নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জল দুপুর

রাকিবুল ইসলাম শ্রাবণ

আমি বাঙ্গালী এই পরিচয়ে আমি গর্বিত

রাকিবুল ইসলাম শ্রাবণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প:মেকাপ বাক্স

০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:২৪

আজ ভোরে অফিসে যাওয়ার সময় মিতু পিছন থেকে হাত টেনে ধরলো রহিম সাহেবের।রহিম ফিরে তাকতেই মিতু বললো আব্বু বলতো আজকে কি?রহিম সাহেব মেয়ের গালে মিষ্টি করে টোকা দিয়ে বলল আমার মনে পড়ছে না আম্মু, বলো আজকে কী?মিতু মন ভার করে অভিমানের সুরে বলল আব্বু তুমিও ভুলে গিয়েছো আজ আমার জন্মদিন।মেয়ের মুখে জন্মদিনের কথা শুনে রহিম সাহেবের চোখে জল আসন্ন।রহিম নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েকে চুম দিয়ে বললো সরি আম্মু আর কখন হবে না।রহিম সাহেব জানে সে আবার ভুলে যাবে।আগামী বছর আবার মিতু অভিযোগ করে বলবে আব্বু তুমিও ভুলে গেলে।হঠ্যাত সিমু রান্নাঘর থেকে বাহির হয়ে দেখে রহিম সাহেব মেয়েকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।সিমু কাছে এসে বললো কি গো তুমি এখনো অফিসে যাও নাই?এইতো যাবো বলে রহিম সাহেব মেয়েকে নামিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে ওমনি মিতু বললো আব্বু আজকে আমাকে কী উপহার দিবে।রহিম সাহেব ঘুরে বললো তুমি কি চাও আম্মু?আব্বু আমাকে একটা মেকাপ বাক্স(বক্স) কিনে দিবে।আর বলে থেমে গেলে মিতু।আর কি আম্মু?আর কিছু না।আচ্ছা আমি অফিস থেকে আসার সময় নিয়ে আসবো।রহিম সাহেব বাড়ি থেকে বেড়িয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছে।অফিস তাও দুই কিলো দূরে কিন্তু রহিম সাহেব হেটেই যায়।রিক্সায় যাবার মতো বিলাসিতার টাকা তার নেই।যে টাকা বেতন পাই তা দিয়ে কোন রকম টেনেটুনে মাস যায়।রহিম সাহেব ভাবছে মিতু আরো কিছু চাইতো কিন্তু সিমু চোখ গরম করায় আর বললো না।সিমু বড় লোক পিতার একমাত্র মেয়ে।এক কাপুড়ে বাড়ি থেকে বেড়ে এসেছিল রহিমের হাত ধরে।রহিমের মতো গরিব ছেলে কে বিয়ে করায় আজ বারোটা বছর ওর বাড়ির সাথে কোনো যোগাযোগ নেই।রহিম অনেক বার বলেছে ঐ বাড়ি থেকে কয়েক দিন ঘুরে আছো।কিন্তু সিমুর একটাই কথা যেদিন বাবা কিংবা ভাই এসে তোমাকে দাওয়াত করে নিয়ে যাবে সেই দিন যাবো তার আগে না।সিমুর এই জেদের কথা মনে পড়তেই রহিম হেসে উঠলো।সিমু কোনো দিন কোনো বিলাসিতার বস্তু চাই নি।আজ মেয়ের জন্মদিন তার পরও সিমু মেয়েকে চোখ রাঙ্গিয়ে আবদার করতে দিলো না।রহিমের নিজেকে আজ বড়ো অসহায় মনে হচ্ছে।মেয়ের জন্মদিন আর আজ তার কাছে তাকে দিবার মতো কিছু নেই।রিক্সাওলা চেঁচিয়ে বললো ভাই রাস্তার সাইট দিয়ে যান।রহিমের ধ্যান ভাঙ্গলো।আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আজকে সে মেয়ে কে তার শখের মেকাপ বক্স কিনে দিবেই।অফিসের কাজ শেষে সোজা দোকানে চলে এলো।দোকানদার কে মেকাপ বক্সের দাম জিজ্ঞাস করতে বললো দুইশো টাকা।রহিম মানিব্যাগ বেড় করে দেখলো তার কাছে সর্বমোট একশো বিশটা আছে।অনেক খোজাখুজি করার পর আরো পাচঁ টাকা পেলো।বাকী টাকা কোথায় পাবে ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো জমিরের দোকানে গেলে বাকী পাওয়া যাবে।রহিম হাটতে হাটতে জমিরের দোকানে গেলো।গিয়ে দেখে জমির নাই।কখন আসবে জানে না কেউ।রহিমের শরীরটা আর পারছে না সারাদিন না খেয়ে তার পর হাটতেই হয়তো জ্বর এসেছে।কিন্তু তাকে আজ যতো কষ্টও হোক নিয়ে যেতেই হবে মেকাপ বক্স। রহিম ভাই তুমি কখন এলে জমিরের ডাকে রহিমের হুশ এলো বললো কিছুখন হলো।জমির রহিমের গায়ে হাত দিয়ে বললো একি তোমার তো জ্বর।বাসা যাওনি।রহিম শুধু বললো না।১২৫টাকা জমিরের হাতে দিয়ে বলল আমাকে একটা মেকাপ বক্স দাও।জমির বুঝতে পারলো রহিমের কাছে আর টাকা নেই তাই মেকাপবাক্স দিয়ে বললো চলো রিক্সায় তুলে দিয়ে আছি।রহিম নিষেধ করার পরও জমির রিক্সায় তুলে দিয়ে রিক্সাওলাকে ভাড়া দিয়ে আসলো।রহিম ভাবছে আজ মিতু খুব খুশি হবে।এদিকে সিমু অস্থির হয়ে আছে আজ কি হলো এখনও কেন আসছে না রহিম।মিতু বারবার জিজ্ঞাসা করছে আব্বু কখন আসবে। মা মেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।হঠ্যাত মিতু বললো আম্মু,আব্বু আসছে সিমু নিচে নামতে মানুষের চেঁচামেচি শুনতে পেলো দুয়ার খুলতেই কয়েক জন রহিমকে নিয়ে এসে শুয়ে দিলো।অনেক রাতে যখন রহিমের জ্ঞান ফিরলো দেখলো সিমু বাতাস করছে আর মিতু মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।রহিম পকেটে হাত দিয়ে মেকাপবক্স বেড় করে মিতুর হাতে দিয়ে বললো আম্মু এই তোমার উপহার।মিতু হাতে নিয়ে রহিমকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো আমার কিছু লাগবে না আব্বু তোমার কি হয়েছে?মিতুর কান্না দেখে সিমুর চোখ থেকে অঝড়ধারা জল পড়ছে।রহিম আর নিজে কে সামলাতে পারছে না তার চোখে জল চলে এলো তবে এটা দুখের কান্না নয়এটা রহিমের সুখের কান্না এটা অফুরন্ত ভালবাসার কান্না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.