নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!

রমিত

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।

রমিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথ চলিতে, যদি চকিতে

০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:১০





পথ চলিতে, যদি চকিতে
------------------------------- রমিত আজাদ

"কেমন আছেন?"
সন্ধ্যার আলো-আধারীতে হিজাব পরিহিতা সুশ্রী মেয়েটির মুখ চট করে চিনতে কষ্ট হলো।
আমি সন্ধানী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করলাম। মৃদু হাসলো সে। হ্যাঁ, সেই হাসি; এবার চিনতে পারলাম।
"চিনতে পেরেছেন?" আবার প্রশ্ন করলো সে।
"তুমি নওরিন, তাই না?"
এবার তার অবাক হওয়ার পালা। হিজাবে শুধু তার মুখমন্ডলটি খোলা, তাকে শেষ যখন দেখেছি তখন সে হিজাব করতো না; তাছাড়া এখন দিনের আলো নেই, এই রাজধানী শহরেও সন্ধ্যার পর পর্যাপ্ত আলো থাকে না; তাই এই আঁধারে এই বেশেও তাকে চিনলাম কি করে?!
ওকে ইমপ্রেসড করতে পেরেছি ভেবে আমি মনে মনে খুশী হলাম।
পুরো ঘটনাটাই ঘটেছে কাকতালীয়ভাবে। আমার ওষুধ কেনার প্রয়োজন ছিলো। সাধারণত যেই ফার্মেসীটি থেকে আমি ওষুধ কিনি, ওখান থেকে না কিনে, কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলাম। নগরীর অন্যান্য এলাকায় না হলেও, এই অভিজাত এলাকায় ফুটপাতগুলো মোটামুটি চলনসই হয়েছে। তাই হাটতে হাটতে সামনে এগিয়ে গেলাম। ওষুধ কেনা শেষ হলে, বাসায় ফিরছিলাম, পথে একটা ফুলের দোকান। তাজা ফুলের প্রতি আমার ভিন্ন আকর্ষণ রয়েছে। নগরীর ফুলের দোকান গুলো ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য বাইরে কিছু ফুল এমনভাবে সাজিয়ে রাখে যে, বেশ সিডাক্টিভ! বিদেশী ফুলের মধ্যে কার্নেশন-এর প্রতি আমার আলাদা দুর্বলতা রয়েছে! তাই ফুলের দোকানটিতে ঢুকলাম কার্নেশন কেনার আশায়। কিন্তু যা দাম বললো, সেটা আমার কাছে টু মাচ মনে হলো। তাই সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। বেরোতেই নওরিন-এর সাথে দেখা। আর দু'এক মিনিট এদিক-ওদিক হলেই দেখা হতো না!

নওরিন-কে প্রথম দেখেছিলাম বছর সাতেক আগে। তখন সে সদ্যযৌবনা প্রস্ফুটিত এক পুষ্প! আমাদের অফিসে এসেছিলো ইন্টার্নশিপ করতে। রাজধানীর একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ সেমিস্টারের ছাত্রী ছিলো তখন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতি অনুযায়ী শেষ সেমিস্টারে যে ইন্টার্নশিপ করতে হয় তাই করতে সে এসেছিলো। কিভাবে সে আমাদের অফিসে ইন্টার্নশিপ জোগার করেছিলো সেটা আমার জানা নাই। হতে পারে তার বাবার কোন কানেকশনে। শুনেছি, তার বাবা কোন কর্পোরেটের বড়কর্তা। আমাদের অফিসে আসার পর তার ইন্টার্নশিপের কাজগুলো আমার সাথে করতে দেয়া হলো। মেয়েটি প্রথম দেখায়ই খুব ইমপ্রেশন ক্যারি করেছিলো। সেটা সম্ভবতঃ তার চোখ ধাঁধাঁনো রূপের কারণে। প্রাথমিক আলাপের পর ও যখন আমার রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আমার কলিগ মন্তব্য করেছিলো, "দেখেছেন, মেয়েটা একেবারে ডল-পুতুলের মত!" অফিসের কাজ করার সময় দেখেছি, মেয়েটি ইন্টেলিজেন্টও বটে!

