নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটি মিথ দিয়ে আজকের লেখা শুরু করতে যাচ্ছি । আশা করি উদ্ধৃত মিথ দ্বারা পাঠক যেমন বাস্তবতা উপলব্ধি করবে তেমনি লেখার উদ্দেশ্যও কিছুটা সফল হবে । সময়টা ছিল বৃটিশদের শাসনের সময় । একজন বৃটিশ সাহেব ভারতীয় উপসমহাদেশে তাদের কোন একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার জন্য তদন্তে আসলেন । যে প্রতিষ্ঠানটি বৃটিশরা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে তা জনস্বার্থ বিরোধী তাই মুসলমানরা তার বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলনে ও জনমত তৈরি করার চেষ্টাও করেছিল । নির্দিষ্ট তারিখে বৃটিশ সাহেব তার বিশাল বাহিনী নিয়ে গন্তব্যে রওয়ানা হলেন কিন্তু পথিমধ্যে মুসলমানরা তার পথ রোধ করল । ইংরেজ সাহেব মুসলমানদের কাছে তাদের দাবীর কথা জিজ্ঞাসা করল । কিন্তু মুসলমনরা তার ভাষা না বুঝতে পারায় কেবল স্লোগান দিতে লাগল এবং শরীরী ভাষায় তারা গলার কাছে হাত উত্তোলন করল । বৃটিশ সাহেবের সাথে যে দোভাষী ছিল তিনি মুসলিম বিরোধী । বৃটিশ সাহেব দোভাষীর কাছে মুসলমানদের দাবী এবং গলার কাছে হাত উত্তোলন করার প্রকৃত কারণ জানতে চাইলেন । কিন্তু কপট দোভাষী প্রকৃত কারণ না বুঝিযে বলল মুসলমানরা আপনাকে হত্যা করতে অর্থ্যাৎ তারা আপনার গলা কেটে ফেলতে চায় । বৃটিশ সাহেব খুব রেগে গেল এবং তার সাথে থাকা পুলিশ বাহিনীকে মুসলমানদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিল । সেদিন পুলিশের গুলিতে শত শত মুসলমানের জীবনহানী হয়েছিল । মূল দৃশ্য ছিল, মুসলমানরা তাদের গলার কাছে হাত উত্তোলন করে সাহেবকে বুঝাতে চেয়েছিল তারা জীবন দিতে রাজী কিন্তু জনস্বার্থ বিরোধী কোন কাজ হতে দিবে না অন্যদিকে দোভাষী মূসলমাদের ভাষাজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে সাহেবকে বুঝিয়েছিল ভিন্ন । কেবল বৃটিশদের ভাষা না জানার কারণে সেদিন অসংখ্য মুসলমানকে জীবন দিতে হয়েছিল । ইংরেজী ভাষা না শেখায় মুসলমান প্রাপ্য অধিকার থেকে সরাসরি বঞ্চিত হয়েছিল । ইংরেজী ভাষা শিক্ষার প্রতি বৈরাগ্যভাবাপন্ন থাকায় বৃটিশামালে মুসলামনরা প্রায় অবহেলিত ছিল । রক্ষণশীল মুসলমানরা ইংরেজী ভাষা শিক্ষাকে মুসলমানদের জন্য হারাম ঘোষণা করেছিল । যে কারণে মুসলমনরা ইংরেজী শিক্ষার ছায়াও মাড়াত না । এমনকি যে স্কুলে ইংরেজী ভাষা শিক্ষা দেয়া হত সে সকল প্রতিষ্ঠানকে পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে অপবিত্র স্থান মনে করত । বৃটিশদের ভাষার প্রতি আগ্রহী হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দুরা যখন ইংরেজী ভাষা শিক্ষা করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সম্মানীয় পদবীতে চাকরি করত তখন মুসলমানরা কেবল ইংরেজী শিক্ষা বিমুখ থাকায় বিভিন্ন স্থানে কর্মচারী বা ভৃত্যের কাজ করত । ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে হিন্দুরা যখন বৃটিশদের আস্থাভাজনে পরিণত হয়েছিল তখন মুসলমানরা বৃটিশদের কাছে ছিল চরম অবহেলিত । মুসলমানদের এ বেহাল দশা উপলব্ধি করে স্যার সৈয়দ আমীর আলী ও স্যার সলিমুল্লাহ মুসলমানদের নেতৃত্ব দিয়ে তাদেরকে সম্মানের স্থান ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হলেন । তারা মুসলমান ছেলে-মেয়েদের জন্য ইংরেজী শিক্ষা নিশ্চিত করতে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করলেন এবং মুসলমানদের মধ্যে পুঁঞ্জিভূত কুসংস্কার দূরীভূত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালালেন । একসময় মুসলামনরাও তাদের ভুল বুঝতে পেরে ইংরেজী শিক্ষার প্রতি ঝুঁকলেন তবে সময়ের সিদ্ধান্ত যথাসময়ে না নেয়ায় মুসলমানদেরকে অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছিল ।
আজ বৃটিশদের শাসন নেই কিন্তু বিশ্বায়ণ আছে । বৃটিশরা এ উপমহাদেশ থেকে বিতারিত হলেও তাদের ভাষাই আজ আন্তর্জাতিক ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে । গোটা পৃথিবী জুড়ে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সাধারণভাবে কেবল ইংরেজী ভাষাই ব্যবহার হচ্ছে । কেউ মাতৃভাষা রুপে আবার কেউ দ্বিতীয় প্রধান ভাষা হিসেবে ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করছে । ইংরেজী ভাষা জানা থাকলে গোটা বিশ্ব ঘুরে আসতে কোন সমস্যা হয়না । সব দেশের মানুষ কমবেশি ইংরেজী ভাষা জানায় সবার সাথে যোগাযোগ ও সম্পর্ক রক্ষার্থে ইংরেজী ভাষা আজ আমাদের জন্য বড় বেশি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে । আমরা মাতৃভাষার পরেই দ্বিতীয় গুরুত্ব দিয়ে ইংরেজী ভাষা শিখছি কিন্তু বিদেশীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় আমাদের সে শিক্ষা পদ্ধতি কতটুকু সহায়ক হচ্ছে? শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে শিক্ষা জীবনের শেষ ক্লাস অবধি আমাদের পাঠ্যক্রমে কমবেশি ইংরেজী ভাষা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে তবে সেটা ভাষার লেখ্য রুপ । প্রতিটি ভাষারই প্রধানত দু’টি রুপ থাকে । একটি লেখ্য অন্যটি কথ্য । দু’টোই গুরুত্বপূর্ণ তবে পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য ভাষার কথ্য রুপটি খুব জরুরী । আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যেভাবে সাজানো হয়েছে তাতে ভাষার কথ্য দিকটি প্রায় উপেক্ষা করা হয়েছে । মাতৃভাষা হিসেবে আমরা বাংলাতে খুবই পরাঙ্গম এবং অনর্গল বাংলা ভাষা ব্যবহার করে মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারি । কিন্তু বাংলা ভাষা নিয়ে দেশের বাইরে এক পা ফেলারও কি উপায় আছে ? বাঙালী ছাড়া বিশ্বের প্রায় প্রতিটি জাতির নিজস্ব মাতৃভাষা থাকার পরেও তারা সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য ইংরেজী ভাষা শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে । পৃথিবীর বয়স যতই বাড়ছে ততই দেশের সীমানা সংকুচিত হচ্ছে । ভাবা হচ্ছে, মাত্র শ’খানেক বছর পর বিশ্বের মধ্যে আলাদা আলাদা কোন সীমানা থাকবে কিনা সন্দেহ । বিশ্বায়ণের প্রভাবে সে আলামতের কিছুটা প্রকাশ পেতেও শুরু করেছে । বিশ্বায়ণের কল্যানে বিশ্বের বহু দেশ আজ একই ছাদের ছায়ায় অবস্থান করছে । সংস্কৃতি, ব্যবসা থেকে শুরু করে সব কিছুর পরিবর্তন ঘটছে । সবাই সব কিছু ভাগাভাগি করে নিচ্ছে । আমরাই শুধু পিছিয়ে পড়ছি । আমাদের পিছিয়ে পড়ার পেছনে কেবল যোগাযোগ রক্ষা করতে না পারার ব্যর্থতাই দায়ী ।
সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন আন্তর্জাতিক জীবন থেকে পারিবারিক জীবন পর্যন্ত অর্থ্যাৎ জীবনের সর্বত্র ইংরেজী ভাষার ব্যবহার হবে । বর্তমানে তার লক্ষণ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে । ছাত্র জীবনে যিনি ইংরেজী ভালো বলতে কিংবা লিখতে পারেন তিনি ছাত্রজীবন সমাপান্তে ভালো ভালো চাকরিতে সুযোগ পাচ্ছেন । যে ব্যবসায়ী ভালো ইংরেজী জানেন তিনি ব্যবসায় উন্নতি করছেন । আজ জীবনের কোন অংশটি ইংরেজী ছাড়া চলে ? ন্যায় বিচার