নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গোটা দেশ যেন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে । জল, ডাঙ্গার কোথাও বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা নাই । ছোট বেলায় শুনতাম, মানুষের জন্য জলে কুমিরের এবং ডাঙ্গায় বাঘের ভয় । ছোটবেলার সে ভয়ের কথা আজও অন্তরে লালিত হচ্ছে তবে কোথাও কুমির কিংবা বাঘের ভয় নাই বরং ভয় আরও হিংস্র কিছুর । জল ও ডাঙ্গার দুই ভয়ানক হিংস্র জানোয়ারের স্থান দখল করিয়াছে সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব । স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টির দিন তো অনেক আগেই শেষ হয়েছে । বর্তমানে মানুষের মৃত্যুর অস্বাভাবিকতার দৃশ্যও মারাত্মকভাবে শিউরে ওঠার রসদ বহন করে । যমদূত বোধহয় বাংলাদেশের অলি-গলি খুব ভালোভাবে নখদর্পণে নিয়াছে । কোথায় কখন কাকে বেঘোরে প্রাণ দিতে হচ্ছে তা আন্দাজ করার সাধ্যও কি এ জাতির অবশিষ্ট আছে ? মৃত্যু চিরন্তন সত্য তাই বলে কি মানুষকে এভাবে প্রাণ দিতে হবে ? স্বাভাবিক মৃত্যু আর হত্যার মধ্যে যে বিস্তর পার্থক্য তা মানুষ ভূলতে বসেছে । দেশে যে সংখ্যক মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয় তার চেয়ে ঢের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় অস্বাভাবিকভাবে । অস্বাভাবিক মৃত্যুর তো ধরণ আছে কিন্তু এখন যেভাবে মানুষকে প্রাণ দিতে হচ্ছে তা অস্বাভাবিকতার চরমে । মানুষ পালিয়ে বাঁচতে চাইলেও সে সাধ্য নাই । পালিয়ে যাবে কোথায় ? যে বাহনে পালাবে সে বাহন প্রাণ হরণ করছে । নৌ ও সড়ক দূর্ঘটনায় হত্যা, কথিত আইনগতভাবে গুলি করে হত্যা, অন্যায়ভাবে হত্যা, পুড়িয়ে হত্যা, পানিতে চুবিয়ে হত্যা, চিকিৎসার নামে হত্যা কিংবা ব্যক্তি আক্রোশে হত্যাসহ নানা ধরণের হত্যার নামে মানুষের জীবন কেড়ে নেয়া হচ্ছে । পিঁপড়ার প্রাণের মূল্য থাকতে পারে কিন্তু মানুষের প্রাণের কোন মূল্য নাই-এই অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে প্রাণনাশের মচ্ছব । পত্রিকা কিংবা টিভির পর্দায় যে প্রতিনিয়ত কত মানুষের অস্বাভিক মৃত্যুর কথা আসে তা গুণে শেষ করা যায় না । সকল অস্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্যেও কিছু কিছু মৃত্যুর ভয়াবহতা শুনলে আঁৎকে উঠতে হয় । এ সকল অস্বাভাবিক মৃত্যু এড়ানো সম্ভব অথচ সে ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ নাই । যখন কোন দূর্ঘটনা ঘটে তখন প্রশাসনের উচ্চ পরর্য্যায় থেকে সর্বত্র হই চই রব ওঠে কিন্তু দিনের আলো অস্তমিত যাওয়ার মতই সকল কিছু সময়ের চাদরে ঢাকা পড়ে যায় । এ যেন, ‘ডুবিতেছে তরী, মরিতেছে মানুষ, কার কি আসে যায়’ অবস্থা । প্রতিটি দূর্ঘটনার তদন্তের নামে কত শত কমিটি, উপকমিটি গঠন হয় কিন্তু কাজের কাজ হয় খুব সামান্যই । বরং দিনে দিনে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মিছিলে লাশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে । প্রতিদিনই যেন প্রতিযোগিতা হয়, গত কালের চেয়ে আগামী কাল লাশের সংখ্যা বেশি হতেই হবে । ধর্মমতে, মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করলে মানুষ সৎকাজে উদ্বুদ্ধ হয় বলে মতবাদ প্রচলিত আছে তাই বলে এভাবে মৃত্যুর কথা স্মরণে রাখতে হবে ? দেশের মানুষকে যদি এমনি করে প্রতি নিয়ত মৃত্যু নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় তবে প্রত্যেকটি মানুষ মারাত্মকভাবে হার্টের অসূখে আক্রান্ত হবে-এতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নাই ।
