নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।

রমিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিরোশিমা দিবসঃ পারমানবিক শক্তি আশির্বাদ নয় অভিশাপ

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:১১

পারমানবিক শক্তি আশির্বাদ নয় অভিশাপ
-------------------------- ড. রমিত আজাদ





আজ ৬ই আগস্ট হিরোশিমা দিবস - বিশ্বের ইতিহাসে একটি বিভিষিকাময় দিন!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম পরমাণু বোমা হামলা, যাতে প্রাণ যায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষের। জাপানের দাবি, যুদ্ধের সময় ও এর প্রভাবে নানা রোগে ভুগে প্রায় ৪ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে। শুধু হিরোশিমায় মারা গেছে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে হিরোশিমা শহরের আকাশে উড়ে এসে যুক্তরাষ্ট্রের বি-২৯ বোমারু বিমান এনোগা গে হামলা চালায়। বোমাটি মাটি থেকে প্রায় ৬০০ মিটার উঁচুতে বিস্ফোরিত হয়।

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও হ্যারি এস ট্রুম্যান এই নারকীয় হত্যাকাহিনির পরিকল্পনাকারী। হত্যাকাহিনী এই অর্থে যে, বোমা হামলার সময় থেকে এখনো এর প্রভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এ ছাড়া কি আর কোনো পথ ছিল না ট্রুম্যানের কাছে?


বিশ্বে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তান্ডব চলছে। যুদ্ধের জয়-পরাজয় অনেকটাই নির্ভর করে অস্ত্রের জোরের উপর। যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যবনিকা টেনেছিলো ট্যাংক আর কৃত্রিম এসিটোন। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিক এসে কয়েকটি শক্তি একটা নির্দিষ্ট দিকে মনোযোগ দিলো। সেটি হলো পূরাণে বর্ণিত ব্রহ্মাস্ত্র নির্মান। যা নিক্ষেপ করার সাথে সাথে মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়বে কয়েক লক্ষ্য মানুষ। পুড়ে খাক হয়ে যাবে বিশাল বনাঞ্চল। এমনকি নদীর পানিও বাস্প হয়ে আকশে উড়ে যাবে। ঘটনার সূত্রপাত বিখ্যাত ফিজিক্সের সূত্র E = mc2 দিয়ে। জার্মান ইহুদী বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তাত্ত্বিকভাবে প্রমান করলেন যে, পদার্থকে শক্তিতে ও শক্তিকে পদার্থে রূপান্তর সম্ভব। এদিকে ২৫০০ বছর আগের দার্শনিক ঋষি কণাদের দর্শনে বলা এ্যাটম বা পরমাণুর সন্ধান পেয়ে গেছেন জন ডালটন। কণাদের দর্শনের প্রতিধ্বনি করে ডেমোক্রিটাস বলেছিলেন যে এ্যাটম অবিভাজ্য, যা মানতে চাননি প্লেটো ও এরিস্টটল, তাদের মতে এই জগতে অবিভাজ্য কিছুই নেই। তাই ডালটনের পরমাণুতে সন্দেহ হলো রাদারফোর্ডের, তিনি ভাবলেন চেষ্টা করেই দেখিনা, ভাঙা যায় কিনা পরমাণু। সবাইকে অবাক করে, ভেঙে ফেললেন তিনি সেটি। ভেঙে পেলেন গ্রহগুলোর মত কক্ষপথে ঘুর্নায়মান কিছু ঋণাত্মক ইলেকট্রন আর গা জড়াজড়ি করে কেন্দ্রে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু প্রোটন, তাদের সাথে মিতালি করে কিছু নিউট্রনও আছে সেখানে। হায়রে জানার সীমা যত প্রসারিত হয়, অজানার পরিধিও তত বিস্তৃত হয়। পরমাণুতো ভাঙলাম, কিন্তু এবার সম্মুখীন হলাম নতুন সমস্যার, পজেটিভ পজেটিভ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে এটা ধ্রুব সত্য, পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত। তাহলে ঐটুকুন নিউক্লিয়াসের ভিতর এতোগুলো প্রোটন এতকাল যাবৎ একত্রে আছে কি করে? তাদেরতো একে-অপরের প্রবল ধাক্কায় ছিটকে পড়ে পরমাণু ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলার কথা। তাহলে কি কোন প্রবল শক্তি তাদের ঐখানে ধরে রাখছে? এবার চোখ গেলো E = mc2-এর দিকে। যদি কোনভাবে একটু নাড়িয়ে দেয়া যায় নিউক্লিয়াসকে তাহলেই পাওয়া যাবে বিশাল শক্তি! মহাযুদ্ধের ডামাডোল-এর মধ্যে একদল বিজ্ঞানীর মাথার মধ্যে প্রবেশ করলো বিষয়টি, এই সেই ব্রহ্মাস্ত্র তৈরীর মহাকৌশল! ব্যাস লেগে গেলেন। অনেকেরই ধারনা, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটান প্রজেক্টই একমাত্র। আসলে তা নয়, একই সময়ে সমজাতীয় প্রজেক্ট গড়েছিলো জার্মানী ও জাপান। জার্মানীতে এর সূত্রপাত ঘটায় German chemist Otto Hahn and his assistant Fritz Strassmann (১৯৩৮) এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে কাজটি করেন অধ্যাপক Paul Harteck। প্রজেক্টের নাম First Uranverein। জাপানে এই প্রজেক্ট শুরু করেন leading figure in the Japanese atomic program Dr. Yoshio Nishina, a close associate of Niels Bohr and a contemporary of Albert Einstein। পরবর্তিতে নোবেল বিজয়ী জাপানী বিজ্ঞানী ইউকাওয়া-কেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তবে সময়ের বিচারে প্রথম এই ব্রহ্মাস্ত্র হাতে আসে আমেরিকানদের। সে সময় মার্কিন রাষ্ট্রপতি President Franklin D. Roosevelt সিদ্ধান্ত নেন যে এই ব্রহ্মাস্ত্র মানুষের উপর ব্যবহার করা হবে। এই সিদ্ধান্ত শুনে হতচকিত হয়ে যান বিবেকবান বিজ্ঞানীরা, মানব হত্যার জন্য তো বানানো হয়নি এই অস্ত্র। এবার স্বভাবতঃই প্রশ্ন জাগে যে, কোন সৎকর্মের উদ্দেশ্যে এত কোটি কোটি ডলার ঢালা হলো ম্যানহাটান প্রজেক্টে? বিজ্ঞানীদের জবাব, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজয় সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে। তবে তাই হোক জাপানীদের মাথায় এই বোমা মেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজয় সুনিশ্চিত করা হবে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের কথা, মানবহত্যা না করেও তো এই বিজয় সুনিশ্চিত করা যায়। তা কিভাবে? বিজ্ঞানীরা বিকল্প পথা বাতলে দিলেন, একটি ওপেন ডেমোনস্ট্রেশন করলেই তো জাপানীরা ভয়ে আত্মসমর্পন করবে। ব্যাস, সাপও মরলো লাঠিও ভাঙলো না।

কিন্তু শান্তিপূর্ণ এই সমাধান পছন্দ হয়নি রুজভেল্টের। তিনি অশান্তির পথটিই বেছে নিলেন। অবশ্য তা কার্যকর করার আগে তিনি নিজেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। তার স্থলাভিষিক্ত হলেন তারই উপ-রাষ্ট্রপতি Harry S. Truman। বস-এর পথ থেকে সরে এলেন না তিনি, বরং তা কার্যকর করলেন। ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ই আগস্ট পৃথিবীর ইতিহাসে দুটি বিভিষিকাময় দিন। জাপানের আকশে নেমে এলো লিটল বয় আর ফ্যাট ম্যান নামে দুটি অভিশাপ। মূহুর্তেই লুটিয়ে পড়লো লক্ষাধিক মানুষ।


We have discovered the most terrible bomb in the history of the world. It may be the fire destruction prophesied in the Euphrates Valley Era, after Noah and his fabulous Ark.
Harry Truman, writing about the atomic bomb in his diary on July 25, 1945

