নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।
ওর বিয়ে
---- রমিত আজাদ
অবশেষে বিয়েটা সেরে ফেললো তুষার। তবে জমকালো কোন অনুষ্ঠানে নয়, খুব মামুলিভাবে। দশ-বারো জন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। বিয়ে পড়ালেন এক তরুণ হুজুর। বিয়ের আগে খুব সুন্দর সুন্দর কয়েকটি কথা বললেন তিনি। এর মধ্যে একটি ছিলো, "আপনারা মনে করবেন না যে, আপনাদের দাম্পত্য জীবনে সবসময়ই মধুর সময় যাবে, জীবন চিরমধুর নয়, সুখ-দুঃখ মিলিয়েই জীবন। তাই আপনাদের জীবনেও যে জটিল সময় আসবে না, সেকথা বলা যায়না। সহজ সময় হোক, জটিল সময় হোক, যেকোন পরিস্থিতিতেই বন্ধন দৃঢ় রাখবেন, এটাই স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য।" বিয়ের পর ঘরে ফিরে এসে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনকে সংবাদটা জানানোর জন্য টেলিফোন তুললো তুষার। সকলেই সংবাদটা শুনে খুশী হলো, কেউ কেউ আবার বললো, "আমাকেও বললে না কেন? আমিও আসতাম অনুষ্ঠানে। যাহোক রিসিপশনে দাওয়াত দিতে ভুলোনা যেন।" এরপর হঠাৎ চৌধুরী আঙ্কেলের কথা মনে পড়লো তুষারের। উনাকেও তো জানানো দরকার। চৌধুরী আঙ্কেলের সাথে তুষারের পরিচয় বেশিদিনের নয়, মাত্র এক বৎসর, কিন্তু এর মধ্যেই বেশ ঘনিষ্টতা হয়ে গেছে তাদের। সমমনা দু'জন, তাছাড়া দু'জনই সাহিত্য আলোচনা পছন্দ করে। এইভাবে চৌধুরী আঙ্কেলের বিশেষ স্নেহভাজন হয়ে গেছে তুষার। নিজ বিয়ের মত সুসংবাদটি তাকে শোনানো প্রয়োজন ভেবে তাঁকে ফোন দিলো তুষার।
ওপাশ থেকে শোনা গেলো চৌধুরী আঙ্কেলের কন্ঠস্বর
: হ্যালো।
: আঙ্কেল, আমি তুষার।
: ও, তুষার। কেমন আছো। (উল্লসিত কন্ঠস্বর শোনা গেলো আঙ্কেলের)
আরো বেশি উল্লাস নিয়ে তুষার বললো
: আঙ্কেল, একটা শুভ সংবাদ আছে।
: তাই নাকি? কি শুভ সংবাদ বলো। (আরো উৎসাহী মনে হলো আঙ্কেলকে)
: জ্বী, মানে আজ সকালে আমার বিয়ে হয়েছে।
: কি? বিয়ে? তোমার? (একেবারে চুপসে যাওয়া বেলুনের মতো মনে হলো আঙ্কেলের কন্ঠস্বর)।
অনেকটাই হতাশ স্বরে তিনি বললেন,
:ওকে, কনগ্র্যাচুলেশনস!
এবার তুষার নিজেই চুপসে গেলো। ভেবেছিলো শুভ সংবাদ শুনে খুশি হবেন আঙ্কেল, আর হলো উল্টা, উনার কন্ঠস্বরে কোন উষ্ণতাই ছিলোনা। বরং যথেষ্ট শীতলই মনে হলো।
পাশে বসে থাকা বন্ধুটি বললো
: কি হলো? কাকে ফোন করেছিলে?
: চৌধুরী আঙ্কেলকে।
ভুরু কুঁচকে তাকালো বন্ধুটি।
: তারপর?
: আঙ্কেলের কন্ঠস্বর কেমন শীতল মনে হলো!
এবার চোখ বড় করে তাকালো বন্ধুটি।
: তুমি কি কিছু বুঝতে পারোনি?
: না, কি বুঝবো?
: চৌধুরী আঙ্কেল তোমাকে এত স্নেহ করতে শুরু করে কেন তুমি বোঝনাই?
: হ্যাঁ। আমরা সমমনা। তাছাড়া আমার মতো উনিও সাহিত্য আলোচনা পছন্দ করেন।
: তাহলে তুমি কিছুই বোঝনাই।
: কি বুঝবো?
: চৌধুরী আঙ্কেলের কয় ছেলেমেয়ে?
: দুই ছেলে, এক মেয়ে।
: ওখানেই তো ঘটনাটা।
: ওখানে আবার কি ঘটনা? (অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো তুষার)
: চৌধুরী আঙ্কেল উনার মেয়ের জন্য মনে মনে তোমাকে ঠিক করে রেখেছিলো।
: কি বলিশ ব্যাটা?
