নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।
হ ম এরশাদের শাসনামল -৩
------------------ ডঃ রমিত আজাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)
(ভুমিকাঃ রাজনীতির ময়দানে এরশাদ খুব ধুর্ত একটি চরিত্র। পুনর্বার রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্ন এরশাদের এম্নি এম্নি নয়। প্রতিশোধস্পৃহা থেকেই এটা হয়েছে। দেশের যে জনগণ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, তাদের তিনি একহাত দেখে নিতে চান। ১৯৯১ সালের দিকে একটা পোস্টার দেখেছিলাম, সেই ছবিতে এরশাদ মুচকি হাসছে আর ছবির ক্যাপশনে লেখা, 'আবার আসিব ফিরে।' আমাদেরকেও এরশাদের এই দূরভিসন্ধি বুঝতে হবে। এরশাদ পুনর্বার রাষ্ট্রপতি হলে তা হবে জনতার গালে একটি চপোটাঘাত।)
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় এরশাদের নাম কেউ ঠিকমতো শোনেও নাই। শুধু এরশাদ কেন, আসলে তখন জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তা এতো বেশি ছিলো যে, ঐ উজ্জ্বল নক্ষত্রের কাছে আর সব জ্যোতিস্কই ছিলো ম্লান। একটি বিশৃঙ্খল অরাজক পরিস্থিতি থেকে দেশকে উদ্ধার করে এনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা্য, জনমনে জিয়া স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন। তার উপর জিয়া উদ্যোগ নিয়েছিলেন বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বের। তাই প্রায়শই উনাকে দেখা যেত বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রধানদের সাথে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টারের সাথে উনার ছবি, বা এলিসি প্রাসাদে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জিয়াকে সম্মান প্রদান, ইয়াসির আরাফাত, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, গাদ্দাফী ইত্যাদি বিশ্ব নেতৃবৃ্দের সাথে তার সাক্ষাৎ এ সবই ছিলো মনে দাগ কাটার মতো। তার উপর বিশ্ব নন্দিত নেতা যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে বিবদমান দুটি বৃহৎ শক্তি আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ের প্রধানগণই যখন উপস্থিত হলেন তখন সকলেরই দৃষ্টি ছিলো, কে প্রথম ফুল দিতে যাবে টিটোর সমাধিতে? মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার না সোভিয়েত প্রধান লিওনিদ ব্রেঝনেভ? যুগোশ্লাভিয় সরকারের জন্যও ছিলো কঠিন কুটনৈতিক পরীক্ষা। অবশেষে সকলকে অবাক করে দিয়ে টিটোর সমাধিতে ফুল দিতে প্রথম এগিয়ে গেলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তারপর গেলেন জিমি কার্টার। সমগ্র বিশ্ব মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিলো এই অনুষ্ঠানটি। এটা শুধু জিয়া নয় সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত পুরো বাংলাদেশের জনগণের জন্যই ছিলো একটি বিরল সম্মাননা। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জিয়ার গ্রহনযোগ্যতা দিন দিন বাড়তেই থাকে। দেশেও তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তেই থাকে। এটা চক্ষুশূল হয়েছিলো অনেকের জন্যই। জিয়ার কাছে পিঠের অনেকেই প্রবলভাবে ইর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ মনে মনে ভাবতে শুরু করে জিয়া পারলে আমি পারবো না কেন? কোনভাবে জিয়াকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করতে পারলে আমিও জিয়ার মতোই হবো। এদের মধ্যে একজন ছিলো জেনারেল মন্জুর।
