নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রবাদ আছে, কারো পৌষ মাস আবার কারও সর্বনাশ । তবে এই পৌষ মাসেই সর্বনাশের ছায়া নেমে আসে দেশের অসংখ্য গরীবের ওপর । বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিবেচনায় পৌষ ও মাঘ এই দু’মাসকে শীতকাল হিসেবে ধরা হয় । তবে পৌষের কিছুদিন পূর্ব থেকে এবং মাঘ শেষ হওয়ার পরেও অনেকদিন শীতের রেশ থাকে । দেশের মানুষ এখন মধ্য অগ্রহায়ণ পার করলেও শীতের স্পর্শ বেশ ভালোভাবেই টের পাচ্ছে । বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের শীতের প্রকোপ বেশ । একটি সাধারণ রাষ্ট্র কিংবা সংবিধানিক কল্যান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সকল মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম বস্ত্র এবং বাসস্থানের পূর্ণ ব্যবস্থা করা এখনো সম্ভব হয়নি । দেশের সম্পদের সীমাবদ্ধতা কিংবা সদিচ্ছার অভাবে দেশের অসংখ্য মানুষকে ছাদবিহীন উম্মুক্ত স্থানে উধোল গাঁয়ে দিন-রাত কাটাতে হয় । গরমের মওসুমে এটা ততোটা কষ্টের না হলেও বর্ষা এবং শীতকালে আশ্রয়হীন ও বস্ত্রহীন মানুষের জন্য এ ভয়ানক পরিস্থিত মারাত্মক কষ্টের । তবুও মানুষ নিরুপায় । শীতের কনকনে ঠান্ডা আবহাওয়ার সম্পূর্ণ ছোঁয়া না লাগলেও সময়ের পরিবর্তনে শীতের চাদরে ছেয়ে যেতে শুরু করেছে গোট দেশ । দেশের ভূমি অনুপাতে প্রয়োজনীয় সবুজ বনভূমি না থাকায় ঋতু বৈচিত্র্যের আচরণের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়ে অনেক গড়মিল দেখা দিয়েছে । যে কারণে শীতের মওসুমে অসহনীয় ঠান্ডা এবং গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষার মওসূমে তীব্র দাবদাহ কিংবা অতিবৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে । দেশের ধনী কিংবা মধ্যবিত্ত গোষ্ঠীর কাছে গ্রীষ্ম, বর্ষা কিংবা শীতের খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও শীতের মওসুমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট সহ্য করতে হয় দেশের নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে । গরমের মওসুমে তীব্র দাবদাহ দেখা দিলেও ততোটা কষ্ট হয়না কেননা প্রকৃতিতেই এমন অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে যা তীব্রদহন থেকে মানুষকে রক্ষা করে । তবে গরীব দেশের মানুষ বিশেষ করে বাংলাদেশর ছিন্নমূল কিংবা খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে শীতের মওসুমে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি থাকলেও পোশাক-পরিচ্ছেদ ব্যবহারের বিলাসিতার দিক থেকে এদেশের মানুষ বিশ্ব দরবারে গরীব হিসেবেই পরিচিত । বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের জন্য এখানে পোশাক তৈরি করা হলেও এদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে আর্থিক অনগ্রসরতার জন্য অনাবৃত দেহে থাকতে হয় । বিশ্বের অন্যান্য উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশের মানুষের মত আমাদের দেশের অনেক মানুষের সময়োপযোগী পোশাক পরিধান করার সামর্থ্য নাই । দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর চেয়ে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে তুলনামূলক শীতের প্রাদূর্ভাব বেশি পরিলক্ষিত হয় । ভাগ্যেরও এমন নির্মম পরিহাস, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ে উত্তরাঞ্চলে গরীব মানুষের সংখ্য অনেক বেশি ।
স্বয়ং স্রষ্টা মানুষ জাতিকে শ্রেষ্ট জাতির মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন । পৃথিবীর সকল সৃষ্টিতে জীবন শক্তির থাকার পরেও মানুষ শ্রেষ্ট কারণ একমাত্র মানুষের বোধ শক্তি আছে । এ বোধ শক্তি মানুষকে কেবল শ্রেষ্ঠই করেনি বরং অন্যান্য জাতি থেকে পৃথকও করেছে । সুতরাং মানুষের দায়িত্ব অনেক । দামি ও ভারী কাপড় পরিধান করে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনে ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে যখন কনকনে শীতের মধ্যে বাহিরে যেতে হয়, তখন রাস্তার পাশে কিংবা ষ্টেশনের আশেপাশে থাকা শীতবস্ত্রহীন অসহায় মানুষগুলোর প্রতি তাকিয়েছি কখনো ? অসহায় মানুষগুলোর ছবি দেখে যদি হৃদয়ে নাড়া না দেয় কিংবা সহানুভূতির সৃষ্টি না হয় তবে নিজেকে মানুষ বলে দাবী করে কীভাবে ? শীতের তীব্রতায় কষ্ট পাওয়া মানুষগুলোর আঁটসাঁট হয়ে বসে কিংবা জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে থাকা দেখলে মনে হয় যেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত কোন দূর্ভিক্ষের চেনা জানা ছবি । তা না হলে তীব্র অসহনীয় তীব্র শীতে খালি গায়ে কিংবা নাম মাত্র বস্ত্রে তাদের এই বীভৎস চিত্র কেন জীবন্ত হয়ে উঠবে কোন স্বাধীন নগরী ও গ্রাম-গঞ্জের আনাচে কানাচে । এই কি তাহলে আমাদের স্বাধীনতার চিত্র ? যেখানে আমার শরীরে দামী কাপড়ের উষ্ণতা আর ওদের শরীরে নির্মম বাস্তবতা । বিজয়ের মাসে কিসের বিজয়ে মত্ত হব যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা যায়নি । নিজের এই বিবেক আর মানবতাকে ধিক্কার জানাই, যদি শীতে কষ্ট পাওয়ার মানুষের মুখের উষ্ণতার হাসি না নিয়ে বিজয়ের মাসে বিজয়ের উল্লাসে মত্ত হই । আমার বিজয় তখনই যখন শীতে কষ্ট পাওয়া প্রতিটি অসহায় মানুষের মুখে উষ্ণতার হাসি ফুটবে । দেশের যে বৃহৎ সংখ্যক মানুষ শীতে কষ্ট পায় তাদের কষ্ট লাঘব করা সামর্থবানদের জন্য নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য । ব্যক্তিগতভাবে এ কাজটি করা প্রায় অসাধ্য । যৌথ প্রয়াসের মাধ্যমে শীতার্তের কষ্ট লাঘব করা কোন কঠিন কাজ নয় । মাত্র কিছু সংখ্যক সামর্থ্যবান মানুষের সদিচ্ছা এবং সকলের দায়িত্বমূলক অংশগ্রহন এ কাজকে সহজতর করতে পারে । দেশের জন্মলগ্ন থেকেই কমবেশি উদ্যোগী মানুষ তৈরি হয়ে আছে । একমাত্র জনসেবার মানষিকতা নিয়ে বহু মানুষ বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থা চালূ করেছে । এখানে দান করার দায়িত্ব সবার । প্রত্যেকের সাধ্যানুযায়ী দানকৃত মাত্র কয়েকটি টাকাই শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষগুলোকে মরণসম কষ্টের কবল থেকে রক্ষা করতে পারে । ২০০৭ সালে সিডর কিংবা আইলা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সাধ্যানুযায়ী টাকা, পোশাক ও খাবার দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য করে নজির স্থাপন করেছিল । শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় বরং দেশের সর্বস্তরের মানুষ সেদিগুলোতে বিপদগ্রস্থ মানুষকে সাহায্য করে বাঁচতে সাহায্য করেছিল । সে সময়ের মত সমগ্র দেশের মানুষ যদি আরেকবার জেগে ওঠে তবে এদেশের অসংখ্য মানুষ শীতের ভয়ানক আক্রমন থেকে রক্ষা পাবে । ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে মাত্র কয়েক লাখ মানুষ শীতে কষ্ট পায় । শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষদের কষ্ট দূরীকরণে যদি কিছু মানুষ চেষ্টা করে তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হবে । সবার চেষ্টা এবং আন্তরিকতার সাথে প্রেরণা যুক্ত হলে অসম্ভব বলে বাঙালীর অভিধানে কিছুই নেই
সামর্থ্যবান যে সকল ধনী মানুষ শীতের মওসুমে বাসায় কিংবা অফিসে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে কাটান তাদের শীতের কষ্ট ততোটা অনুভব করার কথা নয় । তবুও বিধাতা সৃষ্ট বিকেক প্রত্যেকেরই আছে, যে যন্ত্র সব কিছুর বিচার করার ক্ষমতা সকলে রাখে । সুতরাং প্রত্যহ যে টাকা অপচয় করা হয় তার কিছু অংশ দিয়েও যদি একজন শীতার্ত মানুষে কষ্ট লাঘব করা যায় তবে তার চেয়ে প্রশান্তির আর কি হতে পারে ? কেউ যদি শীতের কষ্ট অনুধাবন করতে একান্তই ব্যর্থ হন তবে তাকে তীব্র শীতের রাতে মাত্র কয়েকট মিনিটের জন্য শীতবস্ত্রহীন হযে খোলা জায়গায় দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাই । আশা নয় বিশ্বাস, উপলব্ধি আসবে । সেটাই মানবতা যা অন্য মানুষকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে । বিশ্বাস করি, দেশের ধনী মানুষের চেয়েও শিক্ষার্থীদের মহৎ কর্মে উদ্যোগী হওয়ার আগ্রহ প্রবল । সুতরাং শিক্ষার্থীদেরকেরই সর্ব্রাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে । শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত শীতবস্ত্র আছে, সে অতিরিক্ত বস্ত্র দানের মাধ্যমেই তোমাদের দায়িত্ব শুরু হোক । তোমাদের দেখাদেখি সমাজের অন্ধমানুষগুলো এগিয়ে আসবে । যারা জীবনে কোন দূঃখী মানুষকে দান করার পরবর্তী অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হননি তারা একটি পোশাক দান করে দেখুন । শীতকষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষটির মুখ থেকে যে হাসি এবং অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে যে দোয়া বের হবে তার তুলনা ধরার কোন বস্তুর সাথে চলে না । সমাজে অনেকেই আছেন যারা দৈনিক নাস্তা কিংবা মোবাইল খরচ বাবদ হাজার হাজার টাকা খরচ করেন । তাদের কাছে হাজার হাজার টাকা চাইনা, মাত্র কয়েকটি টাকা দিয়ে একজন শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষকে শীতের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন । একার পক্ষে সম্ভব না হলে বন্ধুদের সহায়তা নিন । দান সংগ্রহ করতে গিয়ে কায়িক পরিশ্রমের জন্য আপনি হয়ত বিনিময় কিছুই পাবেন না তবে মানসিক প্রশান্তি নিশ্চয়ই পাবেন । সবার কাছে অনুরোধ, যে যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসি । দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, অন্তত এ বছর বাংলাদেশের কোন মানুষকে আসন্ন শীতের কষ্ট পেতে দেবনা । সেজন্য আমাদেরকে যত কষ্ট, ত্যাগ করতে হয় তার জন্য প্রস্তুত হই । প্রত্যেকেই যে যার অবস্থান থেকে প্রচার চালাই এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই । প্রতিটি মহল্লায় কমিটি গঠনের মাধ্যমে এগিয়ে আসি । শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষের তালিকা করে সে অনুযায়ী সাহায্য উত্তোলন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করি । মনে রাখতে হবে, নতুন কোন কাজ শুরু করতে গেলে সমাজ তাতে বাঁধার সৃষ্টি করবেই কেননা অতীত থেকে এটা সমাজের ধর্ম তবে সমাজ ভালো কাজের বাহবা দিতেও বেশি সময় নেয় না । ত্যাগ ভোগ করার মধ্যে প্রকৃত সুখ বিদ্যমান, ভোগেই কেবল সূখ দেয়না ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]
©somewhere in net ltd.