নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস ও তার শৈশবকে স্মরণীয় রাখার উদ্দেশ্যে ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ থেকে জাতীয় পর্যায়ে উদযাপন হয়ে থাকে জাতীয় শিশু দিবস । এ দিনে সরকারি ছুটি থাকে । অবশ্য ২০০১ সালে আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারানোর পর তৎকালীন নির্বাচিত সরকার শিশু দিবস পালন এবং সরকারী ছুটি বাতিল করে । পরবর্তীতে নবম জাতীয় সংসদে আওয়ামীলীগ পুণরায় নির্বাচিত হয়ে আবারও প্রতিবছর জাতীয় পর্যায় বৃহৎ আয়োজনের মাধ্যমেই এ দিবসকে পালন করে
আসছে । যাকে উৎসর্গ করে আজকের আয়োজন সেই প্রিয় মানুষটি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ছোট্ট খোকা নাম ধারণ করে জন্মগ্রহন করেন । পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন ও রক্তের বিনিময়ে তিনি বাংলাদেশের নবজন্মে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন । তাই আজ তার স্মরণেই পালিত হচ্ছে জাতীয় শিশু দিবস । সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্ম বার্ষিকী ।
…….
আজকের দিবসটি মূলত বঙ্গবন্ধুর শিশুকালকে স্মরণের উদ্দেশ্যে উদযাপিত হলেও এ দিবসের সাথে জড়িয়ে আছে এদেশের প্রত্যেকটি শিশুর হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ । শিশুদের সম্পর্কে সুকান্ত ভট্টাচার্য তার ‘আগামী’ শিরোনামের কবিতায় যথার্থই বলেছেন, ‘জড় নই, মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ/আমি তো জীবন্ত প্রাণ, আমি এক অঙ্কুরিত বীজ ।’ কবি আকরাম হোসেন বলেছেন, ‘ফুটন্ত কলির মতো শিশু মনোরম, তার চেয়ে বেশি কিছু আছে কি সুন্দর ?’ আমরা প্রত্যেকেই জানি এবং বিশ্বাস করি, শিশুমন পবিত্রতার প্রতীক । যারা শিশুদেরকে ভালোবাসতে জানে না তাদের মধ্যে মানবিকতার অনেক ঘাটতি রয়েছে । উইলিয়াম ক্যান্টমি শিশুদের পবিত্রতা ঘোষণা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘ছোট মণিদের প্রশংসায় আমি বলব, ঈশ্বর প্রথম সৃষ্টি করেছিলেন পুরুষকে, তারপর খুঁজে পেয়েছিলেন একটা প্রকৃষ্টতর পন্থা নারীর জন্যে কিন্তু তার তৃতীয় পন্থাটি ছিল সর্বোত্তম । সকল সৃষ্টির মধ্যে সবচেয় সুন্দর এবং দেবোপম হচ্ছে শিশুরা ।’ কবি রমণীমোহন ঘোষ তার দেবশিশু কবিতায় শিশুদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘ফুলের মতন মুখখানি ভরা নির্মল হাস, পাখির কাকলিসম সুমধুর কন্ঠে অস্ফুট ভাষ ।’ শিশুদের যারা ভালোবাসে তাদের মধ্যে একটি সুপ্ত শিশুমনের উপস্থিতি রয়েছে । বিশ্বের প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত ধর্মেও শিশুদেরকে ভালোবাসা ও স্নেহ দানের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে । ইসলাম ধর্মের প্রচারক হযরত মুহাম্মদ (সা.) শিশুদের প্রতি তার অনুপম ভালোবাসার স্বাক্ষর রেখেছেন ।
…..
