নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।

রমিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানবাধিকার

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২০

মানবাধিকার
------------------------ড. রমিত আজাদ


মানবাধিকার শব্দটিকে ভাঙ্গলে দু'টি শব্দ পাওয়া যাবে। একটি মানব, অন্যটি অধিকার।
মানবাধিকার মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে একটি। এই অধিকার মানুষের প্রাপ্য কেবল এই কারণেই যে সে মানুষ। এই অধিকার যে কোন মানুষকেই দিতে হবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ধনী, দরিদ্র অথবা অন্য যে কোন অবস্থান নির্বিশেষে।
এবং এই অধিকারের প্রয়োগ যেকোন স্থানে যেকোন সময়ে হবে, সেই অর্থে ইউনিভার্সাল।


ইতিহাসঃ
যে সকল প্রাচীন নথিতে মানবাধিকারের নিশানা পাওয়া যায় তাদের মধ্যে 'আল-রিসালা আল-হুকুক' উল্লেখযোগ্য। এর অর্থ অধিকার শাস্ত্র। এটি রচিত হয় সপ্তম শতাব্দীতে। রচনা করেছেন আলী ইবনে হুসাইন জয়নাল আবেদীন (Ali ibn Husayn Zayn al-Abidin)। ইউরোপীয় নথিগুলোর মধ্যে তেরো শতকে রচিত ম্যাগনা কার্টা, এবং সতেরো শতকে রচিত ইংলিশ বিল অফ রাইটস ( English Bill of Rights ) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আটারো শতকে রচিত the French Declaration of the Rights of Man and of the Citizen (1789), এবং the Bill of Rights in the United States Constitution (1791) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া Universal Declaration of Human Rights (UDHR) ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘে ডিক্লেয়ার করা হয়েছিলো। জাতিসংঘের সদস্য প্রতিটি রাষ্ট্র এই ডিক্লেয়ারেশন মানতে বাধ্য।


কি কি অধিকার মানুষের রয়েছে?
মানুষের কি কি অধিকার আছে?
মানুষের নিম্নোক্ত অধিকারগুলো রয়েছে:
১। বাঁচার অধিকার, ২। ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার, ৩। কথা বলার অধিকার ৪। চিন্তা করার অধিকার ৫। মুক্তভাবে চলাচলের অধিকার, ৬। বিতর্ক করার অধিকার, ৭। জন প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার, ৮। কাজের অধিকার, ৯। ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকার ,১০। নিপীড়ন থেকে মুক্তি, ১১। ক্রীতদাসত্ব থেকে মুক্তি, ১২। তথ্য অধিকার, ১৩। ভোক্তা অধিকার, ১৪। নিজ পছন্দ অনুযায়ী যেকোন ধর্ম বা দার্শনিক মতাদর্শ বেছে নেয়ার অধিকার, ১৫। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার, ১৬। সংগঠন গঠনের অধিকার, ১৭। শোষণ থেকে মুক্তির অধিকার, ১৮। শিক্ষাগ্রহনের অধিকার, ১৯। চিকিৎসার অধিকার ইত্যাদি।

একটি কমোন প্রশ্ন রয়েছে - অধিকার বলতে যেকোন কিছু করার অধিকারই বোঝায় কিনা? অবশ্যই নয়। অধিকারেরও সীমারেখা রয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, 'আমার স্বাধীনতা ঠিক ওখানে গিয়েই শেষ হয়, যেখানে শুরু হয় অন্যের স্বাধীনতা।'



মানবাধিকার রক্ষায় আইন:
উন্নত দেশগুলোতে মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের দেশে বৃটিশ উপনিবেশিক শাসনামলে তারা আইন গুলো এমনভাবে তৈরী করেছিলো যেন, সেই আইন গুলো তাদের পক্ষে যায় এবং আমাদের বিপক্ষে যায়। ফলে প্রচুর আইন হয়েছে গণবিরোধী। এগুলোর ব্যপক সংস্কার প্রয়োজন।

মানবাধিকার লংঘন:
মানবাধিকার লংঘন তখনই ঘটে যখন রাষ্ট্র (অথবা) অন্য কারো দ্বারা মানুষের নাগরিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি অধিকারকে উপেক্ষা করা হয়। মানুষের চিন্তা ও বাক স্বাধীনতা হরন করা হয়। মানুষের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হয়। কোন স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকারের দায়িত্ব রাষ্ট্রে বসবাসরত সকলের মানবাধিকার নিশ্চিত করা। সাধারণত বৈধ ও জনকল্যানমূখী সরকার হলে তারা জনগণের মানবাধিকার নিশ্চিত করে। আর অবৈধ ও গণবিরোধী সরকার হলে তারা মানবাধিকার লংঘন করে। এটি ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তাদের একটি অপচেষ্টা। মনোবিজ্ঞানে Alloxaphobia নামে এক ধরনের ফোবিয়া বা রোগ রয়েছে যাতে রুগী অন্য কারো মতামতকে ভয় পায়। রাজনীতির জগৎে সাধারণত এই ধরনের ভয়ে ভীত থাকে স্বৈরাচারী শাসকগণ। এই ভয়ের নাম জনমত ভীতি (Fear of Public Opinion) । ইতিহাসে যুগে যুগে এই ভয়ে ভীত শাসকদের দেখা গিয়েছে।

এই জাতীয় স্বৈরশাসকরাই মহাজ্ঞানী সক্রেটিসকে হত্যা করেছিলো। পরবর্তিতে তাঁর ছাত্র প্লেটো এবং প্লেটোর ছাত্র এরিস্টটল, এই সব স্বৈরশাসকদের সম্পর্কে জনগণকে সাবধান করে দিয়েছিলেন।

কেমন হয় স্বৈরশাসক? কি তাদের জনমতভীতির ফলাফল?
আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত ব্যক্তির মধ্যে বরাবরই থাকে জনমতভীতি। বলা বাহুল্য যে আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গই স্বৈরশাসক হয়ে থাকে। এই স্বৈরশাসকদের সরকার হয়ে থাকে দুর্নীতিপরায়ন ও স্বভাবতই জনমতভীতিসম্পন্ন।

একজন স্বৈরশাসক ধনীদের কামনা করে, আর একজন সৎ শাসক সম্মান কামনা করে। স্বৈরশাসকের প্রহড়ার দায়িত্বে থাকে ভাড়াটে সৈনিক, আর একজন সৎ শাসকের প্রহড়ার দায়িত্বে থাকে তাঁর নাগরিকগণ। স্বৈরশাসকগণ প্রায়ই বক্তৃতাবাগীশ নেতা হয়। তারা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করে এবং সাধারণ জনগণকে রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা প্রদর্শন করে ক্ষমতা দখল করে। একজন স্বৈরশাসক অসাধারণগুনসম্পন্ন যেকোন ব্যক্তির উত্থানকে প্রতিরোধ করে, প্রয়োজনে তাকে মৃত্যুদন্ড বা গুপ্ত হত্যার ব্যবস্থা করে। স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করতে পারে এমন যৌথ ভোজনালয়, ক্লাব বা এমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তার দেশে মানসম্পন্ন কোন সাহিত্য সম্মেলন বা এরূপ কোন আলোচনার ব্যবস্থা থাকেনা। জনগণ যাতে পরস্পরকে ঘনিস্টভাবে জানার সুযোগ না পায়, সে ব্যপারে সে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহন করে, এবং দেশের গোপন সংবাদ সংগ্রহের জন্য মেয়েদের গুপ্তচর হিসাবে নিয়োগ করে। জনগণের মধ্যে যাতে কলহের সৃষ্টি হয় এবং তাদের দরিদ্র ও নিঃস্ব করে তোলা যায়, সে তার ব্যবস্থা গ্রহন করে। মিশরের ফেরাউন যেমন প্রজাদের পিরামিড তৈরীর কাজে ব্যস্ত রেখেছিলো, স্বৈরশাসকও তেমনি বড় বড় কজে প্রজাদের ব্যস্ত রাখে। স্ত্রীলোক ও দাস শ্রেণীর মধ্যে থেকে গুপ্তচর তৈরী করে। এই গুপ্তচররাও নিজেদেরকে সম্মানী ও গুনী লোকদের চাইতে নিজেদেরকে অধিক ক্ষমতাবান মনে করে। দেশের সংকটময় মুহূর্তে যুদ্ধ বা ব্যপক গোলযোগ জাতীয় কিছু কৃত্রিম সমস্যার সৃষ্টি করে যাতে দেশের মানুষ মনে করে যে তাদের করণীয় কিছু আছে, এবং এতে নেতার প্রয়োজনীয়তা বেশী অনুভুত হয়। আর সেই সুযোগ গ্রহন করে স্বৈরশাসক নিজেকেই সেই নেতা হিসাবে প্রচার করে। যা প্রতারিত জনগণ সত্য বলে মেনে নেয়। কেবলমাত্র দেশের অসাধারণগুনসম্পন্ন মানুষগুলোই স্বৈরশাসকের এই বুজরুকি ধরতে পারে, কিন্তু আগেই বলেছি যে, তাদের হয় দেশ বা পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে নতুবা এমনভাবে দমন করা হয়েছে যে তারা খুব সহজে মতামত প্রকাশ করতে পারছে না।


পরিশেষে আমি নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক হ্যারল্ড পিন্টারের নোবেল বক্তৃতার একটি অংশ উদ্ধৃত করতে চাই -
“আমার বিশ্বাস ব্যাপক বিরুদ্ধাচরণ সত্ত্বেও নাগরিক হিসাবে অনঢ় অবিচলতায় দৃঢ়তার সাথে সত্যের অনুসন্ধান এবং আমাদের জীবন ও সমাজে তাকে সংজ্ঞায়িত করা আমাদের পরম দায়িত্ব। প্রকৃতপ্রস্তাবে অবশ্য কর্তব্য। এই দৃঢ়তা আমাদের রাজনৈতিক জীবনে যুক্ত না হলে আর কোনোদিনই আমরা ফিরে পাব না যা প্রায় হারিয়েছি- মানুষের সম্মান।“

(মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে 'বাংলাদেশ মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ পরিষদ' কর্তৃক আজ আয়োজিত হয়েছিলো একটি আলোচনা সভা। ঢাকার প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এই সভায় আজ ১৩ই ডিসেম্বর, ২০১৪-এ আমি প্রবন্ধটি পাঠ করেছিলাম।)

তথ্যসূত্রঃ
১। উইকিপিডিয়া
২। পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস - বারট্রান্ড রাসেল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.