নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।

রমিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

হ ম এরশাদের শাসনামল - ৪

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৬



হ ম এরশাদের শাসনামল - ৪


---------------------- ডঃ রমিত আজাদ





খুব স্বল্প সময়ের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। তাই উনার সময়কালটা লোকে প্রায় ভুলেই গেছে।



বিচারপতি আবদুস সাত্তার ১৯০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বীরভৃম জেলার বোলপুরের দাড়কা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ এবং ১৯২৯ সালে বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতা জজকোর্টে আইন ব্যবসা শুরূ করেন। তিনি শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের রাজনৈতিক ও পেশাগত শিষ্য ছিলেন। এসময় তিনি এ.কে ফজলুল হকের কৃষক-প্রজা পার্টিতে যোগ দেন। আবদুস সাত্তার ১৯৪১ সালে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতী শুরূ করেন। তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলর (১৯৩৯), কলকাতা ইমপ্রূভমেন্ট ট্রাইবু্নালের অ্যাসেসর-মেম্বার (১৯৪০-৪২) এবং কলকাতা কর্পোরেশনের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (১৯৪৫) হিসাবে দাযি়ত্ব পালন করেন। ভারত বিভক্তির পর আবদুস সাত্তার ঢাকায় এসে (১৯৫০) ঢাকা হাইকোর্টে ওকালতি শুরূ করেন। এ.কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে ১৯৫৩ সালে কৃষক শ্রমিক পার্টি গঠিত হলে তিনি তাতে যোগ দেন। তিনি ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ইব্রাহীম ইসমাইল চুন্দ্রিগডে়র কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রীর দাযি়ত্ব লাভ করেন (১৯৫৭)। আবদুস সাত্তার ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতি এবং ১৯৬৮-৬৯ সালে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন (১৯৬৯-৭২)। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পরিচালনা করেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুস সাত্তার। সত্তরের নির্বাচনের সময় কেন্দ্রে ও প্রদেশে ছিল সামরিক সরকার। সামরিক বাহিনী ছিল নিরপেক্ষ। নির্বাচন কমিশন ছিল নিরপেক্ষ ও স্বাধীন। সামরিক বাহিনী ও নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ না থাকলে নির্বাচনের ফলাফল এদিক-ওদিক হতে পারত বলে অনেকে মনে করেন। প্রশাসক হিসেবে বিচারপতি সাত্তার ছিলেন খুবই অভিজ্ঞ ও দক্ষ। ঐ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এই কারণেই, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সত্তরের নির্বাচন পরিচালনা করার স্বীকৃতি বঙ্গবন্ধুই তাঁকে দিয়েছেন। বিচারপতি সাত্তারকে এসময়ে (১৯৭১) ইসলামাবাদে ডেকে নেয়া হয়, তিনি সে সময়ে পাকিস্তান সরকারে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে গৃহবন্দী করা হয়। সেই গৃহবন্দিত্ব থেকে পালিয়ে আফগানিস্তান হয়ে বাংলাদেশে তিনি ফিরে আসেন ১৯৭৩ সালে। বিচারপতি সাত্তার ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এসে সরকারি চাকুরিতে যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশ জীবন বীমা কর্পোরেশনের পরিচালক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান (১৯৭৩-৭৪), সংবাদপত্র বেতন বোর্ডের চেয়ারম্যান (১৯৭৪-৭৫) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ অ্যাণ্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। আবসুদ সাত্তার ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক আবু সাদাত মোহাম্মদ সাযে়মের বিশেষ উপদেষ্টা নিযুক্ত হন এবং আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালযে়র দাযি়ত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রীক দলের (জাগদল) আহবায়ক ছিলেন বিচারপতি সাত্তার। কযে়ক মাসের মধ্যেই তিনি এই দল বিলুপ্ত ঘোষণা করে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে নবগঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি)-র সহ-সভাপতি পদে যোগদান করেন। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান শহীদ হলে তিনি দেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দাযি়ত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০ নভেম্বর ১৯৮১ থেকে ১৯৮২ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তদানিন্তন সেনা-প্রধান হ ম এরশাদের এক সামরিক অভ্যুত্থানে বিচারপতি আবদুস সাত্তার ক্ষমতাচ্যুত হন। সেই সাথে অবসান ঘটলো একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ আইনজীবি ও রাজনীতিবিদের শাসনামল। ১৯৮৫ সালের ৫ অক্টোবরে এরশাদের স্বৈরশাসন চলাকালীন সময়ে অনেকটাই নীরবে-নিভৃতে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। সেই সাথে অবসান হলো একজন সৎ, দক্ষ ও নিষ্ঠাবান আইনজীবি ও রাজনীতিবিদের বর্ণাঢ্য জীবনের। বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য হলো এখানে কারও কোনো অবদান স্বীকার না করা। বিচারপতি সাত্তারও দেশমাতৃকার প্রতি তার অবদানের তেমন কোন স্বীকৃতি পাননি।





জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হন ৩০ মে ১৯৮১ সালে। এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন ২৪ মার্চ ১৯৮২। ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে এই ১০ মাস ধরেই এরশাদ ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন, প্রকাশ্যে ও গোপনে চালিয়েছেন তত্পরতা। ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রার্থী ছিলেন মোট ৩১ জন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রার্থী বিচারপতি আবদুস সাত্তার এবং আওয়ামী লীগের ড. কামাল হোসেনের মধ্যে। আবদুস সাত্তার ১,৪২,৩৩,৯৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। কামাল হোসেন পেয়েছিলেন ৫৬,৩৬,১১৩ ভোট। সব দলই ওই নির্বাচন মেনে নিয়েছিল। কারচুপির অভিযোগ তেমন একটা ওঠেনি। কিন্তু ফলাফলটা সেনাবাহিনীপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মনঃপূত হয়নি। তিনি প্রকাশ্যেই সাত্তার সরকারের সমালোচনা করা শুরু করেন।



জিয়ার মৃত্যুর পাঁচ মাস পর ১১ অক্টোবর লন্ডনের গার্ডিয়ান-এ এক সাক্ষাত্কারে এরশাদ প্রথম রাষ্ট্র পরিচালনায় সেনাবাহিনীর অংশীদারি দাবি করেন। এরপর ১৮ অক্টোবর এনায়েতউল্লাহ খান সম্পাদিত হলিডেতে আরেক সাক্ষাত্কারে একই দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, দেশে ভবিষ্যতে আর যাতে কোনো অভ্যুত্থান ঘটাতে না পারে, সে জন্য সামরিক বাহিনীকে সরাসরি দেশের প্রশাসনে জড়িত রাখতে হবে। সেনাবাহিনীর এ ভূমিকার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য তিনি সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনেরও প্রস্তাব দেন।







এরপর ২৭ নভেম্বর যেদিন বিচারপতি সাত্তার রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন, সেদিনও এরশাদ বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাত্কারে একই দাবি তোলেন। (সূত্র: চলমান ইতিহাস, মওদুদ আহমদ)। ২৮ নভেম্বর এরশাদ সংবাদপত্র সম্পাদকদের তাঁর অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি লিখিত বক্তব্য তাঁদের হাতে তুলে দেন, যার শিরোনাম ছিল Role of military in Bangladesh। এতে স্পষ্ট করে বলা হয়, সামরিক বাহিনী দেশ রক্ষার কাজ করবে এবং দেশ পরিচালনাও করবে। সার্বভৌমত্ব শুধু সীমান্ত রক্ষার ওপরই নির্ভর করে না; এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপরও নির্ভর করে। সুতরাং এ দুই কাজেই সেনাবাহিনীকে জড়িত থাকতে হবে। কোনো নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই এ দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ২৯ নভেম্বর পত্রিকায় এরশাদের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিচারপতি সাত্তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। কেউ কেউ এরশাদকে তত্ক্ষণাৎ সেনাপ্রধানের পদ থেকে বরখাস্ত করারও পরামর্শ দেন। আবার কেউ কেউ ভেবেচিন্তে কাজ করতে বলেন। বঙ্গভবনের আলোচনার খবর দ্রুত এরশাদের কাছে পৌঁছে যায়। এরপর এরশাদ তাঁর চিরাচরিত শঠতার স্বভাব অনুযায়ী বিচারপতি সাত্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সম্পাদকদের কাছে দেওয়া বক্তব্য অস্বীকার করেন এবং ভুল স্বীকার করেন।



এরশাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান ‘প্রধানমন্ত্রীর নয় মাস’ বইয়ে লিখেছেন, ‘উনিশ শ বিরাশি সালের মার্চ মাসে সামরিক আইন জারি করা হয়। ইহার আভাস কিছুদিন আগে হইতেই পাওয়া যাইতেছিল। প্রায় এক বছর আগে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর একাংশের আক্রমণে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নির্মমভাবে নিহত হন। ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তার তাহার স্থলাভিসিক্ত হন।…সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল এরশাদ এক দীর্ঘ বিবৃতির মাধ্যমে দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়া সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন যে দেশকে এইভাবে চলিতে দেওয়া যাইতে পারে না।’



মওদুদ আহমদ চলমান ইতিহাস-এ আরও লিখেছেন, ‘কথিত আছে পরদিন এরশাদ দুপুরে আবার বঙ্গভবনে যান এবং কোরআন ছুঁয়ে শপথ নেন যে, তিনি এ ধরনের উক্তি আর করবেন না।’ পত্রিকায় খরব প্রকাশিত হয়, ১৬ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত চলছে এবং বিচারপতি সাত্তারই এই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ইত্তেফাক ও সংবাদ-এ খবরটি একটি বিশেষ গোয়েন্দা বিভাগ সরবরাহ করেছিল বলে মওদুদের বইয়ে উল্লেখ করা হয়।



ইতিমধ্যে জিয়াউর রহমানের হত্যাকারীদের বিচারে এরশাদের ভূমিকা নিয়েও অনেক রহস্য ঘনীভুত হতে থাকে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন ছিলো মেজর আব্দুল কাইউম খান। এই মেজর কাইউমের বিচার সম্পর্কে সামু ব্লগেই ব্লগার ত্রিশোঙ্কু যা লিখেছেন তা হুবহু তুলে দিলাম।



'মেজর আব্দুল কাইউম খানকে যখন চিটাগাং জেলে পাঠানো হয়, তার বাবা, সে সময়কার দিনের বিরাট ব্যাবসায়ী, তখন দক্ষিণ আমেরিকায় (সম্ভবতঃ পেরুতে)। তাকে খুঁজে পেতেই লেগে যায় দিন তিনেক। তিনি দেশে আসেন। সেনা প্রধানের সাথে দেখা করেন। এর ফলশ্রুতিতে একদিন গভীর রাতে/ভোর রাতে কুমিল্লা জেলের একটি ফটক খুলে যায়। বাইরে অপেক্ষমান গাড়িতে উঠে মেজর আব্দুল কাইঊম খান সোজা ঢাকা বিমান বন্দরে। সেখান থেকে আমেরিকায়। জর্জিয়া স্টেট ইঊনিভারসিটি্ থেকে ফিনান্সে ১৯৮৯ সালে পিএইচডি করে অনেকদিন সে দেশে কাটিয়ে এখন স্বদেশে। যেখানে আমরা গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হাজার হাজার কোটি টাকার গল্পে অভ্যস্ত হয়ে গেছি, সেখানে এক কোটি টাকার কথা এক্ষণে কিভাবে বলি? জনশ্রুতি আছে যে সেনাপ্রধানের সাথে মেজর আবদুল কাইয়ুম খানের বাবার সাক্ষাতের সময় কোটি টাকার বিনিময় হয়েছিল।'



এর পরও এরশাদের ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকে। মন্ত্রিসভার সদস্যরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। একাংশ বিচারপতি সাত্তারের প্রতি আস্থা ব্যক্ত করলেও অপর অংশ তাঁর কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে। মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. আবদুল মতিন। তাঁর সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী আবুল কাশেমের বিরোধ ছিল। এই বিরোধের জের ধরেই আবুল কাশেমের বাড়ি থেকে সন্ত্রাসী ও খুনের আসামি ইমদাদুল হক ওরফে ইমদুকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি অনেকটা নাটকীয়ভাবে ঘটেছিলো। প্রথমে পুলিশ কাশেমের মিন্টু রোডের বাড়ী ঘিরে ফেলে। ইতিমধ্যে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাদের জানানো হয় যে প্রতিমন্ত্রী কাশেমের বাসায় খুনের আসামী আছে। কাশেম নিজেই তাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু ভিতরে প্রবেশের জন্যে কাশেমের যে অনুমতির প্রয়োজন ছিলো কাশেম তা দেয়নি। পুরো দিন ও রাত পুলিশ ঐ বাড়ী ঘিরে রাখে ফলে ইমদুর পালানোর পথও ছিলোনা। পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মতিনের অনুমতি নিয়ে পুলিশ বাড়ীতে ঢোকে ও ইমদুকে গ্রেফতার করে। এই সংবাদ আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে দুটা ঘটনা ঘটে, কাশমের প্রতি দেশের জনগণের ঘৃণার উদ্রেক হয় এবং নবনির্বাচিত সরকারের ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়। আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মতিন ও পুলিশের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধাবোধ তৈরী হয়।



তখন দেশের জন গণের নজর ছিলো রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারের প্রতি। সবাই অপেক্ষা করছিলো এই দেখার জন্য যে রাষ্ট্রপতি কি করেন। তিনি পরদিন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন ও মন্ত্রী-পরিষদ ভেঙে দেন। সেই ভাষণে তিনি বলেছিলেন, " আমাদের অর্থ ও সম্পদের কোন অভাব নেই, কিন্তু রয়েছে দেশপ্রেমের অভাব। ......." । পরদিন নতুন মন্ত্রী-পরিষদ গঠন করেন, সেখানে কাশেম বাদ পড়ে।



এর মধ্যে আরো একটি সারা জাগানো ঘটনা ঘটেছিলো, হান্নান, লিয়াকত সহ বড় বড় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটানোর দুষ্কৃতিকারীরা ধরা পড়ে। এদের মধ্যে একজনার নাম ছিলো মন্টু সাহা। সে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছিলো যে, সে ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এরা ধরা পরায় জনগণের কাছে পুলিশ ও সরকারের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল হলেও দেশের মানুষ এক ধরনের নিরাপত্তার অভাবও বোধ করতে শুরু করে।





রাষ্ট্রপতি সাত্তার ক্ষমতায় টিকে থাকতে সশস্ত্রবাহিনীর সঙ্গে বোঝাপড়ার চেষ্টাও করেছিলেন। তিনি এরশাদের প্রস্তাব অনুযায়ী সামরিক বাহিনীকে প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখার জন্য একটি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করেন। প্রথমেই সদস্যসংখ্যা ১০ করা হলে সেনাপ্রধান আপত্তি জানান। তাঁদের দাবি, কাউন্সিলে সেনাবাহিনীকে সংখ্যালঘিষ্ঠ করা যাবে না। পরে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে ছয় সদস্যের কাউন্সিল করা হয়।



এরপর বেসামরিক প্রশাসনে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ বেড়ে যায় এবং তারা একে অধিক ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষ হিসেবে ধরে নেয়। ১১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। কিন্তু যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ ছিল, তাঁরাও বহাল থাকেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি কিছু সেনা কর্মকর্তা বঙ্গভবনে গিয়ে মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করেন এবং সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য চাপ দেন। বিচারপতি সাত্তার অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজদের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিতে রাজি হলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি হননি। তিনি পরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অদক্ষতার অভিযোগ আনেন।



১৯ ফেব্রুয়ারি হস্তক্ষেপের পর এরশাদ একটি উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় ছিল। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সকালে এরশাদের অনুগত একদল সামরিক অফিসার বঙ্গভবনে গিয়ে বন্দুকের মুখে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পুরোপুরি দখল করে নেন। সেদিন এরশাদ বেতার টিভিতে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘জনগণের ডাকে সাড়া দিতে হইয়াছে, ইহা ছাড়া জাতির সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না।’এরশাদ পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাত্কারে দাবি করেছেন, তিনি ক্ষমতা দখল করেননি। রাষ্ট্রপতি সাত্তার স্বেচ্ছায় তাঁর হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছেন। তাঁর এ দাবি যে অসত্য, তার প্রমাণ এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছেন ২৪ মার্চ সকালে। আর রাষ্ট্রপতি সাত্তার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ১০ ঘণ্টা পর ওই দিন সন্ধ্যায়। এরশাদ ক্ষমতা দখলের পক্ষে যেসব যুক্তি তুলে ধরেছিলেন, একই যুক্তি ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান ও ১৯৬৯ সালে ইয়াহিয়া খানও দিয়েছিলেন।



মধ্যরাতে বঙ্গভবনে কী নাটক হয়েছে, তা আমরা জানি না। কিন্তু ভোররাতে বাংলাদেশের মালিকানা বদলে যায়। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের যাবতীয় জীব ও জড় পদার্থের মালিক হয়ে যান জেনারেল এরশাদ। এভাবে ২৪শে মার্চ ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে শুরু হলো একটি কালো অধ্যায়, হ ম এরশাদের শাসনামল।



তবে দেশের বরাবরের সচেতন সমাজ অর্থাৎ ছাত্রসমাজ বসে ছিলোনা। এরশাদের সামরিক শাসন জারির প্রথম দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করে। ২৪ মার্চ কলাভবনে এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয় ছাত্রনেতা শিবলী কাইয়ুম, হাবিব ও আ. আলী। পরে সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে তাঁদের সাত বছরের কারাদন্ড হয়। সেই থেকে শুরু হয় এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আপোষহীন লড়াই।



ক্ষমতা দখলের পরপর এরশাদ ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোতে তার ক্ষমতা দখলকে জাস্টিফাই করার জন্য কয়েক ঘন্টাব্যাপী এক দীর্ঘ বক্তৃতা দেন। সমগ্র জাতি ঐ সময় হুমড়ি খেয়ে পড়ে টিভি/রেডিও সেটের সামনে। এরশাদ ঐ বক্তৃতায় তার ক্ষমতা দখলের কি কি অজুহাত দেখিয়েছিলেন তা পরবর্তি পর্বে প্রকাশ করবো। আমাদের দেশের মানুষ সেই বৃটিশ শাসনামল থেকেই প্রতারিত। এটা এমনভাবে তাদের পার্ট অফ লাইফ হয়ে গিয়েছে যে, প্রতারনাটা তারা আর খুব সহজে ধরতে পারেনা। দেশবাসী মনে করেছিলো যে, জিয়াউর রহমানের পর হয়তো আরেক রক্ষাকর্তা এসেছে জাতির জীবনে। কিন্তু জাতির জীবন যে কোন্ রাহুর কবলে পড়লো, পরবর্তি নয় বছর দেশবাসী তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলো।



(চলবে)



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৮

রমিত বলেছেন: হ ম এরশাদের শাসনামল -৩

নিচের লিঙ্কে পাবেন

Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.