পেতে হলেও যেমন ইংরেজী দরকার তেমনি উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে হলেও ইংরেজী প্রয়োজন । ইংরেজীকে এড়িয়ে যাবার কি কোন উপায় আছে ? শুধু ছাত্রের কথাই যদি বলা হয় তবে দেখা যাবে ছাত্রদের জন্যই সবচেয়ে বেশি ইংরেজী জানা দরকার । শিক্ষা জীবনের আভ্যন্তরীণ লক্ষ্য যাই হোক না কেন বাহ্যিক লক্ষ্য নিশ্চয়ই ভালো চাকরি পাওয়া । প্রশ্ন হল-ভালো চাকরি পাবে কে ? যিনি গতানুগতিক ভাবে শিক্ষা জীবন শেষ করেছে এবং অনেকগুলো সার্টিফিকেট অর্জন করেছে তিনি না যিনি গতানুগতিক শিক্ষা ও সার্টিফিকেট অর্জনের সাথে সাথে ইংরেজী ভাষাকে ভালোভাবে রপ্ত করেছে তিনি ? দেশের চাকরির বাজার, চাকরি দাতাদের চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের দাবী অনুযায়ী দ্বিতীয় শর্ত অর্থ্যাৎ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সার্টিফিকেটের সাথে ইংরেজীতে দক্ষ হলে তার চাহিদা সর্বত্র । সার্টিফিকেটকে চাকরি প্রাপ্তির জন্য আবেদন করার স্বীকৃতি বলা যেতে পারে কিন্তু চাকরির বাজারে প্রবেশের চাবি অবশ্যই ইংরেজীতে সুদক্ষ হওয়া । সিদ্ধান্তে বলা যায়, ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য সার্টিফিকেটের প্রয়োজন যতটা তার চেয়ে ইংরেজীতে দক্ষ হওয়ার গুরুত্ব কোন অংশে কম নয় । শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যেতে চাইলেও ইংরেজী জানা আবশ্যক । একজন ইংরেজী ভাষা না জানা শ্রমিক যে টাকা মাইনে পান তার চেয়ে বহুগুন বেশি মাইনে পান একজন ইংরেজী ভাষা জানা শ্রমিক । দু’জন শ্রমিকেরেই কাজ করার যোগ্যতা সমান হওয়ার পরেও এটাই বাস্তবতা । ইংরেজী ভাষা জানা ছাড়া আজকের দুনিয়ায় মানুষকে অন্ধ হয়েই চলতে হয় । এ আবার যেমন তেমন অন্ধ নয় বরং কানে বধির, চোখে অন্ধ এবং মুখে বোবা । ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে ইংরেজী ছাড়া এক মূহুর্ত ভাবা সত্যিই অসম্ভব ।
বাঙালীদের জন্য ইংরেজী ভাষা শিক্ষা এতটা সহজ নয় যতটা সহজ বাংলা । ছাত্রত্বের সুবাদে কম বেশি ইংরেজী আমরা প্রত্যেকেই জানি কিন্তু সমস্যা বাঁধে বলার সময় । যেন গলা পর্যন্ত এসে আটকে যায় । ইংরেজী ভাষা শিক্ষার জন্য চর্চার কোন বিকল্প নাই । বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কাঠামো অনুযায়ী এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজী বলতে শেখা প্রায় অসম্ভব । কাজেই যে সকল সরকারী কিংবা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ইংরেজী ভাষায় কথা বলতে শেখায় তাদের দ্বারস্থ হতে হবে । এখানে প্রতিষ্ঠান বড় কি ছোট তা বিবেচনা করা মুখ্য নয় বরং যিনি ইংরেজী শিখাচ্ছেন তিনি কতটা যোগ্য ও দক্ষ সেটাই বিবেচ্য । আবার কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা ইংরেজী শিক্ষানোর নামে দৃষ্টি নন্দন এবং শ্রুত মধুর কিছু বিজ্ঞাপনের ভাষা ব্যবহার করতঃ এক প্রকার অর্থনৈতিক ডাকাতি করে । কাজেই শিক্ষার্থীদেরকে সচেতন হয়ে যাচাই-বাচাই করে ইংরেজী শিক্ষা করার জন্য প্রতিষ্ঠান বাছাই করা উচিত । মোটকথা জীবনে চলার পথে ইংরেজী লাগবেই সুতরাং দেরী না করে এবং ব্যস্ততা আসার পূর্বেই ইংরেজী শিখে নেয়া উচিত । ভবিষ্যত জীবনে অন্ধকার দেখতে না চাইলে এবং সফলতার স্বর্ণ শিখরে আরোহন করতে চাইলে ইংরেজীর বিকল্প আর কিছু নাই । এক্ষেত্রে শুধু বলা যায়, ইংরেজীর বিকল্প কেবল ইংরেজীই হতে পারে ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]
©somewhere in net ltd.