নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।
মিনিং অব লাইফ - পর্ব ১
------------------ ডঃ রমিত আজাদ
আমার ফুপু চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। উনার কোন ছেলে নাই, তাই দায়িত্বটা আমাকে পালন করতে হলো। উনার মরদেহ শায়িত করার জন্য আমাকে কবরে নামতে হলো। প্রথামতো নরম মাটির উপর নিষ্প্রাণ দেহটি শুইয়ে দিয়ে মুখটি কিবলামূখী করে দিলাম। আমি এখনও জীবন্ত, আমার স্থান আপাততঃ মাটির উপরে। তাই মাটির ঘর থেকে উপরে উঠে এলাম। কাজ শুরু করলো কবরগাহের শ্রমিকরা। বাঁশ দিয়ে ঢেকে, মাটি ফেলতে শুরু করলো কবরে, ধীরে ধীরে ফুপুর নিথর দেহটি অদৃশ্য হতে হতে মাটির আড়ালে ঢেকে গেল। বেশ কয়েক বছর ধরে এমন ঘটে চলছে। আমাদের আগের জেনারেশনের মুরুব্বীরা একে একে বিদায় নিচ্ছেন। প্রতিবারই দাফনে উপস্থিত থেকে কখনো চোখের জল ফেলে, কখনো নীরব শোকে তাদের বিদায় দিচ্ছি। আমি পাশে দাঁড়ানো আমার শিশু ছেলেটির দিকে তাকালাম, মনে মনে ভাবছি, এরপর আসবে আমাদের জেনারেশনের পালা, সেই অনাগত ভবিষ্যতে আমার সন্তানরা আমাকেও এমনি করে বিদায় জানাবে। জন্ম-জীবন-মৃত্যু, এইই এক একটি মানুষের অবধারিত ভাগ্য। একটি গভীর চিন্তা আমার মনকে আচ্ছন্ন করে ফেললো, আচ্ছা এই সব কিছুর অর্থ কি? - হোয়াট ইজ দ্যা মিনিং অব লাইফ?
মাঝে মাঝে একটি করুণ সুর মনে ভেসে ওঠে, গুন গুন করে গাই সে সুর, গানটির কোন কথা নেই, শুধুই সুর - কথা ছাড়া সুর হয় নাকি? হয়, কারণ কথাটি তো আমি জানিনা, কেবল সুরটি জানি, সেটি করুণ সুর, আমার অজ্ঞতা, বিস্ময় আর বিষন্নতার আবেগটুকু শুধু ফুটিয়ে তোলে।
আমার সন্তানটি জন্মানোর কয়েকদিন পর শুধু কাঁদছিলো, ইতিউতি তাকাচ্ছিলো, তার চাউনি ও এক্সপ্রেশন দেখে মনে হচ্ছিলো সে একটা ভীষণ বিপদে পড়েছে। এ কোথায় এলো সে, তার চারপাশে সব কি? সে নিজেই বা কে? ইত্যাদি। ওর মা ওকে শান্ত করার জন্য বলছে, "কাঁদেনা বাবা, কাঁদেনা, দেখ কত সুন্দর সব কিছু, ঐ নীল আকাশ, ঐ রঙিন মেঘ, কতো গাছ, (বেলকুনিতে সদ্য ফোটা বাগানবিলাসের ঝার দেখিয়ে বলল), কত ফুল, কত সুন্দর পৃথিবী! ছেলেটি অবাক বিস্ময়ে মার দিকে তাকায়, যেন তার মনে কেবল একটাই প্রশ্ন, "এই সব কিছুর অর্থ কি?"
ছোটবেলায় অভিভাবকরা বলতেন, "ভালোভাবে লেখাপড়া করো, জীবনে বড় হতে হবে।" কি এই বড় হওয়ার মানে, সময়ের সাথে সাথে মানুষের দেহের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বাড়ে, মুখমন্ডলে পরিপক্কতার ছাপ পড়ে, এটাই কি বড় হওয়া? না বড় হওয়া বলতে মুরুব্বীরা বোঝাতেন, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, আমলা, এ্যাডভোকেট, ধনী ব্যবসায়ী, প্রফেসর, এই সব আরকি।
ধর্মশিক্ষা ক্লাসে শিক্ষক বলতেন, "মূল উদ্দেশ্য হলো বেহেশতে যাওয়া, সেই লক্ষ্যে এই দুনিয়ায় ভালো ভালো কাজ করতে হবে। ভালো-মন্দের পার্থক্য কি, এই বিষয়ে ধর্মগ্রন্থে বিষদ বলা আছে।"
যখন প্রথম প্রেম আসে, মানুষের মনে হয় জীবন অসম্ভব সুন্দর! ভালোবাসার মানুষটির হাতে একরাশ ফুল তুলে দিয়ে মনে হয়, জীবনের অর্থ খোঁজার আর কি প্রয়োজন? এই তো জীবন। জীবনের এই দীর্ঘ পথচলা যেন হয় এই প্রিয়জনটির সাথেই। এমন একজনার পাশে থেকে একটি জীবন অনায়াসে পার করে দেয়া যায়। নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্নে একে অপরের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়া যায় - 'আমার না যদি থাকে সুর, তোমার আছে তুমি তা দেবে, তোমার গন্ধহারা ফুল আমার কাছে সুরভী নেবে, এরই নাম প্রেম, এরই নাম প্রেম'। নানা কারণে যখন বিচ্ছেদ আসে - তখন মনে হয়, জীবন একেবারেই অর্থহীন। বেঁচে থাকার আর কোন অর্থই নেই, কি হবে বেঁচে থেকে? এই পর্যায়ে প্রচন্ড হতাশা ও দুঃখবোধ থেকে কেউ কেউ আত্মহত্যা করে, জীবনকে অর্থহীন মনে করে নিজেকে শেষ করে দেয়।
সময়ের সাথে সাথে কমে আসে শোকের তীব্রতা, একজন মানুষের শূণ্যস্থান পূরণ করে অপর একজন মানুষ। প্রথম প্রেমের আবেগটি হয়তো থাকেনা, কিন্তু কেবলই একাকীত্ব ঘোচানোর জন্য, এই শূণ্যস্থান পূরণের প্রয়োজন দেখা দেয়। নতুন করে আবার মনে প্রশ্ন জাগে, জীবনের অর্থ কি?
সন্তান ঘরে আসলে হাসি, আনন্দ, খেলা, মিষ্টি মিষ্টি আধো কথা, হুটোপুটি-ছুটোছুটি করে ঘর আলো করে তোলে। শিশুর মায়া হাসিতে বিশ্ব ভোলে। তখন মনে হয়, প্রয়োজন নেই জীবনের অর্থ খোঁজার, অন্ততপক্ষে ওদের জন্যই বেঁচে থাকতে হবে।
অনেকে এইসব গভীর ভাবনার কোন প্রয়োজনই মনে করেনা। জীবনকে কেবলই উপভোগ করতে চায়। বৈধ-অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনের মধ্যেই ডুবে যায়। বৈধ পথে অর্থ বেশী আসেনা, তাই বিপুল অর্থ উপার্জনের অবৈধ অথচ সহজ পথটিই বেছে নেয়। টাকার পালঙ্কে শুয়ে ভাবে, এটাই তার এচিভমেন্ট - 'আমার অর্থ-বিত্ত আমাকে দিয়েছে প্রভাব-প্রতিপত্তি, আমিই তো জীবনে সফল'। কিন্তু, সেটাই কি শেষ? একবার এক দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিবিদকে দেখেছিলাম অকালে মৃত তার একমাত্র তরুণ ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অঝোর ধারায় কাঁদছে। আমার তখন খুব জানতে ইচ্ছে করছিলো, ঐ মুহুর্তে সে কি ভাবছে? যেই ছেলের জন্য অপরের ক্ষতি করে এত কিছু করলো, সেই তো চলে গেল। ঠিক সেই সময়ে, সে কি জীবন-মৃত্যুর খেলা নিয়ে ভেবেছিলো, জীবনের অর্থ খুঁজেছিলো?
জীবনের অর্থ খোঁজার জন্য বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন দার্শনিক তত্ত্ব ও মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেক সময় সংশ্লিষ্ট অন্য তত্ত্ব ও মতবাদ থেকেও জীবনের অর্থ বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব এই সিরিজে। পাঠকদের গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।
(চলবে)
জানি তবু জানি,
নারীর হৃদয় প্রেম শিশু
গৃহ নয় সবখানি,
অর্থ নয় কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়,
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়,
আমাদের অন্তর্গত রক্তের মাঝে খেলা করে,
ক্লান্ত করে, ক্লান্ত করে,
ক্লান্ত, ক্লান্ত করে
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩৪
রমিত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১২
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ১ম ভালোলাগা +++++++++
লিখে যান । থামবেন না । ইমন ভাই কিন্তু কখনও থেমে যান নি । আমাদের লেখা আজাইরা পোষ্টে হয়তো অনেক কমেন্ট পরে , কিন্তু সেখানে শেখার কিছু নাই । আমি ভালো লিখি না । কিন্তু আপনারা যারা ভালো লেখেন তারা থামবেন না কিন্তু ।
ভালো থাকবেন
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪১
রমিত বলেছেন: না অপূর্ণ আপনিও অনেক ভালো লেখেন। আপনার লেখা তো স্টিকি পোস্টও হয়েছে। আপনার লেখালেখির গুন ও আগ্রহ আমাকে মুগ্ধ করে।
ইমন ভাই আমার বন্ধুর বন্ধু ছিলেন, খুব খারাপ লেগেছে যেদিন উনি চলে গেলেন। উনার উপরে একটা লেখা দেয়ার ইচ্ছে আছে। সময় হলেই লিখব।
লন্ডনে আপনাদের আন্দোলন চালিয়ে যান। বিশ্ববাসী দেখুক বাংলাদেশে সুস্থ চিন্তার দেশপ্রেমিকরাও আছে। আমি স্বপ্ন দেখি একদিন আমার দেশ মাথা তুলে দাঁড়াবে।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১৭
বিকেল বলেছেন: স্যার আপনার উপস্থাপনায় জাদু আছে যা মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে, ভাবতে শেখায় জীবন নিয়ে ।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ।