না থাকলেও দেশের সরকার প্রধান হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি অর্থ্যাৎ প্রধানমন্ত্রী তার অর্জন এবং দেশকে নিয়ে আগামী দিনের স্বপ্নের কথাগুলো বিশ্ব নেতৃত্বকে জানান দিয়ে আসবে । প্রধানমন্ত্রী উপস্থাপিত তথ্যের কিছু অংশে বিভিন্ন দেশ প্রধানদের কাছ থেকে বাহবা এবং কিছু অংশে আরও উন্নতি করার পরামর্শ পাবেন । বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থার সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের । কেননা বিশ্বের বুকে মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে একমাত্র বাঙালী জাতির গর্বিত সন্তানরা প্রাণ সঁপেছে । সেই বাংলা ভাষায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ভাষণ দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন । বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলা ভাষায় বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন । সেই ধারাবাহিকতায় তার সুযোগ্য উত্তরসূরী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মায়ের ভাষায় বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ।
জাতিসংঘের অধিবেশন থেকে বাঙালি জাতি আর কোন সুসংবাদের আভাস পাবে কি পাবে না-সেটা সময় গড়ালে স্পষ্ট হবে কিন্তু সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে বিরোধীদলসহ দেশবাসী এতদিনের লালিত একটি অস্পষ্ট বিষয় সম্পর্কে অন্তত সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছে । চলতি বছরের ৫ই জানুয়ারী দেশের কয়েকটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহন না করার পরেও ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং বর্তমান ক্ষমতাশীনদল বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে । যদিও আওয়ামীলীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহন করে নি এবং ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন তবুও যে কয়টি আসনে নিজেদের মধ্যে নির্বাচন হয়েছে তাতেও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা এবং বাহুবল প্রদর্শনের মনোভাব বিভিন্ন মিডিয়ায় সুস্পষ্টভাবে চিত্রিত হয়েছে । এ কারনে ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনকে দেশের নানা পেশার বহু মানুষ এবং বিদেশী কিছু বিশ্লেষক ত্রুটিযুক্ত নির্বাচন বলে আখ্যা দিয়েছেন । আওয়ামী সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবী করলেও তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এ নির্বাচনকে অগ্রহনযোগ্য এবং বর্তমান সরকারকে অবৈধ সরকার বলতেও দ্বিধা করছে না । যে কারনে ৫ই জানুয়ারীর পরে দেশের কিছু ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা এবং অন্য কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও রাজনৈতি সহনশীলতার ক্ষেত্রে অবনতির গভীরতা ক্রমে বেড়েই চলছে । যে কারনে আপাত উন্নতি কিংবা স্থিতিশীলতার গতিও ক্রমে ধূসর হয়ে আসছে । ‘জাহাজের চালকের প্রতি যদি সব যাত্রীর আস্থা না থাকে তবে যাত্রীরা তো নৌকা দোলাবেই’ । এ দোলানোর মাত্রা যদি জাহাজকে ডুবানোর পর্যায় নিয়ে যায় তবে মাঝির যেমন রক্ষে হবে না তেমনি যাত্রীদেরও । ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনের পর বিভিন্ন মহল থেকে কাঁনাঘুঁষা চলছিল, নিশ্চয়ই দু’টো প্রধান রাজনৈতিক দল সংলাপে বসে দেশের চলমান রাজনৈতিক দুরাবস্থার সমাধানে এগিয়ে আসবে এবং আলোচনা সাপেক্ষে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের আয়োজন করা হবে । দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যখন দেশে চরম অস্থির অবস্থা বিরাজ করছিল তখন সরকারী দলের নেতৃ-স্থানীয় নেতা এমনকি খোদ তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কর্তৃকও প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল । তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চলতি জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে বিষয়টি পুরোপুরি খোলসা করে ঘোষণা করেছেন, ‘সংলাপের কোন সম্ভাবনা নাই এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনের তো প্রশ্নই ওঠে না’ । এদেশের একজন তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে এ ঘোষণা আশ্বস্ত করার জন্যে যথেষ্ট কেননা একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় । আর এ বিপুল পরিমান টাকার যোগান আসে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের উপর্ আরোপিত বিভিন্ন ধরনের খাজনা ও কর থেকে । কাজেই দিনে দিনে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষমতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সামর্থ্যে থাকার কথা নয় । যে দেশের ছোট একটি ব্রিজ কিংবা কালভার্ট নির্মানের জন্য বিদেশী প্রভূদের কাছে সাহায্যের আবার কখনো ভিক্ষার হাত প্রসারিত করতে হয়ে সে দেশে কয়েক মাসের মাথায় মাথায় নির্বাচন দিয়ে হাজার কোটি টাকা খরচ করার কথা ভাবা যায় ? দেশে সামাজিক ও রাজনৈতি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য মধ্যবর্তী নির্বাচন দরকার হবে কী হবে না সেটা সময় বলে দিবে কিন্তু সবচেয়ে ভালো লাগে ৬৮ বছর বয়সের প্রধানমন্ত্রীর কথার দৃঢ়তা দেখে । দলের প্রতিটি সদস্যের কাছে প্রধানমন্ত্রী এক কথার মানুষ হিসেবে পরিচিত এবং এ কারনে ব্যাপক প্রশংসিত । তার প্রতিটি সাহসী সিদ্ধান্তে মনে হয় যেন তিনি রাজনীতির মাঠে এখনো তরুনী । তার গৃহীত প্রতিটি সিদ্ধান্ত ইস্পাতের মত অনঢ় যা রাজনীতিকদের মধ্যে থাকা অত্যাবশ্যক ।
