![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার জীবন বৈচিত্রময় ! জীবনের প্রতিটা পদে পদে বাধা পেয়েছি কিন্তু এসব বাধা গুলো খুব সফল ভাবেই উত্তিণ্ণ হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ ।
বিসিএস, আইবিএ ভর্তি ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা
সামনে বিসিএস এবং আইবিএ (এমবিএ) ভর্তিপরীক্ষা। হরেক সময় হরেক রকম কর্ম-অকর্মের সাথে জড়িত থাকার সুবাদে আমার বন্ধু-বান্ধব ভাই-ভ্রাতা, ভগ্নীর সঙ্খ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি। তারা অনেকেই আজকাল এদুটি পরীক্ষার ব্যাপারে এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে সবাইকে যা যা বলা দরকার সবকিছু গুছিয়ে পূর্ণাংগভাবে বলতে পারছি না। তাদের জন্যি আমার এখনকার অপচেষ্টা।
এদুটি পরীক্ষায় আমি প্রায় একইসময়ে পাস করেছিলাম তাই আমার প্রস্তুতির রকমটা একটু ভিন্ন ছিল। যেহেতু আমি এ লিখাটি আমার সম্পুর্ণ নিজস্ব বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লিখব, তাই লেখায় ‘আমি, আমার’ শব্দদুটি একটু বেশিই থাকবে। নিজেকে মহাপন্ডিত হিসেবে দাবী করে জ্ঞান দানের অপচেষ্টা চালাচ্ছি এরকম ভুল আশা করি কেউ বুঝবেন না।
বিশ্বাস করি যার ভাষাজ্ঞান মোটামুটি ভাল এবং গণিতে স্ট্যান্ডার্ড লেভেলের দক্ষতা আছে তার জন্য দেশে এ ধরণের যে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাশ করা বেশ সহজ। ভাষাজ্ঞান বলতে বাংলা ইংরেজী দুটোকেই বুঝাচ্ছি। দুঃখজনক নির্মম বাস্তবতা হলো ভাষা এবং গণিত উভয়ের কম্বিনেশন আমাদের মধ্যে খুবি কম। এটার অভাবেই বেশিরভাগ পরিক্ষার্থী সব জায়গায় ধরা খায়। ভার্সিটির কোন এক জ্ঞানী বড় ভাই একদা বলেছেন,যে গণিত এবং ভাষা ভাল পারে সে সবকিছুই পারে। শুনলে মন খারাপ করবেন আমাদের দেশের প্রায় ৯০% গ্র্যাজুয়েটরা টানা তিন লাইন শুদ্ধ করে ইংরেজী লিখতে পারে না। আমি শিউর যে অবশিষ্ট ১০% কে ক্লাস এইটের ৩টি গণিত দিলে তাদের অর্ধেকই দুটির বেশী সমাধান করতে পারবে না।
অনেক বন্ধু-ব্রাদারকে ফার্স্ট ইয়ার থেকে চিনি যারা হয় ইংরেজী নাহয় গণিতে দুর্বল ছিল। তারা পরবর্তীতে দুনিয়ার সকল বিষয়ে বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করেছে শুধুমাত্র যেটাতে দূর্বল ছিল সেটা ছাড়া । তারা মনে করত এখন বাকি সব পড়ে নেই দূর্বল বিষয়টি পরে সময়মত বা পরীক্ষার আগে আচ্ছামত কোমর কষে পড়া যাবে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠে না। ফলে তারা দুব্বল বিষয়টিতে দুব্বলতর হয়ে পড়ে। একসময় তাদের কাছে বিষয়টি ভীতি এবং আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষায় উত্তর করতে গেলে পারলে পরীক্ষার হলে ভয়ে এবং হতাশায় হিসু করে ফেলে। আসল কথা হল, ভাষা এবং গণিত ভাল বেসিক গড়ে তোলার জন্য যত দীর্ঘদিন ধরে মোটামুটি নিয়মিত চর্চা করা যায় ততই আপনি ভাল করবেন। এখানে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম খুব বেশি ইফেক্টিভ না।
