নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুলাঙ্গারদেরকে ঘৃণার ভাষা কি হওয়া উচিত ?

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:৫০

মাঝে মধ্যে কিছু কিছু সংবাদ, যে সংবাদগুলোকে বিশ্বাস করতে গিয়ে আমাকে এমন সংশয়ের মধ্যে পতিত হতে হয় যার কারণে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য অন্যের সাহায্যের ওপর নির্ভর করে বসি । হুঁশে নাকি বেহুঁশে-তা নির্ধারণ করতেই অনেকটা সময় কেটে যায় । হিসাব মিলাতে পারিনা, কোন সভ্যতায় বাস করছি । সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের সাথে বাস করছি নাকি কোন অসভ্য জানোয়ারের সাথে ? অসভ্য, হিংস্র কিংবা বিষধর জানোয়ারগুলোকও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সভ্য, শান্ত এবং উপকারী জীবে পরিণত করা গেলেও মানুষ কেন দিন দিন উল্টো পথে ছুটছে ? আফ্রিকার আমাজনের গহীন অরণ্যের জানোয়াগুলোও সভ্যতার আলোর ছোঁয়া পেয়ে মানুষের উপকারী বন্ধুতে পরিণত হয়েছে অথচ সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীবের কেন এমন অধঃপতন ? বুদ্ধিবৃত্তিক জীব হিসেবে যে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষকে অন্যান্য জীব থেকে স্বয়ং স্রষ্টা শ্রেষ্ঠতর স্থাণে আসীন করেছে সেই মানুষদের আচরণ কেন আদিম যুগের বর্বরতাকেও হার মানাবে ? মানুষের এমন কু-আচরণে হয়ত মানুষরূপী কিছু জানোয়ারকে অবাক করেনা কিন্তু যাদের বোধশক্তির সামান্য পরিমাণও অবশিষ্ট রয়েছে তারা স্থির থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করিনা । জনসংখ্যার চাপে অতিরিক্ত নগরায়ণের প্রভাবে মানুষ মাত্রাতিরিক্ত বনাঞ্চল ধ্বংস করার কারণে জানোয়ারদের আবাসভূমি সংকীর্ণ হওয়ায় দিন দিন জন্তু-জানোয়ারদের একেকটি প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটছে । তবে কি জানোয়ারদের বিলুপ্তির মাধ্যমে জানোয়ারের জানোয়ারসূলভ বৈশিষ্ট্য দিন দিন মানুষের ওপর ভর করছে ? আজও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে বসবাসরত মানুষের মধ্যে আধা-এক শতাংশ ছাড়া সবাই উন্নত চরিত্রের । এ দাবীর পর একপক্ষ স্বাভাবিকভাবেই বলে বসবেন, দু’চারজন খারাপ হতেই পারে । ভালো খারাপের সংমিশ্রন্রেই তো সমাজের সৃষ্টি । আমার মূল আপত্তিটা এখানেই । ভালো হলে তার সীমা কতটুকু কিংবা খারাপ হলে তাকে কতটা জঘণ্য হতে হবে ? আমার ছোট বেলা কিংবা পূর্বপুরুষদের ছোটবেলা থেকে গতানুগতিকভাবে শুণে আসছি/আসছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’ । এ তত্ত্বের প্রয়োগ এবং বাস্তবতা কোথায় ? নাকি এটাও নিছক কথার কথা ।

সকল কিছুর পরেও বলা হবে, আশায় মানুষ বাঁচে । মানুষের পরিবর্তন হবে-অসভ্যতা থেকে সভ্যতায়, অন্ধকার থেকে আলোতে । আবারও মিলাতে পারিনা, পৃথীবি অর্থ্যাৎ সভ্য ধরণীর যা বয়স তা কি মানুষকে সভ্য করার জন্য যথেষ্ট সময় নয় ? যদি যথেষ্টেই হয় তবে কেন, আজও নারী নিরাপত্তা পেল না ? পশুসূলভভাবে কেন নারীকে ভীরের মধ্যে পেয়ে তার শরীর ছুঁয়ে দিতে হবে ? এসব তো জানোয়ারের বৈশিষ্ঠ্য । তবে কি আমরা আজও পশুত্ব থেকে মুক্তি পাইনি ? বোধহয় পশুর সাথেও এমন নরপিচাশদের তুলনা চলে না । একটি পশু অনেকগুলো কারণেই পশুসূলভ আচরণ করে । কিন্তু মানুষ দাবী করেও কি কেউ পশুর মত আচরণ করতে পারে ? হোক সে গোপনে কিংবা সুযোগে, আঁধারে কিংবা বাঁদাড়ে ? যেখানে বিবেক বিচারক হতে পারেনি সেখানে কি লাভ হল সভ্যতার ঝান্ডা উড়িয়ে ? এর চেয়ে তো আদিমযুগটাই ভালো ছিল ! অন্তত বিবেককে কৈফিয়ত দিতে হত না । প্রগতিশীল রাষ্ট্রের একজন প্রগতিমনা ভার্চুয়াল জগতের বন্ধু একদিন ঠাট্টাচ্ছলে বলেছিলেন, তোমরা এবং তোমাদের দেশ কভূ উন্নতি করতে পারবে না ? কারণ জিজ্ঞাসা করতেই বলেছিল, তোমাদের দেশের মানুষ খুব রক্ষণশীল । রক্ষণশীলতার অনেকগুলো উপকারী দিক উপস্থাপন করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমরা ভালো আছ নাকি আমরা ? বন্ধুটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে অকপটে সোজাসুজি বলেছিল, আমাদের চেয়ে তোমরা অনেক ভালো আছ এবং এই নিয়মগুলো আঁকড়ে ধরে যদি এগুতো পার তবে তোমরাই হবে বিশ্বের শ্রেষ্ট মানুষ । খুব ভালো লেগেছিল আমাদের প্রতি ওর শুভ কামনার ধরণ দেখে কিন্তু পহেলা বৈশাখ দেশের শ্রেষ্ঠ ‍বিদ্যাপিঠগুলোতে যা ঘটেছে তা বিবেকবান মানুষকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় কি ?