মাস তিনেকের মত ও কাজ করেছিলো আমার সাথে। বেশ সিন্সিয়ারিটি ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলো। পাশাপশি ও বাংলা ও ইংরেজী দুটাই খুব ভালো বলে। বাচনভঙ্গীও চমৎকার! আমার তখন মনে হয়েছিলো, এই মেয়ে অনেক দূর যেতে পারবে। ইন্টার্নশিপ শেষ হওয়ার পর আমার কাছ থেকে একটা চিঠি নিয়েছিলো। চিঠিতে সই করতে করতে বলেছিলাম। "ব্যাচেলর পাশ করতে যাচ্ছো, এখানেই থেমে যেও না কিন্তু, মাস্টার্স-টা করো।" ও হেসে বলেছিলো, "মাস্টার্স অবশ্যই আমি করবো স্যার। লেখাপড়ায় আমার অনেক আগ্রহ!"

এরপর ওর সাথে আমার তেমন যোগাযোগ হয়নি। মাস ছয়েক পরে, একটা টেলিফোন কল পেলাম নওরিনের। "স্যার, আমার বিয়ে, আপনি আসবেন কিন্তু।" ই-মেইলে একটা বিয়ের কার্ডও পাঠিয়েছিলো। আমার ওর বিয়েতে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও আমি কি কারণে যেন যেতে পারিনি। তবে ওকে উইশ করে মেসেজ পাঠিয়েছিলাম। এরপর বিয়ের কিছু ছবি পেলাম ইমেইলে। যতদূর জানতে পারলাম, খুব ধনী কোন পরিবারে বিয়ে হয়েছে ওর। স্বামী থাকে বিদেশে। বিয়ের পরে নওরিনও ঐ দেশে স্বামীর কাছে চলে যায়। সবকিছু শুনে আমার ভালো-ই লেগেছিলো। ভেবেছিলাম, যাক ভালো মেয়েটির একটা ভালো বিয়ে হয়েছে! সুখে কাটুক ওর বাকি জীবন। ও খুব মেধাবী, তাই আমি মনে মনে ধরে নিয়েছিলাম, বিদেশে গিয়ে মাস্টার্সটা করে নেবে।

এরপর বেশ কয়েকবছর কোন যোগাযোগ ছিলো না। কোন প্রয়োজনও ছিলো না। তবে মাঝেমাঝে যে ওকে মনে পড়তো না তা নয়। সেই মনে পড়া তো এম্নিই! তারপর এক বিকালের একটি টেলিফোনে বজ্রাহত হয়েছিলাম। আমার এক কলিগ বলেছিলো, "নওরিনকে মনে আছে না আপনার?" আমি বলেছিলাম, "জ্বী। কেন বলুন তো?" সে বললো, "নওরিন-তো দেশে ফিরে এসেছে।" আমি বলেছিলাম, "ভালো কথা, দেশে ফিরেছে, তাতে হলো টা কি?" সে বললো, "আরে ভাই, ওর বিয়েটা ভেঙে গেছে! তাই দেশে ফিরে এসেছে।" এই সংবাদটা আমি সত্যিই আশা করিনি। খুব মর্মাহত হয়েছিলাম সেদিন। এবার সবাই জানতে চাইতে পারেন, এতে আমার মর্মাহত হওয়ার কি আছে? প্রথমত, দুঃসংবাদে যে কেউই মর্মাহত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, কেন যে ওর খুশীর সংবাদে আমি খুশী হয়েছিলাম, আর ওর দুঃখের সংবাদে আমি ব্যাথিত হলাম, সেই ব্যাখ্যা আমার কাছেও নেই। আমার শুধু বারবার মনে হচ্ছিলো, এত সুন্দরী, এতো ইন্টেলিজেন্ট, এত পোলাইট একটা মেয়েকে তার স্বামী কিভাবে ত্যাগ করলো?!

