নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।

রমিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

কয়েকটি গণ-অভ্যুত্থান - ৪ (গ)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:৩৮

কয়েকটি গণ-অভ্যুত্থান - ৪ (গ)
--------------------------- ডঃ রমিত আজাদ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)

পিপল পাওয়ার রেভ্যুলুশনঃ
১৯৮৬ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী বিকালে জেনারেল রামোস ও দেশপ্রেমিক বিদ্রোহী অফিসারদের অন্যতম নেতা এনরাইল প্রেস কনফারেন্স করেন। ফার্দিনান্দ মার্কোসও পাল্টা প্রেস কনফারেন্স করে এই দুজনকে আত্মসমর্পন করতে বলেন। এদিকে Cardinal Sin ফিলিপিনো রাত ৯টায় জনগণকে Radio Veritas মারফৎ বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তাদের সমর্থন করার ডাক দেন। তিনি সকলকে Epifanio de los Santos Avenue (EdlSA)-এ সমবেত হওয়ার ডাক দেন। সরকারী বাহিনীর আক্রমণের ভীতি সত্তেও বিপুল সংখ্যক নান ও পাদ্রী সেখানে হড়ো হতে শুরু করে। তাদের দেখাদেখি সাধারণ জনগণও আসতে শুরু করে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় এ্যাভিনিউ।

২৩শে ফেব্রুয়ারী ভোরে মার্কোসের আজ্ঞাবহ সৈনিকরা ভেরিতাস রেডিও স্টেশনে আসে ট্রান্সমিশন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে। কেননা এই রেডিও স্টেশনটিই জনযোগাযোগের মূল মাধ্যম হয়ে কাজ করতে শুরু করে। বিশেষত মার্কোস বাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে রেডিওটি অবিরাম আপডেট করে যাচ্ছিলো জনগণকে। পাশাপাশি এ্যাভিনিউ-এ উপস্থিত জনতাকে খাদ্য, পানীয়, ইত্যাদি সরবরাহ করার অনুরোধ জানাতে থাক ও দেশপ্রেমিক বিদ্রোহী সেনা অফিসারদের সমর্থন জানানোর জন্য জনগণকে অনুরোধ করতে থাকে। ফলে রাজপথে নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। অনেক পরিবারের সব সদস্যই রাস্তায় নেমে এসেছিল। যারা যেতে পারে নি, তারাও দিয়েছিল সমর্থন – ভিন্নভাবে। অনেক বাড়ির রান্নাঘর থেকে রাস্তায় নেমে আসা লোকজনের জন্য খাবার সরবরাহ করা হচ্ছিল।

মার্কোস বাহিনী যাতে জনতার উপর চড়াও হতে না পারে সে জন্য জনগণ বালুর বস্তা, গাছ ও যানবাহন দিয়ে ব্যরিকেড তৈরী করে রাখে। সকলে রেডিও ভেরিতাস শুনছিলো, সেখানে বিরোধী দলীয় দেশাত্মবোধক সঙ্গিত চলছিলো। লাঞ্চের পর এনরিল ও রামোস জনতার মাঝে তাদের অবস্থান মজবুত করেন।

বিকালের দিকে রেডিও ভেরিতাস থেকে বলা হলো যে, পূর্ব দিকে মেরিন সেনারা জড়ো হচ্ছে এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে LVT-5 ট্যাংক ও সাজোয়া গাড়ীর বহর অগ্রসর হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল Artemio Tadiar-এর নেতৃত্বে এগিয়ে আসা বহরের পথরোধ করে দাঁড়ায় হাজার হাজার মানুষ। চার্চের নানরা প্রার্থনার ভঙ্গিতে নতজানু হয়ে থাকে। নারী-পুরুষ সকলেই মার্কোস বাহিনীর পথ আটকে দেয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল Tadiar তাদের পথ ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু জনতা তার কথা শোনেনা। অবশেষে মার্কোস বাহিনী কোন প্রকার শক্তি প্রয়োগ না করেই পিছু হটে যায়।

২৪শে ফেব্রুয়ারী ভোরে মার্কোস বাহিনীর সাথে জনতার প্রথম সংঘর্ষ হয়। মেরিন সেনারা জনতার উপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। ৩০০০ মেরিন সেনা পূর্বদিকে অবস্থান নেয়। তারপর হেলিকপ্টার বহর এগিয়ে আসে সমাবেশের উপর আঘাত হানার জন্য। কিন্ত আঘাট হানার পরিবর্তে হেলিকপ্টার বহর সমাবেশের কাছে ল্যান্ড করে। উল্লসিত জনতা পাইলটদেরকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করে চিৎকার ও হর্ষধ্বনি দিয়ে। হেলিকপ্টার বহরের হঠাৎ সরকারী পক্ষ ত্যাগ করে বিরোধী দলের সাথে যোগ দেয়ার ঘটনা এনরিল ও জেনারেল রামোসের মনোবল শতগুনে বাড়িয়ে দেয়। জেনারেল রামোস ইতিমধ্যে কয়েকদফা সহকর্মী সৈন্য দেরকে তাদের সাথে যোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। বিকালের দিকে কোরাজন এ্যাকুইনো সমাবেশে উপস্থিত হয়ে এনরিল, রামোস ও RAM সেনা অফিসারদের সাথে যোগ দেন।

ইতিমধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যায় যে, ফার্দিনান্দ মার্কোস মালাকানান প্রাসাদ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এই সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে এনরিল ও রামিসের নেতৃত্বে জনতা উল্লাস করতে থাকে। তবে তা ক্ষণস্থায়ী ছিলো, কারণ কিছুক্ষণ পরে মার্কোস সারকার নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল ৪ -এ আবির্ভুত হয়ে বলতে থাকে যে, তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না। টিভি চ্যানেল ৪-এর সম্প্রচার চলতে চলতে হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। Colonel Mariano Santiago-এর নেতৃ্ত্বে বিদ্রোহী সৈন্যদের একটি গ্রুপ টিভি চ্যানেল ৪-এর স্টেশন দখল করে নেন। ইতিমধ্যে এডসা এ্যাভিনিউতে সমাবেশকারীর জনসংখ্যা এক মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়।

সন্ধ্যায় দেশপ্রেমিক বিদ্রোহী সৈন্যদের হেলিকপ্টার আকাশ থেকে হামলা চালিয়ে মার্কোসের air assets ধ্বংস করে দেয়। অন্য একটি হেলিকপ্টার মালাকানান প্রাসাদের উপর আঘাত হানে। জুনিয়র অফিসারদের প্রায় সবাইই মার্কোসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ধীরে ধীরে সেনাবাহিনীর মেজরিটি মার্কোসের পক্ষ ত্যাগ করে।


মার্কোসের প্রস্থানঃ
২৪শে ফেব্রুয়ারী সোমবার বিকাল তিনটায়, মার্কোস মার্কিন সিনেটর Paul Laxalt-এর সাথে আলাপ করেন। মার্কোস জানতে চেয়েছিলেন যে, এই পরিস্থিতে হোয়াইট হাউজ কি পরামর্শ দেয়? উত্তরে Paul Laxalt পরামর্শ দেন, "cut and cut cleanly"। এতে মার্কোস হতাশ হয়ে পড়ে। অবশেষে মার্কোস এনরিল-এর সাথে আলাপ করেন। তিনি তার, তার পরিবার ও তার ঘনিষ্টজনদের জন্য সেইফ প্যাসেজ কামনা করেন। এরপর মধ্যরাতে মার্কোস ও তার পরিবার মার্কিন বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে চড়ে প্রথমে ক্লার্ক মার্কিন এয়ার বেইজে যান। তার কয়েকদিন পড় তিনি হাওয়াই-এ পাড়ি জমান।

মার্কোসের পতন ও প্রস্থানের সংবাদ শুনে উল্লসিত জনগণ ম্যানিলার রাস্তায় রাস্তায় নাচতে শুরু করে। উৎসাহী অনেক জনতা মালাকানাং প্রাসাদে ঢুকে যায়। এই সেই প্রাসাদ যেখান থেকে মার্কোস রাজা না হয়েও রাজার মতো ফিলিপাইন শাসন করেছিলে দুই দশক। সেই সময় ওই প্রাসাদের একটি ঘরে ইমেলদা মার্কোসের ১২২০ জোড়া জুতা পাওয়া যায়। জুতাগুলোর সবই ছিল খুব দামি। কোনো কোনো জোড়ার জুতাগুলো স্বর্ণের সুতা দিয়ে অ্যামব্রয়ডারি করা ছিল, আর কোনো কোনোটি ছিল মণি-মাণিক্যখচিত। ওই ঘটনার পর ইমেলদার ১২২০ জোড়া জুতা তাঁর ও ফার্দিনান্দ মার্কোসের দুর্নীতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কোস দম্পতি দেশ থেকে পালানোর পর অভিযোগ উঠেছিল, তাঁরা ১০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছেন।

মার্কোসের মৃত্যুঃ

ইতিহাস থেকে মার্কোস শিক্ষা নেননি। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন যে তিনি আজীবন ফিলিপানের রাষ্ট্রপতি থাকবেন। কিন্তু মিশরের বাদশাহ্ ফারুক, ইরাকের বাদশাহ্ ফয়সাল, পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খান ও ইরাণের শাহ রেজা পাহলোভী প্রমুখের ইতিহাস পড়লে তিনি জানতে পারতেন যে, একজনঅদেশপ্রেমিক কূশাসক কি করে দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তা ও জনগণের চাপে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়।

নির্বাচিত ব্যক্তিও যে সুযোগ বুঝে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে, নিজের সুবিধামতো সংবিধান লিখে বা সংশোধন করে সাংবিধানিক ভাবেও যে ক্ষমতা দখল করা যায় এবং কিছু সংখ্যক সেনা, সিভিল ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অর্থ-সম্পদের মোহে রেখে যে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা যায়, ফার্দিনান্দ মার্কোসের ঘটনা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পাশাপাশি, সেই ক্ষমতা যে চিরস্থায়ী হয়না এবং অপ্রত্যাশিতভাবেই দেশপ্রেমিক সেনা, সিভিল ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনগণের হাতে ন্যক্কারজনকভাবে পতন ঘটে ফার্দিনান্দ মার্কোসের ঘটনা এরও একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

১৯৮৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর ৭২ বৎসর বয়সে, একসময়ের দোর্দন্ড প্রতাপশালী ফিলিপাইনি ডিক্টেটর হাওয়াই দ্বীপে মৃত্যুবরণ করেন অনেকটাই নীরবে নিভৃতে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।

(চলবে)


তথ্যসূত্রঃ
১। উইকিপিডিয়া।
২। ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন আর্টিকেল।

আমি সকল লেখকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৪:৪৯

েফরারী এই মনটা আমার বলেছেন: এ বছরের সবচেয়ে রহমতপুর্ন দিন কোনটি তা জান
Click This Link

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২৫

রমিত বলেছেন: পোস্ট টি নির্বাচিত পাতায় দেয়ার জন্য সামু কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২৭

রমিত বলেছেন: পোস্টটি নির্বাচিত পাতায় দেয়ার জন্য সামু কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।

কয়েকটি গণ-অভ্যুত্থান - ৪ (খ) ও ৪(ক) নিচের লিংকে পাবেন
Click This Link
Click This Link

৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:১৩

শুঁটকি মাছ বলেছেন: দারুন পোস্ট!!!!!!!!!!

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৯

রমিত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৫| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:২০

আছিফুর রহমান বলেছেন: অপেক্ষায় আছি

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৯

রমিত বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১৬

মন্জুরুল আলম বলেছেন: সময়োচিত চমত্কার পোষ্ট......

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০২

রমিত বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:০৭

রন৬৬৬ বলেছেন: Good on you.

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০২

রমিত বলেছেন: ধন্যবাদ।

৮| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৫৩

নাম বলবো না বলেছেন: জোর-জবর দস্তি করে চিরজীবন ক্ষমতায় থাকা যায় না, এই সহজ কথাটা ক্ষমতার দাপটে উনারা বুঝতেই চান না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.