দেশের সর্বোচ্চ ও শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ হিসেবে ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হবে । জ্ঞানী এবং জ্ঞানের প্রতি সামান্যতম অনুরাগীদের জন্য পৃথীবির বুকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ স্থান হিসেবে অবশ্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বীকৃত । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা এবং নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এটাকে পার্কে পরিণত করা এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে পহেলা বৈশাখে আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্র্রা কিংবা মেলার বৈধতা-অবৈধতা নিয়ে তর্কে যাওয়ার সামান্যতম ইচ্ছা নাই । বাঙালীর জাতীয় সত্ত্বার সাথে পহেলা বৈশাখ পালন এবং এ সংশ্লিষ্ট উৎসব উদযাপন মিলে মিশে একীভূত হয়েছে । অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক মিলন মেলার উৎসব হিসেবে বছরান্তে এটির জনপ্রিয়তা এবং ব্যাপকতা বেড়েই চলছে । তরুণ-তরুণ, যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-ভনিতারাও ১৪২২ বঙ্গাব্দের বৈশাখী মেলার প্রাণের উৎসবে অংশগ্রহন করেছিল । এবাবের পহেলা বৈশাখের বাংলাদেশ যেন কিছুটা ভিন্ন মূর্তি ধারণ করেছিল । তবে দিবাকরের আধিপত্য হারিয়ে যাওয়ার সাথে পহেলা বৈশাখের পরিসমাপ্তিতে এমন কিছু ন্যাক্যারজনক ঘটনা ঘটেছে যা মানব সভ্যতাকে লজ্জিত করেছে । এ অপরাধের সাথে জড়িত কুলাঙ্গারদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের উপযুক্ত কোন ভাষা আছে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না । কোন কুৎসিত উপমাই যেন এমন কুলাঙ্গারদের জন্য যথেষ্ট নয় । এরা শুধু জন্মদাত্রীর স্বজাতিকেই অপমান করেছে বলে ক্ষান্ত হব না বরং বলব, এরা লঙ্ঘিত করেছে মানব সভ্যতার দীর্ঘ পথ-পরিক্রমার ইতিহাসকে । লজ্জিত করেছে গোটা মানবসমাজকে । কারা এ কাপুরুষ ? তাদেরকে চিহ্নিত করা কি জরুরী নয় ? এ অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির মুখোমুখি করতে না পারলে আইনের প্রয়োজনীতা থাকবে কেন ? কেন দরকার থানা-পুলিশ, আদালত-বিচারক ? ঢাবির সে ঘটনাটির বয়স চারদিন পার হলেও প্রশাসনের ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে, তারা আক্রমনকারী নয় বরং আক্রান্তের ওপরেই গোস্বা করেছে । অবশ্য তাদের স্বপক্ষেও যুক্তি আছে । প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছিল, বিকাল পাঁচটার মধ্যেই পহেলা বৈশাখের সকল আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করতে হবে । কিন্তু বছর ঘুরে যে দিনটি মাত্র একদিনের জন্য উপস্থিত হয় সে দিনে ধরা-বাঁধা নিয়ম কতটা চলে ? শুধু আলোতেই নয় বরং আঁধারের নিরাপত্তাও তো রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রবাসীর পাহারাদরদেরকে নিশ্চিত করতে হবে ।

ভীরের মধ্যে মেয়েদের শরীরের যারা হাত দিতে পারে, পরিধানের বস্ত্র টেনে ছিঁড়ে নিতে পারে, সমাজে তাদেরকে মানুষ হিসেবে পরিচিত করাতে হবে-এ মতের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমার মত নাই । সিসি টিভি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ঢাবি’র একটি স্থানে অপরাধীরা অপরাধ করে চারদিন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে আছে, কেন জানি এটা একটু বেমানান । ছাত্র ইউনিয়নের যে ছেলেটি আক্রান্ত মেয়েদের উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে, তিনি বলেছে অপরাধীদের মধ্যে ৫৫-৬০ বছরের একজন বৃদ্ধও ছিল । অনেকে বয়সটাকে একটা মাপকাঠিতে ফেলে কিছুটা অবাক হওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমার তেমনটা মনে হয়নি । কুকুরের বয়স বাড়লে কি ঘেউ-ঘেউয়ের শব্দে পরিবর্তন আসে ? অত্যন্ত কষ্টের সাথে লজ্জা পেয়েছি, যখন পত্রিকায় পড়লাম জাবি ও জবিতেও নারীদের ওপর যৌন নির‌্যাতন করা হয়েছে । ১০ বছরের একটি মেয়েও রক্ষা পায়নি । অবশ্য কষ্ট ও লজ্জার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে, যখন টিভিতে দেখলাম একটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের পাঁচ নেতা-কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নারী নির‌্যাতনের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করেছে । জাবি এবং জবিতে নারী নির‌্যাতনের জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়েছে । কয়েকবছর পূর্বে ইংরেজী নববর্ষে টিএসসিতে বাঁধন নামের এক যুবতীর বস্ত্র হরণের ঘটনায় দেশব্যাপী যেমন সমালোচনার ঝড় উঠেছিল তেমনি আবারও চলতি বাংলা সনের শুরুর দিনের ঘটনা সভ্যতার মুখোশে কুঠারাঘাত করল । শুধু ঢাবি, জাবি কিংবা জবিতেই নয় বরং দেশের আরও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক স্থানে এমন ঘটনার স্বাক্ষী অনেক রমণীকেই হতে হয়েছে । শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠগুলোর অবস্থা যদি এমন হয় তবে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সারির বিদ্যাপিঠের কথা কি আলাদ করে বলতে হবে ? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখে বাংলা বর্ষবরণে যোগ দিতে এসে যে নারীরা চরম লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে তারা সাহস করে, সমাজের বাঁধা পেড়িয়ে তাদের অভিযোগের কথা মুখে উচ্চারণ করতে পেরেছে কিন্তু অন্যান্য স্থানের নারীদের অনেকেই হয়ত অপমানের কথা লজ্জায় মুখে উচ্চারণের সাহস যোগাতে পারেনি ।

ঘুনেধরা এই সমাজে বাস করছি বলে, দু’টো পথের যে কোন একটি বেছে নিতে হবে । হয় অসভ্যদের সাথে মিলেমিশে এককার হতে হবে নয়ত অসভ্যদেরকে সভ্যতার আলোতে তুলে এনে প্রকৃতার্থে মানুষ করে গড়তে হবে । প্রথমটা একেবারে সহজ । ইচ্ছা করলেই সফলতা ! তবুও অত্যন্ত কঠিন দ্বিতীয় পথকেই অবলম্বন করতে হবে । মানুষ হিসেবে সমাজের প্র্রতি দায়বদ্ধতা, বিবেকের কাছে কৈফিয়ত-সবমিলিয়ে নিজের যেভাবে ভালো পথে চলতে হবে তেমনি অন্যকেও ভালো পথে আনতে হবে । জাতি হিসেবে আমরা সৌভাগ্যবান । বিগত দুই যুগেরও বেশি সময় জুড়ে এদেশের প্রধানমন্ত্রী যারা ছিলেন তাদের সবাই নারী । দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, বৃহত্তর দলের নেতা নারী হওয়ার পরেও দেশের নারী সমাজের প্রতি এমন কষাঘাত আসবে তা ভাবাও অন্যায় অথচ বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলছে । নারী নেত্রী ক্ষমতায় থাকার পরেও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত নয় এটা বেমানান । কেউ যদি সভ্য না হয়ে উল্টোপথে চলে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাকে শাস্তির মুখোমুখি করে অপরাধীকে যেমন অপরাধ কর্ম থেকে বিরত রাখা তেমনি দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে অন্যদেরকে অপরাধের সাথে জড়িত হতে অনুৎসাহিত করা । রাষ্ট্রযন্ত্রকে এ ব্যাপারে আরেকবার গভীরভাবে ভাববার অনুরোধ রাখছি । কুলাঙ্গারদের কুলাঙ্গারীপণার জন্য রাষ্ট্র যেন সুযোগ করে না দেয় সে ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কাম্য । কোন স্বার্থেই যেন প্রকৃত অপরাধীরা মুক্তি পেয়ে না যায় তার নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে নারীর নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে হবে ।

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.