আমি অনেকের সাথেই এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এক একজনার এক একরকম মন্তব্য; কেউ বলে, "মেয়েটা বাইরে থেকে হয়তো ওরকম ইমপ্রেসিভ, সংসার জীবনে হয়তো আনফিট!" কেউ বলে, "ছেলেটা বিদেশে বড় বুঝলেন না, স্বভাব-চরিত্র ভালো না। ভদ্র মেয়ে সহ্য করতে পারে নাই।" একজন বললো, "এই জমানার ছেলেমেয়ে, একটু মনমালিন্য হলেই ছাড়াছাড়ি। ডিভোর্সটা এখন খুব ফ্রিকোয়েন্ট, বুঝলেন!" কোন ব্যাখ্যাই আমার ভালো লাগে নাই। আমার শুধু মনে হয়েছিলো, কাজটা ঠিক হয়নাই; এমন চমৎকার একটা মেয়ের জীবনে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটা উচিৎ ছিলো না! খুব ইচ্ছা হতো কোন না কোনভাবে ওকে সাহায্য করি। ভালো কোন ছেলে যদি পাই, তাহলে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দেব, যেন সে দ্বিতীয় জীবনে সফল হয়!

আমার জীবনেও এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, অনেক অনেকগুলো বছর আগে। না, আমার প্রাক্তন স্ত্রীকে আমি কোন দোষ দেব না। ও ভালো মেয়েই ছিলো। জাস্ট সার্বিক পরিস্থিতির কারণে আমরা একসাথে থাকতে পারিনি। তারপর বিদেশের জীবন আমার আর ভালো লাগেনি। শেষমেশ দেশে চলে এলাম। খোঁজ পেয়েছি, আমার প্রাক্তন স্ত্রীর দ্বিতীয় বিবাহ হয়েছে। হয়তো সে ভালো-ই আছে। ও ভালো থাকুক এটাই আমি চাই। আমি এখন একার জীবন, কোন রকমে চালিয়ে নিচ্ছি। ক্রিয়েটিভিটি ভালো লাগে। ছেলেবেলায় স্বপ্ন দেখতাম আল হাইয়াম বা প্রফেসর সালামের মত বিজ্ঞানী হবো, আবিষ্কার করবো, 'কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে। সেটা আর হওয়া হয়নি। কেমিস্ট্রিতে পাশ করে ব্যবসায়ী জীবনে প্রবেশ করেছি। ব্যবসার জীবনটা খারাপ না, এখানেও অনেক আবিষ্কার-উদ্ভাবন আছে!

আমি নওরিন-কে বললাম, "তুমি হঠাৎ এখানে?"
নওরিন: জ্বী, আমি সামনের মার্কেট-টাতে যাচ্ছি। কিছু কেনাকাটা আছে।
আমি: ও! কেমন যাচ্ছে তোমার দিনকাল?
নওরিন: জ্বী, মোটামুটি।
আমি: তুমি কি করো এখন?
নওরিন: আমি একটা বিদেশী সংস্থায় কাজ করি। খুব ইন্টারেস্টিং কাজ!
আমি: কি কাজ?
নওরিন: ওরা ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করে। শিশুদেরকে নানা কিছু শেখায়।
আমি: ও, শিশুদের সাথে সময় কাটে! তাই তোমার ভালো লাগে কাজটা?
নওরিন মৃদু হাসলো।
আমার হঠাৎ মনে পড়লো নওরিন-এরও একটা ছোট মেয়ে আছে। আমি বললাম,

আমি: তোমার মেয়েটি কোথায়?
নওরিন: ওতো ওর বাবার সাথে রয়ে গেছে। বিদেশে।
এবার আমার মন আরো বেশী খারাপ হলো।
আমি: ও আচ্ছা। (কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না)
নওরিন: আপনি কি এখনো ঐ অফিসেই আছেন?
আমি: না। ওটা তো আমার ফ্রেন্ডের অফিস ছিলো। এখন আমি নিজেই একটা অফিস করেছি।
নওরিন: কেমন যাচ্ছে আপনার বিজনেস?
আমি: চলে যাচ্ছে। নট ব্যাড।
নওরিন: আচ্ছা, আমি যদি মাস্টার্স-টা করতে চাই কেমন হয়?
এবার আমার আরো অবাক হওয়ার পালা! হায়রে! এত মেধাবী মেয়েটা মাস্টার্সও শেষ করতে পারলো না?!
আমি: তুমি এরপর আর পড়োনি?
নওরিন একটু লজ্জ্বা পেয়ে বললো,
নওরিন: জ্বীনা। হয়ে ওঠেনি। এখন আবার পড়বো ভাবছি।
সংসারের জন্য মেয়েদের এই সেক্রিফাইস আমি অনেক দেখেছি। অথচ অনেকেই এটা রিকোগনাইজ করতে চায়না।