রাজনীতির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের কাঠিন্যতা এবং অতি কোমলতা বর্জন, দেশের স্বার্থেই প্রয়োজন । রাজনীতিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সাথে ব্রিটেনের লৌহ মানবী খ্যাত মার্গারেট থ্যাচারের অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায় । দলের প্রধান যদি অনড় সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হয় তবে তা যেমন স্বীয় রাজনৈতিক দলকে পঙ্গু করে দেয় তেমনি দেশবাসীর উপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলে । আওয়ামীলীগের সভানেত্রী যেভাবে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পেরেছে তেমনিভাবে বিএনপির সভানেত্রী এবং তার অনুসারীরা সিদ্ধান্তের উপর অটল থাকতে না পারার কারনে তাদের এমন ভঙ্গুর দশা । ৫ই জানুয়ারীর পূর্বে কিংবা পরবর্তীতে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা যেভাবে আওয়ামীলীগকে উৎখাতের জন্য হুমকি-ধামকি দিয়েছে তাতে আওয়ামীলীগকে টর্চ লাইট কিংবা সার্চ লাইট দিয়ে খুঁজে বের করার কথা অথচ যারা হুমকি দিয়েছে সেই তাদের কয়েকজন ছাড়া বাকীদের অবস্থান জানাই যেন কষ্টের । প্রত্যেকদিন গুঞ্জন ওঠে ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার । হয়ত একদিন ভেঙ্গেও যাবে । কয়েকবছর পূর্বে পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ছিল অথচ তার সাথে যোগ হতে হতে আজ ২০ দলীয় জোটে দাঁড়িয়ে । তবে মাঠ দখলের লড়াই এবং জনমত আদায়ের কৌশলে বোধহয় বর্তমান বিশাল জোটের চেয়ে ৪ দলীয় জোটের দক্ষতাই বেশি ছিল । বর্তমান বিএপির জোট গায়-গতরে বেড়ে ওঠলেও কৌশলে শিশুই রয়ে গেছে । প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় সবচেয়ে লক্ষণীয় দিকটি ছিল, এতদিন যারা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের অন্যান্য নেতাদেরকে সমঝোতা ও সংলাপের জন্য বিভিন্নভাবে চাপ দিয়েছে সেই তাদের নাকের ডগায় বসেই প্রধানমন্ত্রী তার অবস্থান এবং মনোভাব প্রকাশ করেছেন । আর বিএনপি ? ছোট বেলায় হয়ত সবাই পড়েছি কিংবা গল্পে শুনেছি সেই রাখালের কথা, যিনি প্রতিদিন বাঘ এসেছে বলে গুঁঞ্জন ছড়িয়ে এলাকাবাসীকে জড়ো করত অথচ বাঘের কোন দেখা ছিল না । রাখালের এমন ধোঁকাবাজীমূলক কর্মাকান্ডের ফলে এলাকাবাসী তার কথা অবিশ্বাস করতে শুরু করে । যেদিন সত্যি সত্যি বাঘ এসে রাখালকে খেয়ে যায় সেদিন রাখালের চিৎকার এবং তার আহ্বান সবাই হঠকারীতা ভেবে প্রত্যাখ্যান করে । বিএপির ভবিষ্যতও সেদিকে যাচ্ছে কিনা কে জানে ?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রশ্নে জামাআতে ইসলামীর সাথে আঁতাত হয়েছে বলে যে রব উঠেছে তা উড়িয়ে দিয়েছেন । প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, জামাআতের সাথে আঁতাত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না । যদি একথা ধরে নেয়া হয়ে যে, সরকারের সাথে আঁতাত হলে স্বাধীন বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ করে সরকার বিচারিক সঠিক সিদ্ধান্ত বদলাবার ক্ষমতা রাখে তবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায় । একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদন্ড প্রাপ্ত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের মাধ্যমে সরকারের সাথে জামাআতের আঁতাত হয়েছে কিনা তা বোঝার সাধ্য নাই । কেননা সাঈদীর রায় বিবেচনা করার সময় বিচারকদের এবং সরকারকে(!) অনেকগুলো দিক মাথায় রাখতে হয়েছে বলে বিশ্বাস । ২০১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে দেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তা এত তাড়াতাড়ি কারো ভূলে যাওয়ার কথা নয় । এদেশের একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করা প্রতিটি বাংলা ভাষা-ভাষী নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য । আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং অন্যান্য বিচারালয়ের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে বলা যায়, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ যাদের উপর উত্থাপিত হয়েছে তাদের বিচারে দু’টো পথ থাকতে পারে । তারা দোষী প্রমাণিত হলে ফাঁসী কিংবা নির্দোষ প্রমাণিত হলে মুক্তি । এসকল অপরাধের অভিযোগে যারা অভিযুক্ত তাদের ব্যাপারে বিচারের ক্ষেত্রে এর মাঝামাঝি কোন অবস্থানে অবস্থান করার কোন সুযোগ আছে কী ?
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]
©somewhere in net ltd.