নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যত-এই মন্ত্রে দিক্ষীত হয়ে শিশুদেরকে যোগ্য মানুষ করে গড়ে তোলা সকলের দায়িত্ব । সময়ের পরিবর্তনে শিশুই একদিন তরুণে পরিণত হয় । প্রত্যেকটি জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করে সে জাতির তরুণ-তরুণীদের বেড়ে উঠা কিংবা যোগ্য হওয়ার উপরে । যে জাতির তরুণ সম্প্রদায় যতবেশি যোগ্য ও দক্ষ হবে সে জাতি ততবেশি উন্নতি করবে । তরুণ সমাজ তাদের বেড়ে ওঠার সময় যদি স্বাধীনতা ও প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা না পায় তবে সে সমাজ কেবল শরীরেই বেড়ে ওঠে মনে নয় । তরুণ-তরুণীর শারীরিক বৃদ্ধির চেয়েও বেশি প্রয়োজন মানসিক বৃদ্ধি । একটি শিশুর জন্মগ্রহনের পর থেকে তারুণ্য পাড়ি দিয়ে যৌবনে পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত সময়টাই তার জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে সাহায্য করে । তারুণ্য এমন গুরুত্বপূর্ণ সময় যেখানে তরুণ-তরুণীদের উপর পরিবার, সমাজ ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে । পরিবার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা এবং সমাজের অপ্রাতিষ্ঠানিক-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই তাদের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে । এ সময় তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রভাবও তারা ধারণ করতে শিখে । মোটকথা, ভালো এবং খারাপ সকল ধরণের উৎস থেকেই জ্ঞান আহরণের এটা সর্বোত্তম সময় । প্রজন্ম বিপথে না সুপথে পরিচালিত হবে তার নীতি-নির্ধারণের বীজ বপিত হয় এই সময় । জীবনের বাকী অধ্যায়গুলোতে সে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে কেবল শাখা প্রশাখা বিস্তার করে । তারুণ্য প্রতিটি জাতির জাতীয় শক্তি । এ সময় তরুণ-তরুণীরা কোন বাঁধাই মানতে চায়না । তারুণ্যের সময় এরা ধ্বংসও আনতে পারে আবার ধ্বংসের উপর দাঁড়িয়ে গড়তেও পারে । তারুণ্যের শক্তিকে যদি সঠিকভাবে গঠন করে কাজে লাগানো যায় তবে মূহুর্তেই রাষ্ট্রের ধূসর মলিন চেহারা বদলে যেতে বাধ্য । তবে তরুণ-তরুণীদের অসম শক্তি অর্থ্যাৎ তারুণ্যকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে যোগ্য মানুষে পরিণত করে কাজে লাগাবে কে ? সবাই যদি ব্যক্তির ক্ষুদ্র স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে তবে তরুণের বৃহৎ স্বার্থ দেখবে কে ? তরুণ-তরুণীর নীতি নির্ধারকদের স্বার্থবাদী আচরণের কারণে তরুণরাও স্বার্থবাদী হতে বাধ্য হচ্ছে । ফলশ্রুতিতে সর্ববাদী কিংবা পরার্থবাদী মানুষ গঠন হচ্ছে না । সমাজ কিংবা রাষ্ট্রও সমাজ সংস্কার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । যে কারনে সার্বিক উন্নতির বিপরীতে রাষ্ট্রও সেই পূর্বের অবস্থানে পড়ে রয়েছে । তরুণরা সঠিক দিক-নির্দেশনা না পাওয়ায় এবং দায়িত্বশীলদের অবহেলা কিংবা দায়িত্বহীন আচরণের কারণে তরুণ-তরুণীরা হতাশ হয়ে দিন দিন বিপথগামী হচ্ছে । যে কারনে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে এবং শান্তির ছোঁয়াও ধূসর থেকে আরও ধূসর হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বার্ষিক জনসংখ্যা প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য মতে, ‘বাংলাদেশে ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ৪ কোটি ৭৬ লাখ । অর্থ্যাৎ তারা মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ’ । এই তরুণরাই দেশের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে এবং নেতৃত্ব দেবে । তাদেরকে যদি সঠিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে গড়ে তোলা যায় তবে তা অবশ্যই সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে । যে তরুণরা আগামীর বাংলাদেশের হাল ধরবে এবং নেতৃত্ব দিয়ে উন্নত দেশে পরিণত করে বহির্বিশ্বে এদেশকে তুলে ধরবে সেই তরুণরা সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের কাছে শিখছে কি ? তরুণ-তরুণীরা যখন তাদের যোগ্য মানুষ রুপে গড়ে তোলার সংগ্রাম করছে তখন ব্যক্তি কিংবা দলের বিভিন্ন কর্মকান্ড তাদেরকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে । পারিবারিক অশান্তি, সামাজিক অস্থিরতা, রাষ্ট্রীয় অস্থিতিশীলতায় তরুণ-তরুণীরা দিনে দিনে হতাশ হচ্ছে এবং বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে । মাদকের আগ্রাসনে তরুণ সমাজের মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে । ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের ছিঁটে ফোঁটাও অবশিষ্ট না থাকায় তরুণরাও সংশয় এবং সন্দেহের মধ্যে বেড়ে উঠছে । অপসংস্কৃতির আগ্রাসন তরুণ-তরুণীদেরকে কুকর্মে লিপ্ত হচ্ছে প্ররোচিত করছে । রাজনৈতিক স্বার্থের বলি হয়ে অসংখ্য তরুণ-তরুণী জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় অর্থ্যাৎ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের প্রতি বিমূখ হচ্ছে । রাষ্ট্র কতৃর্ক তরুণ-তরুণীদের সর্বাত্মক পরামর্শ এবং পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় তরুণ সমাজের এক বিপুল অংশ অন্ধকারেই রয়ে যাচ্ছে । খাদ্য দ্রব্যে রাসয়নিক বিষ মিশ্রনের কারনে তরুণদের-তরুণীদের শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে এবং বিভিন্ন অঙ্গহানীর শিকার হচ্ছে ।
বেঁচে থাকার জন্য সর্বার্গ্রে প্রয়োজন খাদ্য । তরুণ-তরুণীদের বেঁচে থাকা এবং শরীর গঠনের জন্য খাঁটি খাদ্যের বিকল্প নাই । তবে কোথাও নির্ভেজাল খাদ্য পাওয়ার সুযোগ নাই । উৎপাদক কিংবা কৃষক পার্যায় থেকে শুরু করে বিক্রেতা পর্যন্ত সবাই কেবল ভেজাল দিয়েই যাচ্ছে । কেউ কারও স্বার্থ রক্ষার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করছে না । জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে খাদ্য দ্রব্যের সাথে মিশ্রিত করা হচ্ছে মারাত্মক সব রাসয়নিক বিষ । যা খাদ্যের সাথে মানুষের শীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় । এ ধরণের বিষাক্ত খাদ্য ভক্ষণ করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তরুন-তরুণীরা । ফলশ্রুতিতে, তরুণ-তরুণীরা শারীরিকভাবে পূর্ণ সুস্থ থাকছে না । যে কারনে আগামীর চ্যালেঞ্জ গ্রহন করার যে শক্তি-সামর্থ্য অর্জন করা দরকার আজকের তরুণ-তরুণীরা তা পারছে না । শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদন্ড । জাতির জাতীয় উন্নতির সাথে শিক্ষা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত । যে জাতি যতবেশি শিক্ষিত হবে সে জাতির ততবেশি উন্নতি হবে । শিক্ষার্থীরা শিক্ষার নামে শিখছে কি ? শতভাগ পাস, শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লবের স্বপ্ন ভ্রম এবং জিপিএ-৫ এর বন্যা বইয়ে দিতে গিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় মূখ থুবরে পড়েছে । শিক্ষার হার বাড়লেও শিক্ষার মান বৃদ্ধি না হয়ে ক্রমাবনতি হয়েছে । শিক্ষা ব্যবস্থায় নকল চরম আকার ধারণ করেছে । প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা দুর্নীতির ছোঁয়া আজ সর্বত্রই । যোগ্যরা চাকরি বঞ্চিত হচ্ছে এবং চাকরীর ক্ষেত্রে চরম দলীয়করণের প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে । এছাড়াও শিক্ষা কাঠামোতে বার বার পরীক্ষণ পর্যবেক্ষন চালানোর কারনে শিক্ষার্থীরাও বিব্রত বোধ করছে । কাজেই যে তরুণরা প্রকৃত শিক্ষা পাবে না তাদের দ্বারা জাতি ভবিষ্যতে কি আশা করতে পারে ? তরুণদের মানসিক বিকাশে সংস্কৃতি গভীর প্রভাব ফেলে । জাতি হিসেবে বাঙালীর গর্ব করার মত ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি রয়েছে । কিন্তু দূর্ভাগ্যের হলেও সত্য, আমরা সে সংস্কৃতি প্রায় ভূলতে বসেছি । দায়িত্বশীলদের উদাসীনতায় দেশে অপসংস্কৃতির সয়লাব হয়েছে । যৌবনের সুড়সুড়ি দাতা সে সকল অপসংস্কৃতির অনুসরণে তরুণ-তরুণীরাও উম্মাদ প্রায় । যে কারনে সমাজে অপরাধের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে এবং পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার মূখে । তবুও এ থেকে উত্তরণের জন্য দায়িত্বশীলদের