নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে যারা গড়তে জানে তারাই তরুণ । তারুণ্য এমন এক শক্তি যার বিরুদ্ধে কখনো কোন শক্তি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে টিকতে পারে না । মানবজীবনে তারুণ্যের সময়টাকে স্বর্ণযুগ বললেও অনেক কম বলা হবে । পৃথিবীর সর্বত্র কেবল তারুণ্যে জয়জয়কার । তারুণ্য যেমন গড়তে জানে তেমনি ধ্বংস করে দিতে পারে মহাপ্রলয়ের রুপ নিয়ে । কবি-সাহিত্যিকদের সৃষ্টিতে তারুণ্যের শক্তি প্রতিধ্বনিত হয়েছে বহুবার । সকল প্রকার অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তারুণ্য কেবল প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত হয়না বরং সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে সত্য-ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার গুরুদায়িত্ব এরাই পালন করে । সমাজ সংসারের তারুন্যের শক্তি অদ্বিতীয় । দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম তরুণের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার-যাহার শক্তি অপরিমাণ, গতিবেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, তেজ নির্মেঘ আষাঢ় মধ্যাহ্নে মার্তন্ড প্রায়, বিপুল যাহার আশা, ক্লান্তিহীন যাহার উৎসাহ, বিরাট যাহার সাধ, মৃত্যু যাহার মুষ্টিতলে’ । প্রতিটি জাতির আশা আকাঙ্খার পুরোটা জুড়ে থাকে তরুণদের নিয়ে । কারণ এরা স্বপ্ন দেখতে জানে এবং দেখাতেও জানে । স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তরুণদের চেয়ে নিখাদ শিল্পী আর কে হতে পারে ? সমুদ্রের শক্তিশালী টেউয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কিংবা প্রবল বাতাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই তরুণদের আগমন । শত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও তরুণদের জয় রুখবে এমন সাধ্য কার ? যুগে-যুগে অত্যাচারীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তরুণরা শুধু তাদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলেনি বরং এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যা স্মরণ করে পরবর্তীতে অনেক শাসক অন্যায় করার সাহস পায়নি । হিমালয় পর্বতশৃঙ্গ জয় থেকে শুরু করে ইংলিশ চ্যানেল কিংবা আফ্রিকার আমাজনের গহীন জঙ্গলের এমন কোথাও কি বাকী আছে যেখানে তরুণের পদচিহ্ন অঙ্কত হয়নি ? সমর লড়াইগুলোর ইতিহাস অধ্যয়ণ করলে আজও তরুণের হুংকার কর্ণে কুহরে কম্পন তোলে । বিজ্ঞান, শিক্ষা, চিকিৎসা, খেলাধূলাসহ এমন কোন ক্ষেত্র এখনো আবিষ্কার হয়নি যেখানে তরুণরা সফলতার ছাপ না রেখেছে । এরা সকল যুগে সকল দেশে সকল সময় পাঞ্জেরীর ভূমিকায় ছিল, আজও আছে কিংবা ভবিষ্যতেও থাকবে ।
আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তরুণদের ভূমিকা সহস্রাব্দের পর সহস্রাব্দ স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে । বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে পালন করছি ভাষার মাস ফেব্রুয়ারী । বাংলাকে পেয়েছি মাতৃভাষা রুপে । পাকিস্তানী শোষকগোষ্ঠীর লাল চোখ উপেক্ষা করেও বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করেছিলাম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে । আজ যে বাংলায় লিখছি কিংবা অপরের সাথে যোগাযোগ করছি সেই বাংলাকে পরস্পরের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম হিসেবে পেতাম না যদি ’৫২ তরুণেরা দুর্বার সাহস নিয়ে পাকিস্তানীদের বুলেটের বিরুদ্ধে বুক পেতে না দিত । সেদিনও পূর্বপাকিস্তানের পক্ষে বাংলা ভাষাকে রক্ষার দাবীতে আন্দোলন কারীদের অনেকেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার পক্ষে যুক্তি দিয়েছিল । কিন্তু তারুণ্যের সে শক্তি কোন বাধাই মানে নি । যার ফলশ্রুতিতে ২১ ফেব্রুয়ারী শুধু বাংলাদেশী আর বাংলাদেশের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয় বরং রাষ্ট্রের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী এক যোগে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে । ’৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানে তৎকালীন তরুণ ছাত্রনেতাদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য । বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধে তরুণদের ভূমিক যদি ম্রিয়মান থাকত তবে নয় মাস কেন নয় বছরেও পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম সম্ভব ছিল না । বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ণের প্রধান ড. কামাল হোসেন যখন সংবিধান প্রণয়ণ কমিটির প্রধান ছিলেন তখন তার বয়স তরুণের কোঠাতেই ছিল । ডা. মিলন কিংবা নূর হোসেনদের তারুণ্যের ত্যাগেই গণতন্ত্র পেয়েছিল মস্রিণ চলার পথ । ’৯০ এ স্বৈরশাসক এইচএম এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তরুণদের ভূমিকার কথা আজও মানুষের মুখে মুখে বহুল উচ্চারিত বিষয় । বাংলাদেশের পক্ষে যতগুলো সুনাম অর্জন হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই তরুণদের হাত ধরে এসেছে । আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নাম মর্যাদার সাথে উচ্চারিত হয় কেবল তরুণদের কল্যানেই । ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশে আজ বিশ্বের বহু পরাশক্তিকে প্রত্যহ চোখ রাঙাচ্ছে কেবল তারুণ্যকে পুঁজি করে । বাংলাদেশের তরুণেরা আজ বিশ্বের অনেক দেশের তরুণদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শে পরিণত হয়েছে । তরুণরা ব্যবসায় ভালো করছে, শিক্ষায় সাফল্য পাচ্ছে, নব-নব আবিষ্কারে ভূমিকা রাখছে-আরও কতকি ? এ তরুণদেরকে ঘিরেই বাংলাদেশ স্বপ্ন বুণে । তরুণরাই একদিন বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারের আলোকিত করে তুরে ধরবে । ঘরে-বাইরে তরুণরাই জাতির রাহবারের ভূমিকায় থাকবে । নতুন আলোর দিশা পাইয়ে দিতে তরুণদের চেয়ে বেশি অবদান আর কে রাখতে পারে ? তরুণেরা নিত্য প্রভাবে জাগ্রত হয় নতুন সংকল্প নিয়ে, নব্য সৃষ্টির আশায় ।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট চলছে । রাজনৈতিক দ্বন্ধে দেশটা প্রায় ব্যর্থ হওয়ার পথে হাঁটছে । ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ দেশের প্রায় সবগুলো খাত প্রায় ধ্বংস হতে চলেছে । দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পর বিরোধী অবস্থানের কারণে দেশের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত । দিনের পর দিন মানুষের জীবনহানী ঘটছে । লাশের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে । প্রবীনরা ব্যক্তি স্বার্থে কিংবা দলীয় স্বার্থে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতেও ব্যর্থ । রাজনৈতিক দলগুলোও জনস্বার্থ ত্যাগ করে দলীয় স্বার্থের পুজারীতে পরিণত হয়েছে । টানা অবরোধ এবং সপ্তাহের পাঁচদিনের রুটিন মাফিক হরতালে দেশের কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে । তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়ণশীল একটি রাষ্ট্রে ক্ষতির পরিমান যদি এভাবে বাড়তেই থাকে তবে উন্নয়ণশীল থেকে দেশ অনুন্নতের পথে যাত্রা করতে কতক্ষন ? গোটা দেশটাকে যেন শ্মশানে পরিণত করা হয়েছে । মানুষ পোড়া গন্ধ নাসিকারন্ধ্রে প্রবেশের মাধ্যমে আফ্রিকার কোন অসভ্য জাতি হয়ত ইন্দ্রিয় সূখ অনুধাবন করতে পারে কিন্তু দূর্ভাগ্যের হলেও সত্য, বাংলাদেশের মত একটি সভ্য দেশেও এমনটা চলছে । আর্থিক ক্ষতি কিংবা আহত মানুষদের হিসাব না হয় বাদ দিলাম কিন্তু রাজনীতির নামে অপরাজনীতির ঘৃণ্য খেলায় এখন পর্যন্ত জীবন দিতে হয়েছে ৮৭ জনকে । নিহতের এ সংখ্যা কোথায় গিয়ে শেষ হবে তা বিধাতাই ভালো জানেন । আন্দোলনকারী কিংবা আন্দোলন প্রতিহতকারী-উভয়ের দাবী তারা সঠিক পথে আছে । সঠিক-বেঠিক হিসাব করার সময় এখন আর আছে বলে মনে হয়না বরং মানুষ হত্যার রাজনীতি বন্ধকরাই সবচেয়ে বেশি জরুরী হয়ে পড়েছে । পেট্রোলবোমার আঘাতে কিংবা বিনাবিচারে মানুষ হত্যার রাজনীতি যেকোন মূল্যে বন্ধ করতেই হবে । ইতিহাসে যে তরুণদের এত সুনাম সেই তরুণদেরকে দেশের স্বার্থে আরেকবার জাগতে হবে । প্রবীনরা যেখানে ব্যর্থ হয়েছে সেখান থেকেই শুরু করতে হবে তরুণদেরকে । এটাই যে তরুণদের বৈশিষ্ট্য । তরুণ্যের শক্তিকে যেন কেউ অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য তাদের হতে হবে আরো সচেতন । বিভিন্ন মিডিয়ায় পেট্রোলবোমা হামলা কিংবা অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িত হিসেবে যাদের নাম এসেছে তাদের প্রায় সকলেই তরুণ । তরুণদের এমন পদস্খলন মেনে নেয়া যায়না । তরুণদেরকে দেশের স্বার্থে একতাবদ্ধ হতে হবে । রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের মনোভাব নিয়ে তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে । রাজনৈতিক সংকট নিরসন করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বুকভরা সাহস নিয়ে আল্টিমেটাম দিতে পারে একমাত্র তরুণেরা । মনে রাখতে হবে, এ দেশটা তরুণদের । কোন রাজনৈতিক দল দেশের মানুষকে জিম্মি করে কিংবা দেশের সর্বনাশ করে রাজনীতির নামে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করবে তা মেনে নিলে তরুণদের তারুণ্যের শক্তির কবর হয়ে যায় । তরুণদের কোন দল থাকতে পারে না । তারুণ্যের শক্তি সকল সময় ন্যায়ের সাথে সংগ্রামের পথে । কাজেই দেশের চলমান সংকটে তরুণদেরকে পাঞ্জেরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে । তা একবার নয় বরং বার বার ।
আমাদের জাতীয় কবি সুন্দর করে বলেছিলেন, ‘সকল কালে সকল দেশে সকল লাভ লোভকে জয় করেছিল তরুণ । ওগো বাংলার তরুণের দল-ওগো আমার আগুন খেলার নির্ভীক ভাইরা! ঐ দেখ লক্ষ অকালমৃতের লাশ তোমার দুয়ারে দাঁড়াইয়া ! তারা প্রতিকার চায় । তোমরা ঐ শকুনির দলে নও, তোমরা আগুনের শিখা, তোমাদের জাতি নাই । তোমরা আলোর, তোমরা গানের, তোমরা কল্যানের । তোমরা বাহরে এস এই দুর্দিনে তাড়াও ঐগো ভাগাড়ে পড়া শকুনির দলকে’ । দেশের দুঃসময়ে দেশের প্রতিটি তরুণকে হতে হবে তেজ-প্রদীপ্ত বীর । দেশের ভাগ্য যেন ব্যর্থদের কাতারে না হয় । ও তরুণেরা ! জাতি তোমাদের পাণে নিষ্পলক নেত্রে তাকিয়ে আছে । কিছু একটা কর । এ থেকে পরিত্রানের রাস্তা তোমাদেরকেই বের করতে হবে । তারুণ্যকে এগিয়ে নেওয়ার এটাই সুবর্ণ সুযোগ । বিদেশীদের মাধ্যমে নয় বরং এদেশের সকল সমস্যার সমাধান যেন তরুণদের মাধ্যমেই হয় তার দিগন্ত উম্মোচিত হোক । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত আমরাও বলতে চাই, ‘ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা, ওরে সবুজ ওরে অবুঝ/আধ মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’ ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
www.facebook.com/raju69mathbaria/
©somewhere in net ltd.