নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।
বিষণ্ন বিরিওজা - ৬
---------------- ডঃ রমিত আজাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)
তাতিয়ানাঃ কই? আজও পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছো? ভিতরে ঢুকতে দাও।
আমিঃ ও হ্যাঁ হ্যাঁ, আসো ভিতরে আসো। (বিব্রত হয়ে বললাম আমি)
বিন্দুমাত্র জড়তাহীন, সাবলীল ভঙ্গিতে ডিভানে গিয়ে বসলো ও।
তাতিয়ানাঃ কি করো?
আমিঃ কিছুনা।
তাতিয়ানাঃ টিভি দেখছো? সেট তো অন করা আছে?
আমিঃ আঁ, হ্যাঁ, সেট অন করা আছে। জাস্ট অন আর কি। আমি মনোযোগ দিয়ে কিছু দেখছিলাম না।
তাতিয়ানাঃ একা একা খারাপ লাগেনা?
আমিঃ একা মানে, না। রূমে একা থাকতেই ভালো লাগে। রূমমেট না থাকাই ভালো। গত কয়েক বছর ধরে আমি একাই আছি। শুধু প্রথম বছর রূমমেট ছিল। নানা ঝামেলা হয়।
তাতিয়ানাঃ কি ঝামেলা হয়?
আমিঃ এই তো। একসাথে থাকার অনেক ঝামেলা। রান্নাবান্না, বাজারঘাট, মেস বিল, গেস্ট, বন্ধুবান্ধব, ঘুমের টাইম সবকিছু নিয়েই মিসম্যাচিং। সেই থেকে মনমালিন্য, ইত্যাদি। তার চাইতে একাই ভালো।
তাতিয়ানাঃ তোমার রূমমেইট কি রাতে মেয়ে নিয়ে আসতো? তারপর বলতো, "আজ রাতটা তুমি অন্য কোথাও কাটাও, আমি ওকে নিয়ে এখানে থাকবো", এরকম?
তাতিয়ানার চোখে দুষ্টু হাসি চিকচিক করছে। আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। ভাবলাম ও হঠাৎ এরকম কথা বলছে কেন? কথা ঘোরানোর জন্য বললাম
আমিঃ আজ প্রোস্তা মারিয়া দেখতে এলেনা যে?
তাতিয়ানাঃ তুমি আমার জন্যে অপেক্ষা করেছিলে?
কি উত্তর দেব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।
আমিঃ না, মানে প্রতিদিনই তো আসো। তাছাড়া তুমি বলেছিলে, সিরিজটা তুমি পছন্দ করো, কোনো এপিসোড মিস করতে চাওনা।
তাতিয়ানাঃ মিস করিনি তো।
আমিঃ মানে?
রিনরিনে শব্দ করে মিষ্টি হেসে বললো
তাতিয়ানাঃ তুমি বোধহয় প্রোস্তা মারিয়া রেগুলার দেখোনা।
আমিঃ না সেরকম উৎসাহ নিয়ে তো কখনোই দেখিনি। তোমার সাথেই যা দেখা।
তাতিয়ানাঃ আমার সাথে তো মাত্র তিনদিন দেখলে। যাহোক, আজ মারিয়া দেখায় না।
আমিঃ মানে?
তাতিয়ানাঃ সপ্তাহে দুইদিন মারিয়া বন্ধ।
আমিঃ ও তাই? কি কি বারে বন্ধ?
তাতিয়ানাঃ আজ সোমবার, আর কাল মঙ্গলবার। বাকী পাঁচদিন চলে।
আমিঃ ও। তাহলে তো তুমি আমার এখানে দুইদিন আসবে না।
তাতিয়ানা আবারো চোখে কৌতুক নাচিয়ে বললো।
আমিঃ এই কনক্লুশন ড্র করছো কেন? আজতো মারিয়া দেখায়নি, কিন্তু আমি তো এসেছি।
আমিঃ ও, হ্যাঁ।
তাতিয়ানাঃ কি হ্যাঁ?
আমিঃ কিছুনা।
তাতিয়ানাঃ কিছুনা কি? কিছু কি বলতে চাইছিলে?
আমি ঠিক ধরতে পারছিলাম না, কথা কোনদিক থেকে কোনদিক চলে যায়। নাহ্, চিন্তাভাবনা না করে কথা বলা যাবেনা। প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য আমি বললাম
আমিঃ এসো কফি খাই।
তাতিয়ানাঃ তুমি ডিনার করেছো?
আমিঃ না।
তাতিয়ানাঃ তাহলে কফি কি খাবে? আগে ডিনার করো। রাত সাড়ে নয়টার মতো বাজে।
আমিঃ উঁ, ডিনার আমি একটু লেটেই করি, তুমি খাবে আমার সাথে?
তাতিয়ানাঃ এত রাতে কি খাবো? আমরা রাশানরা রাত আটটার মধ্যেই ডিনার সেরে ফেলি জানোনা?
আমিঃ তা জানি। কিন্তু তোমার সামনে একা একা খাই কি করে?
তাতিয়ানাঃ তাহলে আমি চলে যাই।
আমি একটা সংকটে পড়লাম। ওকে চলে যেতে বলি কি করে? এটা অভদ্রতা হবে, তাছাড়া কেন যেন ওর সাথে কথা বলতে ভালোও লাগছিলো। আবার ওর সামনে খাওয়াটাও তো ঠিক হবে না।
আমিঃ না থাক, আমি পরেই ডিনার করবো। এখন বরং কফি খাই।
তাতিয়ানাঃ তার চেয়ে তুমি বরং ডিনার করো। আমি যাই। তবে মন খারাপ করোনা। একেবারে যাচ্ছি না। ঠিক আধাঘন্টা পরে ফিরে আসছি। আশা করি ততোক্ষণে তোমার ডিনার করা হয়ে যাবে।
আমিঃ কষ্ট করে আসলে, আবার যাবে, আবার আসবে!
তাতিয়ানাঃ ভারি আশ্চর্য্য কথা! আমি কি শত কিলোমিটার দূর থেকে আসা যাওয়া করি নাকি? আমি তো এই ফ্লোরে তোমার পাশের রূমেই থাকি।
আমিঃ ও হ্যাঁ, তাইতো।
তাতিয়ানাঃ তাইইতো। থাকো, ডিনার করে আমি ফিরে আসলে পরে একসাথে কফি খাবো।
একটি লাস্যময় ভঙ্গিতে ডিভান থেকে উঠে, দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল তাতিয়ানা। আমি চোরা চোখে দেখলাম। মেয়েটি আর দশটা রাশান মেয়ের মত চোখ ধাঁধানো সুন্দরী নয় সত্য, কিন্তু মেয়ে তো। তাই মেয়েলী ভঙ্গিমা, দৃষ্টি, চলন, কথা বলার ধরন, ইত্যাদি আর দশটা মেয়ের মতই নজর কাড়া। অন্ততপক্ষে আমার কাছে তো তাই মনে হয়।
আমি গতকাল রান্না করে রাখা খাবার ফ্রীজ থেকে বের করে নিয়ে, গরম করার জন্য কিচেনের দিকে গেলাম। পিক আওয়ারে আট টা চুলাই বিজি হয়ে যায়, তবে এখন হবে না। তারপরেও একটা চুলা বিজি পেলাম। আমারই মতো কেউ হয়তো। একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেন থাকলে ভালো হতো। দ্রুত গরম করা যেত। কিনে নেব নাকি একটা? পরক্ষণেই ভাবলাম, না দরকার নাই। মাইক্রোওয়েভ ওভেন ভালো জিনিস না। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করা খাবার ক্ষতিকর হয়। ইলেকট্রোম্যগনেটিক ওয়েভ যে কি ক্ষতি করতে পারে নিজে ফিজিসিস্ট হয়ে আমি তা জানি। যে কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নে একসময় তা মার্কেট থেকে তুলে নেয়া হয়েছিলো।