আজকের এই শিশু দিবসে দাড়িয়ে শিশুদের ভালোবাসার কথা বলতে ভয় হয় । আজ যদি শিশুরা কৈফিয়ত চায়, তাদেরকে আমরা কতটা ভালোবাসি ? তাহলে তার উত্তরে কি বলতে পারবো ? গত বছরের জাতীয় শিশু দিবসের পর থেকে এ বছরের এই শিশুদিবস পর্যন্ত যতগুলো শিশুকে হত্যা ও নির্যাতন করা হয়েছে এত অধিক সংখ্যক শিশু হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ঘটেনি । সেই রাজন, রাকিব, রবিউল, রাজাদের থেকে শুরু করে মায়ের হাতে শিশুখুনের মত ঘটনা ঘটেছে প্রায়ই । চুরির অপবাদে, কাজ না করার অপরাধে, মোবাইল চুরির অপবাদে, মাছ চুরির অপবাদে, গোষ্ঠীগত শত্রুতার সূত্র ধরে শিশু হত্যার মিছিল যাচ্ছে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে আর ক্রমশ সে মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে । ক্রিকেটারের বাসার কাজের মেয়েটিকে অবর্ণনীয় নির্যাতনের গল্প আমরা শুনেছি, বিচারকের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নির্যাতিত-রক্তাক্ত শিশু । শিশুর বস্তাবন্দী লাশের খবর তো এখন গণমাধ্যমের নিত্যদিনকার যাত্রা শুরুর প্রধান খবর । শিশুর ভবিষ্যত অন্ধকার ভেবে গর্ভধারীণি মা তার সন্তানকে হত্যা করে ফেলছে । পরকীয়ার বলি হচ্ছে শিশুরা । অবৈধ রক্তের অনুরণনের ফলশ্রুতিতে সে শিশুর আগমন ঘটছে সে শিশুর দায়িত্ব নিতে ধর্ম, রাষ্ট্র, পরিবার, সমাজ ও ব্যক্তি নারাজ । তারপরেও পরিচয়হীন পথ শিশুর লাইনটা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে । শিশুদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে মাদকদ্রব্য পাচারের কাজে । ভ্রষ্ট রাজনীতিতেও শিশুদের দিয়ে নানা কায়েমী স্বার্থ উদ্ধারের খবর মিডিয়ায় আসছে । ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে জড়িয়ে রাখা হয়েছে লক্ষাধিক শিশুকে । শিশুদেরকে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা হচ্ছে । এক শ্রেণীর মানবরূপী কুলাঙ্গার শিশুদের ওপর বলৎকার করছে । শিশু ধর্ষণের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে । শিক্ষার নামে শিশুদের কাঁধে চড়িয়ে দেয়া হচ্ছে রাজ্যের বই । সে সব বইয়ের অধিকাংশের জ্ঞান কিংবা ওজন-কোনটাই বহন করার ক্ষমতা শিশুদের নাই; তারপরেও দেয়া হচ্ছে । সব মিলিয়ে ভালো নাই আমাদের শিশুরা । আমরা তাদেরকে ভালো থাকতে দিচ্ছি না ।
…….
আজকের জাতীয় শিশু দিবস পালনকে আমি স্বার্থক শিশু দিবস হিসেবে মেনে নিতে পারছি না বলে দুঃখিত । যে রাষ্ট্রের অজস্র-অসংখ্য শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে, নির্যাতনের মাধ্যমে তাদেরকে শারীরীক ও মানসিকভাবে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, সে রাষ্ট্রে ঘটা করে এমন শিশু দিবস পালনের তাৎপর্য কোথায় ? তবুও বলব, আজ আবারও নতুন করে শপথ নেয়া হোক, আমাদের শিশুদেরকে আমরা নিরাপদে রাখবো এবং আনন্দ দেব । সুকান্ত যেমন তার শিশুতোষ ‘ছাড়পত্র’ কবিতায় ঘোষণা করেছিল, ‘এ-শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি-নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার ।’—সুকান্তের অনুরূপ অঙ্গীকার যেন আমরাও করি এ দেশের প্রতিটি শিশুর সাথে, নিজের সাথে ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৩০
বিজন রয় বলেছেন: ভাল লাগল।
+++