![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চাই পরিবর্তন , চাই নতুন চিন্তা চেতনা, চাই ১৬ কোটি মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা, চাই ভন্ড প্রতারকদের চির অবসান, দুর্নীতি সন্ত্রাস ভন্ডামি যুক্ত রাজনীতি মুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ। এগিয়ে এসো ৭১ পরের প্রজন্ম । মেলাও হাত, কর পন । দেশ আমার মাটি আমার । আমরা দেশ মাটি ও মানুষকে । প্রচলিত নোংরা রাজনীতি থেকে রক্ষা করব। আসুন পুরাতন আবর্জনা পরিষ্কার করে রাজনীতিতে । মেধাবী শিক্ষিত যোগ উপযোগী মন মানসিকতা সম্পন্ন ।নতুন মুখের সন্ধান করি । গরে তুলি আধুনিক সোনার বাংলা ।
সৌদি প্রাসাদ অভ্যুত্থান সম্পন্ন। একদিকে নতুন বাদশা এখন তার ক্ষমতা সংহত করার কাজে মনোযোগী হয়েছেন। অন্যদিকে তাৎপর্যপূর্ণ আঞ্চলিক সম্পর্কগুলোকেও ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছেন।
ক্ষমতা সংহত করণের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাত্রে টেলিভিশনের মাধ্যমে এক ডিক্রি জারি করে নতুন বাদশা সালমান তার সৎ ভাই প্রয়াত বাদশা আবদুল্লাহর রেখে যাওয়া প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করেছেন।
আঞ্চলিক সম্পর্ক দৃঢ় করার ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে বাদশার আলোচনার টেবিলে রয়েছে তুরস্ক ও কাতারের সাথে সম্ভাব্য পুনর্মিলন, ফিলিস্তিনের দুই রাজনৈতিক দল ফাতাহ ও হামাসের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সৌদি আরবের ঐতিহ্যগত ভূমিকায় ফিরে যাওয়া এবং মিশরের সামরিক শাসকদেরকে রিয়াদ যে সহযোগিতা প্রদান করে আসছে তাতে গুণগত পরিবর্তন আনার মতো বিষয়গুলো।
প্রাসাদে নিজ ক্ষমতা সংহত করার জন্য নতুন বাদশা সালমান প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান হিসেবে যুবরাজ বন্দর বিন সুলতানের অবশিষ্ট যে ভূমিকা ছিল তা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন যে, বন্দরকে অব্যাহতি দেওয়ার ফলে অত্র অঞ্চল আরো স্থিতিশীল হবে।
এছাড়া আবদুল্লাহর দুই ছেলে যুবরাজ মিশালকে, যিনি মক্কা নগরীর গভর্নর ছিলেন, এবং রাজধানী রিয়াদের গভর্নর যুবরাজ তুর্কিকে পদচ্যুত করা হয়েছে। বাদশা আবদুল্লাহর মাত্র এক ছেলে মেতেবকে ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান হিসেবে বাদশা সালমানের প্রশাসনে রাখা হয়েছে।
সাদ আল-সেদরি নামের এক রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতাকে বাদশা সালমানের ব্যাক্তিগত উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়েছে যিনি উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে পৃথকীকরণ বিষয় দেখাশুনা করেন।
ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে মন্ত্রিসভায় নতুন তথ্যমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আল-আরাবিয়া নিউজ চ্যানেলের সাবেক প্রধান এক উদারপন্থী তরুণ আদেল আল-তোরাইফিকে।
যে দুজন লোক সামনের দিনে দেশটির নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন তাদের একজন ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ এবং বাদশা সালমানের পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমান। তার দায়িত্ব এখন তিনটি। তিনি একাধারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, রয়্যাল কোর্টের সাধারণ সম্পাদক ও নবগঠিত অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক পরিষদের প্রেসিডেন্ট। বাদশা সালমানের আরেক পুত্র আবদুল আজিজ বিন সালমানকে ডেপুটি তেল মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সুদাইরি বংশের দ্বিতীয় প্রজন্ম দৃঢ়ভাবে সুরক্ষিত হয়ে গেল, যেটা বাদশা সালমান মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন।
বাদশা সালমান তার রাজত্ব শুরু করলেন দেশের জনগণের ভালবাসা ক্রয়ের মাধ্যমে। আরব বসন্ত শুরু হওয়ার প্রথম মাসগুলোতে একই কাজ প্রয়াত বাদশা আবদুল্লাহ করার চেষ্টা করেছিলেন। যা দিয়ে তিনি জনগণের ভালবাসা কিনলেন তা হলো তিনি ঘোষণা করলেন যে, দেশের সব সরকারি কর্মচারি অতিরিক্ত দুই মাসের বেতন বোনাস এবং সব অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারিও বাড়তি দুই মাসের পেনসন বোনাস পাবেন।
এছাড়া যে সব ছাত্রছাত্রী রাষ্ট্রীয় অনুদান ও সামাজিক নিরাপত্তা অনুদান পায় তারাও দুই মাসের অনুদান বেশি পাবে। আর এই জন্য যে বিল আসবে তার পরিমাণ তিন হাজার কোটি ডলার।
এই সম্পর্কে টুইটারের এক টুইটে জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘প্রিয় জনগণ, আপনাদের আরো বেশি প্রাপ্য আর আমি যাই করি না কেন, আপনাদের যা প্রাপ্য তা আপনাদেরকে দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।’
কিন্তু বৈশ্বিক বাজারে তেলের মূল্য কমে যাওয়ার কারণে কয়েক সপ্তাহ আগেই রিয়াদ গণপূর্ত কাজে খরচ কমিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল।
রাজপ্রাসাদে যারা বাদশা আবদুল্লাহর বিরোধী ছিলেন তাদের সবাই এখন বাদশা সালমানের প্রশংসায় পঞ্চমূখ। সৌদি পর্যবেক্ষকদের অনেকেই অভিযোগ করেন যে, বাদশা আবদুল্লাহ তার শেষ বছরগুলোতে চিন্তা-ভাবনায় বেশ গোঁড়া হয়ে উঠেছিলেন। তবে নতুন বাদশা সালমান বাদশা ফাহাদের মধ্যপন্থা নীতির দিকে ফিরে আসছেন।
নতুন বাদশা ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর জোর দিচ্ছেন। তার ক্ষমতার প্রকৃতি আসলে কেমন তা বুঝা যাবে প্রথমে বিদেশের মাটিতে। এক কথায় রাজনীতিতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুব একটা কাজে দেয় না। এক্ষেত্রে স্মরণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, কারা বাদশা সালমান এবং বিন নায়েফের বিদেশি বন্ধু ।
কাতারের আমির তামিম বিন হামাদের সাথে বাদশা সালমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাই গত বছর তার এই ক্ষুদ্র প্রতিবেশিকে অবরুদ্ধ রাখা বা গাল্ফ কোঅপারেটিভ কাউন্সিল থেকে বহিষ্কার করার যে হুমকি দিয়েছিল তাকে এখন বাজে স্মৃতিই মনে হচ্ছে। একইভাবে তুরস্কের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বিন নায়েফের সাথে ঘনিষ্ঠ তৈরি হয়েছে।
২০১১ সালের আরব বসন্তের পর সৌদি আরব ও তুরস্কের সম্পর্কে যে ফাটল ধরে তা নতুন বাদশাকে ভুগাবে। ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন ও সিরিয়ায় বিস্তৃত ইরানের প্রভাব রোধ করতে এই দুটো আঞ্চলিক ক্ষমতাধরের একে অপরের দরকার। শুধু এই কারণেই নয়, বাদশা সালমানের ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও তুরস্ককে দরকার। সম্ভবত বাদশা দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্কের ফাটল সারাবেন।
বিন নায়েফের ব্যক্তিগত শত্রুদেরও তাদের পাওনা পরিশোধ করে দেওয়ার সময় এসেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১২ বছর আগে রিচার্ড হ্যাসের সাথে আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদের সেই দুই ঘণ্টার আলাপের কথা এখনো ভূলে যাননি। আমিরাতি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন নায়েফের পিতার ব্যাপারে, যিনি সেই সময় সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, একটি বাজে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মানুষের উৎপত্তি বানর থেক- ডারউইনের এই তত্ত্ব যে সঠিক তা নায়েফকে দেখলে বুঝা যায়।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে মোহাম্মদ বিন নায়েফের আবুধাবির শাসকদের সাথে মিটমাটের এখনো অনেক কিছু বাকি রয়েছে। ইরেম নিউজ নামে একটি পত্রিকা ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে বিন নায়েফের নিয়োগের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিল। আমিরাতের অন্যান্য পত্রিকার মতো রয়্যাল কোর্টের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত এই পত্রিকাটি বলে যে, বাদশা সালমান তার মন্ত্রী পরিষদের সাথে পরামর্শ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পত্রিকাটি আরো লিখেছে যে, ‘বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাতিদের মধ্য থেকে মোহাম্মদ বিন নায়েফের বাছাই প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এটা কোনো সহজ পদ ছিল না। বাদশা আবদুল্লাহর সাম্প্রতিক অসুস্থতা জানাজানি হওয়ার সাথে সাথে এক মিশরীয় টিভি উপস্থাপক ইউসুফ আল-হোসেনি যেটা প্রচার করার চেষ্টা করেছিলেন। নিউজ ওয়েব ‘আরব সিক্রেট’র মতে এটা ছিল একটি প্রচারাভিযানের অংশ যার হোতা ছিলেন বাদশা আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সহযোগী বহিস্কৃত খালেদ আল-তুয়াইজরি। তিনি এটা করেছিলেন বাদশা আবদুল্লাহর ছেলে মেতেবকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স পদে বসানোর উদ্দেশ্যে।
খালেদ আল-তুয়াইজরি, বন্দর বিন সুলতান ও আবুধাবির মোহাম্মদ বিন যায়েদের সময় ফুরিয়ে গেছে। বাদশা আবদুল্লাহ একটি ভয়ানক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার আগেই মারা গেলেন যে চ্যালেঞ্জ বাদশা সালমানের সামনেও আসতে পারে। আর অন্তত তাদের দুজন এখন অতীতের মানুষ। এখন দেখা যাক তৃতীয় পক্ষের ক্ষেত্রে কি ঘটে। রিয়াদ ও কায়রোর ষড়যন্ত্র চক্র সম্ভবত ভেঙে পড়বে।
সৌদি রাজপ্রাসাদে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে তার ফল ইতোমধ্যে ফলা শুরু করেছে। মোহাম্মদ বিন জায়েদ বাদশা আবদুল্লাহর অন্তেষ্ট্যিক্রিয়ায় অনুপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত ছিলেন মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।
আর ঠিক যে মুহূর্তে সরকার চালানোর জন্য আল-সিসির সৌদি আরবের নগদ অর্থ দরকার, সেই মুহূর্তে মিশর আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আরো বেশি অস্থিতিশীল। আল সিসির জন্য সৌদি রিয়াল আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
একদিকে সিনাই উপদ্বীপে মিশরের সরকারি বাহিনীর বিপক্ষে আইএসের ব্যাপক সামরিক অভিযান অন্যদিকে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের শেষ হবে না বলে মনে হচ্ছে। মিশরীয় পাউন্ডের মূল্যমান এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বনিম্ন। আল-সিসির সব রাস্তা যেন সংকীর্ণ হয়ে আসছে।
প্রধান অর্থদাতা রিয়াদকে হারিয়ে মিশরীয় সেনাবাহিনীর জন্য সময় এখন ভাল যাচ্ছে না। আর বিন নায়েফ আল-সিসিকে অর্থ প্রদান সচল রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রতিশ্রুত অর্থ ও গৃহীত অর্থের মধ্যে আগের সবসময়ের মতো একটা পার্থক্য থেকেই যাবে।
মুসলিম ব্রাদারহুডকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার যে নীতি তাতেও পরিবর্তন আসতে পারে। বাদশা সালমান নিজেই প্রয়াত বাদশার শোকানুষ্ঠানে এন্নাহদা পার্টির নেতা শেখ রশিদ ঘানুচিকে সাদরে গ্রহণ করেন। সৌদি আরবে যাদেরকে স্বাগত জানানো হয়েছিল তাদের মধ্যে তিনিই হচ্ছেন সবচেয়ে সিনিয়র ইসলামপন্থী নেতা।
ব্রাদারহুডের ঘোর বিরোধী গণপূর্ত ও ইসলামি বিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে সুলেমান আবাল খলিলের অপসারণ হচ্ছে সৌদির নীতিগত পরিবর্তনের আরেকটা আভাস।
যদি সেটা নাও ঘটে তারপরও গত সপ্তাহে সৌদি আরবে যে অভ্যুত্থান ঘটে গেছে তার ফলাফল দেশটির বিদেশি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে গভীর সন্তুষ্টির সাথে গৃহীত হবে যে কর্মকর্তারা ডেভিড ক্যামেরনের পক্ষে ব্রিটেনে ব্রাদারহুডের কর্মকাণ্ড তদন্ত করার কাজ নিয়ন্ত্রণ করেছিল। এই তদন্ত কার্য মূলত সৌদি ও আমিরাতি শাসকদের চাপে করা হয়েছিল।
বাদশা সালমানের দায়িত্ব নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্যার জন জেনকিনসকে প্রধান করে চালিতে ঐ তদন্ত কার্য একটি রাজনৈতিক বিমূঢ়তা বলে প্রমাণিত হয়েছে। ব্রাদারহুডকে শাস্তি দেওয়া যায়নি। কারণ শেষ পর্যন্ত তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত প্রতিবদেন বলা হয়েছে মিশরে সন্ত্রাসের সাথে ব্রাদারহুডের কোনো সম্পর্ক নেই। এখন রিয়াদের নতুন বাদশা তদন্ত প্রতিবেদনের এমন উপসংহারকে স্বাগত জানালে জানাতেও পারেন।
হাফিংটন পোস্টে প্রকাশিত মিডল ইস্ট আইয়ের সম্পাদক ডেভিড হার্স্টের লেখা The Slaying of the Saudi Spider নিবন্ধের ভাষান্তর করেছেন জামির হোসেন । সূত্র : অার টি এন এন
©somewhere in net ltd.