নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাত্র কয়েকদিন পরেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর । চাকুরীজীবি, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য সকল পেশাজীবিরা পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়িত্বশাসিতসহ কর্মরত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে লম্বা ছুটি পায় । বিভিন্ন কর্ম ব্যস্ততায় যারা বছরের অন্যান্য সময়ে বাড়ীতে যেতে পারে না তারা ঈদের ছুটিকেই আপন নীড়ে ফেরার জন্য বেছে নেয় । নাড়ীর টানে সকলেই প্রিয় জন্মস্থানের মাটিতে পা রাখার, পরিচিত পরিবেশে শ্বাস গ্রহনের, বেড়ে ওঠার স্থানে ফেরার অদম্য স্পৃহা পোষণ করে । ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা ও বৃহৎ বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৪ কোটির অধিক মানুষের অস্থায়ী স্থানান্তর ঘটে । পথে নানা বিপত্তি সত্ত্বেও স্ত্রী, পরিবার-পরিজন নিয়ে যেকোনভাবে ঘরে তাকে ফিরতেই হবে । বাবা-মা, ভাই-বোন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং নিকট আত্মীয় স্বজনের সাথে বছরে একবারের জন্য হলেও মিলিত হতে ইচ্ছা জাগে । মূলত ঈদ উপলক্ষে নগরায়ণের নিয়ত প্রতিযোগিতার যুগেও সৃষ্টি হয় পারিবারিক, সামাজিক অপূর্ব মেলবন্ধনের । গ্রামের দিগন্ত বিস্তীর্ণ মাঠে সকলে একত্রিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায়, পরস্পরে কোলাকুলি এবং বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় এবং নাস্তা খাওয়ার আনন্দ জীবনের সকল দুঃখ বেদনাকে ভূলিয়ে দেয় । সকল মান-অভিমানের দেয়াল ভেঙ্গে ঈদের দিন সকলেই বন্ধুতে, আত্মার আত্মীয়সম আপনজনে পরিণত হয় । কারো প্রতি কোন হিংসা-দ্বেষ কিংবা অভিযোগ-অনুযোগের বালাই থাকে না । আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে বেড়ানো, বন্ধুদের সাথে অফুরন্ত আড্ডা, মুরুব্বীদের সাথে শহরের কিংবা কর্মস্থলের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগিতে কেটে যায় ঈদের আনন্দঘন মূহুর্তগুলো । কথায় বলে, সূখের সময় দ্রুত ফুরিয়ে যায় । ঈদের সপ্তাহব্যাপী ছুটি যে কখন কেটে যায় তার হিসেব যেন মিলতে চায়না । অথচ শহরের কিংবা কর্মস্থলের একটি দিন যে কতটা দীর্ঘ মনে হয় তা ভাবাই যায় না । তবে আনন্দ উপভোগ করার পূর্বে এবং পরে দূর-দূরান্ত থেকে আপন নীড়ে ছুটে আসা কিংবা ফিরে যাওয়া মানুষগুলোকে রীতিমত সংগ্রাম করতে হয় । যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা, টিকেট না পাওয়া, যানবাহন সংকট, সড়ক দূর্ঘটনা, দীর্ঘ জ্যাম ছাড়াও পথে পথে নানা সমস্যার মোকাবেলা করে ফিরতে হয় মাতৃ-পিত্রালয়ে । এ সকল সমস্যার কারণে যাদের শিশু সন্তান আছে তাদেরকে বাড়ী ফেরার আবেগকে কোরবানী দিতে হয় । যাত্রাপথের লম্বা ফিরিস্তির সমস্যায় জীবন ওষ্ঠাগত হবে ভেবে অনেকেই ঈদে বাড়ী ফেরার কথা ভূলে থাকতে চেষ্টা করেন । মনের শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আপনজনকে নানা অজুহাত দেখিয়ে মনের কষ্ট মনে রেখেই শহরের গতানুগতিক বাসস্থানে নিরবে কাটিয়ে দেন বিরক্তিকর সময় । ক্ষনে ক্ষনে উপলব্ধি হয় আপনজন থেকে দূরে থাকার যন্ত্রনা । তবুও নিরুপায় । ইচ্ছা এবং সাধ্য থাকলেও এদেশে সব কাজ সময়মত, সুযোগমত কিংবা ইচ্ছামত করা যায় না । নানা প্রতিবন্ধকতা আটকে দেয় মনের ইচ্ছাকে । জীবনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার নামে খাচায় বদ্ধ করে দেয় । জীবনে নেমে আসে দুঃসহ বেদনা ।
ঈদে ঘরে ফেরার আশায় বুক বাঁধা মানুষগুলোকে সবচেয়ে বেশি দুর্ভাবনায় ফেলে সড়ক ব্যবস্থার বেহাল দশা । সমালোচকেরা বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ পাকা সড়কগুলি গরুর দয়ার উপর নির্ভরশীল । গরু যদি বেরসিক হয়ে একটু গোবর রাস্তাকে উপহার দেয় তবেই সড়কের উপরের অংশ ক্ষয়ে যায় । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সড়ক নির্মানে নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করা হয় যার কারণে অধিকাংশ সড়ক এক বর্ষা থেকে পরবর্তী বর্ষা মওসুম পর্যন্ত স্থায়ী হয় না । যদিও সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় যথেষ্ট আন্তরিক । দেশের মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে তার জন্য তারা সড়ক নির্মান, সংস্কার, পূনঃসংস্কারের জন্য বরাদ্দ দিতেই থাকে । তবে সে বরাদ্দে স্থায়ী কোন উপকার হয় বলে মনে হয়না । কোন অদৃশ্য দৈত্য তার আপন শক্তিবলে সড়ক নির্মাণ কিংবা সংস্কারের কয়েক মাসের মাথায় আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয় ! সড়ক ব্যবস্থার এ চক্রাকার নির্মান এবং সংস্কারের কারণে কিছু লোক ফায়দা অর্জন করলেও যাত্রী সাধারনকে পোহাতে হয় দূর্ভোগের সর্বোচ্চ সীমা । বাস যাত্রাকালে বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের রাস্তায় চলার সময় পাজরের হাড় কিংবা মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয় । সুস্থ মানুষ যদি এ রাস্তায় বাসে চলাচল করে তবে সে অসুস্থ হয়ে যায় । অসুস্থ কেউ গাড়ীতে চড়লে তার তো মরনদশা । তবুও আশার কথা, অতীতের সকল সময়ের চেয়ে এ বছর সড়কের অবস্থা তুলনামূলক ভালো । তবে গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ এবং সৃষ্ট জলাবদ্ধতা সড়কের অনেক যায়গায় ব্যাপক ক্ষতি ও ক্ষতের সৃষ্টি করেছে । স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের অন্যান্য ক্ষেত্রে যেভাবে উন্নতি হয়েছে সেভাবে সড়ক দূর্ঘটনা হৃাসে উন্নতি ঘটেনি । সংবাদপত্রের তথ্যানুযায়ী, দেশের সাড়ে ২১ হাজার কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়কের ৭১টি স্থানের কয়েকশ’ কিলোমিটার একেবারেই যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে । তদুপরি ৩ শতাধিক স্থানে গর্তসহ গভীর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় ১৫০ ফিট রাস্তার পিচ ঢালাই উঠে গেছে । অনুরূপভাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৬ কিলোমিটারে বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে । বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার চরখালী থেকে মঠাবাড়ীয়া পর্যন্তের সংযোগ সড়কটিকে বাংলাদেশে সবচেয়ে যুঁকিপূর্ণ সড়ক হিসেবে বিবেচনা করা যায় । এসব কারণে ঈদে সড়কপথে যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির আশংকা করা হচ্ছে । সড়ক দূর্ঘটনা বাংলাদেশের নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । বছরের এমন কোন দিন নাই যে দিন সড়ক দূর্ঘটনায় মানুষ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া না যায় । যতজন মারা যায় তার চেয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে কয়েকগুন বেশি । বিশেষ করে ঈদের মওসুমে সড়ক দূর্ঘটনার হার আচমকা বেড়ে যায় । গত ঈদের মওসুমে সারা দেশে শতাধিক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলো । বাস চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা, বেপারোয়া গতি, চালকদের প্রয়োজনীয় বিশ্রামের অভাবের কারনে শত শত মানুষ অকাল মৃত্যু মুখে পতিত হয় । এ সব মৃত্যু পরিবারের আনন্দ উৎসবের বিপরীতে তখন শোকের বন্যা বইয়ে দেয় ।
দেশের উত্তারাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম যেমন রেলপথ তেমনি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নৌপথ । ইতোমধ্যে রেল, লঞ্চ এবং স্টিমারের অগ্রিম টিকিট বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে । মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করছে । তবে টিকেট প্রার্থীরা টিকেট বন্টনের স্বচ্ছতা নানা অভিযোগ তুলেছে । ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের আকাঙ্খিত টিকেট যখন কালোবাজারিতে যায় তখন সেটা সত্যিই দুঃখজনক । দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষার শেষে টিকেট কাউন্টারে পৌঁছে যখন শুনতে হয় টিকেট শেষ তখন হতাশার সীমা থাকে না । তবে বৈধ টিকেট শেষ হলেও অবৈধ টিকেট যেন শেষ হবার নয় । টিকেটের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুন বেশি দাম পরিশোধ করলেই দালালদের মাধ্যমে টিকিট ঠিকই জোগাড় করে নেয়া যায় । শুধু যে রেল, লঞ্চ এবং স্টিমারের টিকেট কালোবাজারীতে যায় তা নয় বরং সরকার পরিচালিত বিআরটিসিসহ প্রাইভেট বাস সার্ভিসগুলোর টিকেটও কালোবাজারিতে যায় । অতীত অভিজ্ঞতা বলে, প্রাইভেট সার্ভিসগুলোর চেয়ে সরকারি সার্ভিস গুলোর টিকেট কালোবাজারীর কবলে পড়ে বেশি । তাছাড়াও ঈদ উপলক্ষে টিকেটের দাম কয়েকদফায় কয়েকগুন বৃদ্ধি করা হয় । ঈদে অধিক মুনাফা লাভের আশায় আনফিট লঞ্চ, বাস চালু করা হয় । ট্রেনেও ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বগি সংযোগ করা হয় । এ সকল আনফিট বাহনে ধারন ক্ষমতার চেয়ে অধিক যাত্রী বহনের ফলে দূর্ঘটনা সম্ভাবনা অধিকহারে বেড়ে যায় এবং জীবন হুমকির মূখে পতিত হয় । ঈদ উপলক্ষে মলম পার্টি, হাইজাক পার্টি, পকেটমার, ডাকাতসহ পুরান এবং উঠতি সন্ত্রাসীদের বেপারোয়া চাঁদাবাজি বেড়ে যায় । এ কারণে মালের সাথে জীবনও হুমকির সম্মূখীন হয় ।
আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে সরকারী কর্তৃপক্ষকে নজড়দারি বাড়াতে হবে । বিশেষ করে গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সদস্যদের, পুলিশ এবং অন্যান্য সরকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দিলে ঘরে ফেরা মানুষেরা নির্বিঘ্নে এবং শান্তিতে ঈদ কাটাতে এবং পূনরায় স্থায়ী-অস্থায়ী আবাসস্থলে ফিরে আসতে পারবে । যে সকল বাস, লঞ্চ মালিকরা যোগাযোগের অযোগ্য বাহন ব্যবহার করার চেষ্টা করবে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে । যারা অবৈধভাবে কালোবাজারিতে অধিক মুনাফার আশায় টিকেট বিক্রি করে তাদেরকে চিহ্নিত করে জনসমক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে । ঈদ উপলক্ষে যে সকল মানুষ অনৈতিক কার্যকলাপে জড়ায় তাদের চিহ্নিত করে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে । সর্বোপরি মানুষ যেন শান্তিতে ঈদ উৎসব পালন করতে পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা এবং খুশির আবহ যেন শোকে ভেসে না যায় তার নিশ্চয়তা বিধান করা জরুরী । ঈদ উপলক্ষে যে সকল যাত্রীরা বাড়ী ফিরবার আশা করেন তাদেরকে মনে রাখতে হবে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশ । একটি দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্নার কারণ । কাজেই যাত্রা পথে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:৩৬
ঢাকাবাসী বলেছেন: এত সব কাজ করে ফেললে মাল কামাই করমু কেমনে?