প্রতিনিয়ত যাদেরকে অস্বাভাবিক মৃত্যুর স্বাক্ষী হতে হয় তাদেরকে দু’পাঁচ জনের মৃত্যুর সংবাদ বিচলিত করতে পারে না । তবে সংখ্যা যখন অনেক বড় হয় তখন সেটা নিয়ে মানুষ স্বভাবতই চিন্তিত হযে পড়ে এবং এ থেকে মুক্তির জন্য রাস্তা খুঁজে । পথ খুঁজলেই কি পথ পাওয়া সম্ভব । বড় বড় দূর্ঘটনাগুলোর ঘটার মধ্যবর্তী সময়ে মানুষের স্মৃতি থেকেও এসকল দূর্ঘটনার ভয়াবহতা মুছে ফেলতে চায় কিন্তু সেটা সম্পুর্ণভাবে সম্ভব হয়ে ওঠে না । একটি বৃহৎ দূর্ঘটনার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেকটি দুর্ঘটনা স্তব্ধ করে দেয় গোটা জাতির সুখ স্বপ্নকে । গত ২২ ফেব্রুয়ারী পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া যাওয়ার পথে শতাধিক যাত্রী নিয়ে এমভি মোস্তফা-৩ ডুবে যায় । বেলা ১১ দিকে একটি সারবাহী কার্গো যাত্রীবাহী লঞ্চটিকে ধাক্কা দিলে এ মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটে । লঞ্চের ছাদে যাত্রা করায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ভাগ্যক্রমে শুধু ছাদের যাত্রীরাই প্রাণে বেঁচে যায় । লঞ্চের ভিতরে যারা ছিল তাদের খুব কম সংখ্যকই বাঁচতে পেরেছে । এ দুর্ঘটনা থেকে এখন পর্যন্ত ৭৮ টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে । সংখ্যাটি আরও বাড়বে তাতে সন্দেহ নাই । লঞ্চ দূর্ঘটনা এদেশের নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে । এমন কোন বছর নাই যে বছর একাধিক লঞ্চ দূর্ঘটনায় শতাধিক মানুষকে প্রাণ দিতে না হয় । বেসরকারী সংস্থার জরিপের তথ্যানুযায়ী ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারীর একটি দূর্ঘটনাসহ গত ২১ বছরে অর্থ্যাৎ ১৯৯৪ সাল থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের সর্বশেষ এমভি মোস্তফা-৩ দূর্ঘটনা পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে ৬৫৯টি লঞ্চ দূর্ঘটনা ঘটেছে । যাতে মারা গেছে প্রায় ৬ হাজার ৬’শ লোক । আর দূর্ঘটনার পর নিঁখোজ আছেন প্রায় ১৫০০ লোক । তবে যারা নিঁখোজ আছে তাদের প্রায় সকলেই মারা গেছেন বলে ধরে নেয়া যায় । এসব লঞ্চ দূর্ঘটনার কবলে পরে নিশ্চিহ্ন হয়েছে প্রায় চারশতাধিক পরিবার । আর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে প্রায় ৬৬৮টি পরিবার । তবে সরকারী তথ্যানুযায়ী গত ২১ বছরে প্রায় ৩৮৯টি দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছে প্রায় দুই হাজার ৯০০ জন এবং নিঁখোজ আছে প্রায় ৬০০ জন । সরকারের দেয়া তথ্যানুযায়ী বিভিন্ন সময় লঞ্চ দূর্ঘটনার পর উচ্চপর্যায়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । তবে আশ্চার্যের বিষয়, এ সকল কমিটির অধিকাংশই তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি । তবে যে সকল তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তাদের সে প্রতিবেদন অনুযায়ী কার্যত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি । তদন্ত প্রতিবেদনে লঞ্চ দূর্ঘটনার জন্য দায়ী যে কয়েকটি কারন চিহ্নিত হয়েছে তা হল- নৌযানের ত্রুটিপূর্ণ নকশা প্রণয়ন, অদক্ষ চালক, অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য বোঝাই এবং আবহাওয়া সতর্কতা না মানা । আবার বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, নৌযানে জীবনরক্ষাকারী পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট কিংবা লাইফগার্ডও থাকে না । তদন্ত প্রতিবেদনে নৌ-দূর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে করা সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই কম । বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রনালয় থেকে পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর হয়নি । অথচ অন্য সকল কিছুর চেয়ে মানুষের জীবনর রক্ষায় বেশি গুরুত্বারোপ করা উচিত ছিল কিন্তু তা হয়নি ।
সড়ক দূর্ঘটনায় মানুষের জীবনহানীর সংবাদ এখন রুটিনে পরিণত হয়েছে । বাংলার মাটি থেকে এমন কোন দিন কিংবা রাত অতিক্রম করে না যেদিন একাধিক সড়ক দূর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর সংবাদ না আসে । প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে শতাধিক লাশ । গত ৫০ দিন ধরে বিএনপির ডাকে টানা অবরোধ এবং সপ্তাহে ৫ দিন রুটিন করে হরতাল পালিত হচ্ছে । মানুষ ভেবেছিল, হরতাল অবরোধে সড়ক দূর্ঘটনার সংখ্যা কমে যাবে । কিন্তু ভাবনার সাথে বাস্তবতার মিল হয়নি । হরতাল, অবরোধের মধ্যেও প্রতিনিয়ত অনেক মানুষকে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ দিতে হয়েছে । বাংলাদেশে জনসংখ্যার মত করে প্রতিদিন যানবাহন বাড়ছে । যানবাহন বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূর্ঘটনা । সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন লাশের মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন লাশ । গত কয়েক বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যে সংখ্যক মানুষ মারা গেছে এত অধিক সংখ্যক মানুষ উন্নত বিশ্বের কোন কোন দেশে রোগাক্রান্ত হয়েও হাসপাতালে ভর্তি হয় কিনা সন্দেহ ? সম্প্রতি বাংলাদেশে সড়ক দূর্ঘটনার হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে । মহাসড়ক থেকে শুরু করে আঞ্চলিক সড়কেও দুর্ঘটনায় প্রতিদিন অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন । সংবাদপত্র কিংবা অন্য মিডিয়ায় দূর্ঘটনার সকল খবর না আসার ফলে দুর্ঘটনায় মৃত্যের প্রকৃত সংখ্যা অজানাই থেকে যায় । তবে বিভিন্ন বাঁধা উৎড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যের যে সংখ্যা জানা যায় তা আঁতকে ওঠার জন্য যথেষ্ট । পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের হিসাবে, গত ১৫ বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭০ হাজার মামলা হয়েছে । বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়কে মৃত্যু হয় ১২ হাজার মানুষের । সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম । গত পাঁচ বছরে যানবহনের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন হয়েছে । বেসরকারি সংস্থা ব্রাক ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনার ২৮ ভাগ ঘটেছে মহাসড়কে গড়ে ওঠা বাজারে, ১৮% সড়কের মোড়ে । বেসরকারী সংস্থা প্রদত্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন মানুষ মারা যায় অর্থ্যাৎ প্রতিবছর কেবল সড়ক দূর্ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার ৯৫০ জন মানুষ মারা যায় । তবে সরকারী হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা কিছু কম । বিআরটিএ প্রদত্ত তথ্য মতে, দেশে প্রতিদিন ১৬ জন মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় অর্থ্যাৎ প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার ৮৪০ জন মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় । প্রতিবেদনে দুর্ঘনার জন্য বেপরোয়া গাড়ি চালানো ব্যক্তিদের শাস্তি না হওয়া, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ট্রাফিক ব্যবস্থার দূর্বলতাসহ ৯ কারনকে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
বিএনপির আহুত অবরোধ ও হরতালে গত ৫১ দিনে ১০৬ জন মানুষ নিহত হয়েছে । নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ দুর্বৃত্তদের নিক্ষেপকৃত পেট্রোলবোমার আঘাতে দ্বগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছে । আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচার বহির্ভূতভাবে কথিত বন্দুক যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ৩৩ জন । প্রত্যহ কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেই চলছে । দেশে বিভিন্নভাবে মানুষ হত্যার উৎসব চলছে । ২৩ ফেব্রুয়ারী উদ্ধার হয়েছে চারটি মরদেহ । আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে তারা গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে । অথচ নিহত চারজনের শরীরে ৫৬ টি বুলেটের চিহ্ন দেখা গেছে বলে মিডিয়া প্রকাশ করেছে । দেশে যে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নাই তা প্রতীয়মান হয় গত বছরের শেষ দিকে প্রকাশিত