ডিনার খেতে খেতে ভাবছি। আধঘন্টা পর আসবে বললো। আসতেই পারে। সত্যিই তো, শত মাইল দূর থেকে তো আর আসে না। দুটা রূম পরেই থাকে। ছেলেমেয়ে এক হোস্টেলে থাকার এই ইউরোপীয় সিস্টেমটায় আমি প্রথমে একটু ধাক্কা খেয়েছিলাম সত্য, কিন্তু সেই আমিই মাসখানেক পরে উপলদ্ধি করেছিলাম যে এটা ভালো। প্রথম যখন এই দেশে আসি, ল্যাংগুয়েজ কোর্সে আমরা বিশজন বাঙালী ছিলাম। আমাদের কিছু বাঙালী বন্ধু বলেছিলো, " আরে সালা, হেভি সিস্টেম তো, ইউরোপে আইছি তো যত বেশী ফুর্তি করন যায়। পোলা-মাইয়া এক হোস্টেলে দিয়া তো দশ ডিগ্রী বেশী সুবিধা দিয়া দিল।" আমি অবশ্য সেই মতে বলছি না। বিষয়টার পজেটিভ দিক রয়েছে। আমাদের ব্যাচে নুরুন্নবী বলে একজন ছিল। নোয়াখালী বাড়ী। সেই কারণেই হয়তো একটু ধর্মভীরু। আমাদের মধ্যে ও সবচাইতে বেশী চঞ্চল ছিলো যদিও কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে কোন গাফিলতি করতো না। ও একদিন বললো, "এই যে এখানে ছেলেমেয়ে এক হোস্টেলে থাকে এটা ভালো রে। নারী-পুরুষের মধ্যে যত বেশী দূরত্ব সৃস্টি করা হয়, পরস্পরকে বুঝতেও তত বেশী সমস্যা হয়। এই দূরত্ব কমিয়ে আনলেই বরং নারী-পুরুষ সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।" আমি বলেছিলাম, "এতে বেলেল্লাপনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়না কি?" নুরুন্নবী বলেছিলো, "এখানে তো সবাই ম্যাচিউরড্, ভালো-মন্দের ফারাক তো সবাইই বোঝ. কিছু করলে নিজ দায়িত্বেই করবে"।
আমি ডিনার শেষ করে কফি তৈরীর জন্য ইলেকট্রিক কেট্লটা বসালাম। চিনি ও গুড়া কফির পটটা টেবিলের উপর রাখলাম। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম, দশটা পনের মিনিট বাজে। টুক, টুক, টুক, দরজায় নকের আওয়াজ। নিশ্চিত ছিলাম, এটা তাতিয়ানা। তাই নিজে দরজা না খুলে, একটু উচ্চস্বরে বললাম,
আমিঃ ইয়েস, কামইন।
কফির কাপ সাজানো নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তাই দরজার দিকে তাকাইনি।
"রিমন"।
মেয়েলী কন্ঠের ডাক, তবে তাতিয়ানার কন্ঠস্বর নয়। আরে ঝামেলা! এত রাতে আবার কোন মেয়ে এলো! তাকিয়ে দেখি দাঁড়িয়ে আছে আমার ক্লাসমেট অপরূপ সুন্দরী ইরিনা।
আমি ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম।
ইরিনা, আমার আর কফি টেবিলের দিকে তাকিয়ে বললো,
ইরিনাঃ কেউ আসবে?
