নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিসকালের ন্যায় মঙ্গলবার সকালের ঘুম ভাঙ্গতেই মোবাইল হাতে নিয়েছিলাম দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে । দেশের সর্বশেষ সংবাদ জানাতে টিভি কিংবা প্রিন্ট-পত্রিকার চেয়ে অনলাইন পোর্টালগুলো এবং ফেসবুক অনেকটা এগিয়ে । তবে ফেসবুকে সব সময় সত্য তথ্য পাওয়া যায়না । তবে একটু সচেতন হয়ে সংবাদের যাচাই-বাছাই করলে ফেসবুকের কল্যানেই দেশের সর্বশেষ অবস্থা দ্রুত জানা যায় । তাই বরাবরের মত কাক ডাকা ভোরের ফেসবুকেই ডুকেছিলাম । সেখানে প্রথম যে সংবাদটিতে চোখ আটকে গিয়েছিল সেটা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাত সোয়া তিনটার দিকে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা । দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা হামলা ঘটনা এখন নিত্যদিনকার সংবাদে পরিণত হওয়ায় পাঠের শুরুতে এ সংক্রান্ত খবর খুব বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম না । কিন্তু মোবাইল স্ক্রিনে দৃশ্যমান পৃষ্ঠার একটু নিচের দিকে চোখ বুলাতেই নিজের চোখকে নিজে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । মূহুর্তেই মনে হল আমার মস্তিষ্ক স্থির হয়ে গেছে । স্বাভাবিকভাবে কোন কিছুই ভাবতে পারছিলাম না । কয়েক মূহুর্তপর যখন স্বাভাবিক হলাম তখন চোখ কচলে আবারও সংবাদটি পড়লাম । দ্বিতীয়বার সংবাদ পড়ে মনে হল প্রথমবারে যা পড়েছিলাম তা ভূল ছিল না । শেষ রাতে যখন বাসের যাত্রীরা ভ্রমনের ক্লান্তিতে নিদ্রামগ্ন তখন দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমার আগুনে ঘটনা স্থলেই ৭ যাত্রী জীবন্ত দ্বগ্ধ হয়ে মৃত্যুর বরণ করেছে । আরও ১৭ জন দ্বগ্ধ হয়েছে তবে তাদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা আশংঙ্কাজন । আশংঙ্কজনকদের কারো কারো শরীরের ৮০ ভাগ পর্যন্তও পূড়ে গেছে । ঘুমন্ত মানুষগুলোর কেউ কেউ হয়ত রঙিন স্বপ্নে বিভোর ছিল আবার কেউ আধো আধো নিদ্রায়মাখা চোখে অপেক্ষার প্রহর গুনছিল কখন গন্তব্য আসবে আবার কেউ হয়ত কিছুটা দুঃশ্চিন্তায়ও ছিল । কিন্তু এমন পাশবিক আক্রমনে শিকার হয়ে জীবন দিতে হবে কিংবা জীবন্ত দ্বগ্ধ হয়ে অসহ্য জ্বালা সহ্য করতে হবে তা বোধহয় কেউ ভূলেও ভাবেনি । তাদের গন্তব্যেও পৌঁছা হয়নি কিংবা স্বপ্নের অপমৃত্যু হয়েছে বাসের মধ্যেই । প্রথম যে পোর্ট্রালটিতে সংবাদটি পড়েছিলাম সেটা দেশের জনপ্রিয় পোট্রাল হওয়ার পরেও সেটার প্রতি আস্থা রাখতে না পেরে বিভিন্ন যায়গায় খবরের সত্যতা খুঁজতেছিলাম । প্রতিটিতে যখন একই খবর দিয়েছিল তখন আর অবিশ্বাস করতে পারিনি । ক্ষনিকের জন্য ভূলেই গিয়েছিলাম মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কথা । যারা ঘুমন্ত মানুষকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে মারতে পারে তাদের মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে অন্তত আমার বিবেক সায় দেয়না । এমন জঘন্য কুকর্ম যারা করেছে সেই দোষীরা হয়ত কোন দিনই শাস্তির সীমায় আসবে না কিন্তু যাদেরকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হল তাদের দোষ কি ছিল-সেটার কৈফিয়ত কি কেউ কোনদিন দেবে ? আর কতগুলো সকাল এমন খবর দিয়ে শুরু হবে সে বিষয়ে দেশবাসী এখনও নিশ্চিত নয় কিন্তু আমাদের সকালের খবর তো এর উল্টো হওয়ার কথা ছিল । নতুন দিবাকরের বার্তা কি সংবাদ দেয়ার কথা ছিল আর কি পাচ্ছি । এভাবে আর কতদিন চলবে ? এমন ভয়ানক অনিশ্চয়তাযুক্ত পরিস্থিতিতে কি সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ বাস করতে পারে ? যেখানে জাগ্রত কিংবা ঘুমন্ত মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নাই সেখানে ন্যায়-অন্যায়ের আব্দার তুলব কার কাছে ? চৌদ্দগ্রামের এ ঘৃণিত হত্যাকান্ড নিয়েও হয়ত গতানুতিক রাজনীতির খেলায় মেতে উঠবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কিন্তু আহত কিংবা প্রিয় স্বজন হারানোদের স্বান্তনা দেয়ার জন্য শুদ্ধ মনে কেউ এগিয়ে আসবে না । এ ঘটনার জন্য কাকে/কোন দলকে দোষ দিয়ে নিজেই দোষী হয়ে যাই তার চেয়ে কাপুরুষের মত নিজের কপাল চাপড়ানো উত্তম । ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বলে একটা কথা তো সব যুগেই ছিল ! পরাজিতের মত বলা যাবে, ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে । ভাগ্যকে ঢাল বানিয়ে কিছুদিন বাধ্য হয়ে স্বান্তনা নেয়া যাবে হয়ত কিন্তু মনের পুঞ্জীবুঁত ঘৃণা ও ক্ষোভ কি কোনদিন মুছে দেয়া যাবে ? দেশে বর্তমানে মানুষ যেভাবে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে এভাবে কোন স্বাধীন দেশের মানুষ বাস করতে পারে বলে বিশ্বাস হয় না । গত ৬ জানুয়ারী থেকে শুধু পেট্রোলবোমার আঘাতে অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে ৩০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে । অন্যান্যভাবে আরও জন বিশেক । যে রাজনৈতিক স্বার্থের বলি এ মানুষগুলো হয়েছে এটাকে কি গণমানুষের স্বার্থের রাজনীতি বলার উপায় এরপরেও আছে ?
বিএনপির ডাকে টানা অবরোধ চলছে জানুয়ারীর ৬ তারিখ থেকে । সাথে খন্ডকালীন হরতাল তো আছেই । সরকার এবং বিএনপিজোটের মধ্যকার দ্বন্দ্বে সৃষ্ট সংঘাত সারা দেশকে কুরুক্ষেত্রে পরিণত করেছে । মানুষে মানুষে তৈরি হচ্ছে দূরত্ব । মানুষ মানুষের প্রাণ সংহার করতেও মূহুর্তকাল ভাবছে না । নিকট ভবিষ্যেতে যে রাজনৈতিক দল দু’টো সহমত পোষণ করবে তারও কোন ইতিবাচক লক্ষণ প্রতীয়মান নয় । যে যার অবস্থান থেকে হুমকি-ধমকি দিয়েই চলছে । অথচ তাদের দলাদলিতে পৃষ্ঠ হচ্ছে সাধারণ মানুষ । খেটে খাওয়া সম্বলহীন মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে । জনজীবনে নেমে এসেছে চরম অতিষ্ঠতা । তরুণ প্রজন্মসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে রাজনৈতিক ভীতি ও বিমূখতা । দু’দলের রাজনৈতিক মত-পার্থক্যের লড়াইয়ের মধ্যে যে সাধারণ মানুষগুলো পতিত হয়েছে তারা মুক্তির শত চেষ্টা করেও পরিত্রানের কোন দিক পাচ্ছে না । একদল আল্টিমেটাম দিচ্ছে অন্য দলকে দমনের লক্ষ্যে, অন্যদল আল্টিমেটাম দিচ্ছে ক্ষমতাধরদের পতনের জন্য । এমন মরণগাতী লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত অথচ সেদিকে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নাই । দেশের সাধারন মানুষ না বাঁচলে যে কাদের নিয়ে রাজনীতি হবে সে ভাবনা কারো মধ্যে নাই । ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে ধরা ও দখল করার প্রতিযোগিতায় সাধারণের প্রাণ যায় যায় । মানুষ পোড়া গন্ধ, কৃষকের আর্তনাদ, মজুরের চিৎকার, শ্রমিকের চোখের পানি, মানুষের ক্ষুধার জ্বালা আর সম্পদ ধ্বংসের মিছিল যেভাবে চলছে তাতে দেশের ভবিষ্যত যে কোন পথে নির্ধারিত হবে তা একমাত্র স্রষ্টাই ভালো জানেন । যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল তার কতটুকু এখন রক্ষা পাচ্ছে তার হিসাব মিলাতে খুব বেশি জ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না । মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিবেচনায় পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মধ্যে এখন খুব বেশি তফাৎ নাই । পাকিস্তানে প্রতিনিয়ত বোমা হামলায় ডজন ডজন আর বাংলাদেশে হালি হালি মানুষের জীবন যাচ্ছে । পার্থক্য শুধু এটুকুই, পাকিস্তানে যারা বোমা মারে তাদের অধিকাংশ আত্মগাতীয় হামলা চালানোয় নিজেরাও নিহত হয় আর বাংলাদেশে যারা বোমা হামলায় চালায় তারা পালিয়ে গিয়ে দ্বিতীয়বার হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিতে পারে; পার্থক্য শুধু এটুকুই ।