আমি: তুমি আবার পড়ালেখা শুরু করো। তুমি তো মেরিটোরিয়াস, মাস্টার্স-টা তোমার শেষ করা উচিৎ।
নওরিন: তাই? আমাকে একটু পরামর্শ দিতে পারবেন। যদি কোন হেল্প লাগে, তাহলে?
আমি: আরে, আমার হেল্পের তেমন কোন প্রয়োজন নেই। তুমি নিজেই পারবে। এখন তো দেশে এই বিষয়ে সুবিধা অনেক।
নওরিন: কিভাবে?
আমি: জাস্ট, ভালো কোন একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করো। ওখানে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হয়ে যাও। তারপর রেগুলার পড়ালেখা করলে দুবছরের মধ্যেই ডিগ্রী হয়ে যাবে।
নওরিন: তাই? কিন্তু আমি যে চাকরী করি!
আমি: হ্যাঁ, তাইতো। চাকরীটা সমস্যা না। আমার অফিসেই বেশ কয়েকজন আছে, দিনে চাকরী করে আর সন্ধ্যায় মাস্টার্স কোর্সে পড়ে!
নওরিন: তাহলে তো ভালো। একটু পরামর্শ দিয়েন।
আমি: তুমি এক কাজ করো। সময় করে একদিন আমার অফিসে চলে আসো।
নওরিন: জ্বী, আসবো।
আমি: এই নাও আমার ভিজিটিং কার্ড। এখানে মোবাইল নাম্বার আছে।
নওরিন: থ্যাংক ইউ!
আমি: তোমার মোবাইল নাম্বারটা আমাকে দাও।
নওরিন: জ্বী, জ্বী, সেইভ করুন।
আমি ওর নাম্বারটা আমার মোবাইলে তুলে নিলাম।

ঠিক কতক্ষণ আমরা কথোপকথন করেছি, জানিনা। আমাদের পাশ দিয়ে অনেকেই হেটে যাচ্ছিলো। ঢাকা শহর এখন আর আগের মত নেই। রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে নারী-পুরুষের আলাপচারিতা এখন আর কেউ কৌতুহলী হয়ে দেখে না। হতে পারে সেই অপসংস্কৃতি দূর হয়েছে। হতে পারে অতিমাত্রায় আর্বানাইজেশনে এখন আর কারো হাতে সময় নেই, সবাই শুধু ছুটছে।

আমি আরেকবার চোখ তুলে মুখোমুখি ওর দিকে তাকালাম। নওরিনও অনুরূপ তাকালো। সাত বছর আগের মুখটির সাথে পুরোপুরি মেলাতে পারলাম না। সেদিনকার স্টাইলেশ হেয়ারস্টাইলের মেয়েটি নয়, পুরোপুরি হিজাবে ঢাকা মুখ, হয়তো এই কারণে এক্সপ্রেশন বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে! হাসিটা আগের মতই আছে বোধহয়। না তাও নয়, আগের কাছাকাছি, সেদিনকার হাসিটি ছিলো নির্মলা। আর এখনকার হাসিতে বেদনার ছোঁয়া আছে।

আমাদের পাশ দিয়ে হুশ হুশ একটার পর একটা দামী গাড়ী চলে যাচ্ছে উচ্চমাত্রার হর্ণ বাজিয়ে। দামী গাড়ীর সংখ্যা এই শহরে ক্রমাগতই বেড়ে চলছে। বাড়ছে জ্যাম, শুধু রাস্তাই সেই অনুযায়ী বাড়ছে না। থাক অত উচ্চমার্গের চিন্তাভাবনা আমার করার দরকার নাই। যারা দায়িত্বে আছে, তারাই করুক। আমি দেখছি নওরিনকে। কথাটা বলবো কিনা ভাবছি। বলাটা কি ঠিক হবে। ও আবার কি মনে করে বসে! তারপর ঝট করে বলেই বসলাম,

আমি: অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা হয়ে, কথা বলে খুব ভালো লাগছে!
নওরিন: (মৃদু লাজুক হেসে) জ্বী, আমারও খুব ভালো লাগছে!

আমি ভেবেছিলাম, নওরিন বড়জোড় হয়তো বলবে, 'থ্যাংক ইউ'। কিন্তু নওরিনের এই প্রতিউত্তর শুনে আমিও একটু অবাক হলাম!

আমি: ঠিক আছে। আজ তাহলে আসি।
নওরিন: জ্বী, আচ্ছা।
নওরিন এক পা আগাতেই, আমি বললাম, "একটু দাঁড়াও।"
নওরিন তাকালো।
পাশেই ফুলের দোকান। সেখানে কার্ণেশন সাজানো। একটি ফুলের দোকানের পাশ থেকে, আমি কি ওকে খালি হাতে যেতে দিতে পারি?
দোকানীর সাথে এবার আর আমি কোন দরদাম করলাম না। যা দাম চাইলো, তাই দিয়েই কিনে নিলাম ফুল।
পাঁচ রঙের পাঁচটি কার্ণেশন ওর হাতে তুলে দিলাম।

ফুল হাতে নওরিনের মুখের এক্সপ্রেশনটি মধ্যযুগীয় শিল্পিদের আঁকা তৈলচিত্রের মতই রহস্যময় ও ব্যাখ্যাতীত মনে হলো। আমি আর সেই রহস্যের কোন ব্যাখ্যা পাওয়ার প্রয়োজন মনে করলাম না।

আমি: আমার নাম্বার তো দিলাম। যোগাযোগ করে এসো একদিন অফিসে।
নওরিন: জ্বী, অবশ্যই আসবো।

কোটি মানুষের বেদনায় সিক্ত দূষিত বাতাসের এই নগরীর রাতের আকাশে কোন তারা দেখা যায় না। তাই আমাদের আলাপে পেরনো ফিকে সন্ধ্যার পর আকাশ নিকষ কালো হয়ে এলো। মাথার উপরে জ্বলা কিছু সোডিয়াম লাইটের নিচের টাইলস শোভিত ফুটপাথ ধরে নওরিন চলে গেলো পশ্চিমে, আর আমি যেতে লাগলাম গেলাম পূবে। যেতে যেতে ভাবছিলাম, 'নওরিন আমার সাথে দেখা করতে আমার অফিসে আসবে তো!!!???'

'পথ চলিতে, যদি চকিতে কভু দেখা হয়,
পরাণ-প্রিয়।
চাহিতে যেমন আগের দিনে
তেমনি মদির চোখে চাহিও।।'
(নজরুল গীতি)

--------------------------------------------------------------------------------------

রচনা তারিখ: ১৫ই এপ্রিল, ২০১৯
সময়: রাত ১টা ৪৯ মিনিট



মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:২৮

পরিবেশবাদী ঈগলপাখি বলেছেন: ছবিটা মনোমুগ্ধকর :P

০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:১২

রমিত বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: নওরিন ভালো থাকুক।

০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ রাত ৯:১৩

রমিত বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।

৩| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

চমৎকার ও নিস্কলুষ্
প্রেমকাহিনীর সাথে
চামৎকার আবেগ
মাতোয়ারা হলাম।
ধন্যবাদ লেখককে

০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫৯

রমিত বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

গল্পটির কনটিনিউয়েশন আছে আরেকটি গল্পে। সেটাও আজ ব্লগে দিয়েছি।

৪| ০৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৩:৫৭

আজাদ প্রোডাক্টস বলেছেন: সুন্দর লেখা কন্টিনুয়েশন টা পড়ে দেখতে হবে

০৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১১:১৬

রমিত বলেছেন: ধন্যবাদ।
কন্টিনুয়েশন টা পরের পোস্টে রয়েছে।
গল্পের নাম 'নওরিন এসেছে'।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.