প্রথমেই ভাষা নিয়ে কিছু কথা বলি। আমার এক প্রিয় ছোটভাই অহন একদিন বলেছে, বাংলাদেশ হইল মজার এক জায়গা। এইখানে আর কিছু না জেনে শুধুমাত্র ইংরেজী ভাল জানলেই ভাল ক্যারিয়ার নিশ্চিত। কথাটা বেশ খাসা। দুবার শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলাম, দেখি মুদি দোকানদার, সবজিওয়ালা যেই পটাস পটাস ইংরেজী বলে তা শুনলে আমাদের অনেক ডাকসাইটে বড়কর্তারাও লজ্জাই পাবেন। তাই বলছি, বাংলাদেশে ভাল ক্যারিয়ারের জন্য স্ট্যন্ডার্ড ইংরেজী জানা মাস্ট না হলেও এটা আপনাকে সবজায়গায় আনফেয়ার এমাউন্ট অফ এডভান্টেজ এনে দেবে । ভাল ইংরেজি লিখতে ও বলতে পারলে ইউ আর অল্রেডি ফিফটি পার্সেন্ট এহেড। এই ধরেণ বিসিএস ভাইভায় সুযোগ বুঝে ঠাস ঠাস করে কিছু ইংরেজী ঝেড়ে দিলেই ভাইভাওয়ালারা মনে করবেন, এই পোলা ব্যাপক ইস্মার্ট, জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখায় মনে হয় তার বিরাট দক্ষতা। এটা আমাদের কলোনিয়াল সেন্টিমেন্ট বা যে কারণেই হক না কেন, আসল ব্যাপার হচ্ছে সিংহ ভাগ পরিক্ষার্থীরা এটা পারে না। যে পারে সে অযথায় আনফেয়ার এডভান্টেজ পায়!!
ইংরেজিতে দক্ষ হতে গেলে যে বিষয়টি বেশি জরুরী সেটি হল কম্বাইন্ড এফোর্ট। এই ধরেণ, এক সাথে গ্রামার, ভোকাবুলারি , পেপার পত্রিকা পড়া শুরু করা যেতে পারে। সাথে পারলে সপ্তাহে একটাদুটা সাবটাইটেলসহ ইংরেজী মুভি দেখলেন। বন্ধুবান্ধবদের সাথে মাঝে মধ্যে ইংরেজীতে বাতচিত করলেন। না হলে , একাই আয়নার সামনে গিয়ে কোন টপিক নিয়ে প্যাচাল পাড়লেন। যতটুকু সম্ভব ততটুকু রেগুলার হওয়া জরুরি। একটা পেপারের আর্টিক্যাল পড়ে অজানা শব্দগুলো নোট করে অর্থ বের করলেন এবং আত্বস্থ করার চেষ্টা করলেন। অনেক শব্দ আপনার নোটে জমে গেলে অবসর সময়ে রিভিশন দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে সাইফুর্স মেন্ট্ররসের এমবিএর জন্য বিষয়ভিত্তিক যে বই গুলো আছে সেগুলো প্র্যাক্টিস করলেন। বেসিক গ্রামারের জন্য চৌধুরী এন্ড হোসেন এর নাইন টেন/ইন্টারমিডিয়েট এর বই, জাকির হোসেনে আ প্যাসেজ টু ইংলিশ গ্রামার বা টিজে ফিটিকডেশ এর কমন মিস্টেকস ইন ইংলিশ এই ধরনের ইংরেজি বইগুলো পড়া যেতে পারে। একটু সময় পেলে এবং আগের বইগুলোতে মোটামুটি কমাণ্ড আসলে পারলে জিআরই টোফেল এর একটাদুটা বই পুস্তক নিয়ে নাডাচাডা করলেন। যতটুকু পারলেন সল্ভ করলেন। বিশ্বাস করেন, প্রাইমারী ইস্কুলের নিয়োগ থেকে শুরু করে দেশে হেন কোন প্রতিযোগীতামূলক পরিক্ষা নেই যে এগুলোর জ্ঞান ফলানো যাবে না।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি, সারাজীবনে সবচেয়ে বেশী স্টাডি করেছি জি আরই এবং টোফেল নিয়ে। সুঃখজনক হলেও সত্য, এদুটো পরীক্ষার পিঁড়িতে এখনো বসা হয়ে উঠেনি। কিন্তু এগুলো সবজায়গায় খুব কাজে দেয়। এমনকি চাকুরির প্রশিক্ষণের ফলাফলের জন্যও। বিসিএস রিটেন পরীক্ষায় দেশপ্রেম/প্যাট্রিয়টিজম টাইপের একটা রচনা এসেছিল। পরীক্ষার কিছুদিন আগে দ্যা ব্রেভ হার্ট এবং ট্রয় মুভিদুটো দেখেছিলাম। ডায়লগগুলো মনে ধরেছিল। রচনা লিখতে গিয়ে ভাল দেখে অনেকগুলো ডায়লগ পরিক্ষার খাতায় কপি করে দিয়েছিলাম। তারপর নিজের লেখা রচনা দেখে নিজেই আবেগে প্রায় কান্দাইলছিলাম। সত্যি কি আমি এত প্যাট্রিয়টিক ?
সাবেক এক গার্লফ্রেন্ড (vodromohila borrtomane amar bou) বেশ কিছুদিন যাবৎ প্যান প্যান করছে। ভদ্রমহিলা কোনটা এম্ফেসাইজ করবে, জিআরই/টোফেল, বিসিএস, ব্যাঙ্ক না হেনতেন? অবশ্যি এ ধরণের ফালতু প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে ( ফালতু একোর্ডিং টূ মি) । আমি বলি, রসুনের কোয়ার মত দেশ-দুনিয়ার এধরণের সকল পরীক্ষার প্রস্তুতির জ্ঞানভান্ডারের পশ্চাৎদেশ এক। খালি সময় ও প্রয়োজনমতো কোয়াগুলি ছাড়িয়ে নিয়ে পরীক্ষার খাতায় বেটে মিশিয়ে দিলেই হয়। তবে আমার স্টাইলের প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস এমবিএ বা অন্য পরিক্ষায় ভাল করার জন্য একদেড় বছরেরও বেশি সময়ের দরকার। তাই দ্রুত সবার জন্য এটা ইফেক্টিভ হবে না।
ভাষা (বাংলা ইংরেজী) এবং বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর জন্য প্রস্তুতির মধ্যে চমৎকার একটি মেলবন্ধন ঘটানো যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যি নিয়মিত বাংলা এবং ইংরেজী পত্রিকা পড়া একটি ফরজ কাজ। পত্রিকায় শুরুটাই করা যায় কলামিস্টদের সাব এডিটরিয়াল দিয়ে। এই জিনিস নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজী পত্রিকা থেকে পড়লে আপনার দুনিয়ার সকল বিষয়ের উপর কলম চালনার বিষয়ে দক্ষতা গড়ে উঠবে। সাধারণ জ্ঞানেও হেল্প পাবেন। পড়ার সময় ভাল ভাল লেখক কলামিস্টদের লেখার স্টাইল গভীরভাবে লক্ষ্য করা যেতে পারে। শব্দের প্রয়োগ, বাক্যের বিন্যাস, বাগধারা, প্রবাদ ইত্যাদিতে বৈচিত্র আনতে হবে বেশি বেশি করে। একজন ভাল লেখক একটি সাধারণ শব্দ যেমন মাদারল্যান্ডকেই সিনোনিম হিসেবে একই রচনায় বিভিন্ন জায়গায় লিখবেন হোম ল্যান্ড, মাই কান্ট্রি ইত্যাদি ভেরিয়েশনে। টানা দুটো বড় কমপ্লেক্স সেন্টেন্স লিখলে পরে একটা দুটা লিখবেন ছোট সিম্পল সেন্টেন্সে। একটা দুটো একটিভ ভয়েস ব্যাবহারের পর একটা পেসিভ ভয়েস ব্যবহার করা যায়। নেরেশনে ভ্যারিয়েশন থাকতে পারে। জাস্ট নিড সাম ভ্যারিয়েশন। তারপর দুটো প্যাসেজের মধ্যে স্বম্পর্ক রাখা যায় আগের প্যাসেজের শেষ লাইনের দু-চারটা শব্দ পরের প্যাসেজের শুরুর লাইনে ব্যাবহার করে। এতে পাঠক আরামবোধ করবেন। আপনার লেখা পড়তে বাধ্য হবেন। এককালে দুঁদে সাংঘাতিক (কন্ট্রিবিঊটর) ছিলাম কালের কন্ঠ সমকাল টাইপের কিছু পেত্রিকায়। এটা বেশ কাজে দিয়েছে। সবার তা দরকার নাই। সময় পেলে এখানে সেখানে বা ফেসবুকে বাংলা ইংরেজি মনের মাধুরী মিশিয়ে এটা সেটা লেখার চেষ্টা করা যেতে পারে। দেখবেন কাজে লাগবে।
গণিত বিষয়ে যারা একটু কাঁচা তারা ক্লাশ সিক্সের গণিত বই দিয়ে শুরু করে ক্লাস নাইনে গিয়ে থামতে পারেন। তয় সাথে সাথে সমাধান করতে না পারলে চট করে নোটবই না দেখাই ভাল। নিজে সময় নিয়ে চেষ্টা করলে আস্তে আস্তে মাথা খুলতে থাকবে। অঙ্ক সমাধান না পড়ে হাতে করার মান্সিকতা থাকা জরুরী। সাথে পরীক্ষার জন্য বাজারের যে কোন বই বুঝে সল্ভ করলেই চলবে।
এমসিকিউ পরিক্ষার জন্য বিষয়ভিত্তিক মোটামুটি একটা ধারণা নেবার পর যত বেশী সম্ভব প্রশ্ন, মডেল কোশ্চেন সলভ করতে হবে। এতে বেশি মনে থাকে। সময় থাকলে ক্লাস ফাইভ থেকে ক্লাস টেনের সমাজ, বিজ্ঞান, ভূগোল ইতিহাস এই ধরণের বিষয়ের বইগুলোতে চোখ বুলাতে পারেন।
কোচিং জরুরৎ নহে। তবে অনেকেই নিজে নিজে পড়ার যথেষ্ট বেগ পান না। বেগ আনয়নের জন্য যাওয়া যেতে পারে।
আরেকটু জ্ঞান দেই ভাই? সময়টার সর্বোচ্চ কার্যকরী ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজন। ধরেন আপনি টিউশনি করেন। বাসে যেতে এক দেড় ঘন্টা বা তারো অধিক সময় পান। তখন একটা বই, বইয়ের কাটা খন্ডিত অংশ পকেট থেকে বের করে পড়া শুরু করে দেবেন। লোকজন হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে পারে। প্রথমদিকে আন-ইজি লাগবে। আস্তে আস্তে ধাতস্ত হয়ে যাবেন, একসময় বাসে-গাড়িতে পড়া নেশা হয়ে যাবে। পরেরদিকে যানবাহনে অলসভাবে বসে থাকতেই বিরক্ত লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে চাকুরী-প্রতিযোগিতার পড়াশোনা আমার বাসে-গাড়িতেই হয়েছে। এই জন্য ক্লোস ফ্রেন্ড ভাই-ব্রাদারেরা মনে করত এই পোলায় ব্যাপক মাল (maler emo) !!! কোন কিছুই পড়তে দেখি না পরীক্ষায় আবার ভাল করে। তবে ব্যাপারটি সেরকম কিছুনা, বিশ্ববিদ্যালয় লাইফের বেশিরভাগ টিঊশনইগুলোই ছিল অনেক দূরে দূরে। প্রতিদিন এভারেজে ৪-৫ ঘন্টা আমার বাসের মধ্যেই পড়া হয়ে যেত। স্টুডেণ্টকে এক্সারসাইজ করতে দিয়ে আপনি মাঝে মধ্যে তার সমাজ, বিজ্ঞান, গ্রামার অঙ্ক বইগুলো দেখে নিতে পারেন। পরে দেখবেন এইটাও বেশ কাজে লাগে।
সর্যি, অনেক আতলামি করে ফেললাম। এইবার ভাগি। লেখাটি বিন্দুমাত্র কারো কাজে লাগ্লে বিরাট খুশি হব। বিষয়ভিত্তিক নির্দিষ্ট কিছু জানার থাকলে কমেন্টসে দিবেন। চেষ্টা করব। ভাল না লাগ্লে প্লিজ আজে বাজে কিছু লিখবেন না। কেঁদে ফেলব কিন্তু।
তৌহিদ
বিসিএস প্রশাসন (৩০তম বিসিএস, ২১তম স্থান)
এম্বিএ,আইবিএ, ৪৬ব্যাচ ( এখনো শেষ করবার পারি নাই)
©somewhere in net ltd.