দেশের অন্য কিছু মানুষের মত আমিও টিভির সংবাদ দেখা প্রায় ভূলে গেছি । পুড়ে যাওয়া মানুষের আর্তনাদ, স্বজন হারানোদের চিৎকার আর রাজনৈতিক নেতাদের পরস্পরের প্রতি দেয়া আল্টিমেটাম সহ্য করার ক্ষমতা দেহ কিংবা মনে অবশিষ্ট নাই । পত্রিকা যেটুকু পড়ি তাতেও পুড়ে যাওয়া মানুষের ছবি কিংবা এ সংক্রান্ত সংবাদ সাধ্যমত এড়িয়ে চলি । ভূল বশতঃ চোখে পড়লে রাতে ঘুমাতে পারি না, ঘুমের মধে দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে জেগে উঠি । এভাবে আর কতদিন চোখকে বন্ধ রাখতে পারব, আর কত রাগ নির্ঘুম কাটবে ? আরও কতটি প্রভাতে পাখির ডাকের বদলে স্বজন হারানোদের চিৎকার শুণে ঘুম ভাঙবে ? স্বাধীন বাংলাদেশের এ কেমন ভয়াবহ চিত্র ! কোন স্বার্থে এবং কার স্বার্থে এমন রাজনীতি ? গণতন্ত্র কি এমন কথা বলে ? মানুষের জানমালের নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে তা সাধারণ মানুষের চেয়ে সরকারের ভালো জানার কথা । কিন্তু নিরাপত্তা কোথায় ? উদ্ভূত সমস্যা নিমিষেই সমাধান হবে সে আশা করি না তবে সমাধান সম্ভব বলে বিশ্বাস রাখি । আমাদের দেশটা যেন আমরাই ঘুছিয়ে রাখতে পারি । জাতি হিসেবে বাংলাদেশীরা প্রচন্ড আত্মমর্যদাশীল । আমাদের ভাগ্য-ভবিষ্যত অন্য কোন জাতি, রাষ্ট্র কিংবা সংস্থা নির্ধারণ করবে সে আশা কখনো করিনা কিংবা হুঁশ থাকতে এমনটা মেনে নিতেও পারব না । সুতরাং যারা দায়িত্বশীল তারা এগিয়ে আসুন । দেশের স্বার্থে ত্যাগের মনোবসনা করুন । ইতিহাস সব সময় জয়ীদের অমর করেনি বরং পরাজিতকেও বহুবার সম্মানের স্থানে আসীন করেছে । যেভাবে দেশ চলছে এভাবে একটি স্বাধীন দেশ চলার কথা নয় । শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না, পরিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসতে পারছে না, কর্মজীবি কাজে যেতে পারছে না-এভাবে দেশ চলে ? চিরশত্রুর মধ্যেও যেখানে সখ্যতা গড়ে ওঠে সেখানে কেন বাংলাদেশীদের মধ্যে এত বিভেদ থাকবে । রাজনীতিবিদদের লক্ষ্য হোক দেশের মানুষের শান্তি নিশ্চিত করা-এ শুভক্ষণ দেখার অপেক্ষায় দেশের কোটি কোটি মানুষ চাতকের মত চেয়ে আছে । মাত্র গুটি কয়েক মানুষের নির্ভরতায় এটা নিশ্চিত হবে । দেশের সকল মানুষের স্বার্থ রক্ষায় এমন কোন ঘোষণা আসুক যা দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি দূর করতে নির্ভূলভাবে কাজ করবে । প্রতিটি সকাল বয়ে আনুক সুসংবাদ । দূর হোক রাজনৈতিক অঙ্গনের তিমির রজনী । প্রত্যেকেই হোক প্রত্যেকের জীবন ও সম্পদের রক্ষক । শুধু স্বপ্নে নয় বাস্তবেও এমন সোনার দেশের কামনা করি । চিরকাল গর্ব ভরেই বলতে চাই, আমি বাংলাদেশী ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]
২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:০৮
মিতক্ষরা বলেছেন: "চিরশত্রুর মধ্যেও যেখানে সখ্যতা গড়ে ওঠে সেখানে কেন বাংলাদেশীদের মধ্যে এত বিভেদ থাকবে ।"
স্বার্থের সংঘাত।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫১
সুমন কর বলেছেন: প্রতিটি সকাল বয়ে আনুক সুসংবাদ । দূর হোক রাজনৈতিক অঙ্গনের তিমির রজনী । প্রত্যেকেই হোক প্রত্যেকের জীবন ও সম্পদের রক্ষক । শুধু স্বপ্নে নয় বাস্তবেও এমন সোনার দেশের কামনা করি । চিরকাল গর্ব ভরেই বলতে চাই, আমি বাংলাদেশী ।
ভালো বলেছেন।