নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ হজ্জ্বের মওসুম চলছে । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশ থেকেও লাখের কাছাকাছি ধর্মপ্রাণ মুসলমান নর-নারী আল্লাহর আদেশ পরিপূর্ণ করতে হজ্জ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় অবস্থান করছে । প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জীবনের অতি আকাঙ্খিত স্বপ্নের মধ্যে বৃহত্তম স্বপ্ন হল বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করা এবং মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর রওজা মোবারকে সালাম পেশ করা । যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে তারা বিনা বাক্য ব্যয়ে মান্য করে হজ্জ্বের গুরুত্ব ও ফযিলত । অন্যদিকে বিশ্বের সকল স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের সর্ব বৃহৎ সংস্থা জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশন চলছে । সে উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রায় দু’শতকের সফর সঙ্গী নিয়ে আমেরিকায় অবস্থান করছেন । প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অন্যতম সারথী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীও রয়েছেন । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পেলেও মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী এ ধরনের সম্মানীয় কোন সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাননি । সুতরাং বুদ্ধিমান এবং অভিজ্ঞ মন্ত্রী হিসেবে তিনি বোধ হয় আমেরিকায় এসে একটু আলোচনায় আসার চেষ্টা করেছেন । তার সে উদ্দেশ্যে তিনি ব্যাপকভাবে সফলতাও পেয়েছেন । জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী যতটুকু আলোচিত হয়েছেন তার চেয়ে হাজার গুন বেশি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী । তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুধু দেশের পরিমন্ডলে সীমাবদ্ধ থাকে নি বরং দেশের গন্ডি পেরিয়ে গোটা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মুসলামদের কাছে লতিফ সিদ্দিকী এক ঘৃণিত নামে পরিনত হয়েছে । অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে হয়ত মানুষের এ ঘৃণার মাত্রা আরও বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে । ২০১৩ সালের আলোচিত-সমালোচিত ছবি নির্মাতা স্যাম বাসিলির চেয়েও লতিফ সিদ্দিকী সম্ভবত বেশি প্রচার-প্রসার পেতে যাচ্ছেন । কেননা স্যাম বাসিলি কেবল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কর্মের সমালোচনা করেছিলেন কিন্তু লতিফ সিদ্দিকী হযরতম মুহাম্মদ (সাঃ) এর সৃষ্টা স্বয়ং আল্লাহ তা‘য়ালা প্রদত্ত হুকুম তথা পবিত্র হজ্জ্বের সমালোচনা করেছেন ।
একাত্তরের যুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে বেসামরিক বাহিনী গঠন করে যারা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছিলেন সেই কাদেরিয়া বাহিনীর অন্যতম সংগঠক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর জেষ্ঠ্য ভ্রাতা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য পযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী । তার নামের তিনটি অংশের আলাদা আলাদা অর্থ হল যথাক্রমে আল্লাহর বান্দা, দয়া ও অনুগ্রহকারী, সত্যবাদী অর্থ্যাৎ দয়া ও অনুগ্রহকারী আল্লাহর সত্যবাদী বান্দা । নামের ভাব দেখে ওনাকে মুসলিম ছাড়া অন্যকোন ধর্মের অনুসারী মনে হওয়ার কোন যুক্তি নাই । তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমনে গিযে আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে আয়োজিত একটি সভায় তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তাকে বিধানগত মুসলমান বলার কোন অর্থ নাই । শুরুটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র পুত্র এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র্য সজিব ওয়াজেদ জয়কে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী প্রদত্ত ভাষণ থেকেই আরম্ভ করব । সজীব ওয়াজেদ জয়ের বর্তমানে সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের তিনি স্বপ্নদ্রষ্টা । মূলত তার পরামর্শেই সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন মানুষকে দেখিয়েছে । সজীব ওয়াজেদ জয় বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার পুত্র হওয়ার কারনে অনেকেই তাকে বাংলাদেশের ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কল্পনা করছেন । সেই জয় সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, জয় আওয়ামীলীগের কেউ না । জয় আওয়ামীলীগের কেউ কি কেউ না তাতে বাইরের মানুষের অবশ্যই কিছু যায় আসে না কারন এটা একান্তভাবেই আওয়ামীলীগের নিজস্ব ব্যাপার । আয়োজিত অনুষ্ঠানে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আরও বলেছেন, তিনি জামাআ’তে ইসলামীর চেয়েও তাবলীগ জামাতকে বেশি অপছন্দ কিংবা ঘৃণা করেন । এটা একান্ত তার মতাদর্শিক ব্যাপার হিসেবে মেনে নেয়া যায় । কেননা তিনি জামাআ’ত ভালোবাসবেন কিংবা তাবলীগ ভালোবাসবেন কিংবা আওয়ামীলীগ ভালোবাসবেন কিংবা অন্যকোন দল ভালোবাসবেন সেটা একান্তই তার নিজস্ব ব্যাপার । কিন্তু তাবলীগকে অপছন্দ করার যুক্তি হিসেবে তিনি যে কারনকে উপস্থাপন করেছেন তা আদৌ মেনে নেয়া যায় না । লতিফ সিদ্দিকী তাবলীগ জামা’তকে অপছন্দ করার কারন হিসেবে বলেন, এরা ২২ লাখ লোক তুরাগ তীরে একত্রিত হয় এবং গাড়ি ঘোড়া থামিয়ে দেশের অগ্রযাত্রাকে স্থবির করে তোলে । লতিফ সিদ্দিকীর এ যুক্তি পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কী হতে পারে ? ২০০১-২০০৬ সালের সময়টায় যখন আওয়ামীলীগি বিরোধ দলে ছিল তখন আওয়ামীলীগ কর্তৃক আহুত হরতালসহ অন্যান্য আন্দোলন গুলোর দিকে একবার তাকানোর জন্য মন্ত্রীকে অনুরোধ করছি । সে সব আন্দোলনের দিনগুলোতে তো আপনার দল সারা বাংলাদেশের সকল গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল । কেন সে সময় আপনার এবং আপনার দলের স্বার্থের কথা মনে হয়নি । আগামীতে যখন আপনারা বিরোধী দলে যাবেন তখন একদিনের জন্যও হরতাল ডাকবেন না সে কথার নিশ্চয়তা কি বুকে হাত দিয়ে দিতে পারেন ? ধর্মীয় আচারের ব্যাপারে আপনার চুলকানীর আসল উদেশ্যটা জানতে ইচ্ছা করে ? আমেরিকায় যে সকল বাংলাদেশীরা আছে তারা আপনার ভাষায় কামলা দিতে এসেছে । সুতরাং তাদের একমাত্র দায়িত্ব কামলা দেয়া । অন্যকোন দিকে নাক গলানো তাদের কাজ নয় । মাননীয় মন্ত্রী কামলা দেয়ার অর্থ পুরোপুরি জানেন কিনা তাও সন্দেহের ? একদল মানুষ তাদের স্বাধীন ইচ্ছানুযায়ী কামলা দেয় আর আপনি জনগণের টাকায় বেতন নিয়ে পরাধীনভাবে কামলা দেন- এ দু’য়ের মধ্যে কোনটা উত্তম ?
সজীব ওয়াজেদ জয়, তাবলীগ কিংবা আমেরিকায় বাংলাদেশী কামলা- এসকল বিষয়ে লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের বিষয়ে একজন মুসলিম হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে কারো কিছু যায় আসে না । কিন্তু একজন নামধারী মুসলিম হয়ে এবং ৯০% অধিক মুসলিম নাগরিকরের দেশের একজন মন্ত্রী হয়ে আল্লাহ ঘোষিত হজ্জ্বের ব্যাপারে নিজস্ব খোঁড়া যুক্তি দেয়ার অধিকার তাকে কে দিয়েছে ? এতবড় স্পর্ধা পেলেন কোথায় ? তিনি হজ্জ্ব আরম্ভ হওয়ার ইতিহাস উল্লেখ করে বলেছেন, আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ ভেবে দেখলেন তারা গরীব সুতরাং তারা খাবেন কি ? তাদের ব্যাপারে ডাকাত নামক একটি শব্দও তিনি উল্লেখ করেছেন ? মুহাম্মদ সারা পৃথিবীতে তার অনুসারীদেরকে বছরে একবার করে মক্কা ও মদিনায় আসার জন্য আহ্বান করলেন যাতে স্থানীয় মানুষ আগন্তুকদের কাছ থেকে কিছু ব্যবসা করে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারেন । মক্কায় গিয়েছেন কখনো ? হজ্জ্বের মওসূমে আরবরা হাজী থেকে ব্যবসা করে না বরং তাদের সর্বর্স উজাড় করে হাজীদের খেদমত করে । মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে এ বছর প্রায় এ লাখ লোক হজ্জ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় গিয়েছে । তাদের একেক জনের যদি গড়ে ৫ লাখ টাক করে খরচ হয় তবে সর্বমোট ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয় । হাজীরা কোন প্রডাকশন না করে কেবল রাষ্ট্রের টাকা রিডাকশন করেন । ৫০০ কোটি টাকার জন্য মন্ত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেল অথচ শুধু পদ্মা সেতুর কাজ আরম্ভ হওয়ারর পূর্বে ৮০০ কোটি টাকা লাপাত্তা হয়ে গেল সে ব্যাপারে মন্ত্রী টু’শব্দটিও করলেন না কেন ? শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি, সোনালী ব্যাংক, বিসমিল্লাহগ্রুপসহ দেশে যে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে কিংবা এখনো চলছে সে ব্যাপারে মন্ত্রীর কোন ভূমিকা ছিল না কিংবা এখনো নেই কেন ? একজন নামধারী মুসলমানের মুখোশ পরে ইসলামের মৌলিক হুকুমের ব্যাপারে তার মত দেয়ার স্পর্ধা হলো কী করে ? তসলিমা নাসরিনকে যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধে দেশান্তরীত করা হয় তবে লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তি কি হওয়া উচিত ? সর্বপ্রথম অন্তত মুসলমানের ন্যায় যে নামটি তার সাথে যুক্ত করা আছে সেটা পরিবর্তন করা হোক ।
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহন করার জন্য সরকারের কাছে বিভিন্ন সংগঠন ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে । বিশেষ করে ২০১৩ সালের আলোচিত ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করছে । আওয়ামীলীগের সাথে ইসলামের কোন শত্রুতা নাই বরং ইসলামের খেদমতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আওয়ামীলীগের ভূমিকা অনেক । সরকারের কাছে অনুরোধ, যাতে অবিলম্বে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রীসভা থেকে অব্যাহতি দিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করা হয় । ইসলামের উপর যখনি কোন আঘাত আসবে সেটা যত ক্ষমতাধারী রাজ শক্তির মাধ্যমেই আসুক না কেন তা কোন অবস্থাতেই বরদাশত করা হবে না । সুতরাং আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ব্যাপারে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হোক এবং তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক । ক্ষমা চেয়ে সব অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না । সুতরাং কোন ক্রমেই লতিফ সিদ্দিকীর এ স্পর্ধা ছোট করে দেখার সুযোগ নেই ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
©somewhere in net ltd.