: আমার আগেই ধারণা হয়েছিলো। আজ নিশ্চিত হলাম। উনি তো আর জানতেন না যে, তোমার প্রেমিকা আছে!
তুষার ভাবনায় পড়ে গেলো। হ্যাঁ চৌধুরী আঙ্কেলের মেয়েটাকে সে কয়েকবার দেখেছে। তবে কখনো ভালো করে তাকিয়ে দেখেনি। সুন্দরী, তবে নিতান্তই কিশোরী মনে হয়েছিলো তাকে। শুনেছে, মেয়েটি বারো ক্লাস শেষ করেছে। তার মানে বেশী হলে অষ্টাদশী। তবে ছোটখাট গড়নের বলে আরো ছোট লাগতো।
এর বছর খানেক পরে একটা মেলায় দেখা হয়েছিলো মেয়েটির সাথে তুষারের। একটি স্টলে বসে ছিলো মেয়েটি। ওকে দেখে তুষার এগিয়ে গেলো। তুষারকে দেখে মেয়েটি লাজুক হাসলো। তারপর বললো, "কি কিনবেন তুষার ভাই? বলেন। আমার স্টল এটা, অনেকেই তো অনেক কিছু কিনেছে। আপনাকেও একটা কিছু কিনতেই হবে।" এই প্রথম এতো লম্বা কথা বললো মেয়েটি তার সাথে। তুষার কেন যেন কিছুটা লজ্জা পেলো। মনে মনে ভাবলো, আচ্ছা মেয়েটি কি তাকে আর তুষারকে ঘিরে তার বাবার মনোভাব জানতো? যদি জেনে থাকে, সেটা তো লজ্জার ব্যাপার!
এরপর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে আর মেয়েটির সাথে দেখা হয়নি তুষারের। চৌধুরী আঙ্কেলের সাথে যা মাঝে-সাঝে দেখা হয়েছে, সে তাঁর অফিসে। আজ সেই মেয়েটির বিয়ে। চৌধুরী আঙ্কেল তুষারকে দাওয়াত দিয়েছেন বিয়েতে। তুষার একটু দামী গিফটই কিনলো, বিয়ের উপহার হিসাবে।
বিয়ের হলে ঢুকে প্রথমেই দেখা হলো মেয়েটির ছোট ভাইয়ের সাথে। তুষার বললো,
: কেমন আছো? তোমার বোন কোথায়?
: জ্বী, আপা তো স্টেজে।
: ও হ্যাঁ, ওখানেই তো থাকার কথা। ঠিক আছে দেখে আসি ওকে। (বললো তুষার)
শেষ পর্যন্ত কোন্ ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে মেয়েটির, ওটা দেখার আগ্রহও ছিলো তুষারের। যে স্টেজে বর-বধু বসে আছে তার কাছাকাছি এগিয়ে গেলো তুষার। ঐতো বসে আছে ও। বরকে দেখতে চাইলেও বরের আগে কনের দিকেই চোখ গেলো তুষারের। কিন্তু কি আশ্চর্য্য! কাকে দেখছে ওখানে? ও তো আর সেই কিশোরীটি নেই! বেশ বদলে গেছে, অনেকটাই পূর্ণবয়স্ক নারী। বেশ আকর্ষণীয়াই লাগছে ওকে।
একসময় বিয়ের অনুষ্ঠানে কনে বেশ জড়তা নিয়ে বসে থাকতো, কোন কথাবার্তা বলতো না। আজকাল আর তেমন হয়না। বেশ হাসিখুশিভাবে কনেরা বসে, আশেপাশের সবার সাথে কথাবার্তাও বলে। মেয়েটিও তাই করছিলো। হঠাৎ ওর চোখ পড়লো তুষারের দিকে। সাথে সাথেই যেন দপ করে নিভে গেলো ও। দৃষ্টিটাও পরিবর্তিত হয়ে গেলো। এর মানে কি? কেন অমন হয়ে গেলো ও? তবে কি....? এবার তুষারও নিভে গেলো। নাহ, থাকা যাবেনা এই বিয়ের অনুষ্ঠানে। সকলের চোখ এড়িয়ে উৎসব মুখর এই পরিবেশ থেকে চুপিসারে বেরিয়ে এলো তুষার।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:০৩
রমিত বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জ্বী, আমি গল্পও লিখি একটু-আধটু। ভালো লিখিনা বুঝতে পারি, তারপরেও নিছক মনের আনন্দে লিখি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:১৪
অন্ধবিন্দু বলেছেন:
ওর এর বিয়েতে প্রায়ই শোনা গল্প। মজার ট্রাজেডি। আপনি গল্পও লিখেন দেখি !