কারো কোন ধরণের মাথা ব্যথা পরিলক্ষিত হচ্ছে না । মাদকের আগ্রাসন এখন সর্বব্যাপী । শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সের অসংখ্য মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে । বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের আসক্ত হওয়ার প্রবণতা এবং সংখ্যাই বেশি । প্রতিটি মাদকদ্রব্য স্বাস্থ্যের জন্য মৃত্যু ঝুঁকির । তবুও মাদকের লাগাম টানতে রাষ্ট্রের খুব বেশি পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না । তরুণ-তরুণীরা গাঁজা, ইয়াবা, শীশাসহ বেশ কয়েক ধরণের মরনঘাতী মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে । হাস্যকর হলেও সত্য, মাদকসেবীদের ধাওয়া চলে কিন্তু মাদকের উৎস কোথায় তা তালাশ করা হয় না । যে জাতির তরুণ-তরুণী সমাজের বৃহৎ অংশ মাদকাসক্ত যে জাতির ভবিষ্যত কি হবে তা বোধহয় সহজেই অনুমেয় । ভবিষ্যতে কথা না হয় ক্ষনিকের জন্য ভূলে গেলাম কিন্তু বর্তমানে মাদকাসক্তদের নিয়ে যে সকল সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে তা যদি রোধ করা না যায় তবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিশৃঙ্খলা ঠেকাবে কে ?
আজকের তরুণ-তরুণীরাই আগামী প্রজণ্মের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিবে । কাজেই তরুণ-তরুণীদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা অর্জণ করার এটাই সুবর্ণ সময় । বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনিতক দলের ছাত্র সংঘঠন রয়েছে । যেভাবেই হোক স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাঁকিবাজ কিংবা মেধাবী পড়ুয়া ছাত্রদের একাংশ ছাত্ররাজনীতির সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছে । এটা ভবিষ্যতে জাতির নেতৃত্বদেয়ার ইস্পৃহাধারী ছাত্রদের জন্য যেমন কল্যানের তেমনি রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলের । দেখার বিষয়, রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদেরকে কোন স্বার্থে ব্যবহার করছে এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িয়ে ছাত্ররা কি শিখছে । স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অস্থীতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি, খুন-খারাবিসহ কোন অপকর্মটি নেই যেখানে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা না আছে । এই যদি হয় ছাত্রদের আদর্শ তবে এরা জাতিকে দিতে পারবে কোন সাফল্য ? ভাবতে অবাক লাগে যখন বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখি, শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা, সামান্য কারণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে মারামারি কিংবা ঠুনকো কোন ইস্যু পেলেই ছাত্র-ছাত্রী কর্তৃক রাজপথ অবরোধ করে রাষ্ট্রীয় কিংবা ব্যক্তিগত সম্পদ ভাংচুর । শিক্ষার্থীরা হবে এই সমাজের আলোকবর্তিকা । সেই তারাই যদি অন্ধকারে হারিয়ে যায তবে সমাজের অন্যমানুষগুলোর পরিণাম কী ?
এখন যদি বদলানো না যায় তবে সেটা বোধহয় কখনই সম্ভব নয় । তরুণ সমাজকে জাতীয় সম্পদকে পরিণত করার জন্য পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদেরকে এগিয়ে আসতে হবে । তারুণ্যের সময়টাতে মানুষকে যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে গড়ে তোলা যায় । বৃহৎ স্বার্থের কথা মাথায় রেখে তরুণদেরকে দিয়েই আগামীর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হবে । যেখানে কোন অনাচার কিংবা অত্যাচার থাকবে না । তাতে ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের বন্ধনে শান্তির ছোঁয়াই থাকবে সর্বত্র । সুতরাং তরুণ-তরুণীদেরকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সমাজে যতগুলো বাঁধা আছে তা দূর করে একটি স্থিতীশীল পরিবেশের ব্যবস্থা দায়িত্বশীলদেরকে করে দিতে হবে । আমাদের তরুণ-তরুণীদের জন্য এটাই হোক দায়িত্বশীলদের শতাব্দীর সেরা উপহার ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]
©somewhere in net ltd.