পারমানবিক বোমা একটি গণবিধ্বংসী অস্ত্র। যেই তৈরী করুক না কেন, এটি শেষ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয় মানুষের বিরুদ্ধেই। আজ আমি তার মাথার উপরে ফেলেছি। কাল তিনিও আমার মাথার উপর ফেলতে পারেন। অথবা আমার হাত ফসকে আমার গায়েই পড়তে পারে! তখন আমাকে কে বাঁচাবে? এই অভিশাপ যারা তৈরী করেন তাদেরকে ধন্য ধন্য করার কিছু নাই।


পারমাণবিক প্রকল্প'-ও - আশির্বাদ নয়, অভিশাপ। এই পরমাণু শক্তি প্রথম অর্জন করেছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এবং সেই শক্তিই মানব জাতির জীবনে অভিশাপ হয়ে নেমে এসেছিল, হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে। বিশ্ববাসি হতবাক হয়ে দেখেছে সেই বিভীষিকা। এছাড়া প্রকল্পগুলোতেও দুর্ঘটনাও ঘটেছে একাধিক।
প্রথম ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প' স্হাপিত হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে। সেই দেশেই ঘটেছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, চেরনোবিলের তান্ডব। আজও যার মাশুল দিতে হচ্ছে।

১৯৫২ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ১০০ টি পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এর কিছু তালিকা (অসম্পূর্ণ) নিচে দেয়া হলো:
সর্বাধিক সংখ্যক পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৬ টি, তাছাড়া যুক্তরাঝ্যে ২ টি, ইউক্রেনে (সোভিয়েত ইউনিয়ন) ১ টি, ভারতে ৬ টি, জার্মানিতে ৩ টি, ফ্রান্সে ১০ টি ও জাপানে ১১ টি।

এই দুর্ঘটনাগুলোর ফলে ঘটেছিল ব্যপক মানব সম্পদ ও ধন-সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ।

এছাড়া যে স্হানে পারমাণবিক প্রকল্প স্হাপন করা হয় সেখানে কিছুনা কিছু পরিমানে তেজস্ক্রিয়তা থাকেই। যার কুপ্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফ্লোরা ও ফাউনা। একজন পদার্থবিজ্ঞানী হিসাবে আমি জানি, পদার্থবিজ্ঞানীরা জীববিজ্ঞানে আগ্রহী নয়। তাই তারা সুদূরপ্রসারি ফলাফলের কথা না ভেবেই নিজেদের কারিশমা দেখানোর জন্য পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে উঠে পরে লাগে।

এই পারমাণবিক প্রকল্পের ভয়াবহতা সম্পর্কে আন্দ্রেই সাখারভ অনেক আগেই মানব জাতিকে সাবধান করে দিয়েছিলেন।
গভীর ভাবে চিন্তা করলে অনায়াসেই বলা যায়, ‘পারমাণবিক শক্তো ও প্রকল্প' - আশির্বাদ নয়, অভিশাপ । এই অভিশাপের হাত থেকে মানবজাতিকে মুক্ত করার পথ খুঁজতে হবে।

"আণবিক আঘাতে, হিরোসিমা কাঁদে,
বিপন্ন নাগাসাকী,
বিবেকের ডাকে, এসো একসাথে,
বন্ধ করি বিশ্বে যুদ্ধ।"

(পুরনো দিনের একটি গানের কলি)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০৮

রমিত বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:২৫

ডি মুন বলেছেন: তথ্যবহুল লেখা।
++++

আমরা কখনোই চাই না - পারমানবিক বোমার আঘাতে আর কোনো প্রাণ বিনষ্ট হোক।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে সব রাষ্ট্র শান্তির কথা বলে, দেখা যাচ্ছে তারাই পারমানবিক শক্তিকে মানুষেরই বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্যে প্রস্তুত হয়ে আছে।

আমরা যুদ্ধ চাই না, মৃত্যু চাই না।
পৃথিবী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখীণ যেন না হয় - এটাই কামনা।

ভালো থাকুন।

০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৪

রমিত বলেছেন: জ্বী, যথার্থই বলেছেন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.