আমরা লোকমুখে শুনতাম, মন্জুরের সহধর্মিনী প্রায়ই স্বামীকে খোটা দিতো, "দেখো তোমার ঘনিষ্টজন জিয়া কোথায় উঠে গেছে, আর তুমি কোথায় পড়ে আছো!" ইর্ষান্বিত মন্জুরের মনে এটা কাটার মতো বিধতো নিশ্চয়ই। মন্জুরের মনে আরো একটি ক্ষোভ ছিলো, জিয়া তাকে সেনাপ্রধান না করে এরশাদকে কেন সেনাপ্রধান করলো? একই অভিযোগ ছিলো জেনারেল শওকতের। জিয়া বয়সে তরুণ থাকলেও মানসিকভাবে যথেষ্ট ম্যাচিউরড ছিলেন। তিনি বুঝতেন ক্ষমতার চেয়ার কন্টকাকীর্ণ। ওখানে একবার বসলে বহুবিধ ঝামেলা ট্যাকেল করতে হয়।
সৎ ও নিষ্ঠাবান জিয়া আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে খ্যাতি ও দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়ে এতটাই কনফিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন যে, শেষের দিকে তাঁর মনে হয়েছিলো তাকে হত্যার মতো দুঃসাহস অন্ততপক্ষে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি করবে না। কিন্তু ক্ষমতালিপ্সা অনেক সময় বুদ্ধিমান ব্যক্তিকেও নির্বোধ বানিয়ে ফেলে। সেরকম নির্বোধে পরিণত হয়েছিলো জেনারেল মন্জুর। এই নির্বোধের নির্বুদ্ধিতায় আমরা হারালাম একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, দক্ষ, নির্ভীক ও সর্বপোরী দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রপতিকে। তার কয়েক বছর আগে চিরবিদায় নিয়েছিলেন মজলুম জননেতা মাওলানা ভাষাণী। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে খুব ভোরে মন্জুরের পাঠানো ঘাতকের গুলিতে বাংলার আকাশ থেকে ঝরে পড়লো একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, জিয়াউর রহমান। এর ফলে দেশ নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে।
মীরজাফরের নবাবী যেমন এক বৎসরের বেশী টেকেনি, তেমনি নির্বোধ মন্জুর এরপর আর মাত্র দু'দিন বেঁচে ছিলো। হতভাগা নিজেও মরলো দেশকেও মারলো। তবে সে সময় দেশে যে শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছিলো তার পূর্ণ সুযোগ গ্রহন করলেন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ। জিয়াউর রহমান যাকে রাজনৈতিক এ্যাম্বিশনমুক্ত মনে করেছিলেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরপর সেই এরশাদেরই রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ প্রকাশ হয়ে পড়ে।
১৯৮১ সালের ৩০শে মে থেকে পহেলা জুন পর্যন্ত দেশে যে প্রবল টেনশন চলছিলো (কি হয়! কিহয়! কি করে মন্জুরকে দমন করা যায়, বিচারপতি সাত্তার কতটুকু এগুতে পারছেন? মন্জুরকে তিনি মোকাবেলা করতে পারবেন কি?) সে সময় সবার দৃষ্টি পড়ে সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদের দিকে। এই প্রথম তাকে দেখা গেলো টিভি পর্দায়। এই প্রথম তিনি এলেন লাইম লাইটে। তবে খুব একটা সুবিধা তখনও করতে পারেননি এরশাদ। অনেকেই মনে করেন মন্জুরের পতনের পরপরই ক্ষমতা দখলের অভিপ্রায় ছিলো এরশাদের, কিন্তু সৈনিক ও জনগণের জিয়াপ্রীতি দেখে এরশাদ ঘাবড়ে যায়। মন্জুরের পতন ও দেশকে টেনশনমুক্ত করার সাফল্যের পুরো ক্রেডিটটিই পান অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার। জনতার করতালী সাত্তারের উদ্দেশ্যেই ছিলো। সকলেই বলাবলি করছিলো, "বৃদ্ধ সাত্তারকে যেমন ভেবেছিলাম, অতটা দুর্বল তিনি নন, বেশ ভালো সামাল দিয়েছেন। সাবাস শেরে বাংলার শিষ্য! বাঘের শিষ্য বাঘ না হলেও কাছাকাছি কিছু একটা তো হওয়ারই কথা।"
এরপর নির্বাচন, দেশে নতুন রাষ্ট্রপতি আসবেন। কে হবেন এই রাষ্ট্রপতি? কোন দল জিতবে? বিএনপি-র প্রার্থী কে হবেন? বিএনপি কি পারবে জিয়াউর রহমানের মতো আরেকজনকে উপহার দিতে? জিয়ার দাফনের সময় সেখানে অশ্রুসিক্ত নয়নে উপস্থিত হয়েছিলেন জেনারেল ওসমাণী। পত্র-পত্রিকায় সেই সংবাদ ফলাও করে এসেছিলো। এর পূর্ববর্তি নির্বাচনে জেনারেল ওসমাণী ছিলেন আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। পরবর্তিতে আওয়ামী লীগের সাথে তার মতপার্থক্য দেখা দেয়। সেই ওসমাণী যখন বিএনপি নেতাদের সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে জিয়াউর রহমানের দাফন সম্পন্ন করেন তখন সাধারণ মানুষের অনেকেই ভেবেছিলো যে, ওসমাণিই হয়তো বিএনপি থেকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হবেন, তবে তা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাত্তারই হলেন রাষ্ট্রপতি প্রার্থী। দেশের মানুষ এতোদিন তরুণ কর্মঠ জিয়াকে দেখে অভ্যস্ত। তাই সাত্তার সম্পর্কে অনেকেই বলছিলো, "এতো বৃদ্ধ মানুষ! তিনি কি পারবেন এতো ভার বহন করতে?" আবার অনেকেই বলেছেন, "কি আর করা? আর তো কেউ নেই। তাছাড়া কঠিন সময়ে বৃদ্ধ সাত্তারই তো হাল ধরেছিলেন।"
এদিকে থেমে থেমে মাঝে মাঝে বাতাসে ভাসছিলো, নির্বাচন হবেনা। দেশে সামরিক শাসন আসবে। এরশাদ ক্ষমতা নিয়ে নেবেন। বিএনপি রাজনীতিবিদরা দৃপ্ত কন্ঠে বলছিলেন, "কোন সামরিক শাসন নয়, যে গণতন্ত্র জিয়াউর রহমান দিয়ে গিয়েছেন সেই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যহত রাখা হবে। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যে দিয়েই, পরবর্তি রাষ্ট্রপতি আসবেন।" শুরু হলো নির্বাচনের তোরজোড়, প্রধান দুজন প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন বিএনপি প্রার্থী বিচারপতি আবদুস সাত্তার ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডঃ কামাল হোসেন। তৃতীয় শক্তি হিসাবে আবির্ভুত হয়েছিলেন খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা হাফেজ্জী হুজুর। জিয়ার মৃত্যুর শোক বুকে নিয়ে সবাই ভোট কেন্দ্রে গেলো। নির্বিঘ্নে নির্বাচন হয়ে গেলো। অনেক ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হলেন বিএনপি প্রার্থী বিচারপতি আবদুস সাত্তার। দেশবাসী স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। বল তখন আর এরশাদের কোর্টে গেলোনা।
(চলবে)
লেখায় কোন তথ্যবিভ্রাট থাকলে সেটা লেখকের অনিচ্ছাকৃত। পাঠকগণ অনুগ্রহপূর্বক তা ধরিয়ে দেবেন।
০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৮
রমিত বলেছেন: সত্য কথা বলতে সমস্যা কি? দালাল আর সমর্থকে পার্থক্য আছে এটা বোঝেন?
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। তবে আশা করবো তা একলাইনে না লিখে যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রকাশ করবেন।
২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৪
হারান সত্য বলেছেন: আজাদ ভাই,
আপনাকে একটা ওয়েব সাইটের ঠিকানা দিচ্ছি। এই সাইটে প্রকাশিত লেখাগুলির গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য আপনারমত চিন্তাশীল মানুষ প্রয়োজন। আশা করি লেখাগুলি পড়বেন এবং সুচিন্তিত মতামত দেবেন।
মহাসত্যের পরিচয়
ধন্যবাদ
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৯
রমিত বলেছেন: আমি ওয়েব সাইটটি ভিজিট করেছি। ধন্যবাদ।
৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৫
হারান সত্য বলেছেন:
ভিজিট করা জন্য ধন্যবাদ
তবে আমি আশা করেছিলাম আপনি রেজিস্ট্রেশন করে ওখানে প্রকাশিত লেখাগুলিও পড়বেন এবং সুচিন্তিত মতামত দেবেন। লেখাগুলি আপনারমত চিন্তাশীল মানুষের ভাল লাগবে ভেবেই লিংটা দিয়েছিলাম।
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:০১
রমিত বলেছেন: ঠিক আছে আমি রেজিস্ট্রেশন করে ওখানে প্রকাশিত লেখাগুলি পড়বো।
৪| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪১
হারান সত্য বলেছেন:
ধন্যবাদ
আশা করি লেখাগুলি আপনার ভাল লাগবে।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:১৭
বিভ্রান্ত মানুষ বলেছেন: আরে BNP এর দালাল