নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাস নম্বর ৪০ করলেই কি শিক্ষার মান বাড়বে

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:১৯

১৬ই অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান (এনআইখান) জানিয়েছেন, পাবলিক পরীক্ষাসমূহে শিক্ষার্থীর জন্য পাসের নম্বর ৩৩ থেকে ৪০শে উন্নীত করা হচ্ছে । যুক্তি হিসেবে তিনি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ৯৮% বিদ্যালয়মূখী হওয়া এবং বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র সমূহের পাসের মার্কের সাথে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে সামঞ্জস্য করার উদ্যোগকে চিহ্নিত করেছেন । সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় উন্নীত শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ফলাফল এবং বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় ডবল এ প্লাস প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ভরাডুবির কারনে দেশব্যাপী শিক্ষার মান নিয়ে যখন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তখন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস । তারপরেও স্বাভাবিকভাবেই কিছু প্রশ্ন রয়ে যায় । চলতি বছর প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৮.৩৩% শিক্ষার্থী । যার মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০ হাজার ৬০২ জন । আর এসএসসি ও সমমানে পাসের হার ছিল রেকর্ড ৯১.৩৪% । জিপিএ-৫ পেয়েছে রেকর্ড ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন । এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নকল এবং প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ থাকার পরেও তা উপেক্ষা করে সরকার যখন তাদের শাসনামলে শিক্ষাব্যবস্থায় চরম উন্নতির আনন্দে হাওয়ায় ভাসছিল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজী বিভাগে ভর্তির জন্য যখন মাত্র দুই জন শিক্ষার্থী কৃতকার‌্য হয় তখন দেশের শিক্ষার মান নিয়ে সারা দেশ থেকে প্রশ্ন উঠতে থাকে । দেশেরে শিক্ষা বিজ্ঞানীরা শিক্ষার্থীদেরকে দায়ী করবেন নাকি শিক্ষা ব্যবস্থাকে দায়ী করবেন তা নিয়ে দো’টানায় পরে যান । যে বছর শিক্ষার্থীরা পাসের হারে এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যায় রেকর্ডের বন্যা বইয়ে দিল ঠিক সেই বছরেই ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ে ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় মাত্র ৯.৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি কেউ ভালোভাবে গ্রহন করেনি । শতভাগ পাসের হার নিশ্চিত করতে গিয়ে শিক্ষা বিভাগ কখন শিক্ষার মান হারিয়ে বসেছে তার খেই হয়ত তারা নিজেরাই রাখতে পারে নি । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগসহ দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের একই দশা চিত্রিত হয়েছে । শিক্ষার্থীদের ফলাফলে এমন বিপর‌্যয়ের পরেও এ জন্য শিক্ষার্থীদেরকে দায়ী করা যায়নি । ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফল বিপর‌্যয়ের করুন পরিস্থিতি প্রকাশ হওয়ার পরেই শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং কতিপয় শিক্ষক শিক্ষার মান এবং বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়াকে দায়ী করেছে অন্যদিকে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ত্রুটিযুক্ত বলে দাবী তুলেছেন ।

পাস নম্বর বাড়ানোর ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের যুক্তি, পরীক্ষার পাশ নম্বর বাড়ালে শিক্ষার স্ট্যান্ডার্ড একটু বাড়বে । দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে বেশি শিক্ষিতের দেশ হল শ্রীলঙ্কা, সেখানে পাবলিক পরীক্ষার পাস নম্বর ৪০ । দেশের শিক্ষা সম্প্রসারিত হয়েছে । পাসের হার বেড়েছে । সুতরাং পাস নম্বর বাড়ানো যেতে পারে । প্রশ্ন হচ্ছে- শুধু পাস নম্বর বাড়ালেই কি শিক্ষার বর্তমান অধপতিত অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব ? গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পরে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর নানা ধরনের পরীক্ষন ও পর‌্যবেক্ষন চলছে । কোন পরীক্ষন কিংবা পর‌্যবেক্ষন শিক্ষার মানের উন্নতি করতে পারে নি বলে নানাজনে বলছেন । পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা রেকর্ড সংখক হলেও সে অর্থে শিক্ষার মানের কোন উন্নতি হয়নি । মুরুব্বীদের মূখে শুনেছি, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় নকলের সয়লাব হয়েছিল । তবে বর্তমান প্রতিযোগীতার যুগে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বর্তমান সময়ে কিভাবে পরীক্ষায় নকল কিংবা ডিজিটাল জালিয়াতি হয় তার স্বাক্ষী হচ্ছি । সরকার দেশে পাসের হার শতভাগে উন্নীত করতে চায় । সরকারের এ উদ্যোগকে প্রত্যেকের সাধুবাদ জানানো উচিত এবং সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা আবশ্যক । কিন্তু প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যে পথে এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার পাঁয়তারা চলছে তা কতটা স্বচ্ছ ? শিক্ষামন্ত্রী স্বীকার না করলেও তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে হয় এমন কোন পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় না যে পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার এক-দুই দিন পূর্বে প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয় । এভাবে যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে থাকে তবে পাসের নম্বর ৪০ উন্নীত করে কি শিক্ষার মান বাড়ানো কিংবা শিক্ষাকে স্ট্যান্ডার্ড করা যাবে ? গুঞ্জন শুনছি, পরীক্ষকদেরকে খাতা গ্রহন করার সময় নির্দেশ দেয়া হয়, শিক্ষার্থীদেরকে ফেল না করানোর জন্য । কোন পরীক্ষকের মূল্যায়িত খাতায় যদি অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ফেল করে তবে তাকে সে জন্য কৈফিয়ত দিতে হয় এবং তার থেকে দায়িত্ব তুলে নেয়া হয় । জাফর ইকবাল স্যারের একটি লেখায় পড়েছিলাম, বোর্ড প্রধানদেরকে ওপর মহল থেকে নির্দেশ দেয়া হয় সর্বোচ্চ সংখ্যক পাশ করানোর জন্য । শুধু একটি সংখ্যা অর্জন করার জন্য বাকী সব বর্জন করা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে কি ? বিশ্বের সকল দেশ বিশেষ করে উন্নত রাষ্ট্রসমূহের সাথে শিক্ষার হারে পাল্লা দিয়ে আমাদের লাভ কি যদি শিক্ষার মান ঠিক না রাখা যায় । মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী তার মেধা ও কর্মের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে চেষ্টা করছেন শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বিপ্লব ঘটাতে কিন্তু তার সহযোদ্ধারা বোধ হয় তাকে ততোটা সহযোগিতা করছেন না । তা না হলে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে সহায়তা করার জন্য কেন দুর্ণীতি দমন কমিশনের একজন কমিশনারকে বরখাস্ত হতে হবে ? সৃজনশীল পদ্ধতি সময়ের দাবী । কিন্তু সেই সৃজনশীল পদ্ধতির কারনে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় একটি গন্ডি এসেছে । এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা কম অধ্যয়ণ করেও ভালো রেজাল্ট করতে পারছে । যে কারনে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি দিনে দিনে সংকুচিত হচ্ছে । শিক্ষা সচিব আরও জানিয়েছেন, স্পোকেন ইংলিশ ও স্পোকেন আরবী বাধ্যতামূলক করা হবে । এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার পূর্বেই শিক্ষা মন্ত্রনালয়কেগ অগ্রিম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি । এ পদ্ধতি চালু করার সময়ের দাবী । একজন শিক্ষার্থী ১২ ক্লাশ অধ্যয়ণ করার পরেও ইংরেজীতে কথা বলতে পারবে না কিংবা দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল পাশ করার পরেও আরবীতে কথা বলতে পারবে না এটা গ্রহনযোগ্য নয় ।


বর্তমান মানহীন শিক্ষার মান বাড়াতে পাশের নম্বর যদি আরও বাড়াতে হয় তবু তাই করা হোক । যে কোন মূল্যে শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনতে হবে । কাজেই শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেণীকক্ষমূখী করতে হবে এবং শিক্ষকরাও যাতে শ্রেণীকক্ষে তাদের সবটুকু উজাড় করে শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তা করেন তার নিশ্চয়তা দায়িত্বশীলদেরকেই দিতে হবে । পরীক্ষায় পাশের নম্বর ৪০ করেও যেমন শিক্ষার মান বাড়ানো যায় না আবার ৩৩শে রেখেও শিক্ষার মান বাড়ানো যায় । ৩৩ কিংবা ৪০ এর ব্যাপারটি খুব বড় নয় । শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনাই মুখ্য । শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনার জন্য নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁস সর্বাগ্রে বন্ধ করতে হবে । পরীক্ষককে সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ণ করার নির্দেশ প্রদান করতে হবে । পরীক্ষার খাতা মুল্যায়ণ ক্ষেত্রে পরীক্ষক যদি উদারতার পরিচয় দেন তবে পাসের হার বাড়বে ঠিকই কিন্তু শিক্ষার মান অবশ্যই কমবে । অতীতে ৩৩ নম্বরে পাসের স্থলে কেউ ৩২ পেলে তার রেজাল্ট ফেল আসত আর এখন ২৮ কিংবা ৩০ পেলেও তার পাশ আসে । কাজেই এভাবে চললে পাশের নম্বর ৪০ কেন তা ৫০ করলেও খুব বেশি উপকৃত হওয়া যাবে না । শিক্ষার্থীদেরক আগামী সম্পর্কে সচেতন এবং জ্ঞানমূখী করতে হবে । সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ইন্টারনেট, মোবাইল ও কম্পিউটার ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে কতিপয় বিধি নিষেধ আরোপণ করতে হবে । শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনতে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্ট্যান্ডার্ড করতে কেবল পাশের নম্বর বাড়ালেই হবে না বরং মান নির্ধারণের সঠিক মাপকাঠি নির্ধারণ স্বরূপ পাবলিক পরীক্ষাগুলো মানসম্মত প্রশ্ন প্রণয়ন এবং স্বচ্ছ পন্থায় পরীক্ষা গ্রহন করতে হবে । শিক্ষার্থীদেরকে সঠিকভাবে পাঠদান করতে হবে । সৃজনশীল ব্যবস্থায় আরও পরিবর্তন এনে শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান অন্বেষণে উৎসুক করে গড়তে হবে । সবশেষে সরকার, শিক্ষামন্ত্রনালয় বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রীর নিকট অনুরোধ, আসন্ন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থেকে যেন প্রশ্নফাঁস বন্ধ হয় এবং তা ধারাবাহিক হয় । কঠোরতার মাধ্যমে একবছর শতভাগ পাশের চিন্তা বাদ দিয়ে শিক্ষার মানের জন্য পরীক্ষা নিন । তাতে নিশ্চয়ই আগামী বছরে এর সুফল ধরা দেবে ।


রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.