নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।

রমিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ড. মাহবুবউল্লাহ স্যার

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৬

ড. মাহবুবউল্লাহ স্যার

-------------------------------- ড. রমিত আজাদ





দীর্ঘকাল প্রবাস জীবন যাপনের পর যখন দেশে ফিরে এলাম। প্রথম প্রথম আলোচনার টেবিলে বসলে মেজাজ খারাপ হয়ে যেত। বেশীরভাগ লোককেই দেখতাম তথ্য, উপাত্ত ও যুক্তির ভিত্তিতে আলোচনা করতে জানেনা। তাদের আলোচনার ভিত্তি যাচাইহীন কিছু সাধারণ ধারণা ও ফাঁকা ভাবাবেগ।



ড. মাহবুবউল্লাহ স্যারের সাথে যখন পরিচয় হলো রীতিমতো মুগ্ধই হলাম। স্যার আর দশজনার চাইতে পৃথক। রাজনীতি, দর্শন, অর্থনীতি, সমাজবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা বেশ স্বচ্ছ। অনেকক্ষণ কথা হলো স্যারের সাথে বেশ ভালো লাগলো।

আরেকদিন এক আলোচনার টেবিলে বসলাম। অন্যান্যদের সাথে ড. মাহবুবউল্লাহ স্যারও ছিলেন। উপস্থিত সবার মাঝে আমিই অপেক্ষাকৃত তরুণ ছিলাম। স্যার কিছু বিষয় বলছিলেন। তারপর বললেন যে, বিষয়গুলো স্যারের মনে আছে তবে রেফারেন্স এখন আর মনে নাই। আমি বললাম, "রেফারেন্স আমি দিতে পারবো স্যার, আমার মনে আছে।" স্যার প্রসন্ন হলেন। কথা প্রসঙ্গে উনাকে আমার লেখা একটা আর্টিকেল দিলাম।

আরেকদিন টেলিফোন করলেন, বললেন একটা লেখা লিখবেন আমার সাহায্য প্রয়োজন। বললাম কোথায় যেতে হবে বলুন স্যার। তিনি বললেন, "আমার বাসায় চলে আসুন।" স্যারের বাসার ঠিকানা নিয়ে উনার বাসায় গেলাম।



খ্যাতিমান ব্যক্তিদের বাসা দেখার একটা আগ্রহ থাকে। উনার বাসায় গিয়ে দেখলাম মামুলি একটা এপার্টমেন্ট। জানতাম স্যার একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। মনে মনে ভাবলাম একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বাড়ীর এই হাল! সম্পদ বলতে যা দেখলাম তা হলো বই আর বই। বুঝলাম উনার আগ্রহ কোথায়। বইয়ের প্রতি আমারও লোভ আছে। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম। স্যার আমার মনের কথা বুঝতে পারলেন। মুচকী হেসে বললেন, "কি, বই দেখছেন?" আমি হেসে ফেললাম, বললাম, "জ্বী স্যার ঐ জিনিসগুলোর প্রতি আমারও দুর্বলতা রয়েছে। তবে আমি একটি বিশেষ ধরণের বই খুঁজছি। আমাদের উপমহাদেশে দর্শনের বিকাশ ও সামাজিক পরিবর্তনে এর প্রভাবের উপর।" স্যার বললেন, "না ওরকম বই পাবেন না। কেউ লেখেনি এর উপর। এই বইটি দেখতে পারেন কাছাকাছি কিছু পাবেন।" বইটা হাতে নিতে চাইলাম। ধুলিময় বই। স্যার বললেন, "দিন মুছে দেই।" আমি তো লজ্জ্বায় পড়ে গেলাম, "সে কি কথা স্যার। আপনি আমার পিতার বয়সী প্রায়। আপনি বই মুছবেন কেন? আমি নিজেই মুছে নিতে পারবো।" তিনি বললেন, "আপনার হাত ময়লা হবে। আমার কাছে কাপড় আছে, মুছে দিচ্ছি দিন।"তারপর বললেন, "আপনার লেখা আর্টিকেলটা পড়েছি, কিছু যায়গায় আমি একমত নই। আমি দাগ দিয়ে রেখেছি। আপনাকে দেখাবো।" এবার আমি মুচকী হাসলাম, বললাম, "আমার আর্টিকেল সার্থক স্যার। আপনার মতো নামজাদা প্রফেসর যদি আমার আর্টিকেল মনযোগ দিয়ে পড়েন ও রিমার্কস লেখেন এটা আমার কাছে বড় পাওয়া।" স্যারও হাসলেন। কিছুক্ষণ স্যারের সাথে কাজ করলাম। কাজের ফাকে ফাকে কথাবার্তা বলে বুঝলাম যে, স্যারের বাসায় কাজের লোকও নেই। উনার স্ত্রী অসুস্থ। একটা মেয়ে আছে। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ইতিমধ্যে মেয়েটি বাড়ীতে এসে রান্নার কাজ শুরু করলো। কিছু সময় পর স্যার আমাকে খাওয়ার টেবিলে ডাকলেন। খাওয়ার টেবিলে বসে স্যারের স্ত্রীর সাথে কথা হলো। খুবই মমতাময়ী। ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনের ভাগ্নী।



এরপর বেশ কয়েকমাস স্যারের সাথে কোন যোগাযোগই হয়নাই। বড় ও ব্যাস্ত মানুষ তাই নিজে থেকে যোগাযোগ করতে সংকোচ বোধ করতাম। একদিন তিনিই ফোন করলেন। বললেন, তিনি একটি সেমিনার করবেন, সেখানে আমাকে দাওয়াত দিচ্ছেন। আমি একজন সাধারণ মানুষ, স্যার এভাবে মনে রেখে আমাকে দাওয়াত দিচ্ছেন! তাঁর হৃদয়ের বিশালত্ব দেখে অবাক হলাম। বললাম, "স্যার আমি অবশ্যই আপনার সেমিনারে যাবো।"



এরপর নানা বিষয়ে জানতে মাঝে মাঝে স্যারকে ফোন করতে শুরু করলাম। স্যার ব্যস্ত থাকলে ফোন ধরতে না পারলে নিজে থেকেই আবার কল ব্যাক করতেন। ধৈর্যের সাথে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেন।

মাহবুবউল্লাহ স্যারের নানার ভাই ছিলেন বাংলাদেশে কম্যুনিস্ট আন্দোলনের পথিকৃত কমরেড মোজাফফর আহমেদ। স্যারের সাথে এই মতাদর্শটি মাঝে মাঝে আলোচনা করতাম।



একবার 'ফোরাম অব ইয়াং প্রফেশনাল'-এর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাতে শুরু করলাম। অনেকের কাছ থেকেই প্রত্যাখ্যাত হলাম। কিন্তু ড. মাহবুবউল্লাহ স্যারকে আলোচক হিসাবে আমন্ত্রণ জানানোর সাথে সাথেই তিনি তা গ্রহন করলেন। লক্ষ্য করে দেখেছি অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ বা সভাপতির বক্তব্য বেশীরভাগই মনযোগ দিয়ে শোনেন না, বরং নিজের মত করেই সব বলতে থাকেন। অথচ ড. মাহবুবউল্লাহ স্যারকে দেখলাম সভাপতি হিসাবে আমি যেই বক্তৃতা দিলাম তা মনযোগ দিয়ে শুনলেন এবং উনার বক্তৃতায় তার আলোকপাত করলেন।

বাকপ্রিয় জাতির মধ্যে ইদানিং টক-শো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রাতের দিকে ড. মাহবুবউল্লাহ স্যারকে দেখতাম টক-শো গুলোতে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। দেখতাম তথ্য, উপাত্ত ও যুক্তির ভিত্তিতে চমৎকার আলোচনা করছেন স্যার।



গত শনিবার হঠাৎ শুনলাম স্যারকে আক্রমণ করা হয়েছে। মানসিকভাবে প্রবলভাবে আহত হলাম। এমন একজন জ্ঞানী পরিপাটি ভদ্রলোককে এমন বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ছাড়া আর কি করা যায়! যারা এটা করলো তারা আর যাই হোক মানুষের তালিকাভুক্ত নয়। কিজন্যে এই হামলা? তথ্য, উপাত্ত ও যুক্তির ভিত্তিতে চমৎকার আলোচনা করেন তাই? আমাদের দেশের মানুষের চোখ কবে খুলবে?



ড. মাহবুবউল্লাহ স্যারকে ফোন করলাম, ফোন ধরলেন স্যারের স্ত্রী, উনার সাথেই টেলিফোনে কথা বললাম। স্যার ল্যাব এইড হসপিটালে আছেন। স্যারের স্ত্রীর মন ভীষণ খারাপ (তিনি নিজেও অসুস্থ)। তাদের বাড়ীতে এই মুহূর্তে কেউ নেই। তাদের যে মেয়েটি সাথে থাকতেন তিনিও সপ্তাহ খানেক আগে পিএইচডি করার উদ্দেশ্যে চীন চলে গেছেন। স্যারের স্ত্রী-কে বললাম, "আপনি মনে কষ্ট নেবেন না। আমরা দেশের মানুষরা স্যারের মত একজন জ্ঞানী, সজ্জন ও দেশপ্রেমিককে ভালোবাসি।" তিনি দুঃখ ভরা কন্ঠে বললেন, "এই কি ভালোবাসার নমুনা?"



আজ (১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪) ড. মাহবুবউল্লাহ স্যারের সাথে টেলিফোনে কথা হলো। স্যার এখন মোটামুটি সুস্থ। চোখে আঘাত পেয়েছেন সেই সমস্যা এখনো রয়েছে। একটু ধীরে কথা বলছিলেন। আপনারা স্যারের জন্য দোয়া করবেন।



(এদেশের একশ্রেণীর মানুষ তথ্য, উপাত্ত ও যুক্তির ভিত্তিতে আলোচনার গুরুত্ব এখনও বোঝেনা, অথবা সহ্য করতে পারেনা )

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৪

রবিউল ৮১ বলেছেন: এই দেশে কে ভালো কে মন্দ সেটা দেখার সময় সন্ত্রাসীদের নেই।টাকা দিবেন কাজ করবে।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫৬

রমিত বলেছেন: জ্বী। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৫

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: সন্ত্রাসী কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানাই. ড. মাহবুবউল্লাহর আশু রোগমুক্তি কামনা করি.

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫৭

রমিত বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৯

অচেনাসময় বলেছেন: রমিত সাহেব, আপনি কি জানেন এই লোক (ড. মাহবুবউল্লাহ) একসময় বাম রাজনীতি করত, কোথায় ছিল জানেন নাকি । কেমনে ঢাবিতে আসল ? ঐসময় কার নিয়োগ পাওয়ার কথা ছিল একটু তথ্য নিয়ে আসেন তো । আপনাদের মত লোকগুলোই নিজেদের নানা বিষয়ে এত পন্ডিত মনে করেন কেন ?

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৫

রমিত বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। তবে আপনি আপন নামে নেই কেন? নিজেকে লুকিয়ে রেখে লেখার রহস্য কি?

আমি জানি ড. মাহবুবউল্লাহ একসময় বাম রাজনীতি করতেন। উনার পারিবারিক পূর্বপুরুষ যে কমরেড মোজাফফর ছিলেন, তা তো লিখেছিই। সেটা তো তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গী। আপনার কি কোন ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গী নেই? তবে উনার সাথে আলাপ করে আমার মনে হয়েছে এখন আর তিনি বাম মতাদর্শে বিশ্বাস করেন না। বয়সের সাথে সাথে নতুন অভিজ্ঞতার আলোকে মত পরিবর্তন করা জায়েজ আছে।

উনাকে চিনি বলেই যে উনার সম্পর্কে সব জানি তা তো নয়। আপনার বাড়তি কিছু জানা থাকলে লিখুন।

মন্তব্যের শেষে আপনি আমাকে না জেনেই ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। পুরণো ট্রিক। এবং এটা খুব কমন।

৪| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১৯

লিখেছেন বলেছেন: উনি কন ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন ?

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৮

রমিত বলেছেন: সোনালী ব্যাঙ্কের চেয়াম্যান ছিলেন।

৫| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৩

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
তথ্য, উপাত্ত ও যুক্তির আবার রাজনৈতিক চেহারা রয়েছে; জানেন নিশ্চয়ই। জ্ঞানী, সজ্জন ও দেশপ্রেমিক মানুষদের জন্য ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রইলো।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৯

রমিত বলেছেন: জ্বী। যথাযথই বলেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.