বেওয়ারিশ লাশের পরিসংখ্যানে । আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মতে, প্রতিবছর শুধু রাজধানীতেই গড়ে দেড় হাজার বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া যায় । এ সংস্থাটিকে প্রতিদিন গড়ে ৪টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করতে হয় অর্থ্যাৎ মাসে প্রায় ১২৫টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করতে হয় । দেশের সর্বত্র মিলছে লাশ । প্রতিনিয়ত খাল, বিল, নদী, রেললাইনের কাছে, জঙ্গলে পাওয়া যাচ্ছে অসংখ্য মৃতদেহ । আবাসিক ভবন, রাস্তা, ড্রেন, গর্তসহ কোথাও যেন লাশের কমতি নাই । শুধু এ সকল লাশের নাম-পরিচয় মিলছে না । পরিসংখ্যান বলছে, সারাদেশে ২০০৬ সালে ২ হাজার ৯৯ টি, ২০০৭ সালে ২ হাজার ২৫৯টি, ২০০৮ সালে ১ হাজার ৮৬৭টি, ২০০৯ সালে ১ হাজার ৯৮১টি, ২০১০ সালে ১ হাজার ২০৪টি, ২০১১ সালে ১ হাজার ১৯২টি, ২০১২ সালে ১ হাজার ২৪৭টি, ২০১৩ সালে ১ হাজার ৪৩০টি এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর অর্থ্যাৎ মাত্র নয় মাসে প্রায় ১ হাজার বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয়েছে ।
এভাবে আর কত দিন ? আর কত লাশের বোঝা বইতে হবে স্বজনকে ? আর কত জীবন অকালেই পৃথিবীর বৃন্ত হয়ে ঝড়ে যাবে অনাকাঙ্খিত লঞ্চ ও সড়ক দূর্ঘটনায় ? পেট্রোল বোমার আঘাত কিংবা কথিত বন্দুক যুদ্ধে জীবন হারানোদের জীবনের কি কোন মূল্যই নেই ? বন্দুক যুদ্ধের মাধ্যমে যাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে ওরা অপরাধী কিংবা সন্ত্রাসী হলেও অন্তত বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হোক । ন্যায় বিচার পাওয়া প্রত্যেকের মৌলিক অধিকারের আওতায় পড়ে । চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে হত্যা করা হলেও ততোটা সমালোচনা হয়না কিন্তু সামান্য রাজনৈতিক কারণ কিংবা ব্যক্তিগত ক্ষোভে একজন মানুষের জীবন সাঙ্গ করে দেওয়াকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহন করা সত্যিই বেমানান । আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে মারাত্মকভাবে সোয়াইফ্লু আক্রমন করেছে । সেখানে এ যাবৎ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৮৪১ জন নিহত হয়েছে এবং ১৪ হাজার ৫’শ এর অধিক আক্রান্ত হয়েছে । কাজেই ভারতের সাথে আমাদের সীমান্তবর্তী স্থানগুলোতে কড়া পাহারা বসানো হোক । কোন অবস্থাতেই যেন ভারত থেকে কোন মানুষ পরীক্ষা ব্যতীত আমাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে । আমাদের দেশে যদি সোয়াইনফ্লু বিস্তার লাভ করার সুযোগ পায় তবে সকল দূর্ঘটনায় প্রাণহানীর চেয়ে এটা আরও ভয়াবহ মহামারীতে রূপ নেবে । কাজেই সাবধানতার বিকল্প কিছু নাই । আমরা চাই না, এদেশের কোন মানুষ অস্বাভাবিকভাবে প্রাণ হারাবে । সকলের জীবনের নিরাপত্ত চাই । স্বাভাবিকভাবে চলার নিশ্চয়তা চাই । সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে কিংবা অন্যকোনভাবে আর কোন জীবন যেন অকালেই ঝড়ে না যায় এবং আর কোন বাবা-মা-স্ত্রী-ভাই-বোন-সন্তান যেন আপনজন হারা না হয়-এটুকুর অন্তত গ্যারান্টি রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে । এমভি মোস্তফা-৩ থেকে লাশ উত্তোলন করার দৃশ্য যখন এদেশের মানুষ দেখেছে তখন কারো চোখের পানি কোন বাঁধ মানে নি । নিহত সে মানুষগুলো শুধু তাদের স্বজনদের জন্য বোঝা নয় বরং দেশের সকল মানুষের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে । যে বোঝার ভার বইতে বইতে দেশবাসী ক্লান্ত । কয়েক মিনিট পূর্বেও যে মানুষগুলো হেসে-কথা বলে কাটিয়েছে তারা যখন পানির নিচে আটকা পরে প্রাণ দিয়েছে তখন কি আমাদের ব্যর্থতাকে অভিশাপ দিয়ে যায়নি ? মাঝে মাঝে মনে হয়, এগুলো তো লঞ্চ ডুবি নয় বরং বাংলাদেশের ডুবি ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
facebook.com/raju69mathbaria?
©somewhere in net ltd.