![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাতে বারান্দার ব্যালকনিতে ইজি চেয়ারে বসে রহমান সাহেব বই পড়ছিলেন। হঠাৎ মেয়েটাকে ডাক দিলেন____
এই মিলি শুনে যাতো মা।
ভেতর থেকে শব্দ ভেসে আসল। আসছি বাবা।
বল বাবা কিছু লাগবে তোমার?
হ্যাঁ মা একটু চা দিয়ে যাতো।
তুমি বই পড় বাবা, আমি চা দিয়ে যাচ্ছি।
মা মরা মেয়ে। গত আড়াই বছর হল ওর মা মারা গেছে। মেয়েটা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.বি.এতে পড়ছে। ওর মা মারা যাওয়ার পর থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি ওই সংসারটা চালাচ্ছে।
বাবা এই নাও তোমার চা।
এনেছিস মা দে।তোর কি মন খারাপ।
কই নাতো বাবা।
মিলি পৃথিবীর সবার চোখ ফাঁকি দিলে ও সন্তান মা বাবার চোখকে ফাঁকি দিতে পারে না। কী হয়েছে আমাকে খুলে বল?
বাবার পায়ের কাছে হাটঁু গেড়ে বসে পড়ে মিলি।মাথা রাখে উরুর পরে। তারপর বলে____
বাবা ও কি আমাকে ভালবাসবেনা?
না মা! ওতো বাঙালী না। ও তো তোর কথা বুঝবেনা।
হু হু করে কান্নায় ভেঙে পড়ে মিলি।
আবু জাহিদ পাকিস্তানি যুবক। ও মিলির সাথে একই ডিসিপ্লিনে পড়াশুনা করে। আবু জাহিদের মা বাবা পাকিস্তানে থাকে। ক্লাসমেট হিসেবেই মিলির সাথে ওর প্রথম পরিচয়। অতি অল্প সময়ে দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয় যায়। এক সময় দুজন দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। কিন্তু, তাদের দুজনের মাঝে একটাই দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তা হল ভাষা। পাকিস্তানিদের স্বৈরাচারী স্বভাব এখনও যায়নি তা মিলির জানা ছিল না। আবু জাহিদ চায় মিলি বাংলা কথা বলা বাদ দিয়ে দিক। উর্দুতে কথা বলুক। দুবছর কাটিয়েছে মিলি আবু জাহিদের সাথে। এ দুবছরে তারা দুজন দুজনকে অনেক ভালবেসে ফেলেছে। নিজেদের অজান্তে অনেক কাছাকাছি এসেছে তারা। আবু জাহিদের ভাষা উর্দু। বাংলায় একটু আধটু পারলেও সে বাংলায় কথা বলে না। কথা বলার মাধ্যম হিসেবে সে বেছে নিয়েছে ইংরেজিকে। আবু জাহিদ মিলিকে উর্দু ভাষা শিখতে বলেছে।
মিলির বাবা মুক্তিযোদ্ধা রহমান সাহেবের সেটা মোটেই সহ্য হত না। তিনি বিশ্বাস করতেন ১৯৭১ এ জিতেছেন, এবার ও জিতবেন। কিন্তু, তিনি বুঝতে পারেননি যে, যে কাগজের উপর পৃষ্ঠায় জয় লেখা থাকলে অপর পৃষ্ঠায় পরাজয় নিশ্চিত।
মা একটা কথা বলি।
বল বাবা।
দেখ মা, আবু জাহিদ পাকিস্তানি ছেলে সেটা কোন সমস্যা না। সমস্যা হল আমি তোকে উর্দুতে কথা বলতে দিব না।
কিন্তু, বাবা ও বলেছে উর্দু না শিখলে আমাকে বিয়ে করবেনা।
বিয়ে না করলে ছেলের কি অভাব পড়েছে?
বাবা।
কি বল?
বাবা, বাবা আমি প্রেগন্যান্ট। কাপাঁ কাপাঁ স্বরে বলল মিলি।
আকাশ ভেঙে পড়ে যেন রহমান সাহেবের মাথায়। মাথা ঝিমঝিম করছে তার। হাত থেকে চায়ের কাপটা মেঝেতে পড়ে দু টুকরো হয়ে গেলো। চোখ জোড়া তার ঘোলা হয়ে আসছে তার। মোটা কালো ফ্রেমের চশমাটা খুলে হাতে নেন। হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মোছেন মেয়ের অগোচরে
মিলিও ঘরের কোণে একা বসে থাকে। দেড়মাস সময় দিয়েছে আবু জাহিদ। এর মধ্যে উর্দু ভাষা না পারলে আবু জাহিদ মিলিকে বিয়ে করবে না। আর বিয়ে না করা মানে আর কিছু দিনের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধা পিতার সম্মান বিলীন হওয়া।
বিছানায় বালিশটাতে হেলান দিয়ে রহমান সাহেব পা নাড়াচ্ছিলেন আর ভাবছিলেন ১৯৭১ সালের কথা।কী না করেছিল এই পাকিস্তানিরা। আমাদের দেশটাকে ধ্বংস স্তুপ করেছিল তারা।তারা আমাদের নিয়ে পুতুলের মত ব্যবহার করত। রহমান সাহেব তার বাবার কাছে শুনেছিলেন এই জানোয়াররা নাকি, আমাদেরকে জ্বালিয়েছিল ১৯৫২ সালে ও। তারা আমাদের ভাষায় কথা বলতে দিত না। তারা আমাদের ব্যবহার করত কুকুরের মত। আমাদের নিজস্ব কোন স্বাধীনতা দিত না। আমাদেরকে উর্দুতে কথা বলতে বাধ্য করত। আমাদের কষ্টার্জিত টাকা নাকি তাদের কোষাগারে জমা হবে। সাহস কত বড় জিন্নাহর আমার মাটিতে দাড়িঁয়ে আমাকেই বজ্র কন্ঠে বলে__ Urdu and Urdu will be state language of Pakistan.
বাবা খেতে আসো।
মেয়ের ডাকে চেতনা ফিরে পান রহমান সাহেব। তার এখন যত চিন্তা ঐ মেয়েটাকে নিয়ে।
আবু জাহিদ এখন কোথায়? জিজ্ঞেস করলেন রহমান সাহেব মেয়েকে।
বাবা ও তো পাকিস্তানে।
কবে আসবে?
পাঁচ দিন পর।
কিছু চিন্তা ভাবনা করেছিস?
কোন বিষয়ে বাবা?
উর্দু শিখার বিষয়ে।
না বাবা।
ভাত খেয়ে কন্যা আর পিতা দোতালা বারান্দার ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারে বসে চা খাচ্ছিল। আজ রহমান সাহেব তার মেয়েকে ভাষা আন্দোলনের কথা শোনাবেন।
জানিস মা সেদিন ছিল রবিবার। পাকিস্তানি কুত্তা জিন্নাহ ঘোষনা দিয়েছিল আমাদেরকে, আমরা যেন বাংলাতে কথা না বলি, আমরা যেন উর্দুতে কথা বলি। সেদিনটা আমাদের অনেক কষ্টে কেটেছিল। কিন্তু, আমরাও দমে যায়নি। আমরা সেদিন একত্রিত হয়েছিলাম, সেদিন আমরা মিছিল করেছিলাম।
বাবা তুমি কি সেদিন ছিলে।
হেসে ফেললেন রহমান সাহেব। বললেন নারে মা। আমার তো তখন জন্মই হয়নি।এগুলো বলেছে তোর দাদা। মানে আমার বাবা। বাবা আর ছোট চাচা ছিলেন ঐ মিছিলের নেতৃত্বে।
খানিকক্ষণ দম নিয়ে আবার শুরু করেন রহমান সাহেব। আমরা গিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। তারপর পুলিশ আর যেতে দেয় নি। শুরু করে দিল গুলি। ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল মিছিল। যে যেদিকে পারল সেদিকে ছুটল। পুলিশ সবাইকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ল। হাত, মাথা, কপাল, বুক, পা কিছুই বাদ দেয়নি তারা। দূরভাগ্যক্রমে একটা বুলেট এসে লাগল ছোট চাচার কপাল বরাবর। বাবা কিছুই করতে পারলনা। শুধ চেয়ে দেখল পাকিস্তানি কিছু কুত্তা তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যে আজ বাংলা ভাষায় কথা বলছি এটা কিন্তু কোন সাদা কালো ভাষা না। এটা তাদের রক্তে রাঙা বাংলা ভাষা। বলতে বলতে গলা ধরে এলো রহমান সাহেবের। চশমার নিচ দিয়ে চোখের পানি বের হয়ে যাচ্ছে তার। চাঁদের আলোতে চোখের পানি বোঝা যাচ্ছিলনা। মনে হচ্ছিল রক্তপাত হচ্ছে। সেদিনের সেই রক্তপাত। ৫২র সেই রক্ত গুলি চোখের কোনা বেয়ে নেমে পড়ছে রহমান সাহেবের।
বাবা। আর বলনা। সারাজীবন বইতে অনেক পড়েছি। কিন্তু, এতটাই করুণ ভাবতেও পারেনি।
এসব কথা বলার একটাই কারণ তুই নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিস।
বাবা আমি আবু জাহিদকে ছাড়া বাঁচতে পারবনা।
তুই কি বাংলা ভাষা ছাড়া বাঁচতে পারবি?
চুপসে যায় মিলি। নিশ্চুপ অবস্থাতেই দুই দিন কেটে যায়। বুঝতে পারে মিলি, পিতা ও তার মধ্যে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। এরি মধ্যে হঠাৎ একদিন ফোন আসে পাকিস্তান থেকে_______
Hello! Mili, how are you?
Iam not fine jahid.
Why??
Ican't tell you Jahid.
Oh! Baby plz tell me?
I can't learn your mother language. I think my language is the best language. I love it so much.
জাহিদের কনভারসেশনটা বন্ধ করে দেয় মিলি। মাঝ নদীতে পড়ে যায় মিলি। কিন্তু পরক্ষনেই বলে ওঠে, না আর কোন চিন্তা না। আমার দেশ, আমার ভাষা আমার কাছে সেরা। আমি কারও জন্য আমার ভাষা বদলাবনা। হঠাৎ করে ভেতরে থাকা সত্ত্বাটি মিলিকে বলে ওঠে, তাহলে তোর বাচ্চার কি হবে? পরক্ষনেই মিলি ঠিক করে নেয়, দিলাম না হয় নিজের সম্মানকে বলি। ভাষার জন্য তো অনেকেই প্রাণ দিয়েছে।আমি না হয় আমার আত্মসম্মানটা ও বলি দিলাম। বাবার কাছে যায় মিলি। চিৎকার করে বলে_______
বাবা আমি ভালবাসি।
সেটা আমাকে কেন বলছিস? উত্তর দেয় রহমান সাহেব।
বাবা আমি আমার দেশকে ভালবাসি। আমি জাহিদকে বলে দিয়েছি আমার উর্দু ভাষা শেখা সম্ভব না।
রহমান সাহেবের মুখে হাসির রেখা দেখা গেল। আজ রহমান সাহেবের জীবনে আরেকটা সুখের দিন।
২| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:০৬
রাসেল আপন বলেছেন: ধন্যবাদ । আপনার মন্তব্যর জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০৪
এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: অস্থির