আমি কি উত্তর দেব বুঝতে পারছিলাম না।
আমিঃ বস ইরিনা।
ইরিনাঃ কফি খাওয়াবে।
আমি অনেকটাই অপ্রস্তুত। বুঝতে পারছি না কি বলবো। ইরিনা আয়েশী ভঙ্গিতে ডিভানে বসে গেল।
ইরিনাঃ খাওয়াও তাহলে কফি।
আমিঃ উঁ, হ্যা, ওয়েট, বানাচ্ছি।
এসময় খোলা দরজা দিয়ে গটগট করে ঢুকে গেল তাতিয়ানা। ওর হাতে কাগজের ছোট্ট একটা প্যাকেট। ভিতরে ঢুকে ডিভানে ইরিনাকে দেখে আর আমার হাতে কফির কাপ দেখে, বেশ অপ্রতিভ হয়ে গেল তাতিয়ানা, মনে হলো যেন একটা ধাক্কা খেয়েছে। তাতিয়ানা অনেকটা আহত ভঙ্গিতে বললো
তাতিয়ানাঃ আমি তাহলে যাই ।
আমি আরও সংকটাপন্ন হয়ে বললাম
আমিঃ না, না যাবে কেন? বসো।
তাতিয়ানাঃ না, মানে তোমরা কফি খাও তাহলে। আমি যাই।
ইরিনাকে দেখলাম বেশ কৌতুহলী হয়ে ওকে অবসার্ভ করছে।
আমিঃ না, তুমি বসো। আমরা তিনজনে মিলেই কফি খাবো।
তাতিয়ানা আমার দিকে কাগজের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিলো।
আমিঃ কি এটা?
তাতিয়ানাঃ ফ্রেশ বিনের কফির গুড়া। এই মাত্র গুড়ো করে এনেছি।
আমিঃ ওহ্, দারুন তো! আই লাইক ইট।
তাতিয়ানাঃ লাইক ইট তো বলছো, কিন্তু খাও তো, সাধারণ কফি।
আমিঃ আরে এটাও তো বিন থেকে করা।
তাতিয়ানাঃ কি করে জানলে? গুড়া করার সময় তুমি ছিলে?
ইরিনাঃ এই কৌটার গুলোয় ভেজাল থাকে বলে অনেকে মনে করে, তাই অনেকে কফি বিন কিনে নিজের হাতে গুড়া করে খায়।
তাতিয়ানাঃ আর এটার টেস্টও বেশী।
আমিঃ ও। তাহলে আমি বানাই।
কফি বানানো হলে কফির খুব সুন্দর মিষ্টি গন্ধে ঘর ভরে গেল। আরও একটা মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছিলাম। কেউ একজন কড়া পারফিউম ব্যবহার করেছে হয় তাতিয়ানা নয়তো ইরিনা।
আমি লক্ষ্য করলাম ওরা দুজন নিজেদের মধ্যে কোন কথা বলছিলো না। টুকটাক দুএকটা কথা আমি বলছিলাম। আর তার ফাঁকে ফাঁকে ওরা দুজন দুজনকে দেখছিলো। কফি খাওয়া শেষ হলে। তাতিয়ানা বললো
তাতিয়ানাঃ আমি তাহলে যাই।
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। আবার ইরিনা তখনো বসে আছে। যাওয়ার কথা মুখেই আনছে না। অবশেষে বললাম।
আমিঃ আচ্ছা যাও, ভালো থেক।
তাতিয়ানাঃ গুড নাইড।
সেকি হতাশ হয়ে বললাম জানিনা। তাতিয়ানা চলে যাওয়ার পর। চোখে কৌতুক নাচিয়ে ইরিনা বললো।
ইরিনাঃ মেয়েটি কে?
আমি শীতল কন্ঠস্বরে বললাম।
আমিঃ এই তো। এই ফ্লোরেই থাকে।
ইরিনাঃ কই আগে তো কখনো দেখি নাই।
আমিঃ ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী, মাত্র এসেছে।
ইরিনাঃ ও তাই বলো। (মুখে আরো কৌতুক এনে বললো) তোমাদের মধ্যে কি কিছু চলছে?
আমিঃ (বিরক্ত হয়ে বললাম) কি চলবে? মেয়েটা তো এই সেদিন এলো।
রিনরনে হেসে ইরিনা বললো।
ইরিনাঃ তুমি চিরকালের বোকাই রয়ে গেলে রিমন।
আমিঃ কেন?
ইরিনাঃ তোমাকে সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে দেখে আসছি। মেয়েদের মনের কথা বুঝতে পারো না।
আমিঃ এমন কথা বলছো কেন?
ইরিনাঃ তোমার রেগিনার কথা মনে আছে?
আমিঃ আছে। রেগিনা আবার কি হলো?
ইরিনাঃ রেগিনা কিন্তু তোমাকে ভীষণ পছন্দ করতো। অথচ তুমি সেটা ধরতেও পারোনি।
আমিঃ জানিনা।
ইরিনাঃ আকসানা তো তোমার পিছনে ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে, অবশেষে রোমানকে বিয়ে করলো। আহা বেচারী! রিমনকে না পেয়ে রোমানকে পেল।
আকসানার কথা শুনে আমি একটু শক্ত হয়ে গেলাম। আকসানা এই হোস্টেলেই থাকতো। মাঝে মধ্যে আমার রুমে আসতো, চা খেয়েছি গল্প-গুজব হয়েছে। এর বেশী তো কিছু ছিলনা! দুবছর আগে ওর বিয়ে হয়ে শ্বশুড় বাড়ীর এ্যাপার্টমেন্টে উঠে গিয়েছে। আকসানা বাইরের শহরের, ছেলেটা খারকভেরই।
আমিঃ আকসানা তো কখনো কিছু বলেনি।
ইরিনাঃ সমস্যাটা তো ওখানেই। তোমার মতো ছেলে মেয়েদের মনের কথা বুঝতে পারেনা, তোমাকে বলতে হয়। মেয়েরা কি সব কিছু মুখ ফুটে বলতে পারে?
আমিঃ অনেকেই তো বলে।
ইরিনাঃ না অনেকেই না, কেউ কেউ বলে। সেই কেউ কেউ-এর দলে আকসানা ছিল না। তোমাদের দেশের মেয়েদের চাইতে আমাদের জড়তা হয়তো কম, তারপরেও আমরা মেয়ে কিন্তু।
আমিঃ আকসানা বললেই পারতো।
ইরিনাঃ তা হয়তো পারতো। কিন্তু তোমার দৃষ্টিতে শীতলতা দেখে আর কিছু বলতে চায়নি।
আমি বেশ বিব্রত হলাম। কথাবার্তা কেমন যেন হচ্ছে। হৃদয় ঘটিত বিষয় নিয়ে এমন আক্রমণাত্মক কথা আমাকে ইতিপূর্বে আর কেউ বলেনি। আকসানার বিষয়টা কখনো ঘুণা্ক্ষরেও টের পাইনি। তাছাড়া টের পেলেও যে কিছু হতো তাও তো না।
উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ইরিনা বললো।
ইরিনাঃ দেখো, এই মেয়েটিকে আবার নিরাশ করোনা যেন।
আমি কোন কিছু বলার কোন ভাষাই খুঁজে পেলাম না।
ইরিনাঃ আমি আসলে কফি খেতে আসিনি, তোমার কাছে এসেছিলাম ল্যাবের খাতাটা নিতে। গত ল্যাব ক্লাসে আমি এ্যাটেন্ড করতে পারিনি।
আমি তাড়াতাড়ি ওকে খাতাটা বের করে দিলাম। আপদ বিদায় হলে বাঁচি।
ইরিনা চলে যাবার পর, কিছু সময় বসে রইলাম। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে ছিলো। ইরিনা যেসব কথা বললো, তাতে মেজাজ ঠিক থাকার কথা না। রেগিনা আমাদের দুবছরের সিনিয়র ছিলো। পাশ করে ওর সিটিতে চলে গেছে। এই ডরমিটরিতেই থাকতো। আমাকে তার ভালো লাগতো তাতো আমি জানতাম না। আকসানার বিষয়টাও জানতাম না। আসলে ওদের ব্যাপারে আমার আগ্রহ কিছু ছিল না। কিন্তু অন্যেরা কি জানতো? না জানলে ইরিনা এতো কথা বললো কি করে? সর্বনাশ!
যাকগে যা হয়েছে হয়েছে। আমি তো আর কিছু করি নাই। অনেক রাত হয়েছে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়া দরকার। ডিভানটা খুলে বিছানাটা গুছালাম। শুতে যাব এমন সময় আবারো। টুক, টুক, টুক, দরজায় নক হলো। আবার কে এলো এত রাতে? এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম। খুব সুন্দর সেজেগুজে তাতিয়ানা দাঁড়িয়ে আছে।
(চলবে)
তুমি না হয় রহিতে কাছে
কিছুক্ষণ আরো নাহয় রহিতে কাছে
আরো কিছু কথা নাহয় বলিতে মোরে
এই মধুক্ষণ মধুময় হয়ে নাহয় উঠিত ভরে।।
সুরে সুরভীতে নাহয় ভরিত বেলা
মোর এলো চুল লয়ে বাতাস করিত খেলা।
ব্যাকুল কত না বকুলের কুড়ি
রয়ে রয়ে যেত ঝরে
ওগো নাহয় রহিতে কাছে।।
কিছু দিয়ে নিয়ে ওগো মোর মনময়
সুন্দরতর হতো নাকি বলো
একটু ছোঁয়ার পরিচয়।
ভাবের লীলায় নাহয় ভরিত আঁখি
আমারে নাহয় আরো কাছে নিতে ডাকি।
নাহয় শোনাতে মরমের কথা
মোর দুটি হাত ধরে
ওগো নাহয় রহিতে কাছে।।
২৭ শে মার্চ, ২০১৩ ভোর ৪:২৮
রমিত বলেছেন: উপরের লিংকে বিষণ্ন বিরিওজা -৫, পাবেন।
২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ ভোর ৪:৪৯
বাংলাদেশী দালাল বলেছেন: গল্প সুন্দর লিখছেন। এত গুল মেয়ের মন বুজলেন না। দেশে কাওকে রেখে গিয়েছিলেন নাকি।
২৭ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:০৪
রমিত বলেছেন: আগের পর্বে লুবনার কথা বলা হয়েছে তো।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
৩| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:২৭
শেরজা তপন বলেছেন: 'মাইক্রোওয়েভ ওভেন ভালো জিনিস না। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করা খাবার ক্ষতিকর হয়। ইলেকট্রোম্যগনেটিক ওয়েভ যে কি ক্ষতি করতে পারে নিজে ফিজিসিস্ট হয়ে আমি তা জানি। যে কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নে একসময় তা মার্কেট থেকে তুলে নেয়া হয়েছিলো।'
সোভিয়েত ইউনিয়নের মর্কেট থেকে মইক্রোওয়েভ তুলে নেবার খবর জানতাম না।
প্রোস্তে মারিয়াআসলই দারুন জনপ্রিয় ধারাবাহিক ছিলআমিও সবার মুখেওর গল্প শুনেছি।
ভাল লাগছে।
২৮ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৮
রমিত বলেছেন: Why Did Russia Ban The Use Of Microwave Ovens?
Click This Link
২৮ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:০১
রমিত বলেছেন: হ্যাঁ সোভি্যেত ইউনিয়নে ১৯৭৬ সালে মাইক্রোওয়েভ ওভেন নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো কারণ তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সেসময় সরকার জনগণের স্বাস্থ্যের কথা ভাবত। পরে ১৯৯০ সালে তা আবার চালু করা হয়, কারণ এরপর আর জনতার স্বাস্থ্যের জায়গায় ক্ষমতাসীনদের ব্যবসাই বেশী গুরুত্ব পায়।
২৮ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:০২
রমিত বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ ভোর ৪:২৭
রমিত বলেছেন: বিষন্